আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

মঙ্গলবার, ১০ জুন, ২০১৪

কুরানে বিগ্যান (পর্ব-৩৯): বদর যুদ্ধ-১০: আবু সুফিয়ান ও তাঁর স্ত্রী হিন্দের মহানুভবতা ত্রাস, হত্যা ও হামলার আদেশ – বারো

লিখেছেন গোলাপ

পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩ > পর্ব ১৪ > পর্ব ১৫ > পর্ব ১৬ > পর্ব ১৭ > পর্ব ১৮ > পর্ব ১৯ > পর্ব ২০ > পর্ব ২১ > পর্ব ২২ > পর্ব ২৩ > পর্ব ২৪ > পর্ব ২৫ > পর্ব ২৬ > পর্ব ২৭ > পর্ব ২৮ > পর্ব ২৯ > পর্ব ৩০ > পর্ব ৩১ > পর্ব ৩২ > পর্ব ৩৩ > পর্ব ৩৪ > পর্ব ৩৫ > পর্ব ৩৬ > পর্ব ৩৭ > পর্ব ৩৮

স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মদিনায় হিজরতের (সেপ্টেম্বর ২৪, ৬২২ সাল) মাত্র সাত মাস পর ৬২৩ সালের মার্চ মাসে কীভাবে রাতের অন্ধকারে ওৎ পেতে অতর্কিতে কুরাইশ বাণিজ্য-কাফেলার ওপর হামলায় তাঁদের বাণিজ্যসামগ্রী লুণ্ঠনের চেষ্টার সূচনা করেছিলেন; তারপর দশটি মাস একের পরে এক সাতটি অনুরূপ ডাকাতি-চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ৬২৪ সালের  জানুয়ারি মাসে "নাখলা" নামক স্থানে একজন নিরপরাধ কুরাইশ বাণিজ্য আরোহীকে খুন ও দুইজন নিরপরাধ আরোহীকে বন্দী করে তাঁদের সর্বস্ব লুণ্ঠন ও বন্দীর পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের মাধ্যমে "সর্বপ্রথম উপার্জনের" কীভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল তার আলোচনা ২৮ ও ২৯ পর্বে করা হয়েছে।

সেই ধারাবাহিকতারই অংশ হিসেবে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের সন্ত্রাসী, অমানবিক ও নৃশংস কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আক্রান্ত ক্ষতিগ্রস্ত কুরাইশদের সর্বপ্রথম প্রতিরক্ষা যুদ্ধকীভাবে সংঘটিত হয়েছিল; কী কারণে কুরাইশদের চরম পরাজয় ঘটেছিল এবং কী উপায়ে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা বিজয়ী হয়ে “সর্বপ্রথম বৃহৎ উপার্জন”-এর অংশীদার হয়েছিলেন, তার ধারাবাহিক বর্ণনাও গত নয়টি পর্বে করা হয়েছে (পর্ব ৩০ -৩৮)।

সংক্ষেপে:

১)  বদর যুদ্ধের প্রাক্কালে মুহাম্মদের নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীরা মোট ৭২ জন (দু'জন বন্দী হত্যাসহ) কুরাইশকে চরম নৃশংসতায় খুন ও ৬৮ জনকে বন্দী করে মদিনায় ধরে নিয়ে আসেন।

২) এই কুরাইশরা সকলেই ছিলেন তাঁদেরই একান্ত পরিবার-পরিজন, নিকটাত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব অথবা প্রতিবেশী।

৩) নিহতদের অধিকাংশই ছিলেন কুরাইশদের নেতৃস্থানীয় গণ্যমান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

৪) খুন করার পর লাশগুলোকে তাঁরা চরম অবমাননা ও তাচ্ছিল্যেবদর প্রান্তের এক নোংরা শুষ্ক গর্তে একে একে নিক্ষেপ করেন।

৫) লাশগুলো গর্তে নিক্ষেপ করার পর তাঁরা কুরাইশদের যাবতীয় সম্পদ লুণ্ঠন (গণিমত) করে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেন।

৬) মাত্র পাঁচ জন ছাড়া বাকি ৬৩ জন বন্দীর প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা সর্বোচ্চ ৪০০০ দিরহাম মুক্তিপণ আদায় করেন।

৭) এই লুটের মাল ও মুক্তিপণের অর্থে জীবিকা উপার্জন ও ভোগ যে সম্পূর্ণ "পরিচ্ছন্ন ও হালাল বস্তু" তা মুহাম্মদ নিশ্চিত করেছেন ঐশী বাণী ঘোষণার মাধ্যমে (৮:৬৭-৬৯)।

৮) বন্দীদের মধ্যে চার জন ছিলেন মুহাম্মদেরই একান্ত নিকট-আত্মীয় ও পরিবার সদস্য: চাচা আল-আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব, দুই চাচাত ভাই আকিল ইবনে আবু তালিব বিন আব্দুল মুত্তালিব ও নওফল ইবনে আল-হারিথ বিন আব্দুল মুত্তালিব এবং জামাতা আবু আল আস বিন আল-রাবি।

৯) জামাতা আবু আল আস-এর মুক্তিপণের অর্থ মেয়ে জয়নাবের কাছে ফেরত পাঠিয়ে বিনা মুক্তিপণেই তাঁকে মুক্ত করলেও মুহাম্মদ তাঁর এই জামাতার ওপর এই মর্মে শর্ত আরোপ করেছিলেন যে, তিনি মক্কায় গিয়ে তাঁর মেয়ে জয়নাবের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে জয়নাবকে মদিনায় তাঁর কাছে পাঠিয়ে দেবেন।

১০) নবীকন্যা জয়নাব ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন তাঁর পিতা মুহাম্মদের নবুয়ত প্রাপ্তির পর (৬১০ সাল)। মুহাম্মদ ইবনে ইশাক লিখেছেন, "তাঁরা, এক মুসলমান ও এক অবিশ্বাসী, আল্লাহর নবীর হিজরতের [সেপ্টেম্বর, ৬২২ সাল] পূর্ব পর্যন্ত একত্রেই বসবাস করতেন"। কিন্তু তাঁর বর্ণনার ধারা বিবরণীতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, এই একত্র বাস অবস্থাতেই আবু আল আস অন্যান্য কুরাইশদের সাথে বদর যুদ্ধে (মার্চ, ৬২৪ সাল) অংশগ্রহণ করে বন্দীত্ব বরণ করেছিলেন। এই বন্দীত্ব থেকে মুক্ত হয়ে মক্কায় পৌঁছার পর মুহাম্মদের আরোপিত শর্ত অনুযায়ী জয়নাবকে মদিনায় পাঠানোর পূর্ব পর্যন্ত [৬১০-মে/জুন, ৬২৪ সাল] সুদীর্ঘ চোদ্দটি বছর তাঁরা একত্রেই বসবাস করতেন (পর্ব-৩৮)।

১১) আবু আল আস অন্যান্য কুরাইশদের প্ররোচনা ও প্রলোভনের মুখে ও তাঁর মুসলিম স্ত্রীর সাথে বিবাহবিচ্ছেদে রাজী হননি। কিন্তু মুহাম্মদের আরোপিত শর্ত রক্ষার্থে তিনি তাঁর সুদীর্ঘ কালের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটাতে বাধ্য হন। মক্কায় পৌঁছার পর শর্ত মোতাবেক স্ত্রী জয়নাবকে তাঁর পিতার কাছে যেতে বলেন এবং জয়নাব যাত্রার প্রস্তুতি আরম্ভ করেন।

১২) অন্যদিকে, মুহাম্মদ তাঁর কন্যা জয়নাবকে নিয়ে আসার জন্য যায়েদ বিন হারিথা ও এক আনসারকে মক্কা থেকে ৮ মাইল দূরবর্তী ইয়াযায নামক উপত্যকায় পাঠান। তাঁরা বদর যুদ্ধের দুই মাস পর সেখানে গিয়ে পৌঁছান।

[যায়েদ বিন হারিথা ছিলেন মুহাম্মদের পালিত পুত্র। ফেরেশতা, নবী-রসুল, পৌত্তলিকদের দেবতা ও পুরাকালের ইতিকথার চরিত্রের নাম ছাড়া "মুহাম্মদের সমসাময়িক যে দুইজন ব্যক্তির নাম" মুহাম্মদ তাঁর স্বরচিত ব্যক্তিমানস জীবনীগ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, তাঁর প্রথম জন হলেন চাচা আবু লাহাব (১১১:১), মক্কায় উপস্থিত কুরাইশ জনতার সামনে দাঁড়িয়ে যাঁকে তিনি অভিশাপ বর্ষণ করেছিলেন (পর্ব-১২)। আর দ্বিতীয় জন হলেন তাঁর পালিত পুত্র এই “যায়েদ বিন হারিথা”; মদিনায় যার স্ত্রী যয়নবকে তিনি বিয়ে করেছিলেন। (৩৩:৩৭-“অতঃপর যায়েদ যখন যয়নবের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করল, তখন আমি তাকে আপনার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করলাম যাতে মুমিনদের পোষ্যপুত্ররা তাদের স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে সেসব স্ত্রীকে বিবাহ করার ব্যাপারে মুমিনদের কোন অসুবিধা না থাকে। আল্লাহর নির্দেশ কার্যে পরিণত হয়েই থাকে”)। পালিত পুত্রের স্ত্রীকে বিবাহ করা তৎকালীন আরবে গর্হিত কর্ম বলে বিবেচিত হতো। এই গর্হিত কর্মটি সম্পাদনের বাসনা প্রকাশ ও বিবাহ প্রস্তাব সাঙ্গ করার পর তাঁর সেই কাজের বৈধতা দিতে মুহাম্মদ তাঁর আল্লাহর নামে ঐশী বাণীর অবতারণা করেছিলেন। আগে" আল্লাহর প্রদত্ত বৈধতা, “তারপর" যেহেতু তা বৈধ, সে কারণে বাসনা প্রকাশ ও বিবাহ প্রস্তাব; ঘটনাটি এমন ছিল না! ঘটনাটি ছিল, "আগে গর্হিত কর্ম সম্পাদন, তারপর তার বৈধতার সার্টিফিকেট”! [1]]

যে কোনো মুক্তচিন্তার বিবেকবান মানুষ অতি সহজেই বুঝতে পারেন যে, সেই পরিস্থিতিতে পরাজিত ক্ষতিগ্রস্ত স্বজনহারা কুরাইশদের মানসিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত বিপর্যস্ত। ধারণা করা কঠিন নয় যে, কুরাইশদের প্রত্যেকটি পরিবারের এক বা একাধিক কোনো না কোনো সদস্য, নিকটাত্মীয়, প্রতিবেশী অথবা বন্ধু-বান্ধব নৃশংসভাবে খুন হয়েছিলেন অথবা বন্দীত্ব বরণ করেছিলেন। কুরাইশদের ঘরে ঘরে বিষাদ, বিলাপ ও কান্নার রোল উঠেছিল। আদি ও বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকদের বর্ণনায় আমরা আরও জেনেছি যে, তাঁদের বিলাপের খবর পেয়ে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা তাঁদের বন্দী স্বজনদের মুক্তির জন্য অতিরিক্ত মুক্তিপণ দাবী করতে পারে, এই আশংকায় তাঁরা প্রাণ খুলে কান্নাও করতে পারেননি!

তাঁদের এই শোচনীয় পরিস্থিতির জন্য প্রত্যক্ষভাবে যে-ব্যক্তিটি একমাত্র দায়ী, তিনি হলেন স্বঘোষিত নবী মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ! আর সেই দায়ী ব্যক্তিটির মুসলিম কন্যা জয়নাব তাঁদেরই মাঝে অবস্থান করছেন! এমত পরিস্থিতিতে তথাকথিত অন্ধকার যুগের ("আইয়্যামে জাহিলিয়াত”) বাসিন্দারা ক্রোধান্বিত হয়ে তাঁদের এই পরিণতির জন্য দায়ী ব্যক্তিটির মুসলিম কন্যার ওপর কি কোনোরূপ অত্যাচার বা নিপীড়ন চালিয়েছিলেন?

জয়নাবের প্রতি তাঁদের মনোভাব কেমন ছিল?

জয়নাবের মদিনা যাত্রা:

মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের (৭০৪-৭৬৮ সাল) ও আল তাবারীর (৮৩৯-৯২৩ সাল) বর্ণনা:

'[ইবনে হুমায়েদ < সালামাহ <] মুহাম্মদ ইবনে ইশাক < আবদ আল্লাহ বিন আবু বকর বিন মুহাম্মদ বিন আমর বিন হাজম হতে বর্ণিত:

আমাকে [মুহাম্মদ বিন ইশাক] বলা হয়েছে যে জয়নাব বলেছেন, "মক্কায় আমি যখন আমার পিতার সাথে [মদিনায়] যোগদানের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, হিন্দ বিনতে ওতবা (আবু সুফিয়ান বিন হারবের স্ত্রী, যিনি ছিলেন জয়নাবের স্বামীর বংশের; যে কারণে জয়নাবের সাথে ছিল তাঁর সখ্যতা। কিন্তু তিনি ছিলেন মুহাম্মদের চাচা হামজার উপর প্রতিহিংসা চরিতার্থে আকুল আকাঙ্ক্ষী, কারণ তিনি [হামজা] তাঁর বাবা ও চাচাকে বদর প্রান্তে খুন করেছিলেন।) আমার সাথে সাক্ষাত করেন এবং বলেন,

'মুহাম্মদ-পুত্রী, আমি কি শুনিনি যে, তুমি তোমার বাবার সাথে যোগদানে আকাঙ্ক্ষী?'

আমি বললাম, 'আমি তা করতে চাই না।'

তিনি [জবাবে] বলেন, 'জ্ঞাতি-বোন, অস্বীকার করো না। তোমার যাত্রার সুবিধার জন্য প্রয়োজন এমন কোনো কিছুর দরকার হলে কিংবা তোমার বাবার কাছে পৌঁছতে সাহায্য করবে এমন টাকাকড়ির প্রয়োজন হলে, আমি তোমার সবকিছুর দরকারে আছি।সুতরাং জিজ্ঞেস করতে লজ্জা করো না; কারণ পুরুষদের এই ঝগড়া ফ্যাসাদের পেছনে মহিলাদের কোনোই সম্পর্ক নেই।'

সত্যি বলছি আমি [জয়নাব] নিশ্চিত যে, তিনি যা বলেছেন তা তিনি করতে প্রস্তুত, কিন্তু তাঁকে আমার ভয় হয়েছিল এবং আমি যাওয়ার জন্য যে মনস্থির করেছি, তা অস্বীকার করেছিলাম। যদিও আমি যাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।"

নবীকন্যা যখন প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন, তাঁর স্বামীর ভাই কেনানা বিন আল রাবি তাঁর জন্য একটা উঠ নিয়ে আসেন, যার ওপর তিনি সওয়ার হন। তারপর কেনানা তার তীর ও তূণী নিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে উটের পিঠের উপর স্থাপিত ডুলির (camel litter) ওপর তাঁকে [জয়নাব] বসিয়ে উটটি পরিচালনা করেন।

কুরাইশরা এ ব্যাপারে বলাবলি শুরু করে এবং তাদের কে অনুসরণ করে এসে ধু-তাওয়া নামক স্থানে তাদেরকে পাকড়াও করে।

যে লোকটি প্রথমেই তাদের কাছে পৌঁছেন, তাঁর নাম ছিল হাববার বিন আল-আসওয়াদ বিন আল-মু্ত্তালিব বিন আসাদ বিন আবদ আল-উজজা আল-ফিহিরি। যখন হাববার তাদেরকে বল্লম দিয়ে হুমকি প্রদান করে, তিনি [জয়নাব] ছিলেন উটের পিঠের ওপর স্থাপিত ডুলির ভিতরে। বলা হয়, তখন তিনি ছিলেন গর্ভবতী; যখন তিনি মক্কায় প্রত্যাবর্তন করেন তখন তাঁর গর্ভপাত হয়।

হাববারের হুমকির পর তাঁর দেবর [কেনানা] নতজানু হয়ে বসে পরে, তূণী থেকে তীর বের করে এবং বলে, "আল্লাহর কসম, কেউ আমার নিকটবর্তী হলে আমি তাকে তীরবিদ্ধ করবো।"

ফলে আবু সুফিয়ান ও অন্যান্য গণ্যমান্য কুরাইশরা সেখানে উপস্থিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তারা [হাববার বিন আল-আসওয়াদ ও নাফি বিন আবদ কায়েস] পিছু হটে।

আবু সুফিয়ান বলেন, "এই যে [কেনানা], তোমার ধনুক নিচু করো যাতে আমরা তোমার সাথে কথা বলতে পারি।"

সে তার ধনুক নিচু করে; আবু সুফিয়ান তার পাশে এসে দাঁড়ান ও বলেন,

"তোমার ভুল এই যে, তুমি মেয়েটিকে সবার চোখের সামনেই প্রকাশ্যে দূরে বাহিরে নিয়ে যেতে চাইছ, যেখানে তুমি জানো যে আমাদের নিদারুণ দুর্দশা ও বিপর্যয়ের জন্য দায়ী হলো মুহাম্মদ। এই বিপর্যয়ের পরেও যদি প্রকাশ্যে সবার সামনে তার কন্যাকে তুমি বের করে নিয়ে যাও, তবে তা হবে আমাদের জন্য চরম অপমানকর; জনগণ মনে করবে যে, এটা আমাদের চরম দুর্বলতারই বহিঃপ্রকাশ। আমার জানের কসম, আমরা তার কন্যাকে ধরে রাখতে চাই না এবং এভাবে প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা আমাদের পন্থা নয়।কিন্তু মেয়েটিকে এখন ফিরিয়ে নিয়ে যাও এবং যখন বিক্ষোভ থেমে যাবে এবং লোকেরা বলবে যে, আমরা তাকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছি, তখন তুমি গোপনে তাকে নিয়ে যেও যেন সে তার বাবার সাথে মিলিত হতে পারে।"

ঠিক ঠিক তাইই ঘটেছিল। এক রাতে সে [জয়নাবের দেবর কেনানা] তাঁকে নিয়ে যায় এবং জায়েদ বিন হারিথা ও তাঁর সঙ্গীর কাছে হস্তান্তর করে; তারা তাঁকে নিয়ে আল্লাহর নবীর কাছে যায়।’

‘ইয়াজিদ বিন আবু হাবিব <বুকির বিন আবদুল্লাহ বিন আল-আসাজ < সুলেইমান বিন ইয়াসার < আবু ইশাক আল-দাউসি < আবু হুরাইরা আমাকে (মুহাম্মদ ইবনে ইশাক) বলেছেন যে, শেষোক্ত জন তাকে বলেছেন:

"আল্লাহর নবী আমাকে আরও কিছু হানাদারদের সাথে এই হুকুম জারী করে পাঠালেন যে হাববার বিন আল-আস ওয়াদ অথবা অন্যজন (নাফি বিন আবদ কায়েস) যে তার সাথে জয়নাবের নিকটে সর্বপ্রথমে পৌঁছেছিল, যদি আমরা তাদের ধরতে পারি, তবে যেন পুড়িয়ে মারি।

পরের দিন তিনি আমাদের কাছে খবর পাঠালেন, 'এই দুইজন লোককে ধরতে পারলে আমি তোমাদেরকে পুড়িয়ে মারতে বলেছিলাম; তারপর আমি অনুধাবন করলাম যে পুড়িয়ে মেরে শাস্তি দেয়ার অধিকার আল্লাহ ছাড়া আর কারও নেই। তাই যদি তোমরা তাদের ধরতে পারো, তবে খুন করো।'" [2][3]

[ইসলামী ইতিহাসের ঊষালগ্ন থেকে আজ অবধি প্রতিটি ইসলাম বিশ্বাসী প্রকৃত ইতিহাস জেনে বা না জেনে ইতিহাসের এ সকল অমানবিক অধ্যায়গুলো যাবতীয় চতুরতার মাধ্যমে বৈধতা দিয়ে এসেছেন। বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিধায় বাংলা অনুবাদের সাথে মূল ইংরেজি অনুবাদের অংশটিও সংযুক্ত করছি। - অনুবাদ, টাইটেল ও [**] যোগ - লেখক।]

Jaynab’s jouney to Medina:

According to [Ibne Humayd from Salamah from] Muhammad b Ishaq from Abd Allah b Abu Bakr b Muhammad b Amr b Hazm:

I have been told that Zaynab said, “While I was getting ready to travel in Mecca in order to join my father, Hind bt Utba (the wife of Abu Sufyan b Harb who was the same clan Zaynab’s husband, this is why Hind was friendly here.  But she thirsted for vengeance on Muhammad’s uncle Hamza because he had killed her father and uncle at Badr) met me and said,

‘Daughter of Muhammad, have I not heard that you wish to join your father?’ 

I said, ‘I do not want to do so.’ 

She said, ‘Cousin, do not deny it. If you need anything which will make your jouney more comfortable or any money to help you reach your father, I have whatever you need. So do not be ashamed to ask; for men’s quarrels have nothing to do with the women.’

By God I am sure that she meant what she said, but I was afraid of her and denied that I wanted to go.  Nevertheless, I got ready to travel.” 

When the daughter of the apostle had completed her preperations, her brother in law Kinana b al-Rabi, her husband’s brother, brought her a camel which she mounted. 

Then, taking his bow and quiver, he went out with her in broad day light, leading the camel with her in the camel litter. 

The men of Quraysh discussed this and went out in prsuit of her, catching up with her Dhu Tawa. 

The first men to reach her were Habbar b Al-Aswad b al-Muttalib b Asad b Abd al-Uzza al-Fihri. Habbar threatened her with a spear while she was in the camel litter.  It is said that she was pregnant and when she went back again to Mecca, she had a miscarriage. 

After Habbars threat, her brother in law knelt down, spread out the contents of his quiver [case for holding or carrying arrows] and said, “By God, if any man comes near me I will put an arrow into him.” 

At this they drew back from him until Abu Sufyan and the main body of Quraysh arrived. 

Abu Sufyan said, “Man, lower your bow so that we can talk to you.” 

He lowered his bow and Abu Sufyan came up and stood by him and said,

“You did the wrong thing in taking the woman away in public under everyone’s noses when you know of our misfortune and disaster which Muhammad has brought on us. The people will think, if you take away his daughter publicly over the heads of everyone, that that is a sign of our humiliation after the disaster that has happend and an exhibition of utter weakness.  By my life, we do not want to keep her from her father and that is not our way of seeking revenge.  But take the woman back and when the clamour has died down and people say that we have brought her back, you can take her away secretly to rejoin her father.” 

This is exactly what happened and one night he took her off and delivered her to Zayd b Haritha and his companion, and they took her to the apostle.

Yazid b Abu Habib from Bukyr b Abdullah b al-Ashajj from Sulayman b Yasar from Abu Ishaq al-Dausi from Abu Hurayra, told me that the later said:

“The apostle sent me among a number of raiders with orders that if we got hold of Habbar b Al-Aswad or the other man (Nafi b Abd Qays) who first got to Zaynab with him we were to burn them with fire.  On the following day he sent word to us, ‘I told you to burn these two men if you got hold of them; then I reflected that none has the right to punish by fire save God.
So if you capture them kill them.’” [2] [3]

>>> পৃথিবীর প্রায় সকল ইসলাম-বিশ্বাসী আবু-সুফিয়ান বিন হারব ও হিন্দ বিনতে ওতবার নাম ঘৃণা ভরে উচ্চারণ করেন। কারণ আবু সুফিয়ান মক্কা বিজয়ের আগের রাতে মুহাম্মদের বশ্যতা স্বীকার করার (ইসলাম গ্রহণ) পূর্ব পর্যন্ত ছিলেন মুহাম্মদের প্রকাশ্য শত্রুদের “বিশেষ একজন” এবং হিন্দ বিনতে ওতবা হলেন সেই মহিলা যিনি তাঁর পিতা ও চাচার হত্যাকারী হামজা বিন আবদ আল-মুত্তালিব ওহুদ যুদ্ধে নিহিত হলে প্রতিহিংসা চরিতার্থে তিনি তাঁর বাবা ও চাচার এই হত্যাকারীর কলিজা চিবিয়েছিলেন[4]

কিন্তু মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের উপরি উক্ত বর্ণনায় আমরা এ কী দৃশ্য অবলোকন করছি!

আমরা জানছি যে, যে-মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা মাত্র অল্প কিছুদিন আগে হিন্দ বিনতে ওতবার নিজের বাবা, চাচা ও এক পুত্র হানজালাকে নৃশংসভাবে করেছেন খুন এবং আর এক পুত্র আমরকে করেছে বন্দী সেই পিতা-পুত্র ও স্বজন-হারা শোকাবহ মহিলাটি তাঁর বাবা-চাচা ও পুত্রের খুন ও বন্দীর জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী ব্যক্তিটির কন্যাকে শুধু সমবেদনা প্রকাশই নয়, সর্বাত্মক সাহায্যের আশ্বাস নিয়ে এগিয়ে এসেছেন!

যে-মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা অল্প কিছুদিন আগে কুরাইশ দলপতি আবু সুফিয়ান বিন হারবের এক জোয়ান পুত্র সন্তান, শ্বশুর ও চাচা শ্বশুরকে নৃশংসভাবে করেছেন খুন ও আরেক পুত্র সন্তানকে করেছে বন্দী (পর্ব-৩৪), সেই সন্তানহারা শোকাবহ আবু সুফিয়ান প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তাঁর নিজ পুত্রের খুনের জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী ব্যক্তিটির কন্যার উপর কোনোরূপ অবিচার ও অসম্মান না করে, জোরপূর্বক মক্কায় আটকে রেখে প্রতিশোধ গ্রহণের চেষ্টা না করে, পরামর্শ দিচ্ছেন কীভাবে এই সংক্ষুব্ধ স্বজন-হারা বিক্ষুব্ধ কুরাইশদের রোষানল এড়িয়ে তাঁকে তাঁর পিতার কাছে পৌঁছে দিতে হবে।

পাঠক, স্বঘোষিত আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মৃত্যুর প্রায় ১১০ বছর পর (হাদিস সংকলন শুরু তাঁর মৃত্যুর ২০০ বছরের বেশী পরে) লেখা মুহাম্মদের “সর্বপ্রথম পূর্ণাঙ্গ জীবনী” গ্রন্থের লেখক নিবেদিতপ্রাণ ইসলাম-বিশ্বাসী মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের ওপরোল্লেখিত প্রাণবন্ত বর্ণনাটি পড়ে কি অবাক হচ্ছেন?

গত ১৪০০ বছর ধরে মুহাম্মদ অনুসারীরা উচ্চকণ্ঠে প্রচার করে আসছেন যে, কুরাইশরা ছিলেন অসভ্য, নিষ্ঠুর, বিবেকহীন, নীতিবর্জিত সম্প্রদায়, যাদেরকে তাঁরা ঘৃণা ও তাচ্ছিল্য ভরে "আইয়্যামে জাহিলিয়াত" বলে আখ্যায়িত করেন। ইসলাম-বিশ্বাসীদের দ্বারা অভিযুক্ত সেই “তথাকথিত” অন্ধকার যুগের মানুষদের কর্মকাণ্ডের পরিচয় জেনেও এখনো কি এই বিশ্বাসে অটল আছেন যে, বিজয়ী মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা কুরাইশ ও অন্যান্য সকল অবিশ্বাসীর ধর্ম-সমাজ-সভ্যতা ও মানুষদের যে চরম অবমাননা ও তাচ্ছিল্যে গত ১৪০০ বছর যাবত চিত্রায়িত করে আসছেন, তার আদৌ কোনো সত্যতা আছে? 

ওপরোক্ত বর্ণনা সবচেয়ে আদি ও বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকদেরই লিপিবদ্ধ ইতিহাস। মডার্ন ডিজিটাল 'স্কলাররা' বিভিন্ন চতুরতায় মাধ্যমে প্রাণপণে সাধারণ সরলপ্রাণ মুসলমানদের কাছে ইসলামের ইতিহাসের এই তথ্যগুলো গোপন রাখেন এবং মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীর যাবতীয় নৃশংস আগ্রাসী তৎপরতার বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করেন! কেন করেন?

কারণ, তাঁরা অসহায়!

ইসলামের মৌলিক ও প্রাথমিক আবশ্যকীয়শর্ত অনুযায়ী তাঁরা তা করতে অবশ্য বাধ্য! মুহাম্মদের বানী ও কর্মের সত্যতা ও শুদ্ধতার বিষয়ে “কোনোরূপ সন্দেহ পোষণ করা", সমালোচনা তো অনেক দূরের বিষয়, ইসলামের সবচেয়ে মৌলিক ও প্রাথমিক শর্তের লঙ্ঘন (Violation of Absolutely manadatory requirement of Islam)।

এই অসহায়ত্ব থেকেই মুহাম্মদের বাণী ও কর্মকাণ্ডের বৈধতার প্রয়োজনে গত ১৪০০ বছরে হাজার ও ইসলাম বিশ্বাসী পণ্ডিত ও অপণ্ডিতরা লক্ষ লক্ষ পৃষ্ঠা রচনা করেছেন।

এই লক্ষ লক্ষ পৃষ্ঠা রচনায় তাঁরা কারণে-অকারণে বেহেশতের প্রলোভন ও দোযখের অনন্ত বীভৎস শাস্তির ভীতি প্রদর্শন; মিথ্যা ও চতুরতার আশ্রয়; উদ্ভট অলৌকিক অবিশ্বাস্য গল্পের যথেচ্ছ অবতারণা; প্রচ্ছন্ন পরোক্ষ অথবা প্রত্যক্ষ হুমকি-শাসানী-ভীতি প্রদর্শন - ইত্যাদি বিভিন্ন কলা-কৌশল ও কসরতের মাধ্যমে সপ্তম শতাব্দীর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাবঞ্চিত এই মানুষটির সকল উদ্ভট বাণী ও নৃশংস কর্মকাণ্ডের বৈধতা দেবার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। এখনও নিরলস ও একনিষ্ঠভাবে তাঁরা তা করে চলেছেন এবং ভবিষ্যতেও তাঁরা তা করবেন। মুহাম্মদ তাঁদের সামনে 'দ্বিতীয়' কোনো পথই খোলা রাখেননি!

এই লক্ষ লক্ষ পৃষ্ঠার একপেশে রচনা থেকে "সত্যকে" খুঁজে বের করা যেমন অত্যন্ত কঠিন, তার চেয়েও বেশি কঠিন তা প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত। পারিবারিক নিগ্রহ এবং সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন ও পদে পদে মৃত্যুঝুঁকির সম্ভাবনা!

তা সত্ত্বেও মুহাম্মদের সময় থেকে শুরু করে যুগে যুগে হাজারো মানুষ স্বনামে বা বেনামে মুহাম্মদের বাণী ও নৃশংস কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছেন প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে। আবদুল্লাহ বিন উবাই (মুহাম্মদ যাকে মুনাফিক বলা  ঘোষণা দিয়েছিলেন) থেকে শুরু করে  মুহাম্মদ বিন জাকারিয়া আল-রাজী (৮৪৫-৯২৫ সাল), আলী দাস্তি (১৮৯৬ -১৯৮১ সাল), আরজ আলী মাতুব্বর (১৯০১ -১৯৮৬ সাল) ইত্যাদি অজস্র লেখক ও বুদ্ধিজীবী হাজারো প্রতিকূলতার মধ্যেও যুগে যুগে সত্য প্রকাশের সৎ সাহস দেখিয়েছেন। [5] [6]

মুহাম্মদের চরিত্র ও কুরাইশদের চরিত্রের তুলনামূলক আলোচনা

পাঠক, আসুন, আমরা মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের উপরি উল্লেখিত বর্ণনার আলোকে আবু সুফিয়ান বিন হারব ও তাঁর স্ত্রী হিন্দ বিনতে ওতবার মহানুভবতার সাথে মুহাম্মদের চরিত্রের তুলনামূলক আলোচনা করি। 

ওপরে বর্ণিত ঘটনায় আমরা জানছি, মাত্র অল্প কিছুদিন আগে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা মোট ৭২ জন কুরাইশকে নৃশংসভাবে খুন ও ৬৮ জনকে বন্দী করে মুক্তিপণ আদায় করার কারণে বিপর্যস্ত ক্ষতিগ্রস্ত স্বজনহারা কুরাইশ জনপদ স্বাভাবিক কারণেই মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের ওপর ছিলেন অত্যন্ত বিক্ষুব্ধ।

এই সংক্ষুব্ধ স্বজনহারা বিপর্যস্ত বিক্ষুব্ধ লোকদের নাকের ডগার সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে নবীকন্যা জয়নাবকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে কিছু কুরাইশ তা ঠেকানোর চেষ্টা করেন। সেই প্রচেষ্টায় তাঁরা তাঁদের পিছু ধাওয়া করে ধু-তাওয়া নামক স্থানে তাঁদেরকে ধরে ফেলেন। হাববার বিন আল-আসওয়াদ এবং তাঁর সহকারী নাফি বিন আবদ কায়েস নামক দুই ব্যক্তি (কুরাইশ) সবার আগে সেখানে পৌঁছতে সমর্থ হন। তাঁরা নবী কন্যা জয়নাবের যাত্রা ঠেকাতে জয়নাব ও তাঁর দেবরকে হুমকি প্রদর্শন করেন। কিন্তু তাঁরা তাঁদেরকে কোনোরূপ শারীরিক আঘাত করেননি।

তা সত্ত্বেও মুহাম্মদ হাববার বিন আল-আসওয়াদ এবং নাফি বিন আবদ কায়েস কে হত্যা করার হুকুম জারি করে একদল হানাদার বাহিনী প্রেরণ করেন।

অন্যদিকে, যে আবু সুফিয়ান ও তাঁর স্ত্রী হিন্দের বাবা-চাচা (শ্বশুর) ও পুত্র সন্তানকে অল্প কিছুদিন আগে নৃশংস ভাবে হত্যা করেছেন মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা, সেই চরম ক্ষতিগ্রস্ত স্বজনহারা কুরাইশ দম্পতি তাঁদের সেই স্বজনদের হত্যাকারীর কন্যার জন্য সর্বাত্মক সাহায্যের আশ্বাস নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন। এই হত্যাকারীর কন্যা কীভাবে এই সংক্ষুব্ধ বিপর্যস্ত স্বজনহারা বিক্ষুব্ধ কুরাইশদের রোষানল এড়িয়ে নিরাপদে তাঁর পিতার কাছে পৌঁছতে পারেন, তার সৎ পরামর্শ দিয়েছিলেন এই কুরাইশ দলপতি আবু সুফিয়ান। এই মহানুভবতার দৃষ্টান্ত আজকের পৃথিবীর সভ্য সমাজেও বিরল এক উদাহরণ !

যে সমাজের লোকেরা আক্রান্ত হয়েও শত্রুর নিকটাত্মীয়ের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসাপরায়ন না হয়ে হয় সাহায্যকারী, সেই সমাজকে "অন্ধকারের যুগ" আর সেই সমাজে বসবাসকারী মানুষদের কি অন্ধকার যুগের বাসিন্দা বলে আখ্যায়িত করা যায়?

কুরাইশদের ওপরে বর্ণিত কর্মকাণ্ডকে যদি "অন্ধকার যুগের" বাসিন্দাদের মানসিকতা ও কর্মকাণ্ড বলে আখ্যায়িত করা হয়, তবে সেই একই যুগের বাসিন্দা মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের মানসিকতা ও কর্মকাণ্ড কে কী নামে আখ্যায়িত করা উচিত?

(চলবে)

তথ্যসূত্র ও পাদটীকা

[1] তফসীরে ইবনে কাথির:

--- Imam Ahmad recorded that Thabit said that Anas, may Allah be pleased with him, said: "When Zaynab's `Iddah finished, may Allah be pleased with her, the Messenger of Allah said to Zayd bin Harithah, (Go to her and tell her about me (that I want to marry her).) So, he went to her and found her kneading dough. He (Zayd) said, `When I saw her I felt such respect for her that I could not even look at her and tell her what the Messenger of Allah had said, so I turned my back to her and stepped aside, and said, `O Zaynab! Rejoice, for the Messenger of Allah has sent me to propose marriage to you on his behalf.' She said, `I will not do anything until I pray to my Lord, may He be glorified.' So she went to the place where she usually prayed. Then Qur'an was revealedand the Messenger of Allah came and entered without permission. ----

[2] “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ:  A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা - ৩১৪-৩১৫,
[3] “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৭, ইংরেজী অনুবাদ: W. Montogomery Watt and M.V. McDonald, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭, ISBN 0-88706-344-6 [ISBN 0-88706-345-4 (pbk)], পৃষ্ঠা (Leiden) - ১৩৪৮-১৩৫০

[4] Ibid আল তাবারী- পৃষ্ঠা (Leiden) ১৪১৫

[5] মুহাম্মদ বিন জাকারিয়া আল-রাজী (৮৪৫-৯২৫ সাল) ছিলেন প্রখ্যাত ইরানী চিকিৎসক, বিজ্ঞানী ও দার্শনিক। জ্ঞান ও বিজ্ঞানে যার অবদানের উদাহরণ টেনে ইসলাম বিশ্বাসীরা "ইসলামের স্বর্ণযুগের" মহাত্ব বর্ণনা করেন।

ইসলাম বিষয়ে তাঁর উক্তি: ”If the people of this religion are asked about the proof for the soundness of their religion, they flare up, get angry and spill the blood of whoever confronts them with this question. They forbid rational speculation, and strive to kill their adversaries. This is why truth became thoroughly silenced and concealed”

কুরান বিষয়ে তাঁর উক্তি:You claim that the evidentiary miracle is present and available, namely, the Koran. You say: "Whoever denies it, let him produce a similar one." Indeed, we shall produce a thousand similar, from the works of rhetoricians, eloquent speakers and valiant poets, which are more appropriately phrased and state the issues more succinctly. They convey the meaning better and their rhymed prose is in better meter. ... By God what you say astonishes us! You are talking about a work which recounts ancient myths, and which at the same time is full of contradictions and does not contain any useful information or explanation. Then you say: "Produce something like it"?”

http://en.wikipedia.org/wiki/Muhammad_ibn_Zakariya_al-Razi

[6]আলী দাস্তি (১৮৯৪/৯৬ -১৯৮১/৮২ সাল) - বিশিষ্ট ইরানী ইসলামিক স্কলার, সাংবাদিক, সাহিত্যিক। তাঁর উক্তি: "Belief can blunt human reason and common sense, even in learned scholars. What is needed is more impartial study." জীবনের শেষ দিকে তিনি বেনামে যে বইটি লিখেছেন তার নাম "Bisto O Seh Sal (Twenty Three Years)"ইংরেজিতে অনুদিত এই বইটি অন-লাইনে বিনামূল্যে পাওয়া যায়:

Twenty Three Years: A Study of the Prophetic Career of Mohammad – by ALI  DASHTI (Translated from the Persian by F.R.C. Bagley, F. R. Bagley)


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন