লিখেছেন গোলাপ
পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩ > পর্ব ১৪ > পর্ব ১৫ > পর্ব ১৬ > পর্ব ১৭ > পর্ব ১৮ > পর্ব ১৯ > পর্ব ২০ > পর্ব ২১ > পর্ব ২২ > পর্ব ২৩ > পর্ব ২৪ > পর্ব ২৫ > পর্ব ২৬ > পর্ব ২৭ > পর্ব ২৮ > পর্ব ২৯ > পর্ব ৩০ > পর্ব ৩১ > পর্ব ৩২ > পর্ব ৩৩ > পর্ব ৩৪ > পর্ব ৩৫ > পর্ব ৩৬ > পর্ব ৩৭ > পর্ব ৩৮ > পর্ব ৩৯> পর্ব ৪০ > পর্ব ৪১ > পর্ব ৪২
স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মদিনায় এসে কুরাইশদের ওপর যে সকল আক্রমণাত্মক অনৈতিক সহিংস বর্বর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেছিলেন, তার বৈধতার প্রয়োজনে তিনি তাঁর রচিত ব্যক্তিমানস জীবনীগ্রন্থ কুরানের মদিনা পর্বে বারংবার ঘোষণা দিয়েছেন যে, মক্কায় অবস্থানকালে “কুরাইশরা তাঁদের প্রতি অকথ্য অত্যাচার চালিয়েছে, তাঁকে ও তাঁর অনুসারীদের অন্যায়ভাবে তাঁদের ভিটেমাটি থেকে বিতাড়িত করেছে এবং তাঁকে বন্দী অথবা হত্যার পরিকল্পনা করেছে”।
গত ১৪০০ বছর যাবত পৃথিবীর প্রায় সকল মুহাম্মদ বিশ্বাসী পণ্ডিত ও অপণ্ডিতরা মুহাম্মদের সাথে সুর মিলিয়ে বিভিন্ন কল্পকাহিনীর মাধ্যমে মুহাম্মদের এই দাবীর প্রচার ও প্রসার ঘটিয়েছেন। ইসলামের প্রাথমিক সংজ্ঞা অনুযায়ী - এটা তাঁদের একান্ত বাধ্যতামূলক দায়িত্ব (বিস্তারিত দশম পর্বে); এই প্রচারণায় তাঁরা এতটাই সফল যে, শুধু ইসলাম-বিশ্বাসীরাই নয়, তাঁদের সাথে একাত্ম হয়ে জগতের বহু অমুসলিম পণ্ডিত ও জনসাধারণ তাঁদের মতই একই ধারণা পোষণ করেন।
কিন্তু ইসলামে নিবেদিতপ্রাণ আদি উৎসের মুসলিম ঐতিহাসিকেদেরই বর্ণনার পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনায় আমরা জানতে পারি যে, মুহাম্মদের এই দাবির কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। এ বিষয়ের প্রাসঙ্গিক আলোচনা গত দু'টি পর্বে করা হয়েছে; বিস্তারিত আলোচনা 'আইয়্যামে জাহিলিয়াত ও হিজরত তত্ত্বে' করা হবে।
স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আরও দাবী করেছেন যে, "কুরাইশরা তাঁদেরকে মসজিদে হারামে যেতে বাধা প্রদান করেছে।" কুরান, সিরাত ও হাদিসের পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনায় যে সত্যটি স্পষ্ট, তা হলো: মুসলমানদের প্রতি অকথ্য অত্যাচার ও তাড়িয়ে দেয়ার কিচ্ছার মতই মুহাম্মদের এই দাবিরও কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই।
“কুরাইশরা তাঁদের কে মসজিদে হারামে যেতে বাধা প্রদান করেছে!”
মুহাম্মদ বিন ইশাক ও আল-তাবারীর বিশালায়তন গবেষণালব্ধ মুহাম্মদের জীবনীগ্রন্থের পর্যালোচনায় আমরা জানতে পারি যে, মদিনায় এসে কুরাইশদের ওপর মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের যাবতীয় অনৈতিক আগ্রাসী সন্ত্রাসী আক্রমণ, লুণ্ঠন, হত্যা ইত্যাদি কর্মকাণ্ড সত্ত্বেও "দুটি মাত্র ব্যতিক্রম" ছাড়া কোনো কুরাইশই কোনো মুহাম্মদ অনুসারীকে মসজিদে হারামে যেতে বাধা প্রদান করেননি। এই দু'টি ঘটনার "মাত্র একটি” ছিল সমষ্টিগত, যেখানে সকল কুরাইশ গোত্র জড়িত ছিলেন। অন্যটি ছিল একান্ত ব্যক্তিগত।
এই দু'টি ঘটনা ছাড়া মুহাম্মদ অনুসারীরা সকল সময়ই কোনোরূপ বিধিনিষেধ ছাড়াই নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে মদিনা থেকে মক্কায় তীর্থ যাত্রা করেছেন এবং মসজিদে হারাম পরিদর্শন ও আনুষঙ্গিক সকল ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন শেষে নিরাপদে আবার মদিনায় প্রত্যাবর্তন করেছেন।
আর, এই দুটি ঘটনাই ঘটেছিল মুহাম্মদের “মদিনায় হিজরতের পর”! মক্কায় অবস্থানকালে নয়। আর তা সংঘটিত হয়েছিল মুহাম্মদের আগ্রাসী আক্রমণাত্মক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে কুরাইশদের পাল্টা প্রতিরোধের অংশ হিসাবে।
ঘটনা দুটি হলো:
১) বদর যুদ্ধের পর আবু সুফিয়ান কর্তৃক সা'দ বিন আল নুমান কে মক্কায় ধরে রাখা
মুহাম্মদ যখন আবু সুফিয়ানের এক ছেলে হানজালা বিন আবু সুফিয়ানকে খুন ও আরেক ছেলে আমর বিন আবু সুফিয়ানকে বন্দী করে মদিনায় আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করেন, তখন স্বজনহারা বিক্ষুব্ধ পিতা আবু সুফিয়ান মুহাম্মদ অনুসারী সা'দ বিন আল নুমানকে মক্কায় বন্দী করে তাঁর ছেলে আমরকে ফেরত পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এই ঘটনাটি "ব্যক্তি আবু সুফিয়ানের" প্রতিরক্ষা চেষ্টা; নিজ ছেলেকে মুহাম্মদের কবল থেকে মুক্ত করার চেষ্টা। [বিস্তারিত পর্ব - ৩৭]।
২) হুদাইবিয়া সন্ধি চুক্তির (মার্চ, ৬২৮ সাল) প্রাক্কালে মসজিদে হারামে যেতে বাধা প্রদান
শুধু ঐ সময়টিতেই কুরাইশরা সংঘবদ্ধভাবে মুসলমানদের মসজিদে হারামে যেতে বাধা প্রদান করেন। আর এই ঘটনাটি ঘটেছিল মুহাম্মদের মদিনা হিজরতের ৬ বছর পরে, মক্কায় অবস্থানকালে নয় [বিস্তারিত হুদাইবিয়া সন্ধি পর্বে]। এই একটি মাত্র ঘটনা ছাড়া কুরাইশরা সংঘবদ্ধভাবে কখনোই মুহাম্মদ কিংবা তাঁর কোনো অনুসারীকে মসজিদে হারামে যেতে বাধা প্রদান করেননি। [1]
>>> পৃথিবীর অন্য কোনো ধর্মের সাধারণ ধর্মাম্বলীরা ইসলামের মত এত বেশি সময়সাপেক্ষ অত্যাবশ্যকীয় ধর্মীয় অনুশাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট নয়। একজন মানুষের দেহ-মন সুস্থির রাখার জন্য প্রতিদিন গড়ে কমপক্ষে ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুম আবশ্যক। আরও কমপক্ষে দুই ঘণ্টা দরকার জীবনের অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় কাজ [Activities of Daily Living (ADL)] যেমন: প্রাতঃক্রিয়াদি, রান্না, খাওয়া, গোসল, শরীর-স্বাস্থ্য ও বাসস্থানের পরিচর্যা, সামাজিকতা - ইত্যাদি দৈনন্দিন কাজে। অর্থাৎ প্রতিটি মানুষ প্রতিদিন গড়ে সর্বোচ্চ ১৬ ঘণ্টা সময় ব্যবহার করার সুযোগ পান জীবনের অন্যান্য ব্যবহারিক কাজে। [2]
একজন নিবেদিত প্রাণ সাধারণ মুসলমান প্রতিদিন তাঁর অত্যাবশ্যকীয় কাজের (ADL) পর জীবনের অন্যান্য ব্যবহারিক কাজে ব্যবহৃত ১৬ ঘণ্টা লভ্য সময়ের ২-৩ ঘণ্টা সময় ব্যয় করেন “শুধুমাত্র পাঁচ ওয়াক্ত নামাজেই”; এ ছাড়াও আছে অত্যাবশ্যকীয় ধর্মীয় আরও অন্যান্য অনুশাসন।
জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিদিন প্রত্যুষে ঘুম থেকে ওঠার সময় থেকে (ফজর নামাজ) শুরু করে রাতে ঘুমোতে যাবার পূর্ব পর্যন্ত (এশার নামাজ) এই ১৬-১৮ ঘণ্টা সচেতন সময়ে কমপক্ষে পাঁচ বার (গড়ে প্রতি সাড়ে তিন ঘণ্টায় একবার) পৃথিবীর প্রত্যেকটি ইসলাম বিশ্বাসীর মস্তিষ্কে মুহাম্মদের গুণকীর্তন ও আদেশ-নিষেধের বাণী স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় উচ্চকণ্ঠ আজানের মাধ্যমে, পরিবার সদস্যদের মাধ্যমে ও পরিপার্শ্বের অন্যান্য মুসলমানদের মাধ্যমে।
ইসলাম ধর্মের এক বিশেষ বিশেষত্ব এই যে, এই ধর্মের অনুশাসন পালনকারী সকল অনুসারীই প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে ‘ইসলাম প্রচারকের ভূমিকা’ পালন করেন।
ইসলামের অনুশাসন পালনকারী একান্ত পরিবার সদস্য, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী থেকে শুরু করে গ্রামের নিরক্ষর কৃষক- শ্রমিক-মজুর ও বাসার গৃহ পরিচারিকা পর্যন্ত সকলেই প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে "ইসলাম প্রচারকের ভূমিকা" পালন করেন। ইসলামের অনুশাসন পালনে গাফেল কোন ব্যক্তিকে দ্বীনের রাস্তায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টাকে এই ইসলাম অনুশাসন পালনকারীরা (Practicing Muslims) মহৎ কর্ম, বিশেষ সওয়াবের অংশ ও ইমানী দায়িত্ব বলে বিশ্বাস করেন।
এ সকল সাধারণ ইসলাম বিশ্বাসীর কাছ থেকে কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত এর আহ্বান বিশ্বের প্রতিটি ইসলাম বিশ্বাসী অত্যন্ত শিশুকাল থেকেই নিত্যই শুনে থাকেন। চারিপাশের এ সকল লোকের কাছ থেকে নামাজ-রোজার আহ্বান শোনেননি, এমন একটিও বে-নামাজি ও বে-রোজদার মুসলমান জগতে আছেন বলে কল্পনাও করা যায় না।
“এক ওয়াক্ত নামাজ ক্বাযা হলে কত গুনাহ হয়; দোজখের আগুন ও বেহেশতের আরাম আয়েশের বর্ণনা; দ্বীনের পথে 'আমাদের নবী' কত কষ্ট করছেন; কাফেরেরা আমাদের পাক নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর কত নির্যাতন করেছেন কিন্তু আমাদের দয়াল নবী তাঁদের প্রতি কখনো কোন অন্যায় তো করেনইনি, উল্টো সেই নির্যাতনকারীর অসুস্থতার সময় নবী তার সেবা যত্ন করে সুস্থ করে তুলেছেন (তারপর বয়ান): ‘এক বুড়ি নবীর চলার পথে কাঁটা দিতো, একদিন পথে কাঁটা না দেখে দয়াল নবী বুড়ির খোঁজ করতে গিয়ে যখন জানলেন যে বুড়িটি অসুস্থ তখন তিনি বুড়িটির সেবাযত্ন করে সুস্থ করে তুললেন, নবীর মহানুভবতায় মুগ্ধ হয়ে বুড়ি নিজের ভুল বুঝতে পেরে মুসলমান হলেন’”— ইত্যাদি উপাখ্যান যেখানে যেমন প্রয়োজন, সেখানে সেইভাবে প্রচার করে এই ইসলাম বিশ্বাসীরা ইসলামের অনুশাসন বিচ্যুত মুসলমানদের ইসলামের পথে আনার চেষ্টা করেন।
এ ছাড়াও আছে প্রতিদিন পাঁচবার মুয়াজ্জিনের উচ্চকণ্ঠ আজান ও মসজিদের ইমাম সাহেবের বক্তৃতা; ওয়াজ-মাহফিলের বয়ান; প্রতিটি টিভি চ্যানেলে প্রতিদিন উল্লেখযোগ্য সময় নিয়ে ইসলামী অনুষ্ঠান-বক্তৃতা-বিবৃতি; দৈনিক খবরের কাগজে ধর্মীয় কলাম; ইন্টারনেটের বিভিন্ন ইসলামী ব্লগ - ইত্যাদি বিভিন্ন মাধ্যমে মুহাম্মদের গুণকীর্তন ও ইসলামের আদর্শের জয়গান।
তার ওপর আছে প্রতি ছয় দিন পর পর এক বিশেষ দিন! প্রতি শুক্রবারে জুমার বিশেষ নামাজ-বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে পৃথিবীর প্রত্যেকটি ইসলাম বিশ্বাসীর মস্তিষ্কে মুহাম্মদ ও তাঁর প্রচারিত মতবাদের গুণকীর্তন।
আরও আছে প্রতি এগার মাস পর পর একাধারে দীর্ঘ এক মাস ব্যাপী 'রমজান'-এর বিশেষ ইসলামী অনুশীলন। যে মাসে দিবারাত্র বিভিন্ন উপায়ে ইসলামের পথে আহ্বানের মাধ্যমে পৃথিবীর প্রত্যেকটি ইসলাম বিশ্বাসীর মস্তিষ্কে মুহাম্মদের গুণকীর্তন ও আদেশ নিষেধের বাণী স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়।
ফলশ্রুতিতে, পৃথিবীর প্রায় সকল ইসলাম বিশ্বাসীর চেতন-অবচেতন মস্তিষ্কের সবটা জুড়েই বাসা বাঁধে বেহেস্তের প্রলোভন ও দোযখের অসীম শাস্তির ভয় এবং কবর আযাবের বিভীষিকাময় চিত্র! তাঁদের ধ্যান-মন-প্রাণের সবটা জুড়েই থাকে মুহাম্মদের বাণী (কুরান-হাদিসের) ও অনুশাসন চিন্তা। ফলাফল, তাঁদের মগজধোলাই অন্যান্য ধর্মের মানুষের তুলনায় হয় অধিকতর নিশ্চিত, তীব্রতর ও সুদূরপ্রসারী! তিনি মুক্ত মানুষ থেকে পরিণত হন দাসে! পরম তৃপ্তিতে! একান্ত আজ্ঞাবহ মুহাম্মদের দাস! আবদ-মুহাম্মদ (পর্ব-১৫)!
এমত পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে একজন ইসলাম বিশ্বাসীর পক্ষে প্রচলিত ধারনার বিপরীত কোনো তথ্য-উপাত্ত ও ইতিহাস নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার অবকাশ কোথায়?
এই একান্ত আজ্ঞাবহ মুহাম্মদের দাস আবদ-মুহাম্মদদের “সম্মিলিত প্রোপাগান্ডা” যে কত শক্তিশালী ও সফল, তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো ইসলামের হাজারো অতিকথাকে (Myth) সত্য বলে প্রতিষ্ঠা করা। যার সাক্ষ্য, আজকের পৃথিবীর প্রায় সমস্ত ইসলাম বিশ্বাসী ও বহু অমুসলিম সাধারণ জনগণ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, মক্কায় কুরাইশরা মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারী নব্য ধর্মান্তরিত মুসলমানদের ওপর যথেচ্ছ অমানুষিক নিপীড়ন ও নির্যাতন করতেন। তাঁরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন যে, কুরাইশদের এই অমানুষিক অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মুহাম্মদের নির্দেশে মুসলমানেরা প্রথমে আবিসিনিয়ায় ও পরে মদিনায় হিজরত করেছিলেন। তাঁরা আরও বিশ্বাস করেন যে, স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মৃত্যুহুমকির বশবর্তী হয়েই রাতের অন্ধকারে চুপি চুপি মদিনায় পালিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁদের এই বিশ্বাসের আদি উৎস হলো "মুহাম্মদ"!
গত পনেরটি পর্বের পর্যালোচনায় সংক্ষিপ্তসার:
স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মদিনায় এসে তাঁর দলবল নিয়ে কুরাইশ কাফেলার ওপর অতর্কিত হামলা, মালামাল লুণ্ঠন, খুন, নিরীহ আরোহীদের ধরে নিয়ে এসে মুক্তিপণ দাবী করা শুরু করেছিলেন। পরিণতিতে কুরাইশদের সর্ব-প্রথম প্রতিরক্ষা যুদ্ধ, "বদর যুদ্ধ"।
বদর যুদ্ধের প্রকৃত কারণ হলো - কুরাইশ বাণিজ্য-কাফেলার ওপর একের পর এক মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের আক্রমণাত্মক (offensive) আগ্রাসী অনৈতিক লুণ্ঠন অভিযান ও অষ্টমবারের চেষ্টায় সফল "নাখলা" অভিযানে কুরাইশদের মালামাল লুণ্ঠন ও নৃশংসতা।
এই যুদ্ধে মুহাম্মদের আগ্রাসী আক্রমণাত্মক নৃশংস সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কুরাইশদের সকল গোত্রের লোকজনদের সাথে মুহাম্মদের নিজস্ব বংশের (হাশেমী) লোকেরা ও অস্ত্র হাতে প্রতিরক্ষার চেষ্টা করেন। এই যুদ্ধে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা ৭০ জন কুরাইশকে নৃশংসভাবে খুন এবং ৭০ জনকে করেন বন্দী।
খুন করার পর তাঁরা সেই লাশগুলোকে অমানুষিক ঘৃণা ও অশ্রদ্ধায় বদর প্রান্তের এক নোংরা শুষ্ক গর্তে একে একে নিক্ষেপ করেন। লাশগুলো গর্তে নিক্ষেপ করার পর তাঁরা লুণ্ঠিত সম্পদ (গণিমত) ভাগাভাগি করার ব্যবস্থা করেন। লুণ্ঠিত মালামাল ও বন্দীদের সাথে নিয়ে বদর থেকে মদিনা প্রত্যাবর্তনের প্রাক্কালে মুহাম্মদের নির্দেশে তাঁর অনুসারীরা আরও দুইজন কুরাইশকে বন্দী অবস্থাতেই নৃশংসভাবে খুন করেন।
এই ৭২ জন নিহত কুরাইশ ও ৬৮ জন বন্দীর সকলেই ছিলেন মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদেরই একান্ত পরিবার-পরিজন, নিকট-আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব অথবা প্রতিবেশী।
অধিকাংশই ছিলেন কুরাইশদের নেতৃস্থানীয় গণ্যমান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। বন্দীদের মধ্যে চার জন ছিলেন মুহাম্মদেরই একান্ত নিকট-আত্মীয় ও পরিবার সদস্য। তাঁরা হলেন চাচা আল-আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব, দুই চাচাত ভাই আকিল ইবনে আবু তালিব বিন আব্দুল মুত্তালিব ও নওফল ইবনে আল-হারিথ বিন আব্দুল মুত্তালিব এবং জামাতা আবু আল আস বিন আল-রাবি।
মাত্র পাঁচ জন ছাড়া বাঁকি ৬৩ জন বন্দীর প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা সর্বোচ্চ ৪০০০ দিরহাম মুক্তিপণ আদায় করেন।
এই লুটের মাল ও মুক্তিপণের অর্থে পার্থিব জীবিকা উপার্জন ও ভোগ যে “সম্পূর্ণ হালাল", তা মুহাম্মদ নিশ্চিত করেছেন ঐশী বানী ঘোষণার মাধ্যমে।
বিনা মুক্তিপণে মুক্ত এই পাঁচজন কুরাইশদের একজন ছিলেন মুহাম্মদ জামাতা আবু আল আস বিন রাবি। জামাতার মুক্তিপণের অর্থ মেয়ে জয়নাবের কাছে ফেরত পাঠিয়ে বিনা মুক্তিপণেই তাঁকে মুক্ত করলেও মুহাম্মদ তাঁর ওপর এই মর্মে শর্ত আরোপ করেছিলেন যে, তিনি তাঁর মেয়ে জয়নাবের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে জয়নাবকে মদিনায় তাঁর কাছে পাঠিয়ে দেবেন।
নিজে পৌত্তলিক হওয়া সত্ত্বেও আবু আল আস সুদীর্ঘ ১৪ টি বছর তাঁর এই মুসলিম স্ত্রী জয়নাবের সাথে একত্রে বসবাস করতেন। ধর্ম তাঁদের একত্র বসবাসে কোনোরূপ বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। কিন্তু মুহাম্মদের আরোপিত শর্ত মুতাবেক মক্কায় পৌঁছার পর একান্ত বাধ্য হয়ে আবু আল আস স্ত্রীকে তাঁর পিতার কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
সেই পরিস্থিতিতে পরাজিত ক্ষতিগ্রস্ত স্বজন-হারা কুরাইশদের মানসিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত বিপর্যস্ত। কুরাইশদের প্রত্যেকটি পরিবারের এক বা একাধিক কোনো না কোনো সদস্য, নিকট-আত্মীয়, প্রতিবেশী অথবা বন্ধু-বান্ধব নৃশংসভাবে খুন হয়েছিলেন অথবা বন্দীত্ব বরণ করেছিলেন। কুরাইশদের ঘরে ঘরে বিষাদ, বিলাপ ও কান্নার রোল উঠেছিল।
আমরা জেনেছি, মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের এত সব অমানুষিক পৈশাচিক কর্মকাণ্ডে দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও মক্কার কোনো সংক্ষুব্ধ স্বজন-হারা বিক্ষুব্ধ কুরাইশ মক্কায় অবস্থিত তাঁর মুসলিম কন্যা জয়নাবের ওপর প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে কোনোরূপ অসম্মান করেননি।
যে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা হিন্দ বিনতে ওতবার (আবু সুফিয়ান বিন হারবের স্ত্রী) নিজের বাবা, চাচা ও এক সন্তান কে অল্প কিছুদিন আগে নৃশংসভাবে খুন করেছেন ও আর এক সন্তানকে করেছেন বন্দি, সেই সংক্ষুব্ধ পিতা-পুত্র ও স্বজন-হারা শোকাবহ মহিলাটি তার বাবা-চাচা ও সন্তানের খুনের জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী ব্যক্তিটির কন্যার জন্য সমবেদনা প্রকাশ ও সর্বাত্মক সাহায্যের আশ্বাস নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন।
যে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা নৃশংসভাবে কুরাইশ দল নেতা আবু সুফিয়ান বিন হারবের এক জোয়ান পুত্র, শ্বশুর ও চাচা শ্বশুরকে অল্প কিছুদিন আগে নৃশংসভাবে খুন ও আরেক পুত্রকে বন্দী করেছেন, সেই আবু সুফিয়ান প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তাঁর নিজ পুত্রের খুনের জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী ব্যক্তিটির কন্যার ওপর কোনোরূপ অবিচার ও অসম্মান করেননি! কিংবা জোর করে মক্কায় অনির্দিষ্টকাল তাঁকে আটকে রেখে প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করেননি। এই স্বজনহারা কুরাইশ দলপতি আবু আল আসের পরিবারকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, কীভাবে এই সংক্ষুব্ধ স্বজনহারা বিক্ষুব্ধ কুরাইশদের রোষানল এড়িয়ে জয়নাবকে তাঁর পিতার কাছে পৌঁছে দিতে হবে। কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ানের দেয়া ঠিক সেই পরামর্শ মুতাবেক নবী কন্যা জয়নাবকে নিরাপদে তাঁর পিতার কাছে পাঠানো হয়েছিল।’
>>> কুরাইশদের এমনতর মহানুভবতার বহু উদাহরণ আমরা দেখতে পেয়েছি গত পনেরটি পর্বে। এই মানুষগুলোকে গত ১৪০০ বছর যাবত মুহাম্মদ অনুসারীরা "অন্ধকারের যুগ/বাসিন্দা" বলে অভিহিত করে এসেছেন।
যে লোকেরা আক্রান্ত হয়েও শত্রুর নিকটাত্মীয়ের বিরুদ্ধে ও প্রতিহিংসা পরায়ণ না হয়ে হয় সাহায্যকারী; সেই একই সমাজের লোকেরা তাদেরই নিকটাত্মীয়দের শুধুমাত্র ধর্মান্তরিত হওয়ার কারণে তাঁদের প্রতি অকথ্য অত্যাচার চালিয়েছেন, দেশ থেকে বিতাড়িত করেছেন, তাঁদেরকে মসজিদে হারামে যেতে বাধা প্রদান করেছেন - এমন "উদ্ভট দাবীর" আদৌ কোনো সত্যতা নেই। আদি ও বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকদেরই বর্ণিত মুহাম্মদের জীবনী ও উদ্ধৃতি (সিরাত ও হাদিস) ও মুহাম্মদের স্বরচিত ব্যক্তিমানস জীবনীগ্রন্থ কুরানের নিরপেক্ষ পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনায় তা আমরা অতি সহজেই নিরূপণ করতে পারি। সত্য তার সম্পূর্ণ বিপরীত।
মদিনায় এসে কুরাইশদের ওপর মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের আগ্রাসী ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বৈধতার প্রয়োজনে "কুরাইশদের অন্ধকারের বাসিন্দা" প্রমাণ করার চেষ্টা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল। মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা সেই প্রয়োজনের বশবর্তী হয়েই বিভিন্ন কলা কৌশলের মাধ্যমে তার প্রচার ও প্রসার ঘটিয়েছেন।
ইসলামের ইতিহাসে নাখলা অভিযান ও বদর যুদ্ধ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আক্রান্ত কুরাইশরা বদর প্রান্তের প্রতিরক্ষা (Defensive) যুদ্ধে শুধু বিফলকামই হননি, হয়েছিলেন আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। তাঁরা হারিয়েছিলেন তাঁদের বিশিষ্ট নেতা ও প্রিয়জনদের; যাদেরকে অমানুষিক নৃশংসতায় করা হয় খুন ও বন্দী। যার পরিণতিতে কুরাইশরা হন আরও বেশী ক্ষতিগ্রস্ত, বিপর্যস্ত ও অপমানিত। আক্রান্ত বিপর্যস্ত কুরাইশরা তাঁদের প্রিয়জনদের খুন, নাজেহাল ও অপমানের প্রতিশোধ নিতেই মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
পরবর্তীতে কুরাইশরা মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে যে দু'টি যুদ্ধ (ওহুদ ও খন্দক) পরিচালনা করেন, তার আদি কারণ হলো নাখলা অভিযান ও বদর যুদ্ধ। [3][4][5]
এখানে যে বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট তা হলো,
“আগ্রাসী ও আক্রমণকারী ব্যক্তিটি হলেন মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ও তাঁর অনুসারী। আর, কুরাইশসহ সকল অবিশ্বাসীরা ছিলেন তাদের অমানবিক অনৈতিক আগ্রাসনের লক্ষ্যবস্তু।"
(চলবে)
তথ্যসূত্র ও পাদটীকা:
[1] “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা – ৫০৪
[2] Activities of daily living (ADL)
বদর যুদ্ধ:
[3] Ibid মুহাম্মদ ইবনে ইশাক- পৃষ্ঠা ২৮৯-৩৬০
[4] “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৭, ইংরেজী অনুবাদ: W. Montogomery Watt and M.V. McDonald, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭, ISBN 0-88706-344-6 [ISBN 0-88706-345-4 (pbk)], পৃষ্ঠা (Leiden) - ১২৮২-১৩৫৯,
[5] “কিতাব আল-মাগাজি”- লেখক: আল-ওয়াকিদি (৭৪৮-৮২২ খৃষ্টাব্দ)
ed. Marsden Jones, লন্ডন ১৯৬৬, পৃষ্ঠা ১৯ - ১৭৪
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন