শুক্রবার, ৬ জুন, ২০১৪

কুরানে বিগ্যান (পর্ব-৩৮): বদর যুদ্ধ-৯: নিকটাত্মীয়রাও রক্ষা পায়নি! ত্রাস, হত্যা ও হামলার আদেশ – এগার

লিখেছেন গোলাপ

পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩ > পর্ব ১৪ > পর্ব ১৫ > পর্ব ১৬ > পর্ব ১৭ > পর্ব ১৮ > পর্ব ১৯ > পর্ব ২০ > পর্ব ২১ > পর্ব ২২ > পর্ব ২৩ > পর্ব ২৪ > পর্ব ২৫ > পর্ব ২৬ > পর্ব ২৭ > পর্ব ২৮ > পর্ব ২৯ > পর্ব ৩০ > পর্ব ৩১ > পর্ব ৩২ > পর্ব ৩৩ > পর্ব ৩৪ > পর্ব ৩৫ > পর্ব ৩৬ > পর্ব ৩৭

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মক্কার নবী-জীবনে সুদীর্ঘ ১২-১৩ বছর (৬১০-৬২২ সাল) বহু চেষ্টার পরও ১২০-১৩০ জনের বেশি লোককে তাঁর মতবাদে দীক্ষিত করতে পারেননি। অল্প কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া এদের প্রায় সকলেই ছিলেন বিদ্যা-বুদ্ধি, জ্ঞান-গরিমা, সহায়-সম্বল ও সামাজিক পদমর্যাদায় সমাজের নিম্নশ্রেণীভুক্ত। তাঁর নিজ পরিবার হাশেমী বংশের একমাত্র সমবয়সী চাচা হামজা ইবনে আবদ আল-মুত্তালিব ছাড়া আর কোনো "প্রাপ্তবয়স্ক"ব্যক্তিই তাঁকে নবী হিসাবে স্বীকার করে তাঁর মতবাদে দীক্ষা লাভ (ইসলাম গ্রহণ) করেননি। আর হাশেমী বংশের এই একমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি হামজার ইসলাম গ্রহণও ছিল আবেগপ্রবণ জেদের বশে, মুহাম্মদের মতবাদে আকৃষ্ট হয়ে নয় (বিস্তারিত আলোচনা করবো আইয়্যামে জাহিলিয়াত তত্বে)। ইসলাম গ্রহণকালে আলী ইবনে আবু তালিব শুধু যে মুহাম্মদের ওপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল ছিলেন তাইই নয়, তিনি ছিলেন অপ্রাপ্তবয়স্ক। মাত্র নয় কিংবা দশ বছর বয়েসী বালক।

পিতৃ-মাতৃহীন মুহাম্মদ ছিলেন চাচা আবু তালিবের বিশেষ স্নেহধন্য। ধনাঢ্য সমৃদ্ধিশালী খাদিজা বিনতে খুয়ালিদকে বিয়ে করার পূর্ব পর্যন্ত তিনি ছিলেন চাচা আবু তালিব বিন আবদ আল-মুত্তালিবের পরিবারের ওপর নির্ভরশীল। এই বিয়ের সময় মুহাম্মদ ছিলেন ২৫ বছর বয়েসী যুবক আর খাদিজা ছিলেন ৪০ বছর বয়েসী প্রৌঢ়া। বিশিষ্ট বিদুষী অভিজাত ধনী ব্যবসায়ী খাদিজা বিনতে খুয়ালিদ বিন আসাদ বিন আবদ উজ্জাহকে বিয়ে করে মুহাম্মদ তাঁর চাচা আবু তালিবের পরিবার থেকে খাদিজার পরিবারে আশ্রয় নেন। তিনি ছিলেন খাদিজা পরিবারের ঘর-জামাই। [1

আবু তালিবের বৃহৎ সংসারে ছিল অস্বচ্ছলতা। ধনাঢ্য খাদিজাকে বিয়ে করে স্ত্রী খাদিজার সম্পদে মুহাম্মদ তখন বেশ সচ্ছল। সেই অবস্থায় আবু তালিবের অসচ্ছল পরিবারকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন ভাতিজা মুহাম্মদ এবং ভাই আল-আব্বাস বিন আবদ-আল মুত্তালিব। আবু তালিবের দুই পুত্র আলী ইবনে আবু তালিবের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন ভাতিজা মুহাম্মদ এবং জাফর বিন আবু তালিবের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন ভাই আল-আব্বাস। মুহাম্মদ তাঁর চাচাত ভাই আলীকে এবং আল-আব্বাস তাঁর ভাতিজা জাফরকে তাঁদের নিজ নিজ পরিবারে নিয়ে আসেন। [2]

এই জাফরও ছোট বেলায় ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং মুহাম্মদের আদেশে অন্যান্য অনুসারীদের সাথে স্ত্রী আসমা বিনতে উমায়াকে সঙ্গে নিয়ে আবিসিনিয়ায় (বর্তমান ইথিওপিয়া) হিজরত করেছিলেন। আবিসিনিয়ায় তাঁর এক পুত্রসন্তান জন্মলাভ করে, নাম রাখেন আবদুল্লাহ। মুহাম্মদের আরও কিছু অনুসারীর সাথে জাফর সেখানেই অবস্থান করেন। মদিনায় হিজরতের পর মুহাম্মদ তাঁদেরকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমর বিন উমাইয়া আল-দামরিকে আবিসিনিয়ার রাজার কাছে পাঠান। পরিশেষে, হুদাইবিয়া সন্ধি চুক্তির পর তিনি ও তাঁর পরিবার অবশিষ্ট অন্যন্য আবিসিনিয়ায় হিজরতকারী মুহাম্মদ অনুসারীদের সাথে দু'টি নৌকাযোগে ফিরে এসে মুহাম্মদ ও তাঁর মদিনায় অবস্থানকালীন অনুসারীদের সাথে খাইবারে মিলিত হন। তিনি ছিলেন সিরিয়ায় মু'তা যুদ্ধের নেতৃত্বে এবং এই যুদ্ধেই তিনি নিহত হন। [3]

মুহাম্মদের পরিবারের যে-ব্যক্তিটি প্রত্যক্ষভাবে তাঁর নবী জীবনের কর্মকাণ্ডের সক্রিয় বিরোধিতা করেছিলেন, তিনি ছিলেন তাঁর নিজেরই চাচা আবু লাহাব। এই সেই আবু লাহাব যাকে প্রকাশ্য দিবালোকে উপস্থিত অন্যান্য কুরাইশদের সামনে মুহাম্মদ অভিশাপ বর্ষণ করেছিলেন (পর্ব-১২)। এই আবু লাহাবের নাম জানেন না, এমন ইসলামবিশ্বাসী জগতে বিরল। কিন্তু যে-ইতিহাসটি অধিকাংশ ইসলাম বিশ্বাসীই জানেন না, তা হলো শুধু আবু লাহাবই নয়, মুহাম্মদ পরিবারের অনেক সদস্য বদর যুদ্ধে কুরাইশদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে তাঁর ও তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। অন্যান্য কুরাইশদের মত তাঁর পরিবারের কিছু সদস্য বন্দিত্ব বরণও করেছিলেন।

মুহাম্মদের যে ঘনিষ্ঠ পরিবার সদস্যরা বদর যুদ্ধে মুহাম্মদ ও তাঁর সহকারীদের হাতে বন্দী হয়েছিলেন, তাঁরা হলেন:

১) আল-আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব - মুহাম্মদের নিজের চাচা

২) আকিল ইবনে আবু তালিব - চাচাতো ভাই, আলীর আরেক ভাই

৩) নওফল ইবনে আল-হারিথ বিন আব্দুল মুত্তালিব - আরেক চাচাতো ভাই

৪) আবু আল-আস ইবনে আল রাব্বি - মুহাম্মদের নিজের জামাই, মেয়ে জয়নাবের স্বামী

আরেক চাচাতো ভাই তালিব বিন আবু তালিব (আবু তালিবের বড় ছেলে, আলীর বড় ভাই) বদর যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য কুরাইশদের সঙ্গে মক্কা থেকে রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু পথিমধ্যে যাত্রা পরিবর্তন করে তিনি নিরুদ্দেশ হন (পর্ব-৩০)। [4] 

মুহাম্মদের নিজ পরিবারের এই বন্দী সদস্যরাও তাঁর নৃশংসতার হাত থেকে রেহাই পাননি। মুহাম্মদ তাঁদের পরিবারের কাছ থেকেও যথারীতি মুক্তিপণ আদায় করেন। মুক্তিপণের বিনিময়ে তাঁরা নিজেদের মুক্ত করেন। মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ সাল) ও আল তাবারীর (৮৩৯ -৯২৩ সাল) বর্ণনা:

আল আব্বাস, আকিল, নওফল এবং ওতবা বিন আমরের বন্দিত্ব ও মুক্তিপণ: 

'(ইবনে হুমায়েদ < সালামাহ <) মুহাম্মদ ইবনে ইশাক < আল কালবি < আবু সালিহ < ইবনে আব্বাস হইতে বর্ণিত:

আল্লাহর নবী আল আব্বাস বিন আবদ আল-মুত্তালিব কে (বন্দি করে) তাঁর সাথে মদিনায় নিয়ে আসেন এবং তাকে বলেন, "আল আব্বাস, তোমাকে তোমার ও তোমার দুই ভাতিজা আকিল বিন আবু তালিব ও নওফল বিন আল-হারিথের মুক্তিপণ এবং তোমার মিত্র ওতবা বিন আমর বিন জাহদামের মুক্তিপণ অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে; কারণ তুমি সম্পদশালী।" 

সে (আল-আব্বাস) বলে, "আমি মুসলমান ছিলাম, কিন্তু তারা আমাকে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে (যুদ্ধ করতে) বাধ্য করেছে।" 

তিনি (মুহাম্মদ) বলেন, "আল্লাহই তোমার ইসলাম সম্বন্ধে ভাল জানে। তুমি যা বলছো, তা যদি সত্য হয়, তবে সে জন্য আল্লাহ তোমাকে পুরস্কৃত করবে। কিন্তু যাবতীয় বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে তুমি আমাদের বিরুদ্ধে। সুতরাং তোমাদের মুক্তিপণের টাকা পরিশোধ করো।"

বদর যুদ্ধের পর আল্লাহর নবী তার কাছ থেকে ২০ আউন্স (উকিয়াহ) সোনা হস্তগত করেছিলেন। আল আব্বাস বলে, "হে নবী, সেই সম্পদের বিনিময়ে আপনি আমাদের মুক্তি দিন।"

তিনি (মুহাম্মদ) বলেন, "না, সেটা ঐ সম্পদ যা তোমার কাছ থেকে আল্লাহ আমাদের দিয়েছে।"

তখন আল আব্বাস বলে, "আমার কোনো টাকা-পয়সা নেই।"

"তুমি মক্কা থেকে আসার সময় যে টাকা-পয়সা উম্মে আল-ফাজল বিনতে আল-হারিথের কাছে গচ্ছিত রেখেছ, সেগুলো কোথায়? তোমারা দু'জন সেখানে একাই ছিলে, যখন তুমি তাকে বলেছিলে, 'যদি আমি খুন হই, তবে এই পরিমাণ আল-ফজলের জন্যে, এই পরিমাণ আবদুল্লাহর জন্যে, এই পরিমাণ কুলসুমের জন্য এবং এই পরিমাণ ওবায়েদুল্লাহর জন্যে?"

সে (আল-আব্বাস) বলে, "তার শপথ, যে তোমাকে সত্য সহ পাঠিয়েছে। এই ঘটনা সে এবং আমি ছাড়া আর কেউ জানে না। এখন আমি জানি যে, তুমি আল্লাহর নবী।"

তাই মুক্তিপণ পরিশোধ করে আল-আব্বাস নিজেকে এবং তার দুই ভাতিজা ও মিত্রকে মুক্ত করে।[5]

>>> কুরান সাক্ষী, মুহাম্মদ তাঁর সুদীর্ঘ নবী-জীবনে কুরাইশদের বারংবার আহ্বান সত্ত্বেও তাঁর নবুয়তের সত্যতার প্রমাণ "একটি মোজেজা"-ও হাজির করতে পারেননি। তা সত্ত্বেও মুহাম্মদের মৃত্যুর পর তাঁর অনুসারীরা তাঁদের লিখিত মুহাম্মদের জীবনীগ্রন্থ (সিরাত), হাদিস-গ্রন্থ,  প্রবন্ধ, গল্প, কবিতায় এবং বক্তৃতা, বিবৃতি, হামদ ও নাত, জারী-সারী-মুর্শিদী গান, গীত, গজল ইত্যাদিতে ওপরে বর্ণিত মোজেজার অনুরূপ অথবা এর চেয়েও আরও আশ্চর্য কল্পকাহিনীর অবতারণা করেছেন। ইসলামের প্রাথমিক সংজ্ঞা (মুহাম্মদ+আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস) অনুযায়ী কোনো ইসলাম বিশ্বাসীরই মুহাম্মদের কোনো বাণী বা কর্মের সামান্যতম সমালোচনা করারও সুযোগ নেই! অত্যন্ত কঠোর হুঁশিয়ারির মাধ্যমে মুহাম্মদ তাঁদের সেই পথ চিরকালের জন্য রুদ্ধ করে দিয়েছেন (পর্ব ১০)। একই সাথে মুহাম্মদ দাবী করেছেন যে, সৃষ্টিকর্তা “আল্লাহ স্বয়ং" তাঁর প্রশংসা করেন (পর্ব ১৯)! 

পৃথিবীর সকল ইসলাম বিশ্বাসীর জন্য মুহাম্মদ যে একটি পথ খোলা রেখেছেন, তা হলো “সর্বাবস্থায় ‘তাঁর’ ভূয়সী প্রশংসা করা ও 'তাঁর' সমস্ত বাণী ও কর্মের বৈধতা প্রদান করা"। গত ১৪০০ বছর যাবত মুহাম্মদ অনুসারীরা নিরলস ভাবে বিভিন্ন কসরতেরমাধ্যমে তা অত্যন্ত সুচারুরূপে পালন করে চলেছেন এবং চলবেন। তাঁদের সামনে "দ্বিতীয় কোন পথ” খোলা নেই। যার ফলশ্রুতিতে মুহাম্মদের মৃত্যুর (৬৩২ সাল) পর অতিবাহিত সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে এ সব কল্পকাহিনীর সংখ্যা ও বৈচিত্র্য দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকে। যার পরিণতিতে আমরা দেখতে পাই:

ক) "কুরান":
মুহাম্মদের মৃত্যুর প্রায় ১৯ বছর পরে সংকলিত ইসলামের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য দলিল কুরানে বর্ণিত মুহাম্মদের মোজেজার পরিমাণ "শূন্য, শূন্য"। কুরাইশরা মুহাম্মদের কাছে তাঁর নবুয়তের প্রমাণস্বরূপ তাঁরই দাবীকৃত পূর্ববর্তী নবীদের অনুরূপ প্রমাণ বহুবার বহুভাবে হাজির করার অনুরোধ করেছেন; চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন! তাঁদের সেই অনুরোধ ও চ্যালেঞ্জের জবাবে মুহাম্মদ তাঁদের সঙ্গে যথেচ্ছ অপ্রাসঙ্গিক বাক্য বিনিময় করেছেন; হুমকি-শাসানী-ভীতি-প্রদর্শন ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছেন। কিন্তু কোনো প্রমাণ (মোজেজা) হাজির করতে পরেননি (বিস্তারিত পর্ব ২৩-২৫)।

খ) “সিরাত রসুল আল্লাহ”:
মুহাম্মদের মৃত্যুর প্রায় ১১০ বছর পর মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের লিখা মুহাম্মদের “সর্বপ্রথম পূর্ণাঙ্গ জীবনীগ্রন্থে” মুহাম্মদের মোজেজার পরিমাণ যৎসামান্য, অপেক্ষাকৃত কম বিচিত্র ও কম উদ্ভট।

গ) "কিতাব আল-তাবাকাত আল-কাবির":
মুহাম্মদের মৃত্যুর প্রায় ১৮৫ বছর পর মুহাম্মদ ইবনে সা'দের (৭৮৪-৮৪৫ সাল) লেখা মুহাম্মদের এই জীবনীগ্রন্থে মুহাম্মদের মোজেজার পরিমাণ প্রচুর, বিচিত্র ও উদ্ভট।

ঘ) হাদিস সংকলন কাল: 
মুহাম্মদের মৃত্যুর ২০০ বছরেরও অধিক পরে বিভিন্ন হাদিস সংকলকদের লেখা হাদিসগ্রন্থে মুহাম্মদের মোজেজার পরিমাণ অসংখ্য, আরও বেশি বিচিত্র ও উদ্ভট।

ঙ) বর্তমান কাল:
মুহাম্মদের মৃত্যুর ১৪০০ বছর পর প্রায় সমস্ত ইসলাম বিশ্বাসী দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন “অভূতপূর্ব অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী এবং তাঁর জীবনের সমস্তই ছিল মহান আল্লাহপাকের অপার কুদরতের নিদর্শন”।

সুতরাং মুহাম্মদের যাবতীয় মোজেজার কিচ্ছা যে নিবেদিতপ্রাণ মুহাম্মদ-অনুসারীদের মগজ-নিঃসৃত কর্ম, তা বোঝা যায় অতি সহজেই। যেমন করে বর্তমানের "পীর ও সাধু-বাবার অনুসারীরা” তাদের নিজ নিজ পীর ও সাধু-বাবার অলৌকিক মাহাত্ম্যের প্রচার রটান, মুহাম্মদ অনুসারীরাও সেই একইভাবে তাঁদের প্রিয় নবীর অলৌকিক মাহাত্ম্যের প্রচার ঘটিয়েছেন।

মক্কায় স্বাভাবিক পরিবেশে কোনো অবিশ্বাসী কুরাইশ মুহাম্মদের কোনো মোজেজার পরিচয় না পেলেও মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের এ বর্ণনায় আমরা জানছি যে, বন্দী অবস্থায়আল-আব্বাস মুহাম্মদের অলৌকিক ক্ষমতার পরিচয়ে মুগ্ধ হয়ে মুক্তিপণের অর্থ পরিশোধ করে নিজ ভাতিজার কবল থেকে নিজেকে, তাঁর দুই ভাতিজা কে (মুহাম্মদের নিজেরই দুই চাচাতো ভাই) ও তাঁর এক মিত্রকে মুহাম্মদের কবল থেকে মুক্ত করেছিলেন।

মুহাম্মদের নিজ জামাতা আবু আল-আস বিন আল-রাবি

মুহাম্মদ ইবনে ইশাক ও আল-তাবারীর বর্ণনা:

‘মুহাম্মদের নিজ কন্যা জয়নাবের স্বামী, জামাতা আবু আল-আস বিন আল-রাবি ও ছিলেন বন্দীদের একজন (বানু হারাম গোত্রের খিরাশ বিন আল-সিমা নামের এক লোক তাকে বন্দী করেন)আবু আল-আস ছিলেন মক্কার গুরুত্বপূর্ণ সম্পদশালী সম্মানিত সওদাগরদের একজন।তাঁর মায়ের নাম ছিল হালা বিনতে খুয়ালিদ। (মুহাম্মদের প্রথম স্ত্রী) খাদিজা বিনতে খুয়ালিদ ছিলেন তাঁর নিজের খালা। খাদিজা আল্লাহর নবীকে তাঁর জন্য বিয়ের পাত্রী খুঁজতে বলেছিলেন। এ ঘটনাটি ছিল নবুয়ত প্রাপ্তির পূর্বে। যেহেতু আল্লাহর নবী কখনোই তাঁর (খাদিজা) কথায় আপত্তি করেননি, তাই তিনি তাঁর কন্যার সাথে তাঁর বিয়ে দেন। খাদিজা তাঁকে নিজের ছেলের মতই স্নেহ করতেন। আল্লাহ যখন নবুয়তের মাধ্যমে নবীকে সন্মানিত করলেন (৬১০ সাল), খাদিজা ও তাঁর কন্যা তা বিশ্বাস করে তাঁর ধর্মে দীক্ষিত হন এবং সাক্ষ্য দেন যে, তিনি সত্য আনয়ন করছেন। যদিও আবু আল-আস মুশরিকই (Polytheist) থেকে যান।

আল্লাহর নবী রুকাইয়া অথবা উম্মে কুলসুমকে (আবু লাহাব পুত্র) ওতবা বিন আবু লাহাবের সাথে বিয়ে দেন। যখন তিনি কুরাইশদের সামনে প্রকাশ্যে তাঁর ধর্ম প্রচার শুরু করেন এবং তাদের সাথে শত্রুতা প্রদর্শন করেন, তখন তারা একে অপরকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, তারা মুহাম্মদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে এবং সে মোতাবেক তারা মুহাম্মদের দুই কন্যাকে মুহাম্মদের কাছে ফেরত পাঠাবে, যেন তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব মুহাম্মদের ওপর বর্তায়।

তারা আবু আল-আস এর কাছে যায় এবং তাঁকে বলে যে, তিনি যেন তাঁর স্ত্রীকে (জয়নাব) তালাক দেন। এর বিণিময়ে তিনি যে-মেয়ে চাইবেন. তাকেই তা দেয়া হবে। তিনি তাতে রাজী হননি এবং বলেন যে তিনি কুরাইশদের কাছ থেকে অন্য কোনো মেয়ে নিতে রাজি নন। আমি (মুহাম্মদ ইবনে ইশাক) শুনেছি যে, আল্লাহর নবী উষ্ণতার সথে তাঁর জামাইয়ের এই ব্যবহারের কথা বলতেন।

তারপর তারা (কুরাইশরা) ওতবা বিন আবু লাহাবের কাছে এই একই অনুরোধ নিয়ে যায়। সে (ওতবা) বলে যে, যদি তারা আবান বিন সাইদ বিন আল-আস এর কন্যা অথবা সাইদ বিন আল-আস এর কন্যাকে এনে দিতে পারে, তবে সে তার স্ত্রীকে তালাক দেবে। তারা সেই ব্যবস্থা করলে সে তার স্ত্রীকে তালাক দেয়। স্ত্রীর সাথে তার কোনো বিবাহ-দৈহিক সম্পর্ক হয়েছিল না। এই ভাবে নবীর কন্যাকে আল্লাহ নবীর কাছে নিয়ে আসে, পরে ওসমান তাকে বিয়ে করেন। সে কারণে মক্কায় প্রীতির সম্পর্কে আবদ্ধ হওয়া বা ছিন্ন করার ক্ষমতা আল্লাহর নবীর ছিল না। তাঁর পরিস্থিতি ছিল সীমাবদ্ধ। [6]

ইসলামের কারণে জয়নাব ও তাঁর স্বামী আবু আল আসের সম্পর্কে বিভাজন ঘটে।
কিন্তু তাঁরা, এক মুসলমান ও এক অবিশ্বাসী, আল্লাহর নবীর হিজরতের (৬২২ সাল) পূর্ব পর্যন্ত একত্রেই বসবাস করতেন।

আবু আল আস বদর যুদ্ধে অংশ নেন এবং অন্যান্য বন্দীর সাথে বন্দিত্ব বরণ করে আল্লাহর নবীর সাথে মদিনায় অবস্থান করেন’।

'[ইবনে হুমায়েদ < সালামাহ <] মুহাম্মদ ইবনে ইশাক < ইয়াহিয়া বিন আববাদ বিন আবদুল্লাহ বিন আল-জুবায়ের <তার পিতা আববাদ (আয়েশা ছিলেন আববাদের খালা) < আল্লার নবীর স্ত্রী আয়েশা হতে বর্ণিত:

আয়েশা বলেছেন, "যখন মক্কাবাসীরা বন্দীদের মুক্তির জন্য তাদের মুক্তিপণ পাঠাচ্ছিলেন, জয়নাব আবু আল আসের মুক্তির জন্য মুক্তিপণ পাঠায়। আবু আল আসের সাথে বিয়ের সময় তাঁর মা খাদিজার দেয়া নেকলেসটি তিনি পাঠিয়ে দেন।আল্লাহর নবী তা দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠেন এবং (তাঁর অনুসারীদের) বলেন, 'যদি তোমরা এই মুক্তিপণের অর্থ তাকে ফিরিয়ে দিয়ে তার বন্দী স্বামীকে তার কাছে ফেরত পাঠাতে পছন্দ করো, তবে তাই করো।' তাঁর অনুসারীরা তৎক্ষণাৎ তাতে রাজী হয়। তারা তাকে মুক্ত করে ও মুক্তিপণের অর্থ ফেরত পাঠায়।

সেই সময় আল্লাহর নবী আবু আল আসের উপর এক শর্ত আরোপ করেছিলেন অথবা আবু আল আস স্বেচ্ছায় রাজি হয়েছিলেন, যার প্রকৃত সত্য স্পষ্টভাবে কখনো উদঘাটন হয়নি, এই মর্মে যে তিনি জয়নাবকে নবীর কাছে [মদিনায়] পাঠিয়ে দেবেন। 

সে যা-ই হোক, আবু আল আস মক্কায় পৌঁছার পর আল্লাহর নবী একজন আনসারসহ জায়েদ বিন হারিথাকে ইয়াযায উপত্যকায় (মক্কা থেকে ৮ মাইল দূরবর্তী) পাঠান এবং তাকে বলেন, "যতক্ষণ না জয়নাব তোমার পাশ দিয়ে অতিবাহিত হয় ততক্ষণ তোমারা ইয়াযায উপত্যকায় অবস্থান করবে; তারপর তাকে সঙ্গে নিয়ে আমার কাছে ফিরবে।" বদর যুদ্ধের প্রায় মাস দুয়েক পর এই দু'জন সেখানে যায়।

আবু আল আস মক্কায় পৌঁছে জয়নাবকে তার পিতার কাছে যেতে বলেন এবং জয়নাব যাত্রার প্রস্তুতি আরম্ভ করে।’ [7]

[ইসলামী ইতিহাসের ঊষালগ্ন থেকে আজ অবধি প্রতিটি ইসলাম বিশ্বাসী প্রকৃত ইতিহাস জেনে বা না জেনে ইতিহাসের এ সকল অমানবিক অধ্যায়গুলো যাবতীয় চতুরতার মাধ্যমে বৈধতা দিয়ে এসেছেন। বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিধায় বাংলা অনুবাদের সাথে মূল ইংরেজি অনুবাদের অংশটিও সংযুক্ত করছি। - অনুবাদ, টাইটেল ও [**] যোগ - লেখক।]

Muhammad’s own uncle, two cousins and Utbah b Amr b Jahdam

Ibne Hamid from Salama from Ibne Ishaq from al-Kalbi from Abu Salih from Ibn Abbas:

The messenger of God said to al-Abbas b abd al-Muttalib when he was brought to medina with him, “Al-Abbas, you must ransom yourself, your two nephews, Aqil b Abu Talib and Nawfal b al-Harith, and your confiderate Utbah b Amr b Jahdam; for you are a wealthy man.” 

He replied, “I was a Muslim but the people compelled me (to fight) against my will.”
He answered, “God knows best about your Islam. If what you say is true God will reward you for it.  But to all outward appearance you have been against us, so pay us your ransom.” 

Now the apostle had taken twenty ounces (uqiyyah) of gold from him after Badr and Al-Abbas said, “O’ apostle of God credit me with this amount in my ransom.” 

He repilied, “No, that was something which God gave to us from you.” 

Al-Abbas then said, “I have no money.” 

“Where is the money which you deposited with Umm al-Fadl bt al-Harith in Mecca when you were setting out? You were two alone when you said to her, ‘If I am killed so much is for al-Fadl, so much is for Abdullah, so much is for Qutham and so much is for Ubaydullah?”

“By him who sent you with the truth” he said, “Nobody knows this exceptmyself and her, and now I know that you are the messenger of God.” 

So Al-Abbas ransomed himself, his two nephews and his confiderate’. [5] 

Abu Al-As bin al-Rabi – son in law (husband of Zaynab) of Muhammad

‘Among the prisoners was Abu Al-As b al-Rabi, son in law of the apostle, married to his daughter Zaynab (Khirash b al-Sima, one of B Haaram, had captured him). Abu Al-As was one of the important men of Mecca in wealth, respect and merchandise. His mother was Hala b Khuwalid [sister of Khadiza] and Khadija binte Khuwalid was his aunt. Khadija had asked the apostle to find him a wife. Now the apostle never opposed her, this was before revelation came to him, so he married him to his daughter. Khadija used to regard him as her son.

When God honored His apostle with prophecy Khadija and her daughter believed in him and testified that he had brought the truth and followed his religion, though Abu Al-As persisted in his polytheism.

Now the apostle had married Ruqaya or Umm Kulthum to Utba b Abu Lahab and when he openly preached to Quraysh the command of God and showed them hostility they reminded one another that they had relieved Muhammad of his care for his daughters and decided to return them so that he should have the resposibilty of looking after them himself.

They went to Abu Al-As and told him to divorce his wife and they would give him any woman he liked. He refused, saying that he did not want any other woman from Quraysh; and I [Ibne Ishaq] have heard that the apostle used to speak warmly of his action as a son in law. 

Then they went to Utba b Abu Lahab with the same request and he said that if they would give him the daughter of Aban b Sa’id b Al-As or the daughter of Sa’id b Al-As he would divorce his wife; and when they did so he divorced her, not having consummated the marriage. Thus God took her from him to her honor and his shame and Uthman afterwards married her. Now the apostle had no power of binding and loosing in Mecca, his circumstances being circumscribed. [6]   

Islam had made a division between Zaynab and her husband Abu Al-As, but they lived together, Muslim and unbeliever, until the apostle migrated. 

Abu Al-As joined the expedition to Badr and was captured among the prisoners and remained at Medina with the apostle.

According to [Ibne Humayd from Salamah from] Muhammad b Ishaq from Yahya b Abbad b Abdullah b al-Zubayr from his father Abbad (Aisha was maternal aunt of Abbad) from Ayesha the wife of the apostle:

Aisha said, “When the Meccans sent to ransom their prisoners, Zaynab sent the money for Abu Al-As; with it she sent a necklace which Khadija had given her on her marriage to Abu Al-As.  When the apostle saw it his feelings overcame him and he said, ‘If you would like to let her have her captive husband back and return her money to her, do so.’  The people at once agreed and they let him go and sent her money back.

Now the apostle had imposed a condition on Abu Al-As or the later had undertaken it voluntarily, the facts were never clearly established, that he should let Zaynab come to him.

At any rate, after Abu Al-As had reached Mecca the apostle sent Zayd b Haritha and one of the Ansar saying, “Be in the valley of Yajaj (about 8 miles from Mecca) until Zaynab passed by you and then accompany her back to me.” The two went there a month or so after Badr. 

When Abu Al-As reached Mecca, he told Zaynab to go to her father and she proceeded to get ready to travel. [7]

>>> পৃথিবীর প্রায় সকল ইসলাম-বিশ্বাসী দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, মক্কায় কুরাইশরা মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের ওপর যথেচ্ছ অমানুষিক নিপীড়ন ও নির্যাতন করতেন। তাঁরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন যে, কুরাইশদের এই অমানুষিক অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মুহাম্মদের নির্দেশে তাঁর অনুসারীরা প্রথমে আবিসিনিয়ায় ও পরে মদিনায় হিজরত করেছিলেন।

কিন্তু মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা মদিনায় এসে কুরাইশদের বাণিজ্য-কাফেলার ওপর উপর্যুপরি হামলা, বাণিজ্য সামগ্রী লুণ্ঠন, আরোহীদের খুন অথবা বন্দী করে ধরে নিয়ে এসে মুক্তিপণ আদায় সত্ত্বেও জয়নাবের স্বামী বা অন্য কোনো কুরাইশ মুহাম্মদের এই মুসলিম কন্যার ওপর কোনোরূপ অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতন বা দুর্ব্যবহার করেছিলেন এমন আভাসের বিন্দুমাত্র মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের ওপরোক্ত বর্ণনার কোথাও নেই!

শুধু কি তাই? আমরা দেখছি সম্পূর্ণ বিপরীত এক চিত্র!

যে চিত্রের বর্ণনায় যে সত্যটি অত্যন্ত স্পষ্ট, তা হলো:

১) আবু আল-আস প্রলোভনের মুখে ও তাঁর মুসলিম স্ত্রীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদে রাজি হননি।

২) আবু আল-আস নিজে পৌত্তলিক হওয়া সত্ত্বেও তাঁর মুসলিম স্ত্রী জয়নাবের সাথে সুদীর্ঘ বারোটি বছর (৬১০-৬২২ সাল) একত্রেই বসবাস করতেন; যা আজকের আধুনিক সেকুলার সমাজেও এক বিরল উদাহরণ। এমন একটি সমাজের সমস্ত লোককে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা গত ১৪০০ বছর যাবত "অন্ধকারের যুগ/বাসিন্দা" বলে আখ্যায়িত করে আসছেন। 

৩) স্ত্রী জয়নাব তাঁর স্বামীর এই চরম অসহায় মুহুর্তে তাঁর পিতা মুহাম্মদের কাছে স্বামীর মুক্তির জন্য মুক্তিপণের অর্থ পাঠিয়েছিলেন।

৪)  “মুহাম্মদ” তাঁর জামাতা আবু আল আস কে মুক্তি দেয়ার সময় শর্ত আরোপ করেছিলেন যে, তিনি যেন তাঁর মেয়ে জয়নাবকে মদিনায় তাঁর কাছে পাঠিয়ে দেন।

চরম উদার ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী এমন এক স্বামী একই সাথে সুদীর্ঘ ১২ টি বছর তাঁর মুসলিম স্ত্রীর সাথে একত্রে অবস্থান করা অবস্থায় তাঁর সেই স্ত্রীরই প্রত্যক্ষ সাহায্যে মুক্ত হয়ে বিনা অপরাধে তাঁর সেই স্ত্রীকে স্বেচ্ছায় রাজি হয়ে(‘“অথবা” আবু আল আস স্বেচ্ছায় রাজি হয়েছিলেন’) বাপের বাড়িতে নির্বাসনে পাঠাবেন এমন অযৌক্তিক দাবি আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়।

জামাতা আবু আল আসকে শর্ত আরোপে বাধ্য করে মুহাম্মদ যে তাঁর নিজ কন্যা জয়নাবকে তাঁর স্বামীর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে মদিনায় নির্বাসন নিতে বাধ্য করেছিলেন - তা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। আদি মুসলিম ঐতিহাসিকদেরই লিখিত ইতিহাসের পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনায় যে সত্যটি স্পষ্ট (বিস্তারিত আলোচনা করবো "হিজরত তত্বে") তা হলো:

"কুরাইশরা নয়; মুহাম্মদ নিজেই তাঁর মক্কাবাসী অনুসারীদের বিভিন্ন প্রলোভন, ভীতি-প্রদর্শন ও মৃত্যু-হুমকির মাধ্যমে তাঁদের পরিবার-পরিজনদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে মদিনায় হিজরত করতে বাধ্য করেছিলেন। নিজ কন্যা জয়নাবকে তাঁর স্বামীর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে মদিনায় হিজরত করতে বাধ্য করা সেই ধারাবাহিকতার একটি অংশ মাত্র।”  

আবু আল আস মক্কায় এসে তাঁর শ্বশুরের আরোপিত শর্ত অনুযায়ী স্ত্রীকে পরিত্যাগ করতে বাধ্য হন। জয়নাব মদিনায় তাঁর পিতা মুহাম্মদের কাছে যাত্রার প্রস্তুতি গ্রহণ করে।

(চলবে)

তথ্যসূত্র ও পাদটীকা

[1] খাদিজার বাবার দাদা আবদ উজ্জাহ বিন কুছে (Qusayy) ছিলেন মুহাম্মদের দাদার [আবদ আল-মুত্তালিব] দাদা আবদ মানাফ বিন কুছে এর সহোদর ভাই। অর্থাৎ, মাত্র তিন-চার পুরুষ আগে খাদিজা ও মুহাম্মদের পূর্ব-পুরুষরা ছিলেন একই পরিবার ভুক্ত। 

[2] 'তারিক আল-রাসুল ওয়াল মুলুক'- লেখক আল তাবারী, ভলুম ৬, ইংরেজী অনুবাদ - W Montgomary Watt and M.V McDonald (University of Edinburg), State University of New Yok press 1988,, ISBN 0-88706-707-7.
পৃষ্ঠা (Leiden) ১১৬৪

[3] “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ:  A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা - ৫২৬

[4] “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৭, ইংরেজী অনুবাদ: W. Montogomery Watt and M.V. McDonald, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭, ISBN 0-88706-344-6 [ISBN 0-88706-345-4 (pbk)], পৃষ্ঠা (Leiden) -১৩০৮

[5] Ibid ইবনে ইশাক- পৃষ্ঠা ৩১২-৩১৩; আল তাবারী-পৃষ্ঠা (Leiden) ১৩৪৪-১৩৪৫,

[6] আল-তাবারীর পাদটীকা-পৃষ্ঠা (Leiden) ১৩৪৬  
“এটি সত্যিকার বিবাহ ছিল না, ছিল বাগদান। কখনত্ত কখনত্ত বলা হয় যে মুহাম্মদের দুই কন্যার বাগদান হয়েছিল আবু লাহাবের দুই পুত্রের সংগে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় যে রুকাইয়া ওতবার কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ওসমানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন”।

[7] Ibid আল তাবারী - পৃষ্ঠা (Leiden) ১৩৪৬-১৩৪৮; ইবনে ইশাক- পৃষ্ঠা ৩১৩-৩১৪

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন