আমি বহুবার বহু স্থানে বলেছি যে, ধর্ম মানে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান নয়। ধর্ম হচ্ছে একটি সত্তা বা স্বকীয়তা। আমার ভেতরে যে গুণটি না থাকলে আমি মানুষই না, সেটাই আমার ধর্ম। আমার ভেতরে মনুষ্যত্ব না থাকলে আমি মানুষই না; অতএব মানুষের ধর্ম মনুষ্যত্ব। সেরকমই: আগুনের ধর্ম দহন, পশুর ধর্ম পশুত্ব, বায়ুর ধর্ম শোষত্ব। এমনি প্রত্যেকটি বস্তুর নির্দিষ্ট একটি ধর্ম রয়েছে।
মুসলমানরা যেহেতু নিজেদেরকে মুসলমান ভাবেন, সেহেতু তারা মানুষ নন। অনেকে গর্বের সাথে বলে আমি হিন্দু; ওরা সত্যিই হিন্দু - মানুষ নয়। শুধু ইসলামই নয়; পৃথিবীর প্রতিটি ধর্মই মানবতার সাথে সাংঘর্ষিক। যে ধর্মমত নিজেকে প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষকে মেরে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয় তা কখনই মানুষের ধর্ম হতে পারে না। সেটি অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর ধর্ম।
ধর্মগ্রন্থগুলো সবসময় বলে যে, মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। এই সেরা জীব সে একদিনে হয়নি; বিবর্তনের এ বহমান ধারায় মানুষকে অনেক রিক্ত পথ অতিক্রম করতে হয়েছে। বন্য আদিমতা থেকে তাই মানুষ আজ বিজ্ঞানময়। বিজ্ঞানের এ অগ্রযাত্রায় ধার্মিকদের বা স্রষ্টার কোনো অবদান নেই। মানুষের জ্ঞান ও ভাল-মন্দ বিচার করার ক্ষমতার জন্যই মানুষ অন্যান্য প্রাণী থেকে অভিন্ন। বিবেক-বিবেচনায় তার মধ্যে রয়েছে মনুষ্যত্ব, মানবতাবোধ, মূল্যবোধ ও পরোপকারের এক মহান শিক্ষা।
মানুষকে তাচ্ছিল্য করে কোন মহৎ কাজের প্রত্যাশা করা নিষ্ফল কামনা ছাড়া আর কিছুই নয়। মানুষকে ঘৃণা করে উপাসনালয়ে হাজিরা দেওয়া বা বাতি জ্বালানো কপটতা বৈ আর কি। যুগে যুগে যত মহামানবের আগমন ঘটেছে, তাঁরা সকলেই মানুষকে ভালবেসেছেন। মানুষের দুঃখে দুঃখী হয়েছেন; সুখে হয়েছেন সুখী, নিজের ক্ষুধা চেপে রেখে অসহায় মানুষের ক্ষুধা নিবারণ করেছেন। অসহায় শিশুদের কোলে তুলে চোখের অশ্রু মুছে ললাটে বার বার চুমু খেয়েছেন। এসব মহৎ লোকেরা ভেবেছেন যে, মানবপ্রেমই হচ্ছে শ্রেষ্ঠপ্রেম। তাই এর মিল রয়েছে চন্ডীদাসের কবিতায়:
“শুন হে মানুষ ভাই
সবার উপরে মানুষ সত্য
তাহার উপরে নাই।”
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন