বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

ভূত-বিশ্বাস, কিম্ভূত বিশ্বাস ও চর্মপুরুত্ব

"কেউ যদি ধর্ম বা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে শান্তি পায় বা অবলম্বন খুঁজে পায় তাতে, তার সেই বিশ্বাসকে এভাবে ব্যঙ্গ করার দরকার কী? তাকে তার মতো থাকতে দিন না!" - এমন আপাত সুশীল তবে বাস্তবে ত্রুটিপূর্ণ যুক্তিযুক্ত বাণী আস্তিকপক্ষ থেকে উচ্চারিত হয় প্রায়ই। 

একটা তুলনায় যাওয়া যাক। কখনও ভেবে দেখেছেন কি, ঈশ্বর- ও ধর্মবিশ্বাসকে ভয়াবহ পচানো হয় বটে, অথচ ঈশ্বর-ধর্মের মতোই কিম্ভূত ধারণা ভূতে যারা বিশ্বাস করে, তাদের বিশ্বাসকে কেন এভাবে ব্যঙ্গ করা হয় না? 

উত্তর একেবারেই সহজ: কারণ ভূত-বিশ্বাসীরা তাদের বিশ্বাস অন্যের ওপরে চাপাতে যায় না। তারা দাবি করে না ভূত-বিশ্বাস প্রতিষ্ঠিত হোক পারিবারিক-, সামাজিক- ও রাষ্ট্রীয়ভাবে এবং ভূত-বিশ্বাসের নিয়মাবলী সকলেই মেনে চলুক। ভূত-বিশ্বাসের কারণে কখনও কোথাও রক্তপাত হয়নি এক ফোঁটাও। নারীদেরকে অধিকারবঞ্চিত করে দ্বিতীয় শ্রেণীর প্রাণীর 'মর্যাদা' দেয়া হয়নি। কারো ভূত-বিশ্বাস তার পরিপার্শ্বের জন্য কোনও ক্ষতির কারণ হয়েছে বলে জানা যায় না। ভূত-বিশ্বাসীরা ভূত-অবিশ্বাসীদের হত্যা করে না, তাদের ওপরে চালায় না নির্যাতন-নিপীড়ন...

আহা! ধর্মবিশ্বাসীরা যদি ভূত-বিশ্বাসীদের মতো আচরণ করতো! বিদ্রূপের দোকান তাহলে আমরা কবেই বন্ধ করে দিতাম! কিন্তু বাস্তবতা তো তেমন নয়। 

আরও একটি কথা: ধর্মবিশ্বাস ব্যাপারটি আমাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য হলেও তা নিয়ে বিশেষ শীরঃপীড়া আমাদের নেই - যদি তা ব্যক্তিগণ্ডির বাইরে প্রচারিত ও আরোপিত না হয়। আমরা বিরোধিতা করি সংগঠিত ধর্মের, ধর্মবিশ্বাসীদের যত্রতত্র অনধিকার নাক গলানোর প্রবণতার এবং ধর্মকে পারিবারিক-, সামাজিক- ও রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রয়োগের।

যেদিন ধর্মবিশ্বাসীরা তাদের ধর্মাচার একান্ত ব্যক্তিগত গণ্ডিতে সীমিত রাখতে শিখবে, সেদিন থেকেই তা আর ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের লক্ষ্য থাকবে না, আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে ধর্মপচানোর ভিত্তি ও যৌক্তিকতা। কিন্তু তেমন দিন তো সহসা আসছে না, ফলে তার আগ পর্যন্ত ধর্মপোন্দন অব্যাহত থাকবে এবং তা আপনাদের সহ্য করে যেতেই হবে। সব নাস্তিকের কল্লা ফেলে দেয়া তো সম্ভব নয়, তাই না? অতএব চর্মপুরুত্ব বৃদ্ধি করুন। আর কোনও উপায় তো নেই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন