লিখেছেন অর্ণব খান
আত্মা কী? মানুষের বিশ্বাস - আত্মা জড়বস্তুকে জীবন দেয়। মৃত্যু হলে আত্মা জীবদেহ ছেড়ে বেরিয়ে যায়, তাই মৃতদেহ আর জড়বস্তুর মাঝে কোনো পার্থক্য থাকে না।
আচ্ছা, এবার আমরা একটা জীবিত মানুষ তথা মানবদেহের কথা চিন্তা করি। দেহটির চার হাত-পা কর্তন করে ফেলি। সে কি মারা যাবে? যাবে না। তার মানে আত্মা হাতে পায়ে থাকে না। এবার সার্জারি করে দেহটির নাক, কান, চোখ, দাঁত তুলে ফেলি। এবারও সে মরবে না।
এবার দেহটি থেকে হৃৎপিণ্ড কেটে আনি। এখন অবশ্যই সে মারা যাবে। তাহলে কি আত্মা হৃৎপিণ্ডে থাকে? আপাতদৃষ্টিতে তা-ই মনে হচ্ছে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখন যান্ত্রিক হৃৎপিন্ড দিয়ে মানুষ বাঁচিয়ে রাখতে পারে। তাহলে বোঝা গেল, আত্মা হৃৎপিণ্ডে থাকে না, তবে আত্মা হৃৎপিণ্ডের ওপর নির্ভরশীল। হৃৎপিণ্ড কাজ না করলে দেহে আত্মা থাকতে পারে না।
এমনি করে শুধু মস্তিষ্ক ছাড়া যকৃত, বৃক্ক, ফুসফুস, রক্ত, পাকস্থলী ইত্যাদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যদি কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা হয়, তবুও দেখা যাবে যে, মানুষটি বেঁচে আছে। বর্তমান বা নিকট ভবিষ্যতের চিকিৎসা বিজ্ঞান সত্যিই এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম। শুধু মস্তিষ্ক প্রতিস্থাপিত করা নিকট ভবিষ্যতে সম্ভব নয়।
তাহলে কি আত্মা মস্তিষ্কে থাকে? আপাত দৃষ্টিতে তা-ই মনে হচ্ছে। কিন্তু ক্লিনিক্যাল ডেথের ক্ষেত্রে মানুষের মস্তিষ্ক মরে যায়, তবে দেহ জীবিত থাকে। ডাক্তাররা লাইফ সাপোর্ট দিয়ে মস্তিষ্কবিহীন মানবদেহ দীর্ঘদিন বাঁচিয়ে রাখতে পারেন, যদিও সেই দেহ কোনোদিন কিছু চিন্তা করতে পারবে না, কিছু জানতেও পারবে না।
এই শেষে এসে দুটি উপসংহারে পৌঁছানো সম্ভব:
১. যদি বলা হয় - আত্মা মস্তিষ্কেও থাকে না, তাহলে সিদ্ধান্তে আসতে হবে আত্মা বলে কিছু নেই। কারণ ইতিমধ্যেই দেহের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন করে ফেলা সম্ভব হয়েছে।
২. যদি বলা হয় - আত্মা মস্তিষ্কে থাকে, তাহলে সিদ্ধান্তে আসতে হবে জড়বস্তুকে জীবিত করতে আত্মা আবশ্যক নয়।
বস্তুতঃ এই যুক্তিভিত্তিক আলোচনাটা এটাই ইঙ্গিত করে যে, আত্মা বলে আসলে কিছু নেই। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় একসময় মস্তিষ্কও কৃত্রিমভাবে প্রতিস্থাপন করা যাবে। এখনই বুদ্ধিমত্তাসহ কম্পিউটার আবিষ্কারের পথে অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। যেদিন মানুষ কম্পিউটার মেমরীর মত মানুষ্য স্মৃতি সংরক্ষণ করার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করবে, সেদিন মানুষ অমর হবে। তখন দেহ মরে গেলে ক্লোনের মাধ্যমে আরেকটি নতুন দেহ তৈরি করে পুরানো স্মৃতিটুকু ডাউনলোড কিরে নিলেই হবে।
তবে দীর্ঘস্থায়ীতার লক্ষ্যে তখন মানুষ জৈবিক দেহের বদলে অন্য কোনো পদার্থের দেহ বেছে নিলে অবাক হবার কিছু থাকবে না। তখন অবশ্য তাকে মানুষ না বলে রোবট বলাই বেশি যুক্তিযুক্ত হবে। মানুষের জগত হবে আন্তঃনাক্ষত্রিক, তাই জৈবিক দেহের চাইতে ইস্পাতের দেহই বেশি সুবিধাজনক হবে। যাই হোক, দৈহিকভাবে রোবটের মত হলেও মানুষের সুখ-দুঃখ, চিন্তা-চেতনা ইত্যাদি মানসিক ব্যাপার কেমন হতে পারে, তা চিন্তা করলেই আমি শিহরিত হই!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন