সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০১৪

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সম্ভাবনার স্বপ্ন

লিখেছেন শ্মশান বাসী

মনে আছে সেই চল্লিশ দশকের আগের কথা। যখন মানুষ মানুষকে মানুষ ভাবতো। তারা প্রত্যেকে তাদের নিজ নিজ ধর্ম পালন করত, কিন্তু এক ধর্মের মানুষের প্রতি আরেক ধর্মের মানুষের এক গভীর ভ্রাতৃত্ববোধ ছিলো। আর এখন একবিংশ শতাব্দীতে এসে তা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এক ধর্মের মানুষ আরেক ধর্মের মানুযকে দেখলে মনে করে হয়তো নরক থেকে উঠে এসেছে।

কী তার কারণ, কেন এমন হলো, সেই বিষয়ে আজ কোনো কথা বলবো না; বলবো এর ভবিষ্যৎ নিয়ে। যদি প্রশ্ন করি, আচ্ছা, সেই দিন কি আবার ফিরে আসবে? আপনি চোখ বুঁজে নির্দ্বিধায় বলে দেবেন, এ কোনোদিন সম্ভব না।

কিন্তু মূর্খ আমার কেন যেন মনে হয়, সে দিন আর বেশিদিন দূরে নয়, যখন এক ধর্মের মানুষের সাথে আরেক ধর্মের মানুষের গলায় গলায় ভাব থাকবে।

বিশ্বাস হচ্ছে না? নাকি পাগল ভাবছেন? যদি আমার মতো ভাবেন, তবে আপনিও বলবেন, সেদিন খুব সন্নিকটে। আসুন, একটু তলিয়ে দেখি।

কোনোদিন কি দেখেছেন, সিয়া আর সুন্নি মুসলমান শান্তিপূর্ণ ভাবে পাশাপাশি বাস করছে? দেখেছেন কখনও মৌলবি সাহেব আর বাউল ফকির আন্তরিকভাবে কথা বলছেন? ব্রাহ্মণ ও শুদ্রের মেলামেশা? মনে হয় না, কারণ স্বাভাবিক ভাবে এটা সম্ভব না। কিন্তু একটা ক্ষেত্রে তা সম্ভব, আর সেটা হলো স্বার্থ। যদি কোনো উপলক্ষে দাওয়াত করে সিয়া আর সুন্নি বা বাউলকে এক থালায় বড় মাছের মাথাটা বা আস্ত খাসির কাবাবটা দিয়ে দেন, তবে ওরা, খুব সম্ভব, দ্বিধাহীনভাবে এক থালায় বসে খাবে। হিন্দুদের বিয়ে তো সবাই দেখেছেন - স্বার্থের জন্য ব্রাহ্মণ আর নাপিত ঠিকই এক পোটলার চাল ভাগাভাগি করে নেয়। কেন, তখন কি ছোঁয়াতে জাত যায় না?

ধার্মিকরা সব পারে স্বার্থের জন্য - ধর্মের নতুন নিয়মও দাঁড় করাতে পারে, আবার শত্রুকে শত্রু জেনেও বুকে টেনে নিতে পারে। এখন একটু চিন্তা করে দেখুনতো এই আধুনিক ইলেকট্রনিক মিডিয়ার যুগে নাস্তিক, ধর্মবিরোধী ও ধর্মসংশয়বাদীর সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, খুব তাড়াতাড়ি কি ধার্মিকরা তাদের অস্তিত্ব সংকটে পড়বে না? তখন কি তারা নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে জাত-ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নাস্তিকতা ঠেকাতে উঠে পড়ে লাগবে না? 

কারণ ধর্ম বাঁচলে তাদের স্বার্থ বাঁচবে, আর স্বার্থ বাঁচলে ধার্মিক বাঁচবে। এই সত্য অনুধাবন করে একে অপরকে বুকে টেনে নেবে। চল্লিশ দশকের আগের পরিবেশ সৃষ্টি হবে। 

আর বাকি থাকলো সকল নাস্তিক আর মুক্তমনাদের কাজ। তারা যদি সঠিক ভাবে ধর্মের ভণ্ডামির বিরুদ্ধে যুক্তিগুলো প্রকাশ করতে পারে, তবে সেই দিনটা মনে হয় আমরা আমাদের জীবনেই দেখে যেতে পারব। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিময় ধর্মগোঁড়ামীমুক্ত একটি সুন্দর সমৃদ্ধ দেশ। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন