লিখেছেন কৌশিক
৫.
বাসায় ফেরার পথে এমপিথ্রিতে সুরা আল ইমরান শুনতেছিলাম। মিশরীয় এক বিখ্যাত ক্বারীর কণ্ঠে। গাড়ির দুইপাশের জানালা দিয়ে আমি যেন ধুসর মরুভূমিতে চলে গেলাম। ওহুদের পথে। কিছু বুঝি না। কিন্তু মনে হয় আল্লাহর কালাম, এ শুনলেই মন ভাল হয়ে যায়। আমাদের পিচ টিভির আহমেদ দিদার বলেন, একজন কাফেরকে যুক্তি না দিয়ে শুধু যদি কুরআনের একটা আয়াত শোনান, তাহলেও দেখবেন তার মন নরম হয়ে যাবে। কত রোমান, গ্রীক, ক্যাথলিক পাদ্রী শুধু কুরাআনের আয়াত শুনে মুসলমান হয়ে গেল! আমি কুরআনুল মোবারকের আয়াত শুনতে শুনতে মনে হলো উটে সওয়ার হয়ে বাড়ির পথে যাচ্ছি, কখনও মনে হয় মদীনা মুনওয়ারার পথে। এই ডিভাইসটা কত ভাল কাজে ব্যবহার করা যায়, আল্লাহর শোকর, তিনি বিজ্ঞানকে দ্বীনি কল্যাণে ব্যবহার করার সুযোগ দান করেছেন।
বাসায় ফিরে প্যান্ট খোলার সময় বুঝলাম, কেন নবীজি খোলামেলা কোর্তা পরতেন। জাইঙ্গা দুই উরুর মাঝখানে লেগে রয়েছে। অথচ পায়জামা পড়লে কত আরাম। দ্বীনি পোষাক পরিধান করলে দুনিয়াবী কাজেও কত সুবিধা, শরীরে ফুরফুরা একটা আরাম চলে আসে। অন্তর্গত সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আলো-বাতাস পায়। ঈমানদারের শ্রেষ্ঠত্ব আসলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায়। সাদা কাপড়ের পাজামা, পাঞ্জাবি, কত চমৎকারভাবে ছতর ঢাকে আবার একটা শুভ্রতাও ছড়িয়ে দেয়। মাথায় টুপি আর পাগড়ি ধুলোবালি থেকে শুরু করে টাক পর্যন্ত ঢেকে দেয়। মানুষে-মানুষে বৈষম্য তৈরি হয় না। সোবহানাল্লাহ, পোষাক পরিচ্ছেদেও মানুষের ঈমান ফুটে ওঠে।
আমি আমার পাজামা-পাঞ্জাবি বের করলাম। নবীজির পাঞ্জাবি হচ্ছে লম্বা পাঞ্জাবী, কিন্তু দুইপাশ থেকে না ফাড়া হলেই ভাল। হাঁটুর নিচ পর্যন্ত হতে হবে। আমি দুই পাশের ফাড়া সেলাই করে পাঞ্জাবী পরিধান করলাম। তারপরে পাজামা পরে মনে হলো, হৃদয়ে একটা নুরানী জ্যোতি ভর করলো। স্যান্ডেল পড়ে মাগরিবের নামাজের জন্য বের হবার আগে একটু আতর দিয়ে নিলাম। তুলোতে একটু চুবিয়ে কানের গর্তে রাখলাম। সুবাসের সাথে ঈমানের সম্পর্ক। এরপরে একটু সুরমা। দুই চোখের পাতায় সুরমা দেয়া সুন্নত। জানেন, আমাদের ইসলামিক টিভির আলোচকরা কী সুন্দর সুরমা দিয়ে রাখেন, তাদের দাড়ি দেখে আমার হিংসা হয়। তওবা, হিংসা নয়, ঈর্ষা হয়। দ্বীনি তরক্কীর জন্য কেউ যখন প্রতিযোগিতা করে ভাল কাজ করতে চায়, তখন সেটা খারাপ নয়।
মসজিদে যত ঘুরে যাওয়া যায় তত মঙ্গল। প্রতি কদমে কদমে নেকী। রাস্তার ডান দিক থেকে হাঁটতে হয়। মাথা নিচু করে। এর কত মর্তবা। রাস্তায় গর্ত থাকলে দুর্ঘটনা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে, আবার জমিনের দিকে তাকিয়ে এই এহছাছও তৈরি হবে যে, একদিন এই জমিনে ফিরে যেতে হবে।
সোবহান্নাল্লাহ। আল-কুরআন আমাদেরকে পোষাক থেকে শুরু করে পথচলা সর্বত্রই কত আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি শিখিয়েছে। আপনাকে আমাকে আমল করা তৌফিক এনায়েত করেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন