২৯৯.
(ভুলক্রমে) আমরা একটি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় থাকি। প্রতিদিন খুব কাছে থেকে মুসলমানদেরকে দেখা হয়। তাও আবার যেন তেন মুসলমান নয়, খোদ আরবের এবং সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মুসলমান। কিন্তু বিশ্বাস করুন, এরা আপাদমস্তক ব্যাক্কল।
১) মধ্যযুগীয় ফ্যাশনের ধবধবে সাদা বিশাল লম্বা পোশাক পরা এই আরবের মুসলমানরা জার্মানীতে এসেই একটা ধবধবে সাদা মার্সেডেজ-বেঞ্জ কেনে বা ভাড়া করে। নিজে গাড়ি চালাতে জানে না, তাই নিজের দেশের এম্বেসীর সহযোগিতায় নিজের দেশী বা আরবী ভাষা জানা একজন ড্রাইভার নিয়োগ দেয়। মজার বিষয় হচ্ছে, এরা ইচ্ছে করেই নো-পার্কিং জোন-এ পার্কিং করে এবং প্রতিদিন জরিমানা দেয়। শহরে কম পয়সায় বা বিনে পয়সায় পার্কিং পেতে হলে কয়েক মিনিট অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু নো-পার্কিং জোন-এ সারাক্ষণই রং-পার্কিং এর জারগা পাওয়া যায়। বিদেশে এসে প্রতিদিন জরিমানা দিয়ে এরা টাকার গরম দেখাতে পছন্দ করে।
২) আরবের অসংখ্য ধনাঢ্য মুসলমান চিকিৎসা করাতে জার্মানিতে আসে। সাথে নিয়ে আসে একজন এশিয়ান চাকর। চাকর তার আরবের মনিবকে হুইল চেয়ার ঠেলে শহর ঘুরে দেখায়। অসুস্থ মনিবের হাতে থাকে তসবি। মনিব জানেই না, জার্মানির মতো দেশে পৃথিবীর সেরা চিকিৎসা নিতে এসে তসবি গোনার কোনো প্রয়োজনই নেই। এখানে তসবি ছাড়াই ডাক্তাররা অসুখ ভালো করে দেন। যদিও এরা নিজের দেশে থাকলে বিশ্বাস করে - কালো জিরায় সকল রোগ মুক্তি হয়।
৩) ইউরোপে এসে আরবরা রাতে ঘুমায় না। গভীর রাত পর্যন্ত ফ্ল্যাটে হৈ চৈ করে, গান বাজনা করে, আর প্রতিবেশীদের ঘুমের ক্ষতি করে। জার্মানরা তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যায় আর অনেক ভোরে ঘুম থেকে উঠে কাজে যায়। আরবরা সারা রাত জাগে আর দিনে ঘুমায়। এরা যেমন কাজ করে না, তেমনি এদের ধারণা - পৃথিবীর বাকি মানুষেরাও বোধহয় কাজকর্ম করে না।
৪) জার্মানরা পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করে। একটা ছোট ময়লাও সাধারণত ডাস্টবিনের বাইরে ফেলে না। আরবরা এর উল্টো। এরা যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলে। বিশাল বিশাল ময়লার ব্যাগ বা খাবারের বর্জ্য সিঁড়িঘর, বাড়ির গেট এমনকি লিফটের ভেতর রেখে চলে যায়, আর ভাবে কেউ না কেউ তো তা ময়লা-ঘরে ফেলে দিয়ে আসবেই। প্রতিবাদ করলে অস্বীকার করে। এরা টুপি মাথায় দিয়ে মিথ্যা কথা বলে, আর অন্য সবাইকে চাকর মনে করে।
৫) এই এলাকায় অনেক গুলো সিসা ক্লাব আছে। সন্ধ্যা হলেই আরবের তরুণ-তরুণীরা দল বেঁধে সিসা খেতে বসে, সাথে চলে বড় পর্দায় বেলি ড্যান্স। কাল দেখলাম, এক দল তরুণী ক্লাবে বসে সিসা খাচ্ছে আর বড় টিভিতে উলঙ্গ টেবিল ড্যান্স দেখছে। মজার বিষয় হচ্ছে তরুণীরা ছিল সবাই বোরখা পরা।
৩০০.
আল্লাহর সাথে নিয়মিত কথাবার্তা হয়, বাংলাদেশে এরকম হাজার হাজার পীর-আউলিয়া আছে। আরো আছে মরহুম পীরদের অসংখ্য মাজার। বোকা মানুষদের ঠকিয়ে মাজারগুলোতে প্রতি বছর কোটি-কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে মুসলমান ধর্মব্যবসায়ীরা। এই পীর বা মাজারের খাদেমরা প্রত্যেকেই তাদের নিজ নিজ এলাকায় অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং ইসলামের সেবক বলে পরিচিত। এরা প্রায় সব সময় দেশের কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও জড়িত। আর পীরের মুরিদ হতে হলে কী শর্ত, তা জানেন তো? আল্লাহ আর মোহাম্মদের সঙ্গে জুড়ে দিতে হয় সেই পীরের নাম। যে পীর তার মুরিদকে বেহেস্তে নিয়ে যাবেন, অথবা পীরের সঙ্গে মুরিদের দেখা হবে হাশরের ময়দানে, তখন তিনি মুরিদকে বেহেশতে নিয়ে যাবার জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবেন। দেশের এই প্রচলিত মাজার ব্যবসা বা পীরদের ভণ্ডামী সম্পূর্ণভাবে বেআইনী এবং ইসলাম-পরিপন্থী, এটা যে কোনো শিক্ষিত বা সচেতন মুসলমান মাত্রই জানেন। অথচ আজ পর্যন্ত কোন ইসলামিক রাজনৈতিক দল, ইসলামিক সংগঠন, বা আলেম ওলামাদের এই মাজার ব্যবসা ও পীরদের ভণ্ডামীর বিরুদ্ধে কথা বলতে দেখিনি। দুই-একজন নতুন জ্বীনের কবিরাজকে ধরলেও সরকারকে দেখিনি ইসলামকে বিকৃত ও অবমাননা করার কারণে কোনো বড় পীরকে গ্রেফতার করতে বা মাজারকে বন্ধ করে দিতে। অথচ আমরা নাস্তিকরা ইসলামের যৌক্তিক সমালোচনা করলেই আমাদের জেলে যেতে হয়। ওহ হ্যাঁ, কাকে কী বলছি, ভুলেই গিয়েছিলাম। দেশের সব রাজনৈতিক দল বা সরকারই তো ধর্মব্যবসায়ী। বড় বড় নেতারাই যে দেশে ভোটের জন্য পীরের মুরিদ হয়। একবার এক মাওলানা আমাকে বলেছিলেন, মানুষ যদি মাজারে যেয়ে তার মনে শান্তি পায়, তাহলে তোমার সমস্যা কী?
ব্যবসা চলুক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন