লিখেছেন বাংলার উসমান মুয়াজ্জিন মোহাম্মদ ইসলাম
নবিজীকে স্বপ্নে দেখার আশ্চর্যজনক ঘটনাটি জানতে চান?
আজ দুপুরে ‘খোয়াবনামা’ কিতাবখানা ফড়তে ফড়তে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়া একটা শীতল-নিঃশব্দ-জগতে ঢুইক্যা ফড়ি, যেখানে দেকতে ফাই - দিগন্ত জুড়ে এক বিশাল-দীঘি-জল-টলমল, এবং দীঘির ঐপাশে দূরে দিখা যাচ্ছিল সবুজ বনানী, উফরে ঘন নীল আসমান – এমুন একটা আবহ যখন, তখন খুব কাসে থিকা কিসু মানুষের অস্পষ্ট কথার গুনগুন শব্দ কানে আসলে ঐ শব্দ কেন্দ্র কৈরা তাকায়ে দিখি – আল্লাহর কস্ম… এমুন কাউকে দিখা যে কুনো মুসলিমের আজীবনের লালিত স্বপ্ন – আমি দেকলাম, দুনিয়ার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (সঃ) হাস্য বদনে সাহাবীদের সাথে গল্প করতেসিলেন; আমি বুজতে ফারলাম, আল্লাহর রাসূলের খুব কাসেই বসা শুভ্র দাড়ি বিশিষ্ট বিনয়ী বৃদ্ধ লোকটি হচ্ছেন নবী করিম (সাঃ) এর ঘনিষ্ট বন্দু হজরত আবু বক্কর (রাঃ)।
রাসূল এক পলকে আমার এদিকে তাকায়ে বললেন “ইসলামের বন্দু, এদিকে আয়”, আমি আল্লাহর রাসুলের কাসে আগায়ে গেলাম… গিয়া কিবাবে জানি বুজতে ফারলাম, বৃত্তাকারে বসা লোকগুলার মাঝে ইনি ত নবীজির জামাতা হজরত আলী (রাঃ), আরে!… উনি ত ওমর (রাঃ), হায় আল্লাহ!… উসমান (রাঃ) কে দিখি খুবই গম্ভীর হয়া রাসূলের দিকে মনযোগী চাইয়া আছেন, একটু দূরে দাঁড়ায়ে নবীজির পালকপুত্র যায়েদ কেনো যানি আনমনা হয়া আছে, আর কালো রঙয়ের একটা লোক হযরত বেলাল’ই হবেন… অজু করতেসেন ও কুলি করতেসেন খানিক দূরে বসিয়া…
নবিজী আমায় বললেন, “মোহাম্মদ ইসলাম, আজকে তুমি আজান দিবা, যাও বেলালের ঘটির অবশিষ্ট পানি দিয়া তুমিও অজু করে নাও।”
“ইয়া আল্লাহ্র রাসূল, আমি আফনেকে স্বপ্নে দেকতেসিনা ত!” – এ কথা শুনিয়া আল্লার রাসুল আমায় বললেন, “গায়ে চিমটি কাটছ কেনো… তুমি স্বপ্নযোগেই আমার জিয়ারত লাভ করছ। এর আগে অবশ্য তোমার দেশের ভেজাল-ইমানদার-দেওয়ানবাগী তার স্বপ্নযোগে আমায় নিকৃষ্ট অবস্থায় দেখেছিলো। দেওয়াবাগী আমায় স্বপ্নে দেখার পর আমার মনে বাসনা হয়, এই দেশের একজন মুমিন-এর স্বপ্নে যদি বিরাজ করতে পারতাম, এবং অন্তর্যামী তো সবই অবজ্ঞ! তাই তোমার মত লোকের মাধ্যমে তিনি আমার বাসনা পূরণ করেন। আচ্ছা যাও আজান দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হও, নামাজের সময় হয়ে গেছে।”
“ও গ আল্লাহ্র রাসূল, আমি কি ফারবো! আমি হয়ত আমাগের গাঁয়ের মসজিদের মুয়াজ্জিন…উখানে আজান দিয়া আমার সারা দিনমান, বিষন্ন বিকেল কাটিয়া যায়… যদিও পাটোয়ারী বাড়ির কাশেমের চা দুকানে পতিদিন পুলাপানরা আমার আজান নিয়া হাসিঠাট্টা করিয়া থাকে” এবং আমি আল্লাহ্র রাসূলকে আরো কিসু কতা জানালাম, “গাঁয়ের লোকগুলা ত সোটোলোক, অশিক্ষিত, কৃষিকাজ করিয়া খায়, তাদের উৎপাদিত ধান হাদিয়ার বিনিময়ে শীতকালীন ওয়াজ-নসিহত করতে আসা ভিনদেশী হুজুর ছায়েবরা কিস্সা কাহিনীর মধ্য দিয়া যে শিক্ষা দিয়া যান, সেই শিক্ষায় ত এই লুকগুলা আমার আজানের ভুল ভ্রান্তি ধোইত্তে ফারে না, কিন্তুক, আফুনি ত আরব দেশের, এটা সবাই স্বীকার করে ‘আরবী’ একটা পবিত্র ভাষা, তাই আফনের সামনে ভুল ভ্রান্তি সম্ভাবনাময় আজান দিয়া ধিস্টতা দিখাই কেমন করে, ও গ আল্লাহ্র রাসূল!”
তখন হুজুরে পাক সাল্লাল্লাহি ওয়া সাল্লাম অজু শেষে মিম্বরের দিকে আজান দিতে অগ্রসরমান হজরত বিলাল (রাঃ) কে উদ্দেশ্য করি বললেন, “বেলাল, এদিকে আসো। তোমার আজান দিতে হবে না।“
তারপর রাসূল আমার দিকে তাকায়ে মৃদু হাসলেন এবং বললেন “বোকা ছেলেটাকে তুমি আজান দেয়া শিখিয়ে দাও তো একটু। আর মিম্বরের উপরে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে বলে দাও যে, আজ থেকে আমি মোহাম্মদ ইসলামকে ‘ইসলামের বন্দু’ খেতাবে ভুষিত করে দিলাম।”
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন