লিখেছেন ফারজানা কবীর খান (স্নিগ্ধা)
বছর তিনেক আগের কথা। আমরা নতুন বাসায় উঠেছি। আমাদের বাসায় জার্মানিতে বসবাসরত কিছু বাংলাদেশীদের দাওয়াত করলাম। খাওয়া-দাওয়া শেষে ঠিক যাবার আগ মুহূর্তে এক আপা আড়ালে জিজ্ঞাসা করলেন, মাংসটা যে রান্না করেছেন সেটা কোথা থেকে কিনেছেন?
অবাক হয়ে বললাম, কেন?
উনি বললেন, না, মানে মাংস কি হালাল দোকান থেকে কিনেছেন, নাকি হারাম দোকান থেকে?
আমি সত্যি বুঝলাম না। আমি বললাম, আমরা তো হারাম কামাই করি না। তাহলে মাংস হারাম হবে কেন?
আপা বললেন, আপনি খুব সোজা মানুষ, পরে বুঝিয়ে বলবো।
পরের দিন ফোন দিলেন তিনি। বললেন, আরে আমি তো রুজি-রোজগারের কথা বলিনি। বলতে চেয়েছিলাম, এই যে মাংসটা কিনেছেন, সেটা কি জার্মান সুপারমার্কেট থেকে কিনেছেন নাকি তুর্কিশ দোকান থেকে কেনা?
আমি আবারো প্রশ্ন করলাম, কেন, বলেন তো?
তিনি বললেন, আরে হালাল-হারামের ব্যাপার আছে না? জার্মানরা কি আর হালালভাবে পশু জবাই করে? হালাল মাংস খেতে হলে তো তুর্কিশ দোকানের মাংস খেতে হবে।
আমি বললাম, একমাত্র জার্মান সুপারমার্কেটগুলো তো মাংসের গুণগত মান আর রোগমুক্ত আছে কি না, তা ল্যাবটরিতে পরীক্ষা করে বাজারজাত করা হয়।
তিনি বললেন, এসব কিছুই না। আসল হলো হারাম আর হালাল।
আমি বললাম, কিন্তু অনেক সময় টিভিতে দেখি, তুর্কিশরা পুরানো ডেটওভার মাংস বিক্রি করছে, যা খেয়ে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
তিনি বললেন, ঐসব মুসলমানদের হারাম খাওয়ানোর ষড়যন্ত্র।
আমি তাঁকে বললাম, ঠিক আছে, শিখলাম। এরপরে আপনাদের দাওয়াত করলে হালাল দোকানের মাংস কিনবো।
বলা বাহুল্য, এই ফ্যামিলিকে আর কোনোদিনই দাওয়াত করা হয়নি।
তবে আমার তাঁকে কয়েকটা প্রশ্ন করার ছিল:
১. বাংলাদেশে থাকতেও কি তিনি এমন হারাম-হালাল বাছতেন?
২. বাংলাদেশে বাজার থেকে যখন মুরগী কিনে আনতেন, তখন কি ঐ মুরগীবিক্রেতা ওযু করে মুরগী বিক্রি করতো, নাকি মুরগী কেনার পর খালি কোনোরকম আল্লাহু আকবার বলে জবাই করে দিতো? সে নিজে কতটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন? আর তার মুরগী প্রক্রিয়াজাতকরণের পদ্ধতি কতটা পরিচ্ছন্ন?
৩. বাংলাদেশে গরুর মাংস যখন কেনেন, আপনি কি জানেন ওটা আসলেই গরুর মাংস কি না? মাংসটা অসুস্থ বা মরা গরুর কি না? অথবা মহিষ জবাই করে গরুর মাংস বলে বিক্রি করে দিল কি না?
৪. শুনেছি, পত্রিকায়ও পড়েছি, আরিচা ঘাটে এক হোটেলে ছাগলের মাংস বলে কুকুরের মাংস খাওয়ানো হয়েছিলো দিনের পর দিন। ঘটনাটা জানাজানি না হলে, মানুষ কী করে জানতো, তারা কী খেয়েছিলো - হারাম না হালাল?
৫. বাংলাদেশে কোনো রেষ্টুরেন্টে যখন আপনি খেতে যান, তখনই বা কী করে নিশ্চিত হন, মাংসটা হালাল না হারাম?
বাংলাদেশে থাকতে এসব প্রশ্ন এইসব আপা-ভাবীদের মনে আসে না। মনে আসে, যখন তারা উন্নত হারাম দেশে হালাল টাকা রোজগার করতে আসেন। তখন তাঁদেরকে আমার একটা কথাই বলার থাকে; হারাম দেশের সব আপনাদের ভালো লাগে: টাকা, চাকুরী, পড়ালেখা, নিরাপত্তা, গাড়ি, বাড়ি এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় আর স্কলারশিপ। শুধু ভালো লাগে না হারাম সুপারমার্কেটের হারাম মাংস।
* ধর্মকারীতে পূর্বে প্রকাশিত প্রাসঙ্গিক পোস্ট: হারাম ও হালাল এবং প্রবাসী মুসলমানদের মূর্খতা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন