বৃহস্পতিবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০১৩

কুরানে বিগ্যান (পর্ব-২৪): মুহাম্মদের মোজেজা তত্ত্ব - দুই

লিখেছেন গোলাপ

পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩ > পর্ব ১৪ > পর্ব ১৫ > পর্ব ১৬ > পর্ব ১৭ > পর্ব ১৮ > পর্ব ১৯ > পর্ব ২০ > পর্ব ২১ > পর্ব ২২ > পর্ব ২৩

স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর প্রচারণায় সুদীর্ঘ ২৩ বছর (৬১০-৬৩২) পৌরাণিক নবীদের অলৌকিক মোজেজার কাহিনী অবিশ্বাসীদের শুনিয়েছেন। এমতাবস্থায় অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই অবিশ্বাসীরা মুহাম্মদের কাছেও তার "নবুয়তের প্রমাণ" হাজির করতে বলেছিলেন। বিনা প্রমাণে কোনো সুস্থ বিবেকবান মুক্ত-বুদ্ধির মানুষই কাউকে নবী হিসাবে মেনে নিতে পারেন না। অবিশ্বাসীরাও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না। অবিশ্বাসীরা মুহাম্মদের কাছে তার নবুয়তের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য কী প্রমাণ দাবী করেছিলেন এবং প্রতি-উত্তরে মুহাম্মদ (আল্লাহ) তাঁদের কী জবাব দিয়েছিলেন, কীরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার আগে একটি বিষয় পাঠকদের অবহিত করতে চাই। আর তা হলো: 

কুরাইশরা ছিলেন “আল্লাহ বিশ্বাসী”! 

কুরাইশরা যে বংশ পরম্পরায় “আল্লাহ"-কে দেবতাজ্ঞানে বিশ্বাস করতেন, তার জাজ্জ্বল্য প্রমাণ হলো মুহাম্মদের পিতার নাম! আবদ-আল্লাহ (আবদুল্লাহ)! অর্থাৎ আল্লাহর দাস। ইসলামের জন্মের বহু আগে থেকেই আবদ মানাফ, আবদ উজ্জাহ, আবদ আল্লাহ (দেবতা মানাফ, উজ্জাহ ও আল্লাহর দাস) ইত্যাদি নামগুলো আরবে বেশ জনপ্রিয়। এ ছাড়াও, মুহাম্মদ তার নিজেরই জবানবন্দিতে অত্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছেন যে, তৎকালীন কুরাইশরা ছিলেন আল্লাহ বিশ্বাসী! মুহাম্মদের ভাষায়: 

২৩:৮৪-৮৯ - বলুন পৃথিবী এবং পৃথিবীতে যারা আছে, তারা কার? যদি তোমরা জান, তবে বল। 
এখন তারা বলবে: সবই আল্লাহর।
বলুন: সপ্তাকাশ ও মহা-আরশের মালিক কে? 
এখন তারা বলবে: আল্লাহ।
বলুন: তোমাদের জানা থাকলে বল, কার হাতে সব বস্তুর কর্তৃত্ব যিনি রক্ষা করেন এবং যার কবল থেকে কেউ রক্ষা করতে পারে না ? 
এখন তারা বলবে: আল্লাহর।

৩১:২৫ - আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডল কে সৃষ্টি করেছে? 
তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ।

৩৪:৭-৮ - কাফেররা বলে, আমরা কি তোমাদেরকে এমন ব্যক্তির সন্ধান দেব, যে তোমাদেরকে খবর দেয় যে; তোমরা সম্পুর্ণ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও তোমরা নতুন সৃজিত হবে। সে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা বলে, না হয় সে উম্মাদ এবং যারা পরকালে অবিশ্বাসী, তারা আযাবে ও ঘোর পথভ্রষ্টতায় পতিত আছে। 

৩৯:৩৮ - যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, আসমান ও যমীন কে সৃষ্টি করেছে? 
তারা অবশ্যই বলবে - আল্লাহ।

৪৩:৯ - আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন কে নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডল সৃষ্টি করেছে? 
তারা অবশ্যই বলবে, এগুলো সৃষ্টি করেছেন পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহ।

৪৩:৮৭ - যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, কে তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, 
তবে অবশ্যই তারা বলবে, আল্লাহ।

>>> ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, কুরাইশরা মুহাম্মদের বিরুদ্ধে তখনই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন, যখন মুহাম্মদ তাঁদের পূজনীয় পিতৃপুরুষ ও উপাস্য দেবতাদের অসম্মান-তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা শুরু করেছিলেন! তাঁরা অভিযোগ করেছেন যে, “মুহাম্মদ তাদের দেবতা ‘আল্লাহর’ নামে মিথ্যা অপবাদ ছড়াচ্ছেন, তাঁদের আল্লাহকে কলঙ্কিত করছেন।” তার আগে কুরাইশরা কখনোই মুহাম্মদের প্রচারণায় কোনরূপ বাধা-প্রদান করেননি (বিস্তারিত আলোচনা করবো আইয়ামে জাহিলিয়াত তত্ত্বে)। 

মুহাম্মদ তাঁর প্রচারণায় শুরু থেকেই পূর্ব-বর্তী নবীদের অলৌকিক শক্তির (মোজেজা) বর্ণনা অবিশ্বাসীদের বারংবার স্মরণ করিয়ে হুমকি ও হুশিয়ারি দিয়ে আসছিলেন। তাই, মুহাম্মদ যখন নিজেকে পূর্ববর্তী নবীদের ধারাবাহিকতার শেষ নবী বলে ঘোষণা দিয়ে তাঁকে নবী হিসাবে স্বীকার করে নেয়ার আহ্বান জানালেন, তখন অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই অবিশ্বাসীরাও মুহাম্মদের কাছে তাঁর নবুয়তের যথার্থতার প্রমাণস্বরূপ তাঁরই উদ্ধৃত “পূর্ববর্তী নবীদের অনুরূপ কোন অলৌকিক নিদর্শন (মোজেজা)” বহুবার বিভিন্নভাবে হাজির করার আহ্বান জানিয়েছিলেন! যা দেখে তাঁরা নিশ্চিত হবে যে, মুহাম্মদ সত্যিই একজন নবী, ভণ্ড নন! খুবই যুক্তিসম্মত দাবি। প্রতি-উত্তরে মুহাম্মদ (আল্লাহ) তাঁদেরকে কী জবাব দিয়েছিলেন এবং কীরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন, তা মুহাম্মদের ব্যক্তি-মানস-জীবনীগ্রন্থে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে। কিছু উদাহরণ: 

১) পূর্ববর্তী নবীগনের অনুরূপ কোন নিদর্শন আনয়নের দাবী

১৭:৯০- ৯৭ 
অবিশ্বাসীদের দাবী: 
“এবং তারা বলেঃ আমরা কখনও আপনাকে বিশ্বাস করব না, যে পর্যন্ত না আপনি ভূপৃষ্ঠ থেকে আমাদের জন্যে একটি ঝরণা প্রবাহিত করে দিন। অথবা আপনার জন্যে খেজুরের ও আঙ্গুরের একটি বাগান হবে, অতঃপর আপনি তার মধ্যে নির্ঝরিনীসমূহ প্রবাহিত করে দেবেন। আপনি যেমন বলে থাকেন, তেমনিভাবে আমাদের উপর আসমানকে খন্ড-বিখন্ড করে ফেলে দেবেন অথবা আল্লাহ ও ফেরেশতাদেরকে আমাদের সামনে নিয়ে আসবেন। অথবা আপনার কোন সোনার তৈরী গৃহ হবে অথবা আপনি আকাশে আরোহণ করবেন এবং আমরা আপনার আকাশে আরোহণকে কখনও বিশ্বাস করব না, যে পর্যন্ত না আপনি অবতীর্ণ করেন আমাদের প্রতি এক গ্রন্থ, যা আমরা পাঠ করব।”

মুহাম্মদের জবাব: 
“বলুনঃ পবিত্র মহান আমার পালনকর্তা, একজন মানব, একজন রসূল বৈ আমি কে? আল্লাহ কি মানুষকে পয়গম্বর করে পাঠিয়েছেন? তাদের এই উক্তিই মানুষকে ঈমান আনয়ন থেকে বিরত রাখে, যখন তাদের নিকট আসে হেদায়েত। বলুনঃ যদি পৃথিবীতে ফেরেশতারা স্বচ্ছন্দে বিচরণ করত, তবে আমি আকাশ থেকে কোন ফেরেশতাকেই তাদের নিকট পয়গাম্বর করে প্রেরণ করতাম। বলুনঃ আমার ও তোমাদের মধ্যে সত্য প্রতিষ্ঠাকারী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি তো স্বীয় বান্দাদের বিষয়ে খবর রাখেন ও দেখেন।”

তারপর হুমকি -শাসানী ও ভীতি প্রদর্শন! 
“আল্লাহ যাকে পথ প্রদর্শন করেন, সেই তো সঠিক পথ প্রাপ্ত এবং যাকে পথ ভ্রষ্ট করেন, তাদের জন্যে আপনি আল্লাহ ছাড়া কোন সাহায্যকারী পাবেন না। আমি কেয়ামতের দিন তাদের সমবেত করব তাদের মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায়, অন্ধ অবস্থায়, মুক অবস্থায় এবং বধির অবস্থায়। তাদের আবাসস্থল জাহান্নাম। যখনই নির্বাপিত হওয়ার উপক্রম হবে আমি তখন তাদের জন্যে অগ্নি আরও বৃদ্ধি করে দিব।” 

>>> অবিশ্বাসীদের প্রশ্ন ও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মুহাম্মদের জবাব কি আদৌ প্রাসঙ্গিক? মুহাম্মদ নিজেই অসংখ্যবার দাবি করেছেন যে, পূর্ববর্তী নবীরা তাঁদের নবুয়তের 'প্রমাণ' এনেছিলেন। সে কারণে কুরাইশরাও মুহাম্মদের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে ("আপনি যেমন বলে থাকেন -") সে সকল নবীদের অনুরূপ মোজেজা হাজির করে তাঁর দাবির যথার্থতা প্রমাণের দাবী জানিয়েছিলেন। জবাবে আল্লাহর "লেবাসে" মুহাম্মদের সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক জবাব! মুহাম্মদ নিজেই দাবি করেছেন যে, তাঁর কাছে ফেরেশতারা আগমন করে। অবিশ্বাসীরা মুহাম্মদকে তাঁর সেই ফেরেশতাদেরকেই দেখানোর আহ্বান জানাচ্ছেন! এটা কি কোন অযৌক্তিক দাবি? আর, “আল্লাহ কি মানুষকে পয়গম্বর করে পাঠিয়েছেন?' এই উক্তিটির মধ্যে কী এমন গর্হিত অন্যায় আছে, যা অবিশ্বাসীদের ঈমান আনয়ন থেকে বিরত রাখে? 

২১:৫-৬ 
অবিশ্বাসীদের দাবী: 
“এছাড়া তারা আরও বলেঃ অলীক স্বপ্ন; না সে মিথ্যা উদ্ভাবন করেছে, না সে একজন কবি। অতএব সে আমাদের কাছে কোন নিদর্শন আনয়ন করুক, যেমন নিদর্শন সহ আগমন করেছিলেন পূর্ববর্তীগন।” 

জবাবে মুহাম্মদের হুমকি:
তাদের পূর্বে যেসব জনপদ আমি ধবংস করে দিয়েছি, তারা বিশ্বাস স্থাপন করেনি; এখন এরা কি বিশ্বাস স্থাপন করবে?” 

২০: ১৩৩- ১৩৪ 
অবিশ্বাসীদের দাবী: 
“এরা বলেঃ সে আমাদের কাছে তার পালনকর্তার কাছ থেকে কোন নিদর্শন আনয়ন করে না কেন?” 

মুহাম্মদের অপ্রাসঙ্গিক জবাব ও হুমকি/ ভীতি প্রদর্শন: 
তাদের কাছে কি প্রমাণ আসেনি, যা পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহে আছে? যদি আমি এদেরকে ইতিপূর্বে কোন শাস্তি দ্বারা ধ্বংস করতাম, তবে এরা বলতঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আপনি আমাদের কাছে একজন রসূল প্রেরণ করলেন না কেন? তাহলে তো আমরা অপমানিত ও হেয় হওয়ার পূর্বেই আপনার নিদর্শন সমূহ মেনে চলতাম। বলুন, প্রত্যেকেই পথপানে চেয়ে আছে, সুতরাং তোমরাও পথপানে চেয়ে থাক। অদূর ভবিষ্যতে তোমরা জানতে পারবে কে সরল পথের পথিক এবং কে সৎপথ প্রাপ্ত হয়েছে।” 

>>> মুহাম্মদের প্রচারণার শুরু থেকেই তার চারপাশের প্রায় সমস্ত জনগণ মুহাম্মদের যাবতীয় গল্প-কাহিনীকে পুরাকালের উপকথা বলে অভিযোগ করে এসেছেন। পূর্ববর্তী নবীরা যে 'মোজেজা' দেখিয়েছিলেন, এরূপ পৌরাণিক উপকথা ও কিচ্ছা-কাহিনী তাঁরা মুহাম্মদের জন্মের বহু আগে থেকেই বংশপরম্পরায় শুনে এসেছেন। কুরাইশদের কাছে এ তথ্যগুলো নতুন নয় (বিস্তারিত সপ্তদশ পর্বে)। 

মুহাম্মদ দাবী করেছেন যে, তিনি পূর্ববর্তী নবীদের অনুরূপ একজন নবী। সে কারণেই কুরাইশরা মুহাম্মদের কাছেও অনুরূপ প্রমাণ হাজির করার দাবি জানাচ্ছেন, "দেখাও অনুরূপ একটি মোজেজা এবং প্রমাণ করো তুমি তাদের মতই একজন!" জবাবে, "তাদের কাছে কি প্রমাণ আসেনি, যা পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহে আছে?" জবাবটি কি আদৌ কোনো অর্থ বহন করে? জবাবটি কি আদৌ প্রাসঙ্গিক? অবশ্যই নয়! অত্যন্ত অপ্রাসঙ্গিকভাবে মুহাম্মদ পৌরাণিক কিচ্ছা-কাহিনীরই পুনরুল্লেখ করে 'প্রমাণের পরিবর্তে দিচ্ছেন হুমকি'! 

৬:৩৭ 
অবিশ্বাসীদের প্রশ্ন: 
“তারা বলে: তার প্রতি তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে কোন নিদর্শন অবতীর্ণ হয়নি কেন?” 

মুহাম্মদের অপ্রাসঙ্গিক জবাব: 
বলে দিন: আল্লাহ নিদর্শন অবতরণ করতে পূর্ন সক্ষম; কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না।

১০:২০ 
অবিশ্বাসীদের প্রশ্ন: 
‘বস্তুতঃ তারা বলে, তাঁর কাছে তাঁর পরওয়ারদেগারের পক্ষ থেকে কোন নির্দেশ এল না কেন? 

অপ্রাসঙ্গিক জবাব: 
‘বলে দাও গায়েবের কথা আল্লাহই জানেন। আমি ও তোমাদের সাথে অপেক্ষায় রইলাম”। 

১৩:৭ 
অবিশ্বাসীদের প্রশ্ন: 
‘কাফেররা বলেঃ তাঁর প্রতি তাঁর পালনকর্তার পক্ষ থেকে কোন নিদর্শন অবতীর্ণ হল না কেন’? 

মুহাম্মদের অপ্রাসঙ্গিক জবাব: 
আপনার কাজ তো ভয় প্রদর্শন করাই এবং প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্যে পথপ্রদর্শক হয়েছে। 

২৯:৫০ 
অবিশ্বাসীদের প্রশ্ন: 
‘তারা বলে, তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে তার প্রতি কিছু নিদর্শন অবতীর্ণ হল না কেন? 

অপ্রাসঙ্গিক জবাব: 
‘বলুন, নিদর্শন তো আল্লাহর ইচ্ছাধীন।’ 

>>> পাঠক, একটু মনোযোগের সাথে খেয়াল করুন। কুরাইশরা মুহাম্মদের কাছে বারংবার তাঁর “নবুয়তের প্রমাণ" হাজির করতে বলেছেন। মুহাম্মদের ঘোষিত পালনকর্তা যে অলৌকিক নিদর্শন অবতীর্ণ করতে সক্ষম, সবজান্তা (গায়বের কথা জানেন), অসীম ক্ষমতাধর (যা ইচ্ছা তাইই করতে পারেন) - এ দাবিগুলো স্বয়ং মুহাম্মদের, কুরাইশদের নয়। 

তথাপি মুহাম্মদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাঁর কাছে কোনো নিদর্শন (মোজেজা) কেন অবতীর্ণ হয়নি, সেটাই ছিল কুরাইশদের প্রশ্ন! কুরাইশরা মুহাম্মদকে তাঁর সেই দাবিরই যথার্থতা প্রমাণের চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন! আর মুহাম্মদ প্রতিবারই প্রমাণের পরিবর্তে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক জবাব দিয়ে চলেছেন! 

৬:১০৯-১১১ 
অবিশ্বাসীদের প্রশ্ন: 
তারা জোর দিয়ে আল্লাহর কসম খায় যে, যদি তাদের কাছে কোন নিদর্শন আসে, তবে অবশ্যই তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে।’ 

মুহাম্মদের অপ্রাসঙ্গিক জবাব ও হুমকি: 
‘আপনি বলে দিন: নিদর্শনাবলী তো আল্লাহর কাছেই আছে। হে মুসলমানগণ, তোমাদেরকে কে বলল যে, যখন তাদের কাছে নিদর্শনাবলী আসবে, তখন তারা বিশ্বাস স্থাপন করবেই? আমি ঘুরিয়ে দিব তাদের অন্তর ও দৃষ্টিকে, যেমন-তারা এর প্রতি প্রথমবার বিশ্বাস স্খাপন করেনি এবং আমি তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় উদভ্রান্ত ছেড়ে দিব।’ 

>>> কুরাইশরা তাদের দেবতা "আল্লাহর কসম” খেয়ে বলছেন যে, যদি মুহাম্মদ কোনো 'অলৌকিকত্ব' দেখাতে পারেন, তবে তাঁরা মুহাম্মদকে বিশ্বাস করবেন। মুহাম্মদ তা দেখাতে সক্ষম তো হনই নাই, উল্টা অভিযোগ করছেন, "কে বলল যে তারা বিশ্বাস স্থাপন করবেই?" বড়ই অদ্ভুত! আবারও সেই অত্যন্ত অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য, "নিদর্শনাবলী তো আল্লাহর কাছেই আছে" - হ্যাঁ, এ দাবিটি মুহাম্মদের। কুরাইশরা মুহাম্মদের এই দাবিটিরই “প্রমাণ” দাবী করেছেন! তারপরের অংশটি (হুমকি) আরও অপ্রাসঙ্গিক! অপারগ অক্ষম মুহাম্মদ প্রমাণের পরিবর্তে দিচ্ছেন হুমকি, "আমি ঘুরিয়ে দিব তাদের অন্তর ও দৃষ্টিকে -- আমি তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় উদভ্রান্ত ছেড়ে দিব।" 

মুহাম্মদ নিজেই নিজেকে পূর্ববর্তী নবীদেরই অনুরূপ একজন নবী হিসাবে আখ্যায়িত করেছিলেন। আর সেই দাবির সপক্ষে অবিশ্বাসীরা স্বাভাবিকভাবেই তাঁর নবুয়তের প্রমাণ দাবি করেছিলেন। এটা কি কোনো অপরাধ? কুরাইশ/অবিশ্বাসীদের এহেন যৌক্তিক দাবির প্রেক্ষিতে উল্টাপাল্টা অপ্রাসঙ্গিক জবাব ও হুমকি প্রদর্শনকারীকে কি বিবেকবান, নীতিপরায়ণ, যুক্তিবাদী, সভ্য বা উদার বলা যায়? ভুললে চলবে না যে,  মুহাম্মদ এবং তাঁর অনুসারীরা অবিশ্বাসীদেরকে অন্ধকারের অধিবাসী (আইয়ামে জাহিলিয়াত) বলে অনবরত তাচ্ছিল্য করেন। 

১১:১২ 
অবিশ্বাসীদের প্রশ্ন: 
“ ---তাদের এ কথায় যে, তাঁর উপর কোন ধন-ভান্ডার কেন অবতীর্ণ হয়নি? অথবা তাঁর সাথে কোন ফেরেশতা আসেনি কেন”? 

মুহাম্মদের অপ্রাসঙ্গিক জবাব: 
তুমি তো শুধু সতর্ককারী মাত্র; আর সব কিছুরই দায়িত্বভার তো আল্লাহই নিয়েছেন”। 

২৮:৪৮-৪৯ 
অবিশ্বাসীদের প্রশ্ন: 
“অতঃপর আমার কাছ থেকে যখন তাদের কাছে সত্য আগমন করল, তখন তারা বলল, মূসাকে যেরূপ দেয়া হয়েছিল, এই রসূলকে সেরূপ দেয়া হল না কেন”? 

মুহাম্মদের অপ্রাসঙ্গিক জবাব: 
“পূর্বে মূসাকে যা দেয়া হয়েছিল, তারা কি তা অস্বীকার করেনি? তারা বলেছিল, উভয়ই জাদু, পরস্পরে একাত্ম। তারা আরও বলেছিল, আমরা উভয়কে মানি না। বলুন, তোমরা সত্যবাদী হলে এখন আল্লাহর কাছ থেকে কোন কিতাব আন, যা এতদুভয় থেকে উত্তম পথপ্রদর্শক হয়। আমি সেই কিতাব অনুসরণ করব।” 

>> কী অদ্ভুত! নবুয়তের দাবিদার হলেন মুহাম্মদ, কুরাইশরা নয়। দাবীদার তার দাবির যথার্থতার প্রমাণ হাজির করার পরিবর্তে অস্বীকারকারীদের কাছেই "প্রমাণ দাবি" করছেন! 

পাঠক, মনোযোগের সাথে খেয়াল করুন! “বলুনঃ --একজন মানব, একজন রসূল বৈ আমি কে? (১৭: ৯৬), আমি ও তোমাদের সাথে অপেক্ষায় রইলাম (১০:২০), তুমিতো শুধু সতর্ককারী মাত্র (১১:১২)”—ইত্যাদি আপাত সহনশীল বাণী মুহাম্মদের মক্কা জীবনের। যখন তিনি ছিলেন অক্ষম, অপারগ ও দুর্বল! মদিনায় শক্তিমান মুহাম্মদের বাণী সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। কুরান পাঠের সময় আয়াতের জন্মস্থানের বিষয়টি খেয়াল না রাখলে বিভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ষোল আনা। 

২) সমগ্র কোরআন একদফায় অবতীর্ণ করানোর দাবি 

অবিশ্বাসীদের অভিযোগ: 
২৫:৪ - “কাফেররা বলে, এটা মিথ্যা বৈ নয়, যা তিনি উদ্ভাবন করেছেন এবং অন্য লোকেরা তাঁকে সাহায্য করেছে। অবশ্যই তারা অবিচার ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে।” 
২৫:৬৭-৬৮ - “কাফেররা বলে, যখন আমরা ও আমাদের বাপ-দাদারা মৃত্তিকা হয়ে যাব, তখনও কি আমাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে? এই ওয়াদাপ্রাপ্ত হয়েছি আমরা এবং পূর্ব থেকেই আমাদের বাপ-দাদারা। এটা তো পূর্ববর্তীদের উপকথা বৈ কিছু নয়।” 

৪:১৫৩ 
অবিশ্বাসীদের দাবী: 
“আপনার নিকট আহলে-কিতাবরা আবেদন জানায় যে, আপনি তাদের উপর আসমান থেকে লিখিত কিতাব অবতীর্ণ করিয়ে নিয়ে আসুন।

মুহাম্মদের অপ্রাসঙ্গিক জবাব ও হুমকি: 
“বস্তুত: এরা মূসার কাছে এর চেয়েও বড় জিনিস চেয়েছে| বলেছে, একেবারে সামনাসামনিভাবে আমাদের আল্লাহ্কে দেখিয়ে দাও| অতএব, তাদের উপর বজ্রপাত হয়েছে তাদের পাপের দরুন; অত:পর তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ-নিদর্শন প্রকাশিত হবার পরেও তারা গো-বৎসকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছিল; তাও আমি ক্ষমা করে দিয়েছিলাম এবং আমি মূসাকে প্রকৃষ্ট প্রভাব দান করেছিলাম”। 

২৫:৩২ 
অবিশ্বাসীদের দাবী: 
“সত্য প্রত্যাখানকারীরা বলে, তাঁর প্রতি সমগ্র কোরআন একদফায় অবতীর্ণ হল না কেন?” 

মুহাম্মদের অপ্রাসঙ্গিক জবাব: 
“আমি এমনিভাবে অবতীর্ণ করেছি এবং ক্রমে ক্রমে আবৃত্তি করেছি আপনার অন্তকরণকে মজবুত করার জন্যে।

>>> অবিশ্বাসীরা সর্বদাই অভিযোগ করতেন যে, মুহাম্মদ যা কিছু প্রচার করতেন, তা পূর্ববর্তীদের উপকথা বৈ আর কিছুই নয় - যা তাঁরা বহু আগে থেকেই শুনে আসছেন। তাঁরা অভিযোগ করতেন যে, মুহাম্মদ 'নিজেই কুরান রচনা করেছেন এবং অন্যেরাও তাঁকে এ ব্যাপারে সাহায্যে করেছে।' মুহাম্মদ আরও দাবি করেছেন যে, সমগ্র কুরান বহু আগেই থেকেই লিপিবদ্ধ অবস্থায় আল্লাহর কাছে গচ্ছিত আছে। মুহাম্মদের এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কুরাইশদের দাবি, "যদি তাইই হয় তবে সমগ্র কুরান একসঙ্গে হাজির করো না কেন?" মুহাম্মদ তা হাজির করতে ব্যর্থ হয়েছেন। 

২৯:৫০-৫৩ 
অবিশ্বাসীদের প্রশ্ন: 
“তারা বলে, তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে তার প্রতি কিছু নিদর্শন অবতীর্ণ হল না কেন?” 

মুহাম্মদের অপ্রাসঙ্গিক জবাব ও হুমকি/ ভীতি প্রদর্শন: 
“বলুন, নিদর্শন তো আল্লাহর ইচ্ছাধীন। আমি তো একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র। এটা কি তাদের জন্যে যথেষ্ট নয় যে, আমি আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি, যা তাদের কাছে পাঠ করা হয়। এতে অবশ্যই বিশ্বাসী লোকদের জন্যে রহমত ও উপদেশ আছে। বলুন, আমার মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে আল্লাহই সাক্ষীরূপে যথেষ্ট। তিনি জানেন যা কিছু নভোমন্ডলে ও ভূ-মন্ডলে আছে। আর যারা মিথ্যায় বিশ্বাস করে ও আল্লাহকে অস্বীকার করে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। তারা আপনাকে আযাব ত্বরান্বিত করতে বলে। যদি আযাবের সময় নির্ধারিত না থাকত, তবে আযাব তাদের উপর এসে যেত। নিশ্চয়ই আকস্মিকভাবে তাদের কাছে আযাব এসে যাবে, তাদের খবরও থাকবে না।

>>> অবিশ্বাসীরা বারংবার অভিযোগ করে আসছেন যে, মুহাম্মদ নিজেই কুরান রচনা করেছেন এবং অন্যেরাও তাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করেছেন। সেই অভিযোগের প্রশ্নে মুহাম্মদের জবাব, "এটাকি তাদের জন্যে যথেষ্ট নয় যে, আমি আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি-”! অর্থাৎ, মুহাম্মদের 'কিসসা-কাহিনী-হুমকি-শাসানি- তাচ্ছিল্য-ভীতি প্রদর্শন' সম্বলিত পুস্তকটিই মুহাম্মদের নবুয়তের সাক্ষী! তার আর কোন প্রমাণ দেখানোর প্রয়োজন নেই। কী অদ্ভুত যুক্তি! 

৩) কেয়ামত কখন অনুষ্ঠিত হবে? 

৭:১৮৭-১৮৮ 
অবিশ্বাসীদের প্রশ্ন: 
“আপনাকে জিজ্ঞেস করে, কেয়ামত কখন অনুষ্ঠিত হবে?

অপ্রাসঙ্গিক জবাব ও হুমকি/ ভীতি প্রদর্শন: 
“বলে দিন এর খবর তো আমার পালনকর্তার কাছেই রয়েছে। তিনিই তা অনাবৃত করে দেখাবেন নির্ধারিত সময়ে। আসমান ও যমীনের জন্য সেটি অতি কঠিন বিষয়। যখন তা তোমাদের উপর আসবে অজান্তেই এসে যাবে। আপনাকে জিজ্ঞেস করতে থাকে, যেন আপনি তার অনুসন্ধানে লেগে আছেন। বলে দিন, এর সংবাদ বিশেষ করে আল্লাহর নিকটই রয়েছে। কিন্তু তা অধিকাংশ লোকই উপলব্ধি করে না। 

৬৭:২৫-২৯ 
প্রশ্ন
‘কাফেররা বলেঃ এই প্রতিশ্রুতি কবে হবে, যদি তোমরা সত্যবাদী হও?’ 

মুহাম্মদের জবাব ও হুমকি/ ভীতি প্রদর্শন: 
‘বলুন, এর জ্ঞান আল্লাহ তা’আলার কাছেই আছে। আমি তো কেবল প্রকাশ্য সতর্ককারী। যখন তারা সেই প্রতিশ্রুতিকে আসন্ন দেখবে তখন কাফেরদের মুখমন্ডল মলিন হয়ে পড়বে এবং বলা হবেঃ এটাই তো তোমরা চাইতে।’

৭৯:৪২-৪৪ 
প্রশ্ন: 
‘তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করে, কেয়ামত কখন হবে?’ 

অপ্রাসঙ্গিক জবাব: 
‘এর বর্ণনার সাথে আপনার কি সম্পর্ক? এর চরম জ্ঞান আপনার পালনকর্তার কাছে। যে একে ভয় করে, আপনি তো কেবল তাকেই সতর্ক করবেন।’ 

১০:৪৮-৫০ 
অবিশ্বাসীদের প্রশ্ন: 
‘তারা আরো বলে, এ ওয়াদা কবে আসবে, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক? 

অপ্রাসঙ্গিক জবাব হুমকি/ ভীতি প্রদর্শন: 
তুমি বল, আমি আমার নিজের ক্ষতি কিংবা লাভেরও মালিক নই, কিন্তু আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন। প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্যই একেকটি ওয়াদা রয়েছে, যখন তাদের সে ওয়াদা এসে পৌঁছে যাবে, তখন না একদন্ড পেছনে সরতে পারবে, না সামনে ফসকাতে পারবে। - তুমি বল, আচ্ছা দেখ তো দেখি, যদি তোমাদের উপর তার আযাব রাতারাতি অথবা দিনের বেলায় এসে পৌঁছে যায়, তবে এর আগে পাপীরা কি করবে’? 

২১:৩৮-৪৬ 
অবিশ্বাসীদের প্রশ্ন: 
‘এবং তারা বলেঃ যদি তোমরা সত্যবাদী হও তবে এই ওয়াদা কবে পুর্ণ হবে? 

মুহাম্মদের অত্যন্ত অপ্রাসঙ্গিক জবাব, তাচ্ছিল্য ও হুমকি/ ভীতি প্রদর্শন: 
‘যদি কাফেররা ঐ সময়টি জানত, যখন তারা তাদের সম্মুখ ও পৃষ্ঠদেশ থেকে অগ্নি প্রতিরোধ করতে পারবে না এবং তারা সাহায্য প্রাপ্ত হবে না। বরং তা আসবে তাদের উপর অতর্কিত ভাবে, অতঃপর তাদেরকে তা হতবুদ্ধি করে দেবে, তখন তারা তা রোধ করতেও পারবে না এবং তাদেরকে অবকাশও দেয়া হবে না। আপনার পূর্বেও অনেক রাসূলের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা হয়েছে। অতঃপর যে বিষয়ে তারা ঠাট্টা করত তা উল্টো ঠাট্টাকারীদের উপরই আপতিত হয়েছে। বলুনঃ ‘রহমান’ থেকে কে তোমাদেরকে হেফাযত করবে রাত্রে ও দিনে। বরং তারা তাদের পালনকর্তার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে। তবে কি আমি ব্যতীত তাদের এমন দেব-দেবী আছে যারা তাদেরকে রক্ষা করবে? তারা তো নিজেদেরই সাহায্য করতে সক্ষম নয় এবং তারা আমার মোকাবেলায় সাহায্যকারীও পাবে না। বরং আমি তাদেরকে এবং তাদের বাপ-দাদাকে ভোগসম্বার দিয়েছিলাম, এমনকি তাদের আয়ুস্কালও দীর্ঘ হয়েছিল। তারা কি দেখে না যে, আমি তাদের দেশকে চতুর্দিক থেকে হ্রাস করে আনছি। এরপরও কি তারা বিজয়ী হবে? বলুনঃ আমি তো কেবল ওহীর মাধ্যমেই তোমাদেরকে সতর্ক করি, কিন্তু বধিরদেরকে যখন সতর্ক করা হয়, তখন তারা সে সতর্কবাণী শোনে না। আপনার পালনকর্তার আযাবের কিছুমাত্রও তাদেরকে স্পর্শ করলে তারা বলতে থাকবে, হায় আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা অবশ্যই পাপী ছিলাম। 

২৭:৭১-৭২ 
অবিশ্বাসীদের প্রশ্ন: 
‘তারা বলে, তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে বল, এই ওয়াদা কখন পূর্ণ হবে? 

মুহাম্মদের জবাব: 
বলুন, অসম্ভব কি, তোমরা যত দ্রুত কামনা করছ তাদের কিয়দংশ তোমাদের পিঠের উপর এসে গেছে। 

৩২:২৮-২৯ 
অবিশ্বাসীদের প্রশ্ন: 
‘তারা বলে তোমরা সত্যবাদী হলে বল; কবে হবে এই ফয়সালা? 

মুহাম্মদের হুমকি/ ভীতি প্রদর্শন: 
‘বলুন, ফয়সালার দিনে কাফেরদের ঈমান তাদের কোন কাজে আসবে না এবং তাদেরকে অবকাশ ও দেয়া হবে না।’ 

৩৪:২৯-৩০ 
অবিশ্বাসীদের প্রশ্ন: 
‘তারা বলে, তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তবে বল, এ ওয়াদা কখন বাস্তবায়িত হবে?’ 

অপ্রাসঙ্গিক জবাব: 
“বলুন, তোমাদের জন্যে একটি দিনের ওয়াদা রয়েছে যাকে তোমরা এক মহূর্তও বিলম্বিত করতে পারবে না এবং ত্বরান্বিত ও করতে পারবে না।” 

৩৬:৪৮-৫০ 
অবিশ্বাসীদের প্রশ্ন: 
‘তারা বলে, তোমরা সত্যবাদী হলে বল এই ওয়াদা কবে পূর্ণ হবে’? 

মুহাম্মদের হুমকি: 
‘তারা কেবল একটা ভয়াবহ শব্দের অপেক্ষা করছে, যা তাদেরকে আঘাত করবে তাদের পারস্পরিক বাকবিতন্ডাকালে। তখন তারা ওছিয়ত করতেও সক্ষম হবে না। এবং তাদের পরিবার-পরিজনের কাছেও ফিরে যেতে পারবে না।’ 

৫১:১২-১৪
প্রশ্ন: 
‘তারা জিজ্ঞাসা করে, কেয়ামত কবে হবে’? 

মুহাম্মদের হুমকি/ ভীতি প্রদর্শন: 
যেদিন তারা অগ্নিতে পতিত হবে, তোমরা তোমাদের শাস্তি আস্বাদন কর। তোমরা একেই ত্বরান্বিত করতে চেয়েছিল।’ 

৩৩:৬৩-৬৮ 
অবিশ্বাসীদের প্রশ্ন: 
‘লোকেরা আপনাকে কেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে।’ 

অপ্রাসঙ্গিক জবাব ও হুমকি: 
বলুন, এর জ্ঞান আল্লাহর কাছেই। আপনি কি করে জানবেন যে সম্ভবতঃ কেয়ামত নিকটেই। নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদেরকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তাদের জন্যে জ্বলন্ত অগ্নি প্রস্তুত রেখেছেন। তথায় তারা অনন্তকাল থাকবে এবং কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না। যেদিন অগ্নিতে তাদের মুখমন্ডল ওলট পালট করা হবে; সেদিন তারা বলবে, হায়। আমরা যদি আল্লাহর আনুগত্য করতাম ও রসূলের আনুগত্য করতাম। তারা আরও বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা আমাদের নেতা ও বড়দের কথা মেনেছিলাম, অতঃপর তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল। হে আমাদের পালনকর্তা! তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং তাদেরকে মহা অভিসম্পাত করুন।’

>>> কিয়ামতের হুমকি/দাবি মুহাম্মদের। কুরাইশরা মুহাম্মদের সে দাবীরই যথার্থতার প্রমাণ জানতে চাইছেন, "কেয়ামত কখন অনুষ্ঠিত হবে?" বরাবরের মতই উল্টা-পাল্টা অপ্রাসঙ্গিক জবাব, হুমকি-শাসানী ও ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে মুহাম্মদ তার "অক্ষমতা ও অপারগতার প্রমাণ" হাজির করেছিলেন। সে কারণেই অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই কুরাইশরা মুহাম্মদকে প্রতারক, জালিয়াত, ভণ্ড ও মিথ্যাবাদী রূপে আখ্যায়িত (বিস্তারিত সপ্তদশ, অষ্টাদশ এবং বাইশতম পর্বে) করেছিলেন। তাঁরা কি কোনো গর্হিত অপরাধ করেছিলেন? 

পাঠক, বাস্তব ব্যক্তি জীবনের অনুরূপ পরিস্থিতিতে (কল্পনা করুন) এহেন স্পেশাল দাবিদার কোনো ‘স্বঘোষিত নবী-আউলিয়া-পীর-কামেল-সাধুবাবার’ দাবিকে আপনারা কুরানে বর্ণিত ওপরোক্ত সওয়াল-জবাবের মাপকাঠিতে কীভাবে মূল্যায়ন করতেন? অকাট্য সত্যবাদী রূপে? নাকি ভণ্ড-প্রতারক রূপে? 

[কুরানের উদ্ধৃতিগুলো সৌদি আরবের বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ (হেরেম শরীফের খাদেম) কর্তৃক বিতরণকৃত বাংলা তরজমা থেকে নেয়া; অনুবাদে ত্রুটি-বিচ্যুতির দায় অনুবাদকারীর। কুরানের ছয়জন বিশিষ্ট অনুবাদকারীর পাশাপাশি অনুবাদ এখানে।]

(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন