পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯
তালাক প্রাপ্ত ও গর্ভবতী স্ত্রীদের কী অবস্থা?
তালাক প্রাপ্ত ও গর্ভবতী স্ত্রীদের কী অবস্থা?
আইন এম ১১.১০ (ঐ বই পৃঃ ৫৪৬)যে স্ত্রী ইদ্দতে থাকবে, সে তালাক (অস্থায়ী) অথবা বিধবার জন্যই হোক, তার অধিকার থাকবে স্বামীর গৃহে থাকার ইদ্দতের সময় পর্যন্ত। এরপর ভরণপোষণের ব্যাপারটা এই রকম:
- ১. তিন তালাক (স্থায়ী তালাক) হয়ে গেলে স্ত্রী ইদ্দতের সময় ভরণপোষণ অথবা ইদ্দতের পর কোন প্রকার ভরণপোষণ পাবে না। বিধবা নারীও কোন দৈনিক ভাতা পাবে না।
- ২. ভরণপোষণ হবে একমাত্র ইদ্দতের সময়, তাও যদি তালাক অস্থায়ী হয় যথা এক তালাক অথবা দুই তালাক, যেখানে সম্ভাবনা আছে যে স্বামী চাইলে স্ত্রীকে ফেরত চাইবে।
- ৩. তিন তালাক প্রাপ্ত স্ত্রী যদি গর্ভবতী থাকে সে দৈনিক ভাতা পাবে (A. শিশু ভূমিষ্ঠ না হওয়া পর্যন্ত। এর পর শিশুর দেখা শোনা ও লালনপালনের জন্যে।) । স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা না থাকলে সে কোন ভাতাই পাবে না।
স্ত্রীর ওপর স্বামীর অধিকার
আসুন, এবার আমরা দেখি, স্বামী কী চায় স্ত্রীর কাছ থেকে। শারিয়া আইন অনুযায়ী, যে মুহূর্তে স্বামী স্ত্রীকে মোহরানার টাকা দিয়ে দেবে অথবা পরে দেবার অঙ্গীকার করবে, সেই মুহূর্তে স্বামী নারীটির দেহবল্লরী কিনে নিলো - অথবা নারীটির আপাদমস্তক দেহের পূর্ণ মালিকানা পেয়ে গেল। অবশ্যই এ বলতে নারীটির যৌনাঙ্গ বলা হচ্ছে। শারিয়ার নিয়ম অনুযায়ী নারীটির শরীরের অস্থি, মজ্জা, মাংস, পেশী, রক্ত, চুল, চামড়া…ইত্যাদি সহ সন্তানধারণের যন্ত্রটি স্বামীর এখতিয়ারে চলে আসবে। নারীর অন্যতম কর্তব্য হবে তার যৌনাঙ্গ ও গর্ভকে সর্বদা ক্রিয়াশীল করে রাখা - যেমন ভাবে এক কারিগর তার কাজের যন্ত্রপাতি তেল, ঘষামাজা দিয়ে প্রস্তুত রাখে। এসবের জন্যে মুসলমানদের দরকার স্ত্রীকে ব্যাবহারের নিয়মাবলী। দেখ যাক, এই সব নিয়মাবলী কী রকম।
শারিয়া আইন (উমদাত আল-সালিক) নম্বর এম ৫.৪ (পৃঃ ৫২৬):স্ত্রীর দেহকে উপভোগ করার পূর্ণ অধিকার থাকবে স্বামীর। (A: আপাদমস্তক পর্যন্ত, তথা পায়ের পাতা পর্যন্ত। কিন্তু পায়ু পথে সঙ্গম করা যাবে না—এটা বে-আইনি) । তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যৌনসংগম কালে স্ত্রী যেন ব্যথা না পায়। স্বামী তার স্ত্রীকে যেখানে খুশী নিয়ে যেতে পারবে।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, স্ত্রীর পায়ুপথে সঙ্গম করা বে-আইনি শুধুমাত্র সুন্নীদের জন্যে। শিয়াদের জন্য আইন অন্য রকম। একজন শিয়া স্বামী তার স্ত্রীর গুহ্যদ্বারে সঙ্গম করতে পারবে। এই ব্যাপারে সুনান আবু দাউদের ইংরাজি অনুবাদক অধ্যাপক আহমদ হাসানের মন্তব্য পড়া যেতে পারে (দেখুন, সুনান আবু দাউদের ইংরেজি ছাপানো অনুবাদ, ভলিউম ২, হাদিস ২১৫৭ এর মন্তব্য ১৪৮৩, পৃঃ ৫৭৯)।
শারিয়া আইন (ঐ বই) নম্বর এম ৫.৬:স্ত্রী তার যৌনাঙ্গকে সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে বাধ্য থাকবে—এটা স্বামীর অন্যতম অধিকার। এই জন্য স্ত্রীকে মাসিক স্রাবের পর গোসল নিতে হবে এবং স্বামীর পূর্ণ যৌন উপভোগ করার জন্য যা যা দরকার তা তাকে করতে হবে। এর মাঝে থাকছে নিয়মিত যৌনাঙ্গের কেশ কামানো, এবং যৌনাঙ্গের ভিতরে জমে যাওয়া ময়লা দূর করা।
স্ত্রীর করনীয় কী?
এক মুসলিম নারীর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ও মূখ্য কর্তব্য হবে তার স্বামীর যৌনক্ষুধা নিবৃত করা। আপনার তা বিশ্বাস করতে অসুবিধা হচ্ছে, তাই না? কিন্তু একটু চিন্তা করলেই আমরা বুঝব যে, মোহরানার উদ্দেশ্যই হচ্ছে নারীর যৌনাঙ্গের মালিকানা স্বামীর আয়ত্তে আনা যাতে সে স্ত্রীর দেহকে সম্পূর্ণভাবে উপভোগ করতে পারে। শারিয়ার নিয়ম অনুযায়ী কোনো মুসলিম নারী কস্মিনকালেও তার স্বামীর যৌন ক্ষুধা মেটাতে ‘না’ বলতে পারবে না। অবশ্য স্ত্রী যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে অথবা কোনো কারণে তার যৌনাঙ্গে গোলযোগ দেখা যায়, তখন তা আলাদা।
এখন আমরা দেখব এ ব্যাপারে হাদিস কী বলছে।
সহিহ মুসলিম বই ৮, নম্বর ৩৩৬৬:আবু হুরায়রা বললেন: আল্লার রসুল (সঃ) বলেছেন যদি কোন রমণী তার স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রাত্রি যাপন করে তবে ফেরেশতারা সেই নারীকে অভিশাপ দেয় ভোরবেলা পর্যন্ত।
এই হাদিসটা অন্যের ভাষ্য দিয়েও বলা হয়েছে—যাতে বলা হয়েছে: যতক্ষণ না স্ত্রী স্বামীর বিছানায় ফিরে আসে।
এ সম্পর্কে সহিহ মুসলিম বই ৮, হাদিস ৩৩৬৭ ও দেখা যেতে পারে।
দেখা যাক, ইমাম গাজ্জালী কী বলেছেন এ প্রসঙ্গে।
এহিয়া উলুম আল-দীন, ভলুম ১ পৃঃ ২৩৫
স্ত্রী তার স্বামীকে নিজের এবং তার আত্মীয়ের চাইতেও বেশি ভালবাসবে। স্ত্রীকে সদা সর্বদা পরিষ্কার ছিমছাম থাকতে হবে যাতে করে স্বামী যখন খুশী তাকে উপভোগ করতে পারে।
ঐ বই, পৃঃ ২৩৬স্ত্রীকে সর্বদা ন্যায়পরায়ণতা মেনে চলতে হবে। স্ত্রীকে স্বামীর অবর্তমানে দুঃখিত হতে হবে। যখন স্বামী ফিরে আসবে তখন স্ত্রীকে হাসিখুশি দেখাতে হবে এবং নিজের দেহকে প্রস্তুত রাখবে স্বামীর আনন্দের জন্যে।
শারিয়া আইন এম ১০.৪ (উমদাত আল-সালিক, পৃঃ ৫৩৮)স্ত্রীর গৃহ ত্যাগ করা যাবে না। স্বামীর অধিকার থাকবে স্ত্রীকে গৃহের বাইরে না যেতে দেওয়া। (O. এটা এ কারণে যে বাইহাকী বলেছেন যে রসুলুল্লাহ বলেছেন: যে রমণী আল্লাহ ও কেয়ামতে বিশ্বাস করে সে কখনো তার স্বামীর অবর্তমানে কোন বেগানা লোককে তার গৃহে প্রকাশের অনুমতি দিবে না, অথবা সেই রমণী গৃহের বাইরে যাবে যখন তার স্বামী বিক্ষুব্ধ হবে।
কিন্তু স্ত্রীর কোনো আত্মীয় মারা গেলে স্বামী চাইলে স্ত্রীকে গৃহত্যাগের অনুমতি দিতে পারে।
এখানে হানাফি শারিয়ার একটি নিয়ম ইমাম শাফী দিয়েছেন। সেই আইনটি পড়ে নিন।
শারিয়া আইন (হানাফি) ডবলু ৪৫.২ (ঐ বই পৃঃ ৯৪৯):স্ত্রীর কর্তব্য হচ্ছে স্বামীর সেবা পরিচর্যা করা। এই কর্তব্য স্ত্রীর কাছে ধর্মের অঙ্গ। সেবা বলতে ধরা হচ্ছে রান্না করা, গৃহ পরিষ্কার করা, রুটি বানানো…ইত্যাদি। স্ত্রীর এসব কাজে বিমুখতা পাপ হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু আদালত স্ত্রীকে জোরপূর্বক এই সব কাজ করতে হুকুম দিতে পারবে না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন