অনেকদিন পরের ঘটনা। কেয়ামত, হাশরের ময়দানে বিচার, পুলসিরাত সব হয়ে গিয়েছে। নাস্তিক, খ্রিষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ, উপজাতি, এস্কিমো, গুহামানব এবং মুসলমানদের ৭৩ টির মধ্যে থেকে ৭২ টি দল দোজখে গিয়েছে। অন্যদিকে বেহেশতে গিয়েছে ৭৩ টি থেকে মুসলমানদের একটি মাত্র দল।
যাইহোক ৭টি দোজখ শুরু হল একটি বিশাল জনসংখ্যা ও কঠিন জীবন নিয়ে। অন্যদিকে দোজখের থেকে বহুগুণ বড় বেহেশতগুলি যাত্রা শুরু করল সামান্য কিছু মুসলমান নিয়ে। কয়েক হাজার বছর পরে দোজখ আর বেহেশতের চিত্র বদলাতে থাকল। দোজখে গিয়েছিল দুনিয়ার ইতিহাসের বিখ্যাত সব মানুষ। অ্যারিস্টোটল, আর্কিমিডিস, নিউটন, আইনস্টাইন, ফাইন্ম্যান, সেগান, হকিং-এর মত লোকেরা ও বিশাল বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের স্রোত। প্রথমে এদের শাস্তির বিধান দেওয়া থাকলেও এদের ভদ্র ও নম্র ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে ফেরেশতারা তাদেরকে ছেড়ে দিয়ে নিজেদের মত বাঁচার সুযোগ দিল।
ধীরে ধীরে দোজখের অবস্থা বদলাতে লাগলো সেখানকার বিজ্ঞানী ও ইঞ্জিনিয়াররা দোজখের হিট এনার্জি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করল, প্রচণ্ড তাপে দোজখে উন্নত মানের ধাতু তৈরি হত, যা ব্যবহার করে তারা নানা রকম কন্সট্রাকশন শুরু করল। উন্নত পিউরিফিকেশন ব্যবহার করে পুঁজ আর রক্তকে বিশুদ্ধ পানিতে রূপান্তরিত করল, জাক্কুম বৃক্ষর সিলেক্টিভ ব্রিডিং আর জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং করে নানা ফলের গাছ লাগাল, কৃত্রিম সেচের মাধ্যমে জমিতে শস্য উৎপাদন করল। এখন আর দোজখ আগের মত নেই। এখানে সবাই এসি-তে থাকে, বিশুদ্ধ পানি পান করে আর অত্যাধুনিক ট্র্যান্সপোর্ট সিস্টেমের সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে।
অন্যদিকে বেহেশতের অবস্থা অতি করুণ হতে লাগল। প্রথমত সেখানে গিয়েছিল অতি নিম্ন জাতের কিছু মানুষ। দুনিয়াতে সারাদিন হুরের স্বপ্নে বিভোর থাকা কিছু লোকজন। স্বভাবতই এরা সেখানেও তাদের নোংরা জীবনযাপন চালাতে লাগলো। হাউজে কাউসারে পানের পিক পড়ে পড়ে সাদা থেকে লাল হয়ে গেল। ৯০ ফুট আকৃতির বিশালাকায় বেহেশতবাসী একেকজন যখন ৭২ হুরের সাথে আকাম করতে লাগল, তখন ধীরে ধীরে সরাব আর দুধের নদীর বদলে অন্য কিছুর নদী বইতে শুরু করলো।
একদিন বেহেশতে শফি হুজুর চাইলেন যে, তাঁর সন্তান হবে। কারণ বিনা সন্তানে তাঁর নিজেকে খাসী মনে হচ্ছে। তো তাঁর ইচ্ছে হওয়া মাত্র আল্লাহ্ তাঁর ইচ্ছে পূরণ করল। ওদিকে তার সন্তান থেকে তার মুরিদগণও সন্তান চেয়ে বসল। ধীরে ধীরে বেহেশতে মানুষে মানুষে ছেয়ে গেল। খাদ্য সংকট, হুরী সংকট, মদ্য সংকট ইত্যাদি বেহেশতবাসীকে নাজেহাল করে দিল। অন্যদিকে দোজখবাসীর উন্নত জীবন দেখে তারা ক্ষেপে গেল। আল্লাহ্ এখন মহা চিন্তিত হয়ে পড়ল! ভাবল, কী করা যায়! তখন সে তার ফেরেশতা পাঠিয়ে নাস্তিকদের দোজখ নগরীগুলিকে ধ্বংস করে ফেলল। ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে সব দোজখবাসী বের হয়ে এল। যেহেতু তারা একবার মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করেছে তাই কেউ মরল না কিন্তু শহরের জন্যে সবাই কান্নাকাটি করতে লাগলো! এমতবস্থায় নিউটন প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে বলল, "Every action has an equal and opposite reaction"
আল্লাহ্কে কীভাবে ক্ষতম করা যায়, তার জন্যে তারা গবেষণা শুরু করল। তারা ভেবে দেখল যে, আল্লাহ্ যে অন্তর্যামী, মানে সবকিছু জানে, এই কথাটি আসলে ভুয়া না হলে সে আদমকে তৈরি করত না তার বংশধরের এবাদত পাওয়ার জন্যে। সুতরাং তাকে খতম করার পরিকল্পনা সম্পর্কেও তার জানার কথা না। তারা আরও টের পেল যে, আল্লাহ্র শক্তির উৎস হচ্ছে রোজাদারদের মুখের দুর্গন্ধ আর দুর্বলতা হচ্ছে শূকরের মাংস। সুতরাং তাকে মারতে হলে শূকরের চর্বিওয়ালা বুলেট দিয়ে গুলি করতে হবে।
যাই হোক, অস্ত্র তৈরি করা হল। এরপর বাকি থাকল আল্লাহ্র ফেরেশতা বাহিনী। তাদেরকে কীভাবে পরাজিত করা যায়? মুসলিম পরিবারের কিছু নাস্তিকের কাছ থেকে জানা গেল, ফেরেশতাদের দুর্বল দিক হল চিত্র, সঙ্গীত ও কুকুর। এগুলোর ভয়ে তারা মানুষের বাড়িতে পর্যন্ত ঢুকত না। আর যায় কোথা! গোটা দোজখ তো সঙ্গীতশিল্পীতে ভর্তি! বীটলস, লেডি গাগাদের বাহিনী প্রস্তুত করা হল। দোজখের বিজ্ঞানীরা সাতটি মিসাইল তৈরি করল। অতি ভোরে বেহেশতবাসীরা যখন সারারাত হুর সহবত করে ক্লান্ত, তখন একেকটি মিসাইল এসে পড়ল একেকটি বেহেশতে। মিসাইল ল্যান্ড করার পরে বিস্ফোরণের বদলের বাজতে লাগলো তুমুল জোরে পপ মিউজিক! সাথে সাথে ফেরেশতারা দিশেহারা হয়ে পালাতে লাগলো। একই সাথে বাদ্যজন্ত্র নিয়ে বেহেশতে হামলা চালাল দোজখের শিল্পীবাহিনী। ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে, গিটার বাজিয়ে তারা সব ফেরেশতাদেরকে পরাস্ত করে ফেলল।
এরপর পালা আল্লাহ্কে ধরার। ক্রিস্টোফার হিচেন্সের নেতৃত্বে একদল নাস্তিক গেল আল্লাহ্র লওহে মাহফুজে তাকে মারতে। কিন্তু গিয়ে দেখে একি! এ তো মুহাম্মাদ! মানে মুহাম্মাদই আল্লাহ্ সেজে এতদিন সবাইকে ধোঁকা দিয়ে আসছিল। যাই হোক, মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্যে মুহাম্মাদকে সবার সামনে গন্দম গাছে লটকিয়ে ফাঁসি দেওয়া হল। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড মুক্ত হল এক স্বৈরাচারীর হাত থেকে! বেহেস্তবাসিরা খুব একটা খুশী হল না, তবে তাদেরকে শিক্ষিত করে সভ্য বানানোর ভার নিল জ্ঞানী নাস্তিক দোজখবাসীরা। ফেরেশতারাও বশ্যতা মেনে নিল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন