লিখেছেন সৈকত চৌধুরী
১৫ ফেব্রুয়ারী। আজকের এই দিনে রাজীব হায়দারকে হত্যা করা হয়েছিল। যারা হত্যা করেছিল, তাদের সাথে ওর বিন্দুমাত্র কোনো শত্রুতা ছিল না। শুধু ধর্মীয় কর্তব্য পালন করার জন্যই তারা রাজীবকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এভাবে হত্যা করতে স্বয়ং মুহাম্মদই উৎসাহ দিয়েছিলেন। ইসলাম এমন একটি পিশাচ ধর্ম, যা সে ধর্ম ত্যাগকারীদের, সমালোচনাকারীদের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান করেছে।
না, এরকম হত্যাকাণ্ডের পরও ধর্ম টিকবে না, বরং তা ধর্মের পতন ত্বরান্বিত করবে। আশা করি, এ শতাব্দীতেই ধর্মের মৃত্যু ঘটবে পুরোদমে। সভ্যতাকে এগিয়ে নিতে হলে ধর্মের পরাজয় আবশ্যক। ইতোমধ্যে বড় সকল ধর্মই কার্যত পরাজিত হয়ে গেছে, এখন ধুঁকে ধুঁকে মানবতার নামে শিৎকার দিয়ে ঠিকে আছে। শুধু ইসলাম বড্ড আনাড়িপনায় মেতেছে। কারণ একে ধারণ করছে যারা, তাদের মধ্যে অজ্ঞতা, নিরক্ষরতা এবং অশিক্ষার হার ভয়ানক।
মানুষ অযৌক্তিক কোনো বিশ্বাস ধারণ করলে তা বিপদজনক হওয়ার আশংকা থাকেই। এর মধ্যে ইসলাম ধর্মের সাথে রাজনীতির সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও মৌলিক। মুহাম্মদ শুধু আধ্যাত্মিক নেতা হতে চাননি বরং রাজনৈতিক সকল অর্জনের জন্য ধর্মকে ব্যবহার করেছিলেন পুরোদমে। ধর্ম থাকলে এর ব্যবহার এবং অপব্যবহার থাকবেই, কারণ তা পুরোমাত্রায় অন্ধবিশ্বাস।
ধর্ম মানুষকে চিন্তা করতে বাধা দেয় এবং ভয় দেখায়। ধর্মীয় অপবিশ্বাস একজন ভাল মানুষকে অমানুষে পরিণত করে। আপনি একজন ভাল মুসলিম হলে অমুসলিমদের ঘৃণা করবেন, অবশ্যই সাম্প্রদায়িক হবেন, তাদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক মেনে নেবেন না, দাঙ্গাকে জিহাদ মনে করবেন, হজ্ব করতে গিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা অপাত্রে ঢেলে চলে আসবেন, নারীদের অধিকার মেনে নেবেন না।
হেফাজতিরা অশিক্ষিত নয়। তারা ইসলামী শিক্ষায় কুশিক্ষিত। যখন আল্লামা শাফির মত সর্বোচ্চ স্তরের একজন আলেম নারীশিক্ষার বিরুদ্ধে বিষোদগার করার সাহস দেখান, তখন বোঝা উচিত, সমস্যার মূল কোথায়। হেফাজতিদের ১৩ দফা দাবি ইসলাম থেকে উৎসরিত। এই ১৩ দফায় আরেক বার চোখ বুলিয়ে দেখুন, ইসলাম থেকে তারা কী শিক্ষা পেয়েছেন।
১৩ দফা দাবিতে যা আছে:
১. সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে ‘মহান আল্লাহরওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন করতে হবে।
২. আল্লাহ, রাসূল (সা.) ওইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুত্সা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তিমৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস করতে হবে।
৩. শাহবাগ আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী নাস্তিক-মুরতাদ এবং প্রিয় নবী (সা.)-এর শানে কুত্সা রটনাকারী ব্লগার ও ইসলামবিদ্বেষীদের সব অপপ্রচার বন্ধ করে গ্রেফতারপূর্বক কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. রাসুল প্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা,মাদরাসার ছাত্র এবং তৌহিদি জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, নির্বিচার গুলিবর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে।
৫. অবিলম্বে গ্রেফতার করা সব আলেম-ওলামা, মাদরাসা ছাত্র ও তৌহিদি জনতাকে মুক্তিদান, দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং দুষ্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
৬. জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ে বাধা-বিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ-নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করতে হবে।
৭. কাদিয়ানিদের সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সব অপতত্পরতা বন্ধ করতে হবে।
৮. ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যেনারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বলনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
৯. মসজিদের নগরী ঢাকাকে মূর্তির নগরীতে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তিস্থাপন বন্ধ করতে হবে।
১০. ইসলামবিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলামি শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।
১১. সারা দেশের কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক, ওলামা-মাশায়েখ এবং মসজিদের ইমাম-খতিবকে হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দানসহ তাদের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে।
১২. রেডিও, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় দাড়ি, টুপি ও ইসলামি কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসি-ঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় খল ও নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করতে হবে।
১৩. পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও, কাদিয়ানিদের অপতত্পরতা এবং খ্রিস্টান মিশনারিদের ধর্মান্তকরণসহ সব অপতত্পরতা বন্ধ করতে হবে।
প্রতিটি দফা একবার করে পড়ুন ও এক মিনিট করে ভেবে দেখুন। মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে অজস্র ছেলে। তাদেরকে কী শেখানো হচ্ছে? নারীদের ব্যাপার তো আছেই, তার সাথে ২য় দফায় আছে ইসলামের সমালোচনাকারীদের মৃত্যুদণ্ডের দাবি। কাদিয়ানী নামক একটি নিরীহ ক্ষুদ্র সম্প্রদায়, যারা জিহাদে বিশ্বাস করে না, তাদের প্রতি হেফাজতিদের দৃষ্টিভঙ্গি একটু খেয়াল করুন। আমাদের লক্ষ-লক্ষ ছেলেকে মাদ্রাসায় শিক্ষার নামে সাম্প্রদায়িক এবং খুনি মানসিকতাসম্পন্ন করে তোলা হচ্ছে, সে ব্যাপারে কাউকে বলতে শোনা যায় না। এই মাদ্রাসাগুলোর উপযোগিতা কী, এগুলো কার স্বার্থে চলতে দেয়া হচ্ছে, সে প্রশ্নও উত্থাপিত করতে দেখি না কাউকে।
মুহাম্মদের প্রবর্তিত ধর্ম এ উপমহাদেশে একটা গজব হয়ে এসেছে। যে ধর্ম মরুভূমিতে বেড়ে উঠেছে, সে ধর্ম যে উর্বর ভূমিতে খাপ খাবে না, তা বলাই বাহুল্য। ধর্মের কারণেই আমরা বিভক্ত হয়েছিলাম, সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন থাকার পরও ভারতের অনেক অংশ দূরে চলে গেল, পাকিস্তানিদের সাথে ছিলাম ২৪ টা বছর। ত্রিশ লক্ষ প্রাণ দিয়ে সে ভুলের মাশুল দিতে হয়েছিল। মুহাম্মদের মত একজন মানুষ, যিনি গণহত্যার সাথে জড়িত ছিলেন, শিশুবিবাহ করেছিলেন, ডজন খানেক বিবি-দাসী ছিল যার হারেমে, হিজরতের পর এক দশকেই শ’খানেক যুদ্ধ-অভিযান-দস্যুপনায় নিজেকে জড়িত করেছিলেন, চুরির অপরাধে হাতকাটা ও ব্যভিচারের অপরাধে প্রস্তরাঘাতে হত্যাকে বিধান করেছেন, তিনি যে নবী নন, বরং জঘন্য প্রতারক এবং অন্তত আধুনিক কালে তিনি অনুসরণযোগ্য নন, তা ব্রেনওয়াশড নাহলে একটা শিশুরও বোঝার কথা।
ধর্মের মৃত্যু ত্বরান্বিত করা জরুরী। নাহলে আমাদের সন্তানই হয়ত প্রবল ধার্মিক হয়ে উঠবে, খুনি হয়ে উঠবে, হিজবুতে বা শিবিরে যোগ দেবে, আনসারুল্লাহ বরাহ শাবকদের সাথে মিশবে, সাম্প্রদায়িক হবে, বোমা মারবে। ধর্মে বিশ্বাসী হলে আপনি নিজেই ব্যবহৃত হবেন অশুভ উস্কানিতে। আমাদের দেশেই ৬৪ টি জেলায় একসঙ্গে বোমা হামলা করা হয়েছিল। জে এম বির প্রধান শায়খ আব্দুর রহমান মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া করে আলেম হয়ে এসেছিলেন।
সকল শুভ উদ্যোগে বাধা দেয়ার জন্য রয়েছে একদল সুশীল। দুঃখের বিষয়, একদিন ধর্ম থাকবে না, কিন্তু সেদিনও এসব সুশীল থাকবে। যখন অনেকেই ধর্ম নিয়ে লিখছে, তখন তারা প্রশ্ন তুলেছে, ধর্ম কেন, কেন অন্য কিছু নয়? দেশের শ'দুয়েক জন যদি শুধু ধর্ম নিয়ে লেখে, তাতে সমস্য কোথায়? আর সুশীলরা নিজেরাই বা অন্য সমস্যাগুলো নিয়ে কতটুকু কী করতে পেরেছে, তা তো দেখাই যাচ্ছে। কেউ কবিতা লিখলে, কেউ মহান সাহিত্য রচনা করলে অথবা অন্য যে কোন কিছু করলেও আমরা তো বলি না, কেন শুধু ওটা নিয়ে ব্যস্ত? এ ধরণের প্রশ্ন করার অধিকার কারো নেই, অন্তত রাজীবের হত্যাকাণ্ডের পর।
ধর্মকে আঘাত করতে হবে সকল ভাবেই, মানুষ হিসাবে এটা করা আমাদের অধিকার। ধর্মকে যারা সত্য বলে মনে করে, তাঁদেরকেও এটা মেনে নিতে হবে। যদি ধর্মের সমালোচনা করার অধিকারকে তাঁরা স্বীকৃতি না দেন, তবে এর মানে ধর্মের দেউলিয়াত্ব তাঁরা স্বীকার করে নিচ্ছেন। তবে হ্যাঁ, ধর্ম নিয়ে যা-ই করা হোক, এর একটা যৌক্তিক ব্যাখ্যা থাকা দরকার। কারণ আমাদের আশেপাশে ধর্মবিশ্বাসীদের মধ্যে যুক্তিবোধ সম্পন্ন অনেকেই রয়েছেন, যারা এখন ধর্মে বিশ্বাস করেন না, তাদের প্রায় সকলেই আগে ধর্মবিশ্বাসী ছিলেন, তাই না? আর ধর্মকে মানবিক করতে হলেও একে যুক্তি-ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের মাধ্যমে আঘাত করতে হবে। ধর্মবিরোধীদের সমালোচনাতেই ধর্ম খোলস পাল্টে বর্বরতা থেকে বেরোনোর আয়োজন করে।
ধর্মবিশ্বাসীদেরও এ ব্যাপারে একটু সাহায্য করি। তাঁদের অনেকের প্রশ্ন: ধর্ম সমালোচনা কীভাবে বন্ধ হবে? এটা বন্ধ হবে, তারা কল্লা কেটে ফেলার আয়োজন যখন বন্ধ করবেন, ধর্মের সকল প্রকার সমালোচনাকে অধিকার হিসাবে স্বীকৃতি দেবেন, ধর্মীয় নিপীড়ন বন্ধ করবেন, তখন। কারণ তখন আসলে ধর্ম-সমালোচনার এই উপযোগিতাটাও থাকবে না। উদাহরণ হিসাবে ইউরোপের দেশগুলোর কথা বলি। সেখানে ধর্মকে তুলাধোনা করা হলেও কেউ উত্তেজিত হয় না, এটা নিয়ে হৈচৈ করে না এবং যেহেতু ধর্মীয় নিপীড়ন তলানিতে, তাই এগুলো খুব একটা মনোযোগও পায় না।
আজ শুধু রাজীব নয়, স্মরণ করছি তাদেরও যারা তাকে হত্যা করেছিল। দেখুন তাদের নূরানী চেহারা।
এই মেধাবি ছেলেরা কেন সোনালী ভবিষ্যৎ ফেলে এই অন্ধকার জগতে প্রবেশ করলো, এর উত্তর আমাদের অজানা থাকার কথা নয়। এরা শুধু রাজীবের খুনী নয়, এরা আমাদের যে কারো খুনী হতে পারত। এদের প্রতি ঘৃণা নয় - এরা আমাদেরই কারো সন্তান, যিনি নিজেই অথবা আমাদের সমাজেরই কেউ তাদের শিখিয়েছিলেন - ইসলামই সর্বোত্তম, তাই তারা তাদের বিশ্বাসে যা সর্বোত্তম তা-ই করেছে। কারো প্রতি ঘৃণা নয়, সকলকে রক্ষা করার জন্যই আমাদেরকে ধর্ম নিয়ে ঘাঁটতে হবে, এর অমানবিক দিক উন্মোচন করে দেখিয়ে দিতে হবে।
মানুষকে ভালবাসি বলেই ধর্মকে ঘৃণা করি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন