২০০১ সালের আমেরিকায় ৯/১১ আক্রমণের পরপরই আমাদেরকে জানানো হয়েছিল, ফিলিস্তিনিদের ওপর মার্কিন-ইজরায়েল বর্বরতার প্রতিশোধ নিতেই এই আক্রমণ হয়েছে।
৯/১১-এর আক্রমণে ১৯ জন আল কায়েদার সদস্যকে চিহ্নিত করেছিল এফবিআই। এই ১৯ জনের মধ্যে ১৫ জন সৌদি বংশোদ্ভুত, ২ জন আরব আমিরাতের, মিশর এবং লেবাননের ১ জন করে। কিন্তু এই তালিকায় ১ জন ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামীও নেই! কেন নেই?
২০০৮ সালের ২৬/১১ তারিখে ভারতের মুম্বাইয়ে পাকিস্তানের জঙ্গিসংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা হামলা চালায়। এতে প্রায় ১৬৪ জন লোক মারা যায় এবং আহত হয় ৩০৮ জন। মুম্বাইয়ের ছত্রপতি শিবাজি স্টেশন, ইহুদি উপাসনালয় নরিম্যান ভবন, তাজ হোটেল, ওবেরয় হোটেল ইত্যাদি স্থানে রক্তগঙ্গা বয়ে যায় সেদিন। কিন্তু ঠিক একইভাবে আমাদেরকে জানানো হলো, কাশ্মিরীদের ওপর ভারতীয় শাসকগোষ্ঠীর দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়নের জবাব দিতেই রক্তাক্ত করা হয়েছে মুম্বাই শহরকে। এই হামলায় ২৪/২৬ জন জঙ্গি জড়িত বলে জানা গিয়েছে। জীবিত ধৃত একমাত্র পাকিস্তানি জঙ্গি আজমল কাসাব পরবর্তী সময়ে এই হামলার পিছনে লস্কর-ই-তৈয়বার সব খুঁটিনাটির কথা স্বীকার করেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এই হামলায়ও একজনও স্বাধীনতাকামী কাশ্মিরী (ভারতের অন্তুর্ভুক্ত) ছিল না। কেন নেই?
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ যদি আমাদের দেশের মানুষ না করে বিদেশি লোকেরা এসে করে দিতো, তবে কি আমরা কোনোদিন স্বাধীন হতে পারতাম? আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম কেন আমাদের নাড়ির সাথে সংযুক্ত, তা কি বোঝা যায়? আমরা কারও দয়া-ক্ষমার মাধ্যমে এই স্বাধীনতা পাইনি। নিজেরাই লড়াই করে রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এদেশের ৩০ লক্ষ মানুষ নিজেদের আত্মোৎসর্গ করেছে বলেই রক্তের দামে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি মাত্র নয় মাসের লড়াইয়ে। কিন্তু এ যুগের স্বাধীনতা সংগ্রাম দেখলে মাঝেমাঝে চিন্তায় পড়ে যেতে হয়। একের পর এক জঙ্গি সংগঠন নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ভিন্ন দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইমেজ ব্যবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়। এতে করে ছিনতাই হয়ে যায় গণমানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা। আর এই সুযোগে হানাদার শাসকগোষ্ঠীও নিপীড়িত জনগণের ওপর আরও চেপে বসে। নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাধীনতা সংগ্রামও আরও দীর্ঘমেয়াদী করে তোলে এইসব বর্বর জঙ্গিগোষ্ঠীর দল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন