লিখেছেন শ্রোডিঞ্জারের বিড়াল
কোরান যদি একমাত্র সত্য ও সৃষ্টিকর্তা প্রেরিত একমাত্র জীবনবিধান হয়ে থাকে, তবে কোরান নিয়ে "এত ভ্যাজাল কেন? অ্যাপলোজেটিকস কেন?"
কোরানের আয়াতের মাঝে প্রায়ই নানা রকম ভুল, ভ্রান্তি অসঙ্গতি দেখা যায়, যেগুলা আয়াতের মাঝে ব্র্যাকেট দিয়ে অন্য কিছু লেখে সমাধান করতে হয়।
"গরু আকাশে উড়ে" লেখা থাকলে সেটাকে "গরু (বিমানে করে) আকাশে উড়ে" লিখে শুধরাইতে হয়।
"দুহিয়া" অর্থ মানুষ ১৩০০ বছর ধরে জানে সমতল, ১৩০০ বছর পর আইসা দুহিয়ার অর্থ বদলাইয়া উটের ডিম করা লাগে।
বিজ্ঞান আবিষ্কারের আগে কোরানের একটা বৈজ্ঞানিক তথ্যও পাওয়া যায় না, বিজ্ঞানের আবিষ্কারের পরই কোরানের কোনো একটা অস্পস্ট আয়াতের সাথে মিলাইয়া মিরাকল খুজা লাগে।
কোরানের অনুবাদ গুলো একেকটা একেক রকম কেন? দশটা বাংলা কোরান নিলে দশরকম অর্থ, দশটা ইংরেজি কোরান নিলে দশরকম অর্থ, এমনকি দশটা আরবি কোরানের আরবি স্কলারদের ও একই আয়াত সম্পর্কে দশ রকম কমেন্টারি পাওয়া যায়।
আল্লাহপাক নবী রাসুল পাঠানো বন্ধ করছেন কেন? কোরান যদি ফুল এন্ড ফাইনাল বাণী হয়, তবে যুগে যুগে বিভিন্ন ভাষায় কোরান সমেত নবী-রাসূল পাঠানো উচিত ছিল না?
সাত আসমানরে এক মুমিন কয় বায়ুমন্ডলের ওজোন স্তর, আরেকজন কয় ম্যাগনেটিক ফিল্ড, আরেকজন কয় পুরা মহাবিশ্ব, আরেকজন কয় ডার্ক ম্যাটার, আর কিছু মুমিন তো নানা রকম ডাইমেনশান বইলা চালায়ে দিতে চায়।
তবে সূর্য-তারা কীভাবে বায়ুমণ্ডলে থাকে, কিংবা মহাবিশ্ব কীভাবে ছাদের মত হয় বা পিলার লাগে বা ভাইঙ্গা পড়ে, ডার্ক ম্যাটারে কীভাবে দরজা থাকে ইত্যাদি বলিলেই তারা ক্ষেপিয়া যান।
অনেকে কোরানে বিগ ব্যাং খুজে পায়, আবার বিজ্ঞানমনস্করা পৃথিবী ও আসমানকে আলাদা করার কথা শুনে হেসে বাঁচে না। মুমিনরা কোরানে বিগ ব্যাং পূর্ব সিঙ্গুলারিটি খুজিয়া পান, আর বিজ্ঞানমনস্করা ধূম্রকুন্ড নিয়া হাসাহাসি করে।
ধুমকেতু শয়তানের প্রতি ছুঁড়ে মারা মিসাইল, শয়তানেরা কি আগুনের তৈরি নাকি প্লাজমা?
"নুতফাহ" শব্দের অর্থ জোক না রক্তপিণ্ড নাকি বীর্য, তা নিয়া মুমিনেরা বলগে বলগে মারামারি করে।
কোরান অবিকৃত ও অপরিবর্তিত থাকার দাবি করার পরেও ইসলামে ৪৬টারও বেশী সেক্ট হয়, একেকটা সেক্ট অপর সেক্টগুলোকে দ্বীনচ্যুত ফাতওয়া দেয়।
যখন সহি হাদিসেই কোরান সংকলন কালে সাহাবীদের মাঝে কনফিউশান দেখা যায়, তখন সেই হাদিসগুলোকে বাতিল ঘোষণা করতে পিছপা হয় না।
আবার কুরানিস্টরা তো সিহাহ সিত্তাকেই ভাগাড়ে ছুড়ে মারে।
এদিকে সানা কোডেক্স, উসমানী কোডেক্স, বিন মাসুদ সংকলিত কোরান, আহনাফি কোরান, সাবিত কোডেক্স আর বিভিন্ন মিউজিয়ামে থাকা কোরান সমূহের মাঝে পার্থক্যগুলোর কথা বলতেই "মানি না মানি না" বলিয়া চিৎকার করেন এবং "আল্লাহই কোরানের সংরক্ষক", "বিকৃত হয় নাই মানি না মানি না" বলে গলা ফাটিয়ে ফেলেন।
খতনা করিবার কথা কুরানে নাই, কিন্তু কুরাইশলা হুবাল দেবতার অনুসারে খতনা করিত - এই ব্যাপারে কথা তুললে মুমিনেরা কল্লা ফালানোর হুমকি দেয়।
কোরানে ১৬৪টি খানা বেশ গ্রাফিক PG18 জিহাদের আয়াত পাওয়া যায়, তবুও জিহাদি ভায়েরা বোমা মারিয়া কল্লা কাটিয়া যখন ইসলাম প্রতিষ্ঠা করে, তখন মডারেটদের "ইহা সহি ইসলাম নহে" ম্যাতকার করার কারণ বুঝে ওঠা যায় না।
আবদুল্লাহ অর্থ আল্লাহর দাস, কিন্তু আবদুল্লাহর জন্মের সময় ইসলাম তো দূরে থাক, মুহাম্মদের জন্মই হয় নাই তো এই নাম তার কেমনে হইলো?
আল্লাহর তিন কন্যার কথা কেন আসিতেছে, লাত কেঠা, মানত কেঠা, উজ্জা কেঠা?
হজ্বে চুমা খায় যে, সেই পাথরটা কেঠা? ৩৬০ টা আইডল ভাংগা হইলেও সেটাকে কেন চুম্বন করা?
এদিকে, ৬ বছরের মেয়ে বিবাহযোগ্য হয় কি না, নবী সর্বকালের জন্য উদাহরণ হইলেও আয়েশার ক্ষেত্রে "এগুলা ওই যুগে হইতো" ত্যানাটা প্যাঁচানো যায় কি না, মেন্সট্রুয়েশান কি একটা বালিকার মানসিকভাবে "অ্যাডাল্ট" হওয়ার নির্ধারক হতে পারে কি না, ৬ বছরের বালিকার বিয়েতে মত দেয়ার মত বুদ্ধিশুদ্ধি থাকে কি না, আর নয় বছরে বালিকার সাথে মিলন করা যায় কি না, এইটা নিয়া তারা নানাবিধ গবেষণা করলেও নারীপ্রহার, দাস ও যুদ্ধবন্দীদের সাথে যৌনমিলন নিয়া কথা তুলিলে তখন তাদের খুজিয়া পাওয়া যায় না।
নবীজির নয় বছরে আয়েশার সাথে ক্রিয়াকর্ম কিংবা আল আনফাল সাফিয়ার সাথে বিবাহের আগের তিন রাত কী করেছিলেন, তা জিজ্ঞেস করিলে তাদের ঈমানী জোশ উঠে যায়, আর মাথায় রক্ত উঠে ধর্ম অবমাননার দায়ে মস্তকচ্যুত করার চিন্তা করেন।
এভাবে বলতে থাকলে চলতেই থাকবে... চলতেই থাকবে। এ সকল প্রশ্ন করিলেই মুমিনেরা ক্ষেপিয়া উঠেন, চিল্লা চিল্লি শুরু করেন, "নাস্তিকগো কল্লা চাই কল্লা চাই" শুরু হয়ে যায়। আর ত্যানা প্যাঁচানি অ্যাপলোজেটিকস তো আছেই।
"আমি কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি বোঝার জন্যে। অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি? " (কোরান ৫৪:১৭)
মহান আল্লাহ প্রেরিত পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান ও সত্যের দিশারী পূর্নাঙ্গ জীবনবিধান কোরানে, যেটা সৃস্টিকর্তার মত সর্ব জ্ঞানী সর্বশক্তিমান প্রেরিত কিতাব, যেটা সৃষ্টিকর্তা "সহজ করে দিয়েছেন", সেটাতে এত কনফিউশান, এত সমস্যা, এত কনট্রাডিকশান কেন ওঠে, তা তারা কখনো ভেবে দেখে না।
একমাত্র সত্য ধর্ম ইসলামে কেন এত কনফিউশান, আয়াত কেন এত অস্পস্ট, অর্থ কেন এত বিভিন্ন রকম, ব্যাখ্যা কেন অনির্দিষ্ট এবং নানা রকম, তা তারা ভাবে না।
ভাবলে যদি ঈমান চলে যায়? পাছে আল্লাহ আবার বেশি প্রশ্ন করার দোষে চোখ অন্ধ, কান বয়রা, আর অন্তরে সিল মেরে এমন ভয়াবহ মানসিক রোগ দিয়ে দেয় যে, সে ঈমানই চ্যুত হয়ে যায়?
তার চেয়ে ত্যানা প্যাঁচানো, ব্রাকেট লাগানো, এক শব্দের তিনটা অর্থ দাঁড় করানো, অ্যাপলোজেটিকস দেখে চোখে কালো চশমা পরে ঈমান রক্ষা করা, আর খুঁজে খুঁজে মিরাকল বের করাই কি বুদ্ধি খাটিয়ে ও চিন্তা করে কাফের হবার চাইতে শ্রেয় নয়?
কোরানে এত ভ্যাজাল, ফরমালিন, কনফিউশান, ত্যানা প্যাঁচানি, আলিফ-লাম-মিম থাকার পরেও জন্মগত ও পরিবেশ ও সামাজিক চাপের কারণে কোনটা ভাবা সহজ?
কোরান ১৪০০ বছর পূর্বের এক বেদুইনের উর্বর মস্তিস্কপ্রসূত কাব্যিক রূপকথা, নাকি এইটা আসমানের উপর সিংহাসনে বসে থাকা এক জাদুকরের বাণী?
শেষে একটা কথা বলি, সাত বছরের একটা শিশু মেয়েকে শেকল দিয়ে বেঁধে মেয়েটিরই চোখের সামনে মেয়েটির বাবা-মাকে শিয়া হবার দোষে অত্যাচার করে খুন করা হয়, একটু বলবেন এটা কোন ধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে করা হয়েছে?
স্বয়ং সৃস্টিকর্তার "সহজ করে দেওয়া" বাণী কীভাবে মানুষকে দিয়ে এমন কাজ করায়?
গুরুচন্ডালী মাফ করবেন -
মৃত ও জীবিত শ্রোডিঞ্জারের বিড়াল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন