লিখেছেন জসীম উদ্দীন
ধর্ম ও ধর্মীয় অনুশাসনগুলো সবসময়ই বিতর্কিত। বিতর্কিত এই কারণে যে, ধর্মগুলো অপরিবর্তনীয় ও যুগোপযোগী নয়। স্বাভাবিকভাবেই যুগোপযোগী নয় বিধায় এই সংঘাত। এই বিতর্কে দু'টি দলও বিদ্যমান। একদল ধর্মে অন্ধবিশ্বাসী আস্তিক, আর একদল অন্ধবিশ্বাসবর্জিত যুক্তি ও প্রমাণনির্ভর নাস্তিক বা নিরীশ্বরবাদী। এই দুই দলের সংঘাত কখনো স্নায়ুযুদ্ধে আবার কখনো একপাক্ষিক পেশীশক্তিতে রূপ নেয়। স্বাভাবিকভাবেই এবং সব সময় আস্তিকেরাই সহিংস ও আগ্রাসী ভূমিকা পালন করে। তার বহু প্রমাণও আছে। আস্তিকদের মতে, ধর্ম সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি এবং তা মানবকল্যাণের জন্য প্রেরিত। অন্যদিকে নাস্তিকদের মতে, ধর্ম সৃষ্টিকর্তার নয় বরং ব্যক্তি কর্তৃক উদ্ভাবিত ও প্রচারিত, যিনি তাঁর ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল করতে ব্যক্তিগত ধারণা ও ইচ্ছেকে ধর্ম বলে প্রচার করেছেন। এবং তা সার্বজনীন করার জন্য তিনি তথাকথিত অলৌকিকত্বের আশ্রয় নিয়েছেন।
সমাজে আস্তিক ব্যক্তি কর্তৃক প্রচারিত কিছু কথা/অনুশাসন আমি আমার দৃষ্টিকোণ থেকে বোঝার চেষ্টা করছি এভাবে:
(ক) একটি প্রচলিত কথা আছে যে, “ঈশ্বরের হুকুম ব্যতীত কোনো কিছুই ঘটে না বা হয় না। এমনকি গাছের পাতাও নড়ে না।” যদি তা-ই হবে, তাহলে বলতেই হয়:
আমায় সৃজন করার দিনে জানত খোদা বেশ করেই
ভাবীকালের কর্ম আমার, বলতে পারত মুহূর্তেই
আমি যে সব পাপ করি তা ললাট লেখা তার নির্দেশ
সেই সে পাপের শাস্তি নরক- কে বলবে ন্যায় বিচার এই।
সত্যিই কি তিনি ন্যায় বিচারক?
(খ) সাধারণত বাগানের চারদিকে একটি বেড়া/ঘেড়া দেয়া হয়। কারণ একটাই যে, গরু-ছাগল যেন বাগানের এবং বাগানে অবস্থিত গাছের ক্ষতি না করে এবং খেয়ে না ফেলে। ঠিক ধর্মও সে রকম একটি বেড়া/ঘেড়া/খাঁচা। এই বেড়া/ঘেড়া/খাঁচার ভেতরে যারা থাকে, তারা অন্ধ বিশ্বাসী, এবং আটকে থাকতে থাকতে হয়ে ওঠে আগ্রাসী। যখন ধর্মীয় কোনো ব্যাপার নিয়ে একজন আস্তিক ও নাস্তিকের মধ্যে তর্ক হয় সাধারণত সেই তর্ক অমিমাংসীতই হয় বেশি। কারণ সম্ভবত আস্তিকেরা যুক্তি ও প্রমাণ মানতে ও বুঝতে পারে না এবং চায় না। অনেক প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়ার মতো বা যুক্তি খণ্ডানোর মতো প্রতিযুক্তি তাদের জানা নেই। আমি মনে করি, কোনো বিষয় পূর্ণভাবে জানার পূর্ব শর্ত হচ্ছে - প্রশ্ন করা। প্রশ্ন না করলে কিছুই জানা যায় না। তাদের এই অবস্থাকে ব্যাখ্যা করা যায় এভাবে:
দুজনে কেহ কারে বুঝিতে নাহি পারে
বুঝাতে নারে আপনায়
দুজনে একা একা ঝাপটি মরে পাখা
কাতরে কহে কাছে আয়
বনের পাখি বলে, না,
কবে খাঁচায় রুধি দিবে দ্বার
খাঁচার পাখি বলে, হায়
মোর শকতি নাহি উড়িবার।
(এখানে খাঁচার পাখি - আস্তিক, বনের পাখি - নাস্তিক এবং খাঁচা - ধর্ম।)
এই আস্তিকদের ওড়বার শক্তি এই কারণে নেই যে, তারা মানসিকভাবে বেশি দুর্বল। খাঁচায় বদ্ধ থেকে তারা হয়েছে অলস, পরনির্ভরশীল।
(গ) প্রায় প্রত্যেক মুসলমান ব্যক্তিই বলে থাকেন যে, ইসলাম শান্তির ধর্ম। কিন্তু আমি কোথাও শান্তি খুজেঁ না পেয়ে পেয়েছি কেবল ভয় আর ত্রাস। কারণ পবিত্র কোরানে যুদ্ধ ও হিংস্রতা সম্পর্কে যে-বর্ণনা দেয়া হয়েছে, তা অন্য কোনো ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ নেই। পবিত্র কোরানের সূরা তওবা তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। ইসলাম শান্তির ধর্ম - সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই সূরা তওবার কিছু আয়াত তুলে ধরলাম:
১. কাফের ও মোনাফেকদের সাথে যুদ্ধ কর এবং তাদের সাথে কঠোর ব্যবহার কর। (আয়াত: ৭৩)
২. আশেপাশের কাফেরদের সাথে যুদ্ধ কর এবং তারা যেন বুঝতে পারে তোমাদের মধ্যে কঠোরতা আছে। (আয়াত: ১২৩)
৩. তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যারা আল্লাহর ও আখিরাতে ঈমান আনে না এবং হারাম জানেনা যাহা আল্লাহ ও রসূল হারাম করেছেন এবং যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে যারা সত্য ধর্ম কবুল করে না। (আয়াত: ২৯)
৪. হে ঈমানদারগণ! যে সব কাফির তোমাদের আশেপাশে আছে তাদের সাথে যুদ্ধ কর এবয় তাদের বুঝতে দাও যে তোমাদের মধ্যে কঠোরতা আছে। (আয়াত: ১২৩)
সত্যি, নিঃসন্দেহে ইসলাম শান্তির ধর্ম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন