লিখেছেন গোলাপ
পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩ > পর্ব ১৪ > পর্ব ১৫ > পর্ব ১৬ > পর্ব ১৭ > পর্ব ১৮ > পর্ব ১৯ > পর্ব ২০ > পর্ব ২১ > পর্ব ২২ > পর্ব ২৩ > পর্ব ২৪ > পর্ব ২৫ > পর্ব ২৬ > পর্ব ২৭ > পর্ব ২৮ > পর্ব ২৯ > পর্ব ৩০ > পর্ব ৩১ > পর্ব ৩২ > পর্ব ৩৩ > পর্ব ৩৪ > পর্ব ৩৫ > পর্ব ৩৬ > পর্ব ৩৭ > পর্ব ৩৮ > পর্ব ৩৯
স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কী রূপে তাঁর নিজ কন্যা জয়নাবের স্বামী জামাতা আবু আল-আস বিন আল-রাবিকে বন্দী দশা থেকে মুক্ত কারার সময় শর্ত আরোপ করেছিলেন এবং সেই শর্ত অনুযায়ী পৌত্তলিক আবু আল আস তাঁর মুসলিম স্ত্রী জয়নাব কে কীভাবে তাঁর পিতার কাছে পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন, তার বিস্তারিত বর্ণনা আগের দু'টি পর্বে করা হয়েছে। স্বামী ও স্ত্রী ভিন্ন ধর্ম-মতাবলম্বী হওয়া সত্বেও এই দম্পতি সুদীর্ঘ ১৪ টি বছর (৬১০-৬২৪ সাল) একত্রেই বসবাস করতেন। এই সুদীর্ঘ একত্র বাসের অবসান ঘটিয়ে মুহাম্মদের আরোপিত শর্ত অনুযায়ী আবু আল-আস ও তাঁর পরিবার সদস্যরা বিশিষ্ট কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ান বিন হারবের পরামর্শ মোতাবেক নবী কন্যা জয়নাবকে বিনা বাধায় মক্কা থেকে মদিনায় তাঁর পিতার কাছে প্রেরণ করেছিলেন।
এই ঘটনাটি ঘটেছিল বদর যুদ্ধের (১৫ই মার্চ, ৬২৪ সাল) অল্প কিছুদিন পরে। এরপর সুদীর্ঘকাল তাঁরা একে অপরের সাথে থাকেন বিচ্ছিন্ন! আবু আল-আস বসবাস করেন মক্কায়, আর তাঁর স্ত্রী জয়নাব মদিনায়!
অতঃপর মক্কা বিজয়ের (জানুয়ারি, ৬৩০ সাল) অল্প কিছুদিন পূর্বে সিরিয়া থেকে বাণিজ্য সামগ্রী নিয়ে মক্কায় প্রত্যাবর্তনের সময় মুহাম্মদের এই জামাতা আবারও তাঁর শ্বশুরের অনুসারী হানাদার দস্যুদের কবলে পরেন। অতর্কিত হামলায় এই ডাকাতরা তাঁর সমস্ত অর্থ ও বাণিজ্য সামগ্রী লুণ্ঠন করে মদিনায় নিয়ে আসে। তবে এ যাত্রায় তিনি এই মরুদস্যুদের কবল থেকে প্রাণ রক্ষা করতে ও বন্দীত্ব এড়াতে সফলকাম হন।
তিনি পালিয়ে আশ্রয় নেন মদিনায় অবস্থানকারী স্ত্রী জয়নাবের কাছে। দুর্গতির হাত থেকে মুক্তির আশায় তিনি স্ত্রীর সাহায্য কামনা করেন। জয়নাব তাঁর স্বামীর মালামাল লুণ্ঠনকারী হানাদার দস্যুদের দলনেতা পিতা মুহাম্মদের কাছে এ ব্যাপারে সাহায্যের আবেদন জানান। মুহাম্মদ তাঁর কন্যাকে সাহায্য করেন। এই ঘটনার পর আবু আল-আস তাঁর শ্বশুর মুহাম্মদকে নবী হিসাবে স্বীকার করেন ও ইসলামে দীক্ষিত হন।
মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের (৭০৪-৭৬৮ সাল) বর্ণনায় ঘটনাটি ছিল নিম্নরূপ:
আবু আল-আস আবার ও তাঁর শ্বশুরের অনুসারী হানাদার দস্যুদের দ্বারা আক্রান্ত হন:
‘এই ভাবে যখন ইসলামের আবির্ভাব হয়, তখন আবু আল-আস বসবাস করেন মক্কায় আর [তাঁর স্ত্রী] জয়নাব আল্লাহর নবীর সাথে বসবাস করেন মদিনায়।
মক্কা বিজয়ের অল্প কিছুদিন পূর্বে আবু আল-আস তাঁর নিজের ও তাঁর প্রতি আস্থাবান অন্যান্য কুরাইশদের টাকাপয়সা নিয়ে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে সিরিয়া গমন করেন, তিনি ছিলেন কুরাইশদের বিশ্বস্ত।
ব্যবসার কাজ সম্পন্ন করে বাড়ির উদ্দেশে যাত্রার প্রাক্কালে তিনি পথিমধ্যে আল্লাহর নবীর এক হানাদার বাহিনীর কবলে পরেন। অতর্কিত হামলায় তারা তাঁর সমস্ত সম্পদ লুণ্ঠন করে, যদিও তিনি নিজে তাদের কবল থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
হানাদাররা তাদের লুণ্ঠনকৃত সম্পদ নিয়ে প্রস্থান করার পর আবু আল-আস রাতের অন্ধকারে জয়নাবের বাড়িতে গমন করেন এবং তাঁর কাছে আশ্রয় ও নিরাপত্তার আবেদন করেন। তিনি [জয়নাব] তৎক্ষণাৎ তাতে রাজি হন। তিনি [আবু আল-আস] তাঁর লুণ্ঠিত সম্পদ ফিরে পাওয়ার আর্জি করেন।
ইয়াজিদ বিন রুমান হইতে প্রাপ্ত মুহাম্মদ ইবনে ইশাক হইতে বর্ণিত:
যখন আল্লাহর নবী সকালের নামাজের জন্য পা বাড়ান এবং বলেন "আল্লাহ আকবার" এবং তাঁর অনুসারীরা তাতে সাড়া দেন, জয়নাব মহিলাদের সংরক্ষিত আসন থেকে (নামাজের শুরুতে সম্পূর্ণ নীরবতার মুহূর্তে) কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, "হে লোকসকল, আমি আবু আল-আস আল-রাবিকে নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছি।"
আল্লাহর নবী নামাজ শেষ করে উপস্থিত লোকদের দিকে ঘুরে বসেন এবং বলেন, "হে লোক সকল, আমি যা শুনছি, তোমারাও কি তা শুনেছ?"
যখন তারা বলে যে, তারা তা শুনেছে, তিনি বলেন যে, জয়নাবের এই ঘোষণার আগে তিনি এই ব্যাপারে কিছুই জানতেন না। তিনি আরও বলেন, "সবচেয়ে নগণ্য মুসলমানও তার পক্ষ হতে অন্যকে নিরাপত্তা বিধান করতে পারে।"
তিনি তাঁর কন্যার কাছে যান এবং তাকে বলেন যে, সে যেন তার অতিথিকে সম্মান করে, কিন্তু তাকে যেন সে তার সান্নিধ্যে আসার অনুমতি না দেয়, কারণ সে আর তার কাছে (স্ত্রী হিসাবে) বিধিসঙ্গত নয়।
আবদুল্লাহ বিন আবু বকর হইতে প্রাপ্ত মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের বর্ণনা মোতাবেক:
যে হানাদার পার্টি আবু আল-আসের সম্পদ লুণ্ঠন করেছিল, আল্লাহর নবী তাদের কাছে খবর পাঠান এবং বলেন, "তোমরা জানো যে এই লোকটি আমাদের সাথে আত্মীয়তা-সূত্রে আবদ্ধ এবং তোমরা তার সম্পদ ছিনিয়ে এনেছ। তার প্রতি সদয় হয়ে তোমরা যদি তার মালামাল তাকে ফেরত দিতে রাজি হও, তবে তা আমরা অবশ্যই পছন্দ করবো; কিন্তু যদি তোমরা তা না করো, তবে এই লুন্ঠিত সম্পদ (Booty) আল্লাহ তোমাদের দান করেছেন এবং এ সম্পদে তোমাদেরই অধিকার সর্বাধিক।"
তারা জবাবে বলে যে, তারা স্ব-ইচ্ছায় তা ফেরত দিতে রাজি এবং এই ব্যাপারে তারা এতটাই সতর্ক ছিল যে, তারা পুরাতন চামড়া, ছোট্ট চামড়ার বোতল এবং এমনকি ছোট্ট কাঠের খণ্ডসহ যাবতীয় লুণ্ঠন সামগ্রী ফেরত নিয়ে আসে, কিছুই অবশিষ্ট রাখে না।
তারপর আবু আল-আস মক্কায় প্রত্যাবর্তন করেন ও যারা তাঁকে টাকা পয়সা দিয়েছিল, তাদের প্রত্যেকের প্রাপ্ত অংশ পরিশোধ করেন এবং তাদের জিজ্ঞেস করেন যে, তার কাছে তাদের আর কোন দাবি দাওয়া আছে কি না।
তারা বলে, “না। আল্লাহ তোমাকে পুরস্কৃত করবে, আমরা তোমাকে বিশ্বস্ত ও মহানুভব হিসাবে পেয়েছি।"
"তারপর," তিনি বলেন, "আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নাই এবং মুহাম্মদ তার দাস ও প্রেরিত নবী। যখন আমি [মদিনায়] তাঁর কাছে ছিলাম, তখনই মুসলমান হতে পারতাম, কিন্তু আমি আশংকা করেছিলাম যে, তাহলে তোমরা ধারণা করবে, আমি তোমাদের টাকা পয়সা ও সম্পদ হরণ করতে চেয়েছিলাম। এখন যেহেতু আল্লাহ তা প্রত্যার্পণ করেছে এবং আমি তা থেকে দায় মুক্ত হয়েছি, আমি আল্লাহর কাছে নিজেকে আত্মসমর্পণ করছি।"
এরূপ বলার পর তিনি যাত্রা করেন এবং আল্লাহর নবীর সাথে পুনরায় মিলিত হন।’ [1] [2]
[ইসলামী ইতিহাসের ঊষালগ্ন থেকে আজ অবধি প্রায় প্রতিটি ইসলাম বিশ্বাসী প্রকৃত ইতিহাস জেনে বা না জেনে ইতিহাসের এ সকল অমানবিক অধ্যায়গুলো যাবতীয় চতুরতার মাধ্যমে বৈধতা দিয়ে এসেছেন। বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিধায় বাংলা অনুবাদের সাথে মূল ইংরেজি অনুবাদের অংশটিও সংযুক্ত করছি। - অনুবাদ, টাইটেল ও [**] যোগ - লেখক।]
Abu Al-As was looted became a Muslim and went back to Medina:
‘When Islam thus came between them Abu Al-As lived in Mecca while Zaynab lived in Medina with the apostle.
Shortly before the conquest of Mecca Abu Al-As went to Syria trading with his own money and that of Quraysh which they entrusted to him for he was a trustworthy man. Having completed his business he was on his away home when one of the apostle’s raiding parties fell in with him and took all he had, though he himself escaped them.
When the raiders went off with their plunder Abu Al-As went into Zaynab’s house under cover of night and asked her to give him protection. She at once did so. He came to ask for his property.
According to Muhammad Ibne Ishaq from Yazid b Ruman:
When the apostle went out to Morning Prayer and said, “Allah Akbar” and the people responded, Zaynab cried (in a moment of complete silence at the beginning of prayer) from the place the women sat,
“O people, I have given protection to Abu Al-As al-Rabi.”
When the apostle had completed his prayer, he turned round to the people and said,
“O’ people, did you hear what I heard?”
When they said that they had he swore that he knew nothing about the matter until Zaynab made her declaration, addining, ‘the meanest Muslim can give protection on their behalf.’
He went off to see his daughter and told her to honor her guest but not to allow him to approach her for she was not lawful to him (as a wife).
According to Ibne Ishaq from Abdullah b Abu Bakr:
The apostle sent to the raiding party which had taken Abu Al-As’s goods saying,
“This man is related to us as you know and you have taken property of his. If you would do him a kindness and return his property to him, we should like that; but if you will not then it is booty which God has given you and you have the better right to it.”
They replied that they would willingly give it back and they were so scrupulous that men brought back old skins and little leather bottles and even a little piece of wood until everything was returned and nothing withheld.
Then Abu Al-As went to Mecca and paid everyone what was due, including those who had given him money to lay out on their behalf and asked them if anyone of them had any further claim on him.
“No,” they said, “God reward you, we have found you both trusthworthy and generous.”
“Then,” he said, “I bear witness that there is no God but the God and that Muhammad is his servant and his apostle. I would have become a Muslim when I was with him but that I feared that you would think that I only wanted to rob you of your property; and now that God has restored it to you and I am clear of it I submit myself to God.”
Thus saying he went off to rejoin the apostle’. [1] [2]
>>> স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মদিনায় এসেকুরাইশদের ওপর তাঁর যাবতীয় অনৈতিক আগ্রাসী আক্রমণ, মালামাল লুণ্ঠন, খুন-জখম ইত্যাদি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বৈধতা দিতে ও তাঁর অনুসারীদের উজ্জীবিত করতে তিনি তাঁর স্বরচিত ব্যক্তিমানস জীবনীগ্রন্থে বারংবার ঘোষণা করেছেন যে, মক্কায় অবস্থানকালীন কুরাইশরা তাঁর ও তাঁর অনুসারীদের উপর যথেচ্ছ অত্যাচার ও নিপীড়ন করে তাঁদের ঘর-বাড়ী থেকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করছে “শুধু এই অপরাধে যে, তারা বলে আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ।"
মুহাম্মদের ভাষায়,
২২:৩৯–৪০ [মদিনায়]– “যুদ্ধে অনুমতি দেয়া হল তাদেরকে যাদের সাথে কাফেররা যুদ্ধ করে; কারণ তাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে। আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করতে অবশ্যই সক্ষম। যাদেরকে তাদের ঘর-বাড়ী থেকে অন্যায়ভাবে বহিস্কার করা হয়েছে শুধু এই অপরাধে যে, তারা বলে আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ। আল্লাহ যদি মানবজাতির একদলকে অপর দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তবে (খ্রীষ্টানদের) নির্ঝন গির্জা, এবাদত খানা, (ইহুদীদের) উপাসনালয় এবং মসজিদসমূহ বিধ্বস্ত হয়ে যেত, যেগুলাতে আল্লাহর নাম অধিক স্মরণ করা হয়। আল্লাহ নিশ্চয়ই তাদেরকে সাহায্য করবেন, যারা আল্লাহর সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী শক্তিধর।”
>>> শুধুমাত্র ধর্মান্তরিত হওয়ার কারণে কোনো ব্যক্তিকে, শুধু অত্যাচার বা নিপীড়নই নয়, খুন করার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো "ইসলাম"।
মুহাম্মদের শিক্ষায় শিক্ষিত ইসলাম-বিশ্বাসীরা ইসলামের সেই ঊষালগ্ন থেকে কুরান ও হাদিসের শিক্ষার বাস্তবায়নকল্পে যুগে যুগে অজস্র "ইসলামত্যাগী (Apostates)" ব্যক্তিদের নৃশংসভাবে খুন করে চলেছেন। আজকের পৃথিবীর সভ্য সমাজে 'Freedom of thought, fredom of speech and freedom of religion' যখন সমাদরে পালিত হয়; সেই একই সময়ের পৃথিবীতে মুহাম্মদের মৃত্যুর ১৪০০ বছর পরেও কোনো মুসলিম রাষ্ট্রে কোন মুসলমান যদি “প্রকাশ্যে ইসলাম ত্যাগের ঘোষণা দেন", তবে সেই রাষ্ট্রযন্ত্র অথবা তার নাগরিকের হাতে সেই ব্যক্তির "খুন" হওয়া প্রায় অনিবার্য। শুধু মুসলিম রাষ্ট্রই বা বলি কেন, পৃথিবীর যে কোনো উন্নত রাষ্ট্রে বসবাস করা অবস্থায়ও যদি কোনো মুসলমান প্রকাশ্যে তাঁর ইসলাম ত্যাগের ঘোষণা দেন, তবে "যে কোন সময় নিবেদিত প্রাণ কোনো মুহাম্মদ-অনুসারী তাঁকে হত্যা করতে পারে" - এই আশংকা নিয়ে তাঁর অবশিষ্ট জীবন কাটাতে হয়। [3]
মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের ওপরোক্ত বর্ণনায় আমরা জানছি যে, আবু আল আস মক্কায় কুরাইশদের সামনেই "ইসলাম গ্রহণ" করেন। কিন্তু সে কারণে ক্রোধান্বিত হয়ে কোনো কুরাইশই এই নব্য মুসলমানের উপর কোনোরূপ বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন, এমন ইতিহাস কোথাও নেই। "শুধুমাত্র ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার কারণে" কুরাইশরা নব্য মুসলমানদের ওপর যথেচ্ছ অত্যাচার ও নিপীড়ন করতেন এমন দাবী সত্য হলে আবু আল আস তাঁর এই ঘোষণার পর অক্ষত অবস্থায় নিরাপদে সেখান থেকে প্রস্থান ও মদিনায় প্রত্যাবর্তন করতে পারতেন না।
মনে রাখা প্রয়োজন যে উক্ত ঘটনা টি ঘটেছিল মক্কা বিজয়ের (৬৩০ সাল) অল্প কিছুদিন আগে, যখন মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা বদর যুদ্ধ, ওহুদ যুদ্ধ, খন্দক যুদ্ধ, বনি কেউনুকা ও বনি নাদির গোত্র কে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ, বনি কুরাইজার গণহত্যা ইত্যাদি অসংখ্য আগ্রাসী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে চলেছেন! এর পরেও কোনো কুরাইশই এই নব্য মুসলমান আবু আল আসকে অসম্মান করেননি।
সুতরাং, নব্য মুসলমানদের ওপর কুরাইশদের অত্যাচার ও নিপীড়নের কিচ্ছা যে মুহাম্মদ মদিনায় এসে কুরাইশদের উপর তাঁর আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের বৈধতার প্রয়োজনে প্রচার করেছিলেন, তা বোঝা যায় অতি সহজেই (এই পর্বের আলোচনা শুধু প্রাসঙ্গিক ঘটনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখবো, বিস্তারিত আলোচনা করবো হিজরত তত্ত্বে)।
নিঃসন্দেহে মুহাম্মদের ওপরোক্ত "২২:৪০ জবান বন্দি"-টি তাঁর ও তাঁর অনুসারীদের জন্য প্রযোজ্য। কুরাইশদের জন্য নয়।
“শুধুমাত্র” অন্য ধর্মে বিশ্বাসী হওয়ার কারণে কাউকে অসম্মান করার শিক্ষার প্রবক্তা যে স্বয়ং মুহাম্মদ, তার সাক্ষ্য আছে তাঁরই স্বরচিত জবান বন্দিতে।
মুহাম্মদের ভাষায়,
২১:৩৬[মক্কায়] - কাফেররা যখন আপনাকে দেখে তখন আপনার সাথে ঠাট্টা করা ছাড়া তাদের আর কোন কাজ থাকে না, একি সেই ব্যক্তি, যে তোমাদের দেব-দেবীদের সমালোচনা করে? এবং তারাই তো রহমান’ এর আলোচনায় অস্বীকার করে।
>>> মক্কায় অবস্থানকালীন মুহাম্মদ তাঁর প্রচারনায় কুরাইশদের কৃষ্টি-ধর্ম-সমাজ ও পূর্বপুরুষদের যে কী পরিমাণ হুমকী-শাসানী-তাচ্ছিল্য ও ভীতি প্রদর্শন করেছেন, তা কুরানের পাতায় পাতায় বর্ণিত আছে।
মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের ওপরে উল্লেখিত বর্ণনায় আবারও আমরা জানতে পারছি যে, চাচা আল-আব্বাসের মতই জামাতা আবু আল-আস ওমক্কায় মুহাম্মদের সুদীর্ঘ ১২-১৩ বছরের (৬১০-৬২২ সাল) পরোক্ষ হুমকি-শাসানী-ভীতি-অসম্মান ও দোষারোপ সম্বলিত (পর্ব-২৬) তথাকথিত "শান্তির বার্তা" প্রচারণায় মুহাম্মদকে নবী হিসাবে গ্রহণ করার কোনো কারণই খুঁজে না পেলেও তাঁরা সেই কারণটি খুঁজে পেয়েছিলেন তখন, যখন মুহাম্মদ ও তাঁর সহচররা কুরাইশদের প্রতি আক্রমণাত্মক আগ্রাসী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেছিলেন।
তাঁরা মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের সহিংস আক্রমণাত্মক আগ্রাসী কর্মের "বলী" হওয়ার পরই অনুধাবন করতে পেরেছিলেন যে, মুহাম্মদ সত্যই আল্লাহর নবী!
স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর আবিষ্কৃত ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার পেছনে "তরবারির গুরুত্ব অপরিসীম"!এই সত্যকে অস্বীকার করেন একমাত্র তাঁরাই, যাঁরা ইসলামের ইতিহাস বিষয়ে অতি অজ্ঞ, নতুবা অতি ভণ্ড (Hypocrite)।
(চলবে)
[কুরানের উদ্ধৃতিগুলো সৌদি আরবের বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ (হেরেম শরীফের খাদেম) কর্তৃক বিতরণকৃত বাংলা তরজমা থেকে নেয়া; অনুবাদে ত্রুটি-বিচ্যুতির দায় অনুবাদকারীর। কুরানের ছয়জন বিশিষ্ট অনুবাদকারীর পাশাপাশি অনুবাদ এখানে।
তথ্যসূত্র ও পাদটীকা
[1] “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ৩১৬-৩১৭
[2] “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৭, ইংরেজী অনুবাদ: W. Montogomery Watt and M.V. McDonald, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭, ISBN 0-88706-344-6 [ISBN 0-88706-345-4 (pbk)], পৃষ্ঠা (Leiden) - ১৩৫০- ১৩৫২
[3] ইসলাম ত্যাগের শাস্তি:
http://wikiislam.net/wiki/Islam_and_Apostasy
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন