লিখেছেন দাঁড়িপাল্লা
১.
আব্রাহাম্মক তিনটা ধর্মের কিছু নিয়মকানুন বর্ধিত-কর্তিত করা বাদে আর সবই যে প্রায় এক - সে ব্যাপারে কারোরই তেমন কোনো দ্বিমত নাই। ইহুদিরা অবশ্য মাঝে মাঝে বিরক্ত হইয়া বলত, আমরা যা করি, এই লোকটা মানে মহাম্মক সব সময় তার উল্টাই করতে চায়। যেমন, তখনকার দিনে ইহুদিরা ঋতুবতী স্ত্রীদের ঋতুর সময় ঘর হতে বের করে দিত এবং তাদের সাথে একত্রে খাওয়া-দাওয়া-ঘুম বাদ দিয়া দিত। মহাম্মক এটাকে একটু মোডিফাই করে বলেছে যে, সঙ্গম করা বাদে আর সব করা যেতে পারে। এখনকার দিনে এই সময় সঙ্গমকে খারাপ চোখে দেখা হয় না, বরং অনেকে এ সময় সঙ্গম বেশ উপভোগ করে।
এই যে মহাম্মক তখনকার দিনের ঘটে আসা একটা জীবনাচারকে একটু মোডিফাই করে দিছিল, সেটা কিন্তু জেনে বুঝে নয়, জাস্ট ইহুদিবিদ্বেষ থেকেই। আর এই ঘটনা সে আগ বাড়িয়ে করে নাই। ব্যাপারটা তখনকার দিনে ওই এলাকার সবখানেই প্রচলন ছিল। সাহাবিরা ওই কয়টা দিন চুলকানি দমাইয়া রাখতে পারত না বলেই মহাম্মককে বলেছিল। আর বলার সময় ইহুদিদের নাম উল্লেখ করছিল যাতে ইহুদিবিদ্বেষ থেকে সে রুলটা উলটাইয়া দেয়। কিন্তু মহাম্মদ অতসত বুঝতে পারে নাই। সে ভেবেছিল স্ত্রীরা ঘরে না থাকলে সাহাবিদের খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি সাংসারিক কাজে হয়তো অসুবিধা হচ্ছে। তাই স্ত্রীদেরকে ঘরে রেখে সাংসারিক কাজে বহাল রাখল, শুধু সঙ্গমের ব্যাপারটা আগের নিয়মেই চলল, অর্থাৎ এটা করা যাবে না। এই ঘটনার সময়ই খুব সহজে আয়াত নাজিল হয়: "লোকেরা তোমাকে ঋতুস্রাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। তুমি বল, তা অশুচি। অতএব তোমরা ঋতুস্রাব চলাকালে স্ত্রীসংগম বর্জন করবে"- (সূরা বাকারা: ২২২)। (জানাশোনা ঘটনা মোডিফাই কইরা এত সহজে আয়াত কেমনে কেন নাজিল হইত, তার একটা পরিষ্কার চিত্র এখানে দেখা যায়।)
উপরের ইহুদিবিদ্বেষ কথাটায় হয়তো সুশিল মমিনদের আপত্তি থাকতে পারে। কিন্তু এইটাই আসল পয়েণ্ট। আরো কিছু ঘটনা দেখা যাক - বিশেষ করে আজানের ব্যাপারটা।
মুসলিম হাদিসে (# ৭২১) দেখা যায়, মক্কা থিকা বিতাড়িত হইয়া মহাম্মকের মনে ভয় ধইরা গেছিল। তাই মদিনায় আইসা মহাম্মক বেশিক্ষণ একলা থাকত না। বেশিরভাগ সময় তার সাঙ্গোপাঙ্গোদের নিয়া থাকত। আর সবাইরে এই নিজের কাছাকাছি রাখার জন্য নতুন ফন্দি বাইর করে - কিছুক্ষণ পর পর একসাথে নামাজ পড়ত। ব্যাপারটা যে সিকিউরিটির স্বার্থে, সেটা আশা করি আর খুলে বলতে হবে না। কিন্তু তখনো আজানের বিষয়টা ছিল না। তো যখন জমায়েত হত, তখন কেউ কেউ মিসিং থাকত, বা সময়মত আসত না। এটা নিয়ে একটা সমস্যা দেখা দিল। তো এটা নিয়ে তারা আলোচনা করল। তাদের একজন বলল, নাসারাদের নাকূসের অনুরূপ একটা নাকূস (ঘন্টা) ব্যবহার কর। অপরজন বলল, ইহুদীদের শিঙ্গার অনুরূপ একটি শিঙ্গা ব্যবহার কর। উমর কইল, কাউরে পাঠাইয়া ডাইকা আনতে। কিন্তু মহাম্মকের কারো সাজেশনই পছন্দ হইল না। মেজাজ বিলা কইরা সবাইরে উঠতে বলল নামাজ শুরু করার জন্য।
সুনানে ইবনে মাজাহ নাম্বার ৭০৭-তে আবার দেখি, মহাম্মক "সালাতের জন্য সমবেত করার ব্যাপারে সাহাবীদের সাথে পরামর্শ করেন। তারা শিঙ্গার উল্লেখ করেন, কিন্তু এটি ইহুদীদের যন্ত্র বলে তিনি অপছন্দ করেন। অতঃপর তারা নাকূসের কথা উল্লেখ করেন। কিন্তু এটি খ্রিষ্টানদের ঘন্টা বলে তিনি অপছন্দ করেন।"
সহীহ মুসলিম নাম্বার ৭২১-তেও এক কথা, "মুসলমানরা মদিনায় আসার পর একত্রিত হয়ে নির্দিষ্ট সময়ে সালাত (নামায/নামাজ) পড়ে নিত। এ জন্য কেউ আযান দিত না। একদিন তারা ব্যাপারটি নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করল। তাদের একজন বলল, নাসারাদের নাকূসের অনুরূপ একটা নাকূস (ঘন্টা) ব্যবহার কর। তাদের অপরজন বলল, ইহুদীদের শিঙ্গার অনুরূপ একটি শিঙ্গা ব্যবহার কর। উমার (রাঃ) বললেন, তোমরা সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য আহবান করতে একটি লোক পাঠাও না কেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হে বিলাল! উঠো এবং সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য ডাক।"
সুনানে আবু দাউদ নাম্বার ৪৯৮-তেও একই রকম ঘটনা দেখি, মহাম্মক "এজন্য চিন্তিত ও অস্হির হয়ে পড়েন যে, লোকদেরকে নামাযের জন্য কিরূপে একত্রিত করা যায়। কেউ কেউ পরামর্শ দেন যে, নামাযের সময় হলে ঝাণ্ডা উড়িয়ে দেওয়া হোক। যখন লোকেরা তা দেখবে, তখন একে অন্যকে নামাযের জন্য ডেকে আনবে। কিন্তু তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মনঃপুত হয়নি। অতঃপর কেউ এরূপ প্রস্তাব করে যে, শিংগা ফুঁকা হোক। যিয়াদ বলেন, শিংগা ছিল ইহুদীদের ধর্মীয় প্রতীক। কাজেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা অপছন্দ করেন। রাবী বলেন, অতঃপর একজন ‘নাকুস’ ব্যবহারের পরামর্শ দেন। রাবী বলেন, উপাসনার সময় ঘণ্টাধ্বনি করা ছিল নাসারাদের রীতি। এজন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাও অপছন্দ করেন। অতঃপর কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই সেদিনের বৈঠক শেষ হয় এবং সকলে নিজ নিজ আবাসে ফিরে যায়।"
খিয়াল কৈরা, এইসময় আর হুটহাট কইরা আয়াত নাজিল হইতেছে না। অর্থাৎ মহাম্মক নিজেই বুঝতেছে না যে, আসলে কী করা যায়। সো তার ফেক নিকটাও থুক্কু আল্যাও উপায় বাতলাইয়া দিতে পারছে না। এইবার ভাইবা কন, আল্যায় যদি আসলেই থাকত, তাহলে তার এমন পেয়ারের নবীরে এমন কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে দিত?
পরবর্তী ঘটনা আল্যা-নবী তথা ইসলামের জন্য আরো লজ্জার। কী হইছে শুনেন:
মান সম্মান যাওয়ার ভয়ে মহাম্মক সবার সামনে ইহুদি-নাসারাগো থিকা কপি-পেস্ট করতে পারতেছিল না, অর্থাৎ ইহুদিগো শিঙ্গা আর নাসারাগো ঘন্টা, কোনোটাই কপি করা গেলো না। মহাম্মকের মনে তখন বিশাল চিন্তা; ব্যথিত মনে বাড়ি ফিরা গেল। পেয়ারের নবীরে এত চিন্তিত দেইখা, মনে হয় সেই প্রথম সেই শেষ, নবীর কোনো উম্মত (যায়েদ-এর পুলা আবদুল্লাহ) রাতভোর নিজের মাথা খাটাইছিল। একটা আইডিয়া (বর্তমানের আযান দেয়ার পদ্ধতি) পাইয়া সকালে আইসা নবীরে কইল। কিন্তু বেচারারে কুনো ক্রেডিট দেয়া হইলো না। কেমনে কেমনে জানি প্রচার হইয়া গেল, যে তারে নাকি এক ফেরেস্তা স্বপ্নের মধ্যে আইসা এই পদ্ধতি শিখাইয়া গেছে।
গরীবের ক্রেডিট আরো কেমনে চুরি হয় দেখেন - ঘটনা শুইনা জানাজানি হইয়া গেল যে, এই পদ্ধতি নাকি আগে উমররে স্বপ্নে দেখানো হইছিল। তবে উমর কইল, সে একটু বেশি 'লজ্জাবতী', তাই আগে নবীর সামনে এইডা কইতে পারে নাই! যাই হোক, আবদুল্লাহর আইডিয়া নবীর পছন্দ হইল, এবং বিলালরে আজান দিতে কইল (সুনানে আবু দাউদ ৪৯৮); তার আগে অবশ্য বিলালরে মহাম্মক আজানের মধ্যে নিজের নাম ঢুকাইয়া এইভাবে শিখাইয়া দিল, "আল্লাহু আকবর (আল্লাহ মহান); আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লালাহ (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই); আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুল আল্লাহ (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল); এরপর আবার বলবে। হাই আল-আস সালাহ দুই বার (সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য এস) দুই বার, হাই আ-লাল ফালাহ (কল্যাণের দিকে এস) দুই বার।" (সহীহ মুসলিম ৭২৬); ঘটনা এইখানেই শেষ না। বিলাল আবার মাতব্বরী কইরা ফজরের নামাজের সময় "ঘুম থেকে নামাজ উত্তম" বাক্যটি সংযোজন কইরা দেয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ ৭০৭)।
আজানের বিষয়ে ইহুদি-নাসারাগো নিয়মের বাইরে যাইতে, তাগো ব্যবহৃত জিনিসপত্র ব্যবহার না করতে যেই নবীর এত কাঠখড় পোহাইতে হইল, সেই নবীর উম্মতগো কিনা অহন ইহুদিগো মাইক ছাড়া আজানই হয় না। অবশ্য এমন দ্বিচারিতা করতে আল্যা-নবীকেও প্রায়ই দেখা গেছে। যেমন, মসজিদের বেলায় ইহুদী ও নাসারাগো নকশাই হুবহু ফলো করতে কইছে। নবী কইতাছে, আমাকে বেশী উঁচু করে মসজিদ নির্মাণের নির্দেশ দেয়া হয়নি। তোমরা মসজিদ এমনভাবে কারুকার্য করবে যেমনটি ইহুদী ও নাসারারা নিজ নিজ উপাসনালয় নকশা ও কারুকার্য মণ্ডিত করে থাকে (সুনানে আবু দাউদ ৪৪৮); সেই চুরি করা মসজিদের নকশা-কারুকাজও আজকাল আবার তারেকের মার বড় গলার মত "ইসলামিক, ইসলামিক" বইলা চিল্লানো হয়।
২.
ইহুদিদের হত্যা করা জায়েজ - এই কথাটা বলতে এসে এক মমিন এই হাদিসটা কমেন্ট আকারে পোস্ট করে গেছিল। কিন্তু রেফারেন্সটা জুতসই না হওয়াতে হাদিসের ব্যাপারে পাত্তা না দিলেও তাকে জুতসই একটা উত্তর দিয়েছিলাম। পরে গিয়ে দেখি কমেন্ট মুছে ভাগছে। তখন মনে হলো, মমিন বুঝতে পারছে যে, সে ধরা খাইছে। হাদিসটা আবার খুঁজলাম। পেয়ে গেলাম। ১০০% সহিহ, মুসলিম হাদিস। দেখা যাক:
কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কিয়ামত কায়িম হবে না যতক্ষন পর্যন্ত মুসলমানগন ইয়াহুদী সম্প্রদায়ের সাথে লড়াই না করবে। মুসলমানগণ তাদেরকে হত্যা করবে। ফলে তারা পাথর বা বৃক্ষের আড়ালে আত্মগোপন করবে। তখন প্রস্তর বা বৃক্ষ বলবে, হে মুসলিম, হে আল্লাহর বান্দা! এই তো ইয়াহুদী আমার পশ্চাতে। এসো, তাকে হত্যা কর। কিন্তু –গারকাদ নামক বৃক্ষ এ কথা বলবে না। কারণ এ হচ্ছে ইয়াহুদীদের বৃক্ষ।
- সহীহ মুসলিম # ৭০৭৫
ইহুদিবিদ্বেষে পরিপূর্ণ এরকম আরো অনেক শান্তির বাণী ইসলামের কিতাবগুলায় ভর্তি। সেগুলো আপাতত টানছি না, কেননা যা বলার সেটা এই হাদিসেই সপ্ত আসমানের উপর উপবিষ্ট আল্যার আরশের মত স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, অর্থাৎ - ইহুদিদের সাথে মুসলমানদের লড়াইয়ে নামতে হবে। তবেই কেয়ামত শুরু হবে। - মুসলমানরা ইহুদিদেরকে হত্যা করবে।
বর্তমানে বিশ্বের সমস্ত মুসলমান ইহুদিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধংদেহি মনোভাবে আছে। তারা যুদ্ধে নামবে, ইহুদিদের হত্যা করবে। এই পর্যন্ত ইসলাম ধর্মমতে ঠিক আছে। অর্থাৎ ইসলাম ধর্ম নিজেই মুসলমানদেরকে ইহুদিদের বিরুদ্ধে উস্কানি দিচ্ছে তাদের হত্যা করতে, এবং সেটা কোনো কারণ ছাড়াই। এইবার মুসলমানরা যদি মনে করে, শুধু তারাই ইহুদিদের মারবে, হত্যা করবে আর ইহুদিরা মুসলমানদের এত সাধের কেয়ামতের স্বাদ জন্মের মত মিটাইয়া দেবে না, তাহলে এগুলারে বকরি বলাটা কি পাল্লার পক্ষে দোষের কিছু হবে?
এবার আরেকটা ইনফো মনে করিয়ে দেই - ইসলামের কিতাবে যেমন বলা আছে হত্যার শাস্তি হত্যা, তেমনি ইহুদি-নাসারাগো কিতাবে বলা আছে, সেই শাস্তি ৭ থেকে ৭৭ গুণ পর্যন্ত হইতে পারে। অর্থাৎ মুসলমানদের একটা রকেটের বিনিময়ে ইসরায়েলের ৭৭টা পর্যন্ত বোমা ধর্মমতেই জায়েজ। এবার কান্নাকাটি না করে আস্তিকরা সবাই সবার কিতাবের বাণী মেনে চলুক। গুড লাক!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন