আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

শনিবার, ১ মার্চ, ২০১৪

চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির?

লিখেছেন কৌস্তুভ

‘প্রার্থনা’ নাম দিয়ে রবিঠাকুর ওই যে কথাগুলো বলেছেন তা নেহাতই অস্বাভাবিক। প্রার্থনা মানেই হল মাথা নিচু করে, হাঁটু গেড়ে বসে, শক্তিশালী কারো কাছে কিছু চাওয়া-পাওয়ার জন্য অনুনয়-বিনয়, পীড়াপিড়ি করা। আর প্রার্থনা ব্যাপারটাই ভয় থেকে উদ্ভূত। প্রিয়জনের অমঙ্গল হওয়ার ভয়। জীবন-যৌবন-সম্পদের ক্ষতি হওয়ার ভয়। মৃত্যুভয়। মৃত্যুর পরে স্বর্গলাভ থেকে বঞ্চিত হওয়ার ভয়। দেবতার স্নেহচ্ছায়া থেকে বিচ্যুত হওয়ার ভয়। কে না জানে, উনি অত্যন্ত স্নেহবান ও প্রীতিপরায়ণ, কেবল তাঁকে পাল্টা ভালবাসতে এতটুকু বিচ্যুতি বা অস্বীকৃতি মানেই ইহকাল ও পরকালে অনন্ত নরক...

প্রার্থনা শব্দের ভদ্র, প্রচলিত অর্থখানা নিয়েই বরং আজকের দুটো ছবি আপনাদের দেখাই।


এই ছবিটা এক ভোরে রোমের সেন্ট পিটার’স ব্যাসিলিকা-য় তোলে। সেই মহাখ্যাত পুণ্যধাম সম্পর্কে আপনাদের কিছু বলতে হবে না বোধহয়। মাইকেলঅ্যাঞ্জেলো’র হাতে নবনির্মিত এই গির্জাটিতে তাঁর, বার্নিনি, রাফায়েল ইত্যাদি রেনেসাঁ যুগের মাস্টার শিল্পীদের অনবদ্য সব ভাস্কর্য পাঁচশ বছর ধরে দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে চলেছে। আমরাও তেমনই এক কাকভোরে ভিড় এড়াতে ঝটপট ঢুকে পড়েছিলাম। কিন্তু এত সব জাঁকজমকের ভিড়ে দর্শকের ভুলে যাওয়া উচিত নয়, এটি আসলে একটি উপাসনাগার।

আর ঠিক সেই ঘটনাই ঘটল পোপ ৭ম আলেকজান্ডারের বিশ্ববিখ্যাত সমাধিখানা দেখতে গিয়ে। বার্নিনির তৈরি এই বিশাল ভাস্কর্যটা এতই চমকপ্রদ যে একে এই ব্যাসিলিকারও ‘ট্রেজার’ বলে ধরতে হয়। পোপের মর্মরমূর্তির চারপাশে তাঁর চার ‘সদ্‌গুণ’ – দান, সত্য, প্রজ্ঞা ও ন্যায়ের শ্বেতমর্মর-প্রতিরূপ। আর সবচেয়ে আকর্ষণীয় হল সিসিলিয়ান লাল মার্বেলের তৈরি একটা বিশাল কিন্তু প্রায় ভারহীন মনে হওয়া প্রবাহমান পর্দা যা এঁদের সবার নিচে বিছিয়ে আছে, আর তা ফাঁক করে একটা বালুঘড়ি উঁচিয়ে ধরেছে মৃত্যুর কালো কঙ্কাল, বলছে ‘মেমেন্টো মোরি’ অর্থাৎ ‘মনে রেখো, সবার সময়ই একদিন ফুরোবে’। এবং এই সবকিছু বার্নিনিকে বসাতে হয়েছে একটা ছোট্টো কোণায়, কারণ ততদিনে ব্যাসিলিকায় আর বেশি স্থান অবশিষ্ট ছিল না।

এসব কিছু মুগ্ধভাবে দেখতে গিয়ে এর ঠিক উল্টো দিকের অন্ধকারপ্রায় কোণাটা লক্ষ্যই করি নি তেমন, সেখানে একটা সাধারণ মেরি’র ছবির নিচে কিছু মোমবাতি দেওয়া আর সাদামাটা পোশাক করা এক যাজক সেখানে পুজো করছেন। কিন্তু হঠাৎ তাকিয়ে দেখি সেই উপাসনাবেদী ঘিরে যে মার্বেলের পাঁচিল তার এক পাশে এই বৃদ্ধ নীরব প্রার্থনায় পড়ে রয়েছেন এভাবে।

এঁকে দেখে কী মনে হয়, পাঠক? উল্টোদিকের শিল্প-প্রাচুর্য্য-বৈভব, যার প্রতিই আগ্রহ থাকবে অধিকাংশ জনতার, তার প্রতি কোনো আগ্রহ নেই এনার, যেমন সম্ভবত নেই আর জীবনের প্রতিও। তাকে ফেলে অন্যদিকের এই ছোট্ট চ্যাপেলে (প্রার্থনাপ্রকোষ্ঠ) উপাসনারত যাজকের প্রার্থনার একটু ভাগ পাওয়ার আশায় আছেন ইনি। কী বলছেন মনে মনে? এনার সঙ্গের বস্তুটি একটু খেয়াল করে দেখুন। বিলেতে অনেক প্রৌঢ়দেরই ‘ওয়াকার’ ব্যবহার করতে দেখা যায়, কিন্তু এনার ওয়াকারের গড়ন আর তাতে সঞ্চিত জিনিসপত্র দেখলে মনে হয়, ইনি সম্ভবত হোমলেস। জীবনটা একসময় কেমন ছিল এনার, সে কল্পনার ভার আপনাদের উপরেই ছেড়ে দিলাম। তবে কল্পনা করা কঠিন নয়, বাকি জীবনটার জন্য বোধহয় তেমন কিছু চাহিদা নেই ওনার। এখন চাহিদা শুধু প্রভুর চরণ থেকে বিচ্যুত না হওয়ার প্রতিশ্রুতির।

*****************************************************************


Montreal শহরখানা কানাডার একমাত্র ফরাসীভাষী রাজ্য কুইবেকে। সেখানে একটি টিলা-কাম-পার্ক আছে, Mont-Royale, যা থেকে শহরটার নাম। আর টিলার উপর একখানা গির্জা আছে – এটিও ক্যাথলিক গির্জা - Saint Joseph's Oratory। আমি Oratory জানতেম বক্তৃতার সঙ্গে সম্পর্কিত, এই প্রথম জানলাম তা উপাসনাস্থলকেও বলা হয়ে থাকে। সেখানে পৌঁছে এক প্রশস্ত বাগানের মধ্যে দাঁড়িয়ে দেখলাম তিনটি স্তরে টিলার উপরে ধাপে ধাপে উঠে গেছে এই আধুনিক (মাত্র শ-খানেক বছর হবে) গির্জাটি। তবে আধুনিক হলেও দেশলাইবাক্স-মার্কা স্থাপত্য নয়, দেখতে বেশ সুন্দর, একটা সরল জ্যামিতিক সৌন্দর্য্য আছে।

এর শ-তিনেক সিঁড়ির মধ্যে প্রথম স্তরে ৯৯টি সিঁড়ি আছে। আর সিঁড়ির মাঝখান দিয়ে খানিকটা অংশ টিন দিয়ে বাঁধানো, পুণ্যার্থীদের জন্য সংরক্ষিত। তাঁরা সেখান দিয়ে হাঁটু গেড়ে বেয়ে বেয়ে উঠবেন। (ওই বোর্ডে ফরাসী ভাষায় তাই লেখা।) এতে তাঁদের ক্রুশবাহী যীশুখ্রীষ্টের শেষযাত্রার কষ্টের কথা স্মরণ হবে – He died for our sins – এই রকম পরিকল্পনা। দেখে মনে পড়ে গেল আমাদের ছোটোবেলায় পাড়াতেই দেখা শীতলা পুজোয় দণ্ডী খাটার কথা, যাতে লোকজন তাদের বাড়ি থেকে মন্দির পর্যন্ত সারা রাস্তা সাষ্টাঙ্গে প্রণিপাত মানে উপুড় হয়ে হয়ে যায়।

মন্ট্রিয়লে আবার সেদিন ভোরবেলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। পাথর বা সিমেন্ট হলে জল শুষে নিত, টিনের সিঁড়িগুলোয় বেশ জল জমে রয়েছে। কোট-প্যান্ট পরা এক ভদ্রলোক দেখলাম ওঠার সময় প্যান্ট যাতে কম ভেজে তাই হাত দিয়ে খানিকটা জল নিচের সিঁড়িতে ঠেলে দিচ্ছেন। এক বিশাল ভারতীয় পরিবার – দক্ষিণী খ্রিশ্চান মনে হল – তাঁদের ছোট্ট মেয়ে থেকে বৃদ্ধা ঠাকুমা সবাইকেই নিয়ে এসেছেন। সেই প্রৌঢ়া মহিলার এত পরোয়া নেই, ভেজা কাপড়ের বাড়তি কষ্ট মানে বাড়তি পুণ্য হওয়ারই কথা। আর এমনিতেও যারা হেঁসেল ঠেলে ছানাপোনা মানুষ করে অভ্যস্ত তাদের কাছে ভেজা কাপড় নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এটাও মনে পড়ে গেল যে দণ্ডী খাটবার সময় রাস্তায় জল ছিটিয়ে দিত যাতে ধুলো না ওড়ে - ফলে পুরো রাস্তাটা কাদামাখা হয়ে থাকত, এবং পুণ্যার্থীরা ... । ততক্ষণে আবার চড়া রোদ উঠে গেছে, সবাই ঘেমেনেয়ে নাজেহাল। এঁদের পাশ দিয়ে এইসব দেখতে উঠছিলাম আর ছবি তুলতে সঙ্কোচবোধ করছিলাম। দুয়েকজন প্রৌঢ় শ্বেতাঙ্গ দম্পতিকেও দেখলাম।

দোতলার চাতালে উঠে নিচে তাকিয়ে দেখলাম, এনাদের ওই পুণ্যসোপানের ঠিক পাশটাতেই এক চৈনিক দম্পতি বিয়ের সাজে এসে ফটোসেশনে দাঁড়িয়েছে। মনে হল, এই বৈপরীত্য-টা বেশ আকর্ষণীয়। চিন্তাজাগানিয়া-ও বটে। উপর থেকে দুইপক্ষের একটা অন্যরকম ভিউপয়েন্টও পাওয়া যাচ্ছে। আর এটাও একটা ইন্টারেস্টিং প্রশ্ন, যে এই দুই দলের পরষ্পরের সম্পর্কে ভিউ কী? ওই মহিলা কি এদের প্রতি সামান্য বিরক্ত? এদের যৌবনের উচ্ছ্বাসের বালখিল্যতার প্রতি কি একটুখানি তাচ্ছিল্য ওনার মনে?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন