আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

বুধবার, ২০ আগস্ট, ২০১৪

কুরানে বিগ্যান (পর্ব-৪৬): আবু আফাককে খুন - তিনি ছিলেন অতি বৃদ্ধ! ত্রাস, হত্যা ও হামলার আদেশ – উনিশ

লিখেছেন গোলাপ

পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩ > পর্ব ১৪ > পর্ব ১৫ > পর্ব ১৬ > পর্ব ১৭ > পর্ব ১৮ > পর্ব ১৯ > পর্ব ২০ > পর্ব ২১ > পর্ব ২২ > পর্ব ২৩ > পর্ব ২৪ > পর্ব ২৫ > পর্ব ২৬ > পর্ব ২৭ > পর্ব ২৮ > পর্ব ২৯ > পর্ব ৩০ > পর্ব ৩১ > পর্ব ৩২ > পর্ব ৩৩ > পর্ব ৩৪ > পর্ব ৩৫ > পর্ব ৩৬ > পর্ব ৩৭ > পর্ব ৩৮ > পর্ব ৩৯পর্ব ৪০ > পর্ব ৪১ > পর্ব ৪২ > পর্ব ৪৩ > পর্ব ৪৪ > পর্ব ৪৫

বদর যুদ্ধে (পর্ব-৩০-৪৩) অপ্রত্যাশিত সাফল্যের পর স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আরও বেশী বেপরোয়া ও নৃশংস হয়ে ওঠেন। এই যুদ্ধের পর তিনি পর পর বেশ কয়েকটি মানুষকে খুনের আদেশ জারি করেন। মুহাম্মদের আদেশে তাঁর অনুসারীরা সেই লোকগুলোকে রাতের অন্ধকারে নৃশংসভাবে করে খুন। যাদেরকে খুন করা হয় তাঁদের কেউই মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের কোনোরূপ শারীরিক আঘাত করেননি।

তাঁদের অপরাধ এই যে তাঁরা মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের আগ্রাসী নৃশংস সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের "মৌখিক প্রতিবাদ ও সমালোচনা" করেছিলেন।

১২০ বছর বয়সী অতি-বৃদ্ধ মানুষ থেকে শুরু করে দুগ্ধপোষ্য সন্তান-জননীকেও তিনি রেহায় দেননি। বদর যুদ্ধের আনুমানিক মাস দেড়েক পরে, মুহাম্মদের আদেশে তাঁর এক অনুসারী নৃশংসভাবে খুন করেন ১২০ বছর বয়সী অতি বৃদ্ধ ইহুদী কবি আবু আফাককে।

কী তাঁর অপরাধ?

তাঁর অপরাধ এই যে, মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা আল-হারিথ বিন সুয়া'দ বিন সামিত নামক এক ব্যক্তিকে খুন করার পর তিনি সেই খুনের প্রতিবাদে মুহাম্মদের কর্মকাণ্ডের কটাক্ষ ও সমালোচনা করে "একটি কবিতা" লিখেছিলেন। আদি ও বিশিষ্ট মুসলিম স্কলার মুহাম্মদ ইবনে ইশাক ও মুহাম্মদ ইবনে সা'দ-এর বর্ণনায় ঘটনাটি ছিল নিম্নরূপ:

মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের (৭০৪-৭৬৮ সাল) বর্ণনা:

আবু আফাক কে খুন করার জন্য সেলিম বিন উমায়েরের অভিযান:

‘আবু আফাক ছিলেন বানু উবেয়দাহ গোত্রের অন্তর্ভুক্ত বানু আমর গোত্রের। আল্লাহর নবী আল-হারিথ বিন সুয়া'দ বিন সামিতকে খুন করার পর তিনি আল্লাহর নবীকে অপছন্দ করা শুরু করেন এবং কবিতা লেখেন:
বেঁচে আছি আমি বহুদিন তবু দেখি নাই কভু
এমন সমাবেশ অথবা জনগোষ্ঠী, যারা
সমবেত কেইলার বংশধরদের চেয়েও বেশি বিশ্বস্ত
তাদের উদ্যোগ ও জোটের প্রতি,
ভূপাতিত করেছিল যারা পর্বতসমূহ ও কভু করেনি বশ্যতা কারও।[1]এক আরোহী এসে বিভক্ত করেছে তাদের দু'ভাগে
সমস্ত প্রকার জিনিসকে "অনুমোদিত", "নিষিদ্ধ" (এই বলে)।
মানোনি হার তোমরা তুব্বার যশ ও রাজশক্তির কাছে
করোনি শির নত তোমরা তার কাছে। [2]
আল্লাহর নবী বলেন, "কে আছ তোমরা যে এই বদমায়েশ টার ব্যবস্থা করতে পারবে?"

যার ফলশ্রুতিতে সালিম বিন উমায়ের নামের ভাড়াটে শোককারীদের একজন, বানু আমর বিন আউফ গোত্রের এক ভাই, তাঁকে খুন করেন।

এ বিষয়ে উমামা বিন মুজেরিয়া [এক মুহাম্মদ অনুসারী] কবিতা লেখেন:
আল্লাহর ধর্ম ও আহমদ (মুহাম্মদ) ওপর দিয়েছিস মিথ্যা আরোপ!
কসম তোর পিতার, যে দিয়েছে জন্ম অসৎ পুত্রের!
এক "হানিফ" দিয়েছে ধাক্কা তোকে এক রাতে
"এই নাও আবু আফাক তোর বয়স সত্ত্বেও" এই বলে!
যদিও আমি জেনেছি সে ছিল মানুষ অথবা জ্বিন
যে তাকে করেছে খুন গভীর রাতে। [3] [4]
মুহাম্মদ ইবনে সা'দ (৭৮৪-৮৪৫ খ্রিষ্টাব্দ) এর বর্ণনা:

সেলিম বিন উমায়েরের অভিযান:

‘তারপর আল্লাহর নবীর, তাঁর উপর শান্তি বর্ষিত হোক, হিজরতের ২০তম মাস শওয়াল মাসের প্রথমার্ধে ইহুদি আবু আফাকের বিরুদ্ধে সালিম ইবনে উমায়ের আল আমরির অভিযানটি সংঘটিত হয়।

আবু আফাক ছিলেন বানু আমর ইবনে আউফ গোত্রের। তিনি ছিলেন বৃদ্ধ, ১২০ বছর বয়সী এক ইহুদি। তিনি আল্লাহর নবীর, তাঁর উপর শান্তি বর্ষিত হোক, বিরুদ্ধে মানুষদের প্ররোচিত করতেন ও কবিতা (বিদ্রূপাত্মক) লিখতেন।

সালিম ইবনে উমায়ের ছিলেন অন্যতম ভাড়াটে শোককারীদের একজন এবং তিনি বদর যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, বলেন: "আমি এই মর্মে প্রতিজ্ঞা করি যে, হয় আমি আবু আফাককে খুন করবো অথবা তার আগেই মরবো।"

তিনি [সালিম ইবনে উমায়ের] সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন যতদিন না গরম রাত্রির আগমন ঘটেছিল এবং আবু আফাক বাহিরে ঘুমিয়েছিলেন। সালিম ইবনে উমায়ের তা জানতেন, তাই তিনি তাঁর তলোয়ার তার কলিজার মধ্যে ঢুকিয়ে চাপ দিতে থাকেন যতক্ষণ না তা তার বিছানা অবধি পৌঁছে।

আল্লাহর শত্রু তীক্ষ্ণ আর্তনাদ করতে থাকে এবং তাঁর অনুসারী জনগণ তাঁর কাছে ছুটে আসে এবং তাঁকে তাঁর ঘরের ভেতরে নিয়ে যায়।' [5]

[ইসলামী ইতিহাসের ঊষালগ্ন থেকে আজ অবধি প্রায় প্রতিটি ইসলাম বিশ্বাসী প্রকৃত ইতিহাস জেনে বা না জেনে ইতিহাসের এ সকল অমানবিক অধ্যায়গুলো যাবতীয় চতুরতার মাধ্যমে বৈধতা দিয়ে এসেছেন। বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিধায় বাংলা অনুবাদের সাথে মূল ইংরেজি অনুবাদের অংশটিও সংযুক্ত করছি। - অনুবাদ, টাইটেল ও [**] যোগ - লেখক।]

Muhammad Ibne Ishaq (704-768 AD) narrated:

SALIM B. UMAYR'S EXPEDITION TO KILL ABU AFAK

‘Abu Afak was one of the B. Amr b. Auf of the B. Ubayda clan.  He showed his disaffection when the apostle killed al-Harith b. Suwayd b. Samit and said:

"Long have I lived but never have I seen

An assembly or collection of people
More faithful to their undertaking
And their allies when called upon
Than the sons of Qayla when they assembled,
Men who overthrew mountains and never submitted, [1]


A rider who came to them split them in two (saying)

"Permitted", "Forbidden", of all sorts of things.


Had you believed in glory or kingship

You would have followed Tubba.” [2]

The apostle said, "Who will deal with this rascal for me?" 
Whereupon Salim b. Umayr, brother of B. Amr b. Auf, one of the "weepers", went forth and killed him. 
Umama b. Muzayriya said concerning that:
“You gave the lie to God's religion and the man Ahmad!  [Muhammad]

By him who was your father, evil is the son he produced!

A "hanif" gave you a thrust in the night saying

"Take that Abu Afak in spite of your age!"
Though I knew whether it was man or jinn
Who slew you in the dead of night (I would say naught).”’[3][4]


Muhammad Ibne Sa’d (784-845 AD) Narrated:

SARIYYAH OF SALIM IBN ‘UMAYR

Then occurred the sariyyah of Salim Ibn ‘Umayr al-‘Amri against Abu ‘Afak, the Jew, in Shawwal in the beginning of the twentieth month from the hijrah of the Apostle of Allah, may Allah bless him. 

Abu Afak, was from Banu ‘Amr Ibn ‘Awf, and was an old man who had attained the age of one hundred and twenty years.  He was a Jew, and used to instigate the people against the Apostle of Allah, may Allah bless him, and composed (satirical) verses.

Salim Ibn ‘Umayr who was one of the great weepers and who had participated in Badr, said: I take a vow that I shall either kill Abu ‘Afak or die before him. He waited for an opportunity until a hot night came, and Abu ‘Afak slept in an open place. 
Salim Ibn ‘Umayr knew it, so he placed the sword on his liver and pressed it till it reached his bed. 
The enemy of Allah screamed and the people, who were his followers rushed to him, took him to his house and interred him. [5]

>>> মুহাম্মদ-অনুসারীরা গত ১৪০০ বছর ধরে উচ্চস্বরে ঘোষণা করে আসছেন যে, মুহাম্মদ "আত্মরক্ষার প্রয়োজন" ছাড়া কাউকেই কখনো কোনো আঘাত করেননি। তাঁদের এই বিশ্বাস যে লক্ষ/কোটি ইসলাম-বিশ্বাসী পণ্ডিত ও অপণ্ডিতদের শত শত বছরের মিথ্যাচার ও প্রোপাগান্ডার ফসল, তা আদি উৎসের বিশিষ্ট মুসলিম স্কলারদের লিখিত বর্ণনার আলোকে অত্যন্ত স্পষ্ট। আদি উৎসের নিবেদিতপ্রাণ বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকদেরই লিখিত বর্ণনায় যে-বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট, তা হলো আবু-আফাক নামের এই মানুষটি ছিলেন ১২০ বছর বয়সী এক ইহুদি কবি। এই অতি বৃদ্ধ মানুষটি মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের জন্য কোনোরূপ শারীরিক হুমকির কারণ কখনোই ছিলেন না। ১২০ বছর বয়সী এক অতি বৃদ্ধ মানুষের শারীরিক ক্ষমতা (Physical strength) কী রূপ হতে পারে, তা যে কোনো মুক্তচিন্তার মানুষ অতি সহজেই অনুধাবন করতে পরেন। তাঁকে খুন করার পেছনে "আত্মরক্ষার প্রয়োজন" নামক কোনো বিষয়ের অস্তিত্ব নেই। তা সত্ত্বেও মুহাম্মদ তাঁকে রেহায় দেননি!

ইসলাম-বিশ্বাসী বহু পণ্ডিত ও অপণ্ডিতরা মুহাম্মদের নির্দেশে এই অমানুষিক খুনের ঘটনাটিকে প্রত্যাখ্যান করেন এই যুক্তি দেখিয়ে যে, মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের ওপরোক্ত বর্ণনায় কোনো ইসনাদ (কার কার সাক্ষ্যের ভিত্তিতে তা রচিত) নেই! তাই এই বর্ণনাটি গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থাৎ, যেহেতু মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের ওপরোক্ত বর্ণনায় কোনো উৎসের (Chain of narration) উল্লেখ নেই, তাই তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

নিঃসন্দেহে খুবই সুন্দর যুক্তি! নিজে প্রত্যক্ষদর্শী (Eye witness) না হলে যে কোনো ঘটনার বর্ণনায় যদি "ইসনাদ" না থাকে, তবে তা আমরা কেন বিশ্বাস করবো?  ইবনে ইশাকের বর্ণিত উক্ত ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছিল ৬২৪ সালে; আর ইবনে ইশাকের জন্মই হয়েছে উক্ত ঘটনার ৮০ বছর পর ৭০৪ খ্রিষ্টাব্দে। নিঃসন্দেহে ইবনে ইশাক কোনোভাবেই উক্ত ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হতে পারেন না।

এমত অবস্থায় উৎসের কোনো উল্লেখই না করে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর ওপর "এমন একটি বীভৎস ঘটনা" আরোপ করলে ঘটনার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে এমনতর যৌক্তিক প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই যে কেউ উত্থাপন করতেই পারেন। মনের মাধুরী মিশিয়ে লেখক যে তা লিপিবদ্ধ করেননি, তা কি নিশ্চিতভাবে বলা যায়?

সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন হলো, "মুহাম্মদ ইবনে ইশাক একজন অত্যন্ত নিবেদিতপ্রাণ ইসলাম-বিশ্বাসী বিশিষ্ট মুসলিম স্কলার হওয়া সত্ত্বেও কী কারণে তাঁর প্রাণপ্রিয় নবীর ওপর এমন একটি অমানবিক নিষ্ঠুর সন্ত্রাসী ঘটনা আরোপ করলেন?" 

কারণ, প্রিয় পাত্রের প্রশংসা করা ও তার দোষ-ক্রটি, যদি তা সত্যও হয়, উপেক্ষা/গোপন করা প্রায় সকল সাধারণ মানুষের সহজাত প্রতিক্রিয়া। এর ব্যতিক্রম হতে পারে দু'টি অসাধারণ চরিত্রের সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী মানুষদের ক্ষেত্রে:

১) অত্যন্ত সৎ, বিবেকবান ও সত্যনিষ্ঠ মানুষ

যে-মানুষগুলো সত্য-প্রচারের প্রয়োজনে প্রিয়জনদের দোষ ক্রটি ও উপেক্ষা বা গোপন করেন না। "ইবনে ইশাকের বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয়" দাবীদাররা নিঃসন্দেহে ইবনে ইশাককে এরূপ ব্যক্তিত্ব/চরিত্রের অধিকারী বলে স্বীকার করেন না।

২) অত্যন্ত অসৎ, বিবেকহীন ও অতিশয় ভণ্ড মানুষ

এরূপ চরিত্রের অধিকারী মানুষরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপরের ওপর "জঘন্য-মিথ্যা আরোপ" করেন! তাদের প্রিয়পাত্ররাও তাদের এই অপকর্মের হাত থেকে রেহাই পান না। কারণ বাইরে বাইরে কোনো বিশেষ লোককে তারা প্রিয়পাত্র বলে জাহির করলেও অন্তরে তাঁরা তাঁকে এতই ঘৃণা করেন যে, সেই বিশেষ লোকটিকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য তাঁরা তাঁর বিরুদ্ধেও মিথ্যাচার করেন।

অর্থাৎ মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ সাল), ইবনে হিশাম (মৃত্যু, ৮৩৩ সাল), আল-ওয়াকিদি (৭৪৭-৮২৩ সাল), মুহাম্মদ ইবনে সা'দ (৭৮৪-৮৪৫ খৃষ্টাব্দ), ইমাম বুখারী (৮১০-৮৭০ সাল), আল-তাবারী(৮৩৮-৯২৩ সাল), ইবনে কাথির (১৩০১-১৩৭৩ সাল) সহ সকল ইসলামের দিকপাল আদি বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকরা উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে জঘন্য মিথ্যাচারের মাধ্যমে নিষ্পাপ ও পুতপবিত্র দো-জাহানের নেতা ও সর্বকালের সকল মানুষের একমাত্র অনুকরণীয় প্রাণপ্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর চরিত্রের ওপর জঘন্য কালিমা লেপনের ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন! তাঁরা ইসলাম ও নবীর শত্রু! তাই তাঁদের লেখা কোনো ইসলামের ইতিহাস গ্রহণযোগ্য হতে পারে না (অনেক ইসলাম-বিশ্বাসী তাঁদেরকে 'ইহুদিদের চর' নামে আখ্যায়িত করতেও দ্বিধা করেন না)!

বিষয় টি কি আসলেই তাই?

জবাব হলো, "না! বিষয়টি মোটেও সে রকম নয়!”

সমস্যার মূল - ইসলামের মৌলিক শিক্ষায়!

কারণ ইবনে হিশাম সম্পাদিত মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের অত্যন্ত শ্রমসাধ্য গবেষণার ফসল ছোট ছোট হরফে প্রায় ৮০০ পৃষ্ঠার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই বইটির আরও বহু স্থানে যে “ইসনাদ-এর উল্লেখ নেই”, তার দু’টি উদাহরণ হলো:

১) “The polytheists persecute the Muslims of the lower classes" শিরোনামে নব্য মুসলমানদের ওপর কুরাইশদের তথাকথিত অকথ্য অত্যাচারের আড়াই পৃষ্ঠার বর্ণনা; ও

২) তথাকথিত "মদিনা সনদ" এর বর্ণনা (বিস্তারিত আলোচনা করবো মদিনা সনদ পর্বে)।

এখন প্রশ্ন হলো, ‘ইসনাদ নেই, তাই সেই বর্ণনাটি গ্রহণযোগ্য নয়’ এই যুক্তিতে:

“ইসনাদ না থাকা সত্ত্বেও এই দুই ঘটনার ইতিহাস কীভাবে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি ইসলাম-বিশ্বাসীর মুখে মুখে জায়গা করে নিলো ও প্রচণ্ড বিশ্বাসযোগ্য বলে গণ্য হলো?"

উত্তর হলো, ইসলামের সবচেয়ে প্রাথমিক ও মৌলিক সংজ্ঞা অনুযায়ী - কোনো ইসলাম-বিশ্বাসীরই মুহাম্মদের বাণী ও কর্মের শুদ্ধতার বিষয়ে কোনোরূপ সন্দেহ প্রকাশ করা ইসলামের সবচেয়ে অত্যাবশ্যকীয় প্রাথমিক শর্তের বরখেলাপ। সে অবস্থায় তিনি আর "ইসলাম-বিশ্বাসী" থাকতে পারেন না।

একজন ইসলাম-অনুসারী “মুহাম্মদ ও তাঁর মতবাদ"-এর ব্যবহারিক প্রক্রিয়ার ফসল গত ১৪০০ বছরের ইসলামের ইতিহাস জেনে (অথবা না জেনে) ও অশিক্ষা-কুশিক্ষাসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অমুসলিমদের তুলনায় মুসলমানদের পশ্চাৎপদ অবস্থা ও দুরবস্থা প্রত্যক্ষ করে মনঃক্ষুণ্ণ ও ক্ষিপ্ত হতাশায় ইসলামের ঊষালগ্ন থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত অপর যে কোনো ইসলাম-বিশ্বাসী/অবিশ্বাসীর লিখিত অথবা কথিত বাণী ও কর্মকাণ্ডের সমালোচনা বিনা বাধায় যেমন খুশী তেমনভাবে সম্পন্ন করতে পারেন।

তিনি সমালোচনা করতে পারেন মুহাম্মদের আদর্শে অনুপ্রাণিত তাঁর যে কোনো প্রত্যক্ষ অনুসারী সাহাবিগণের; তিনি সমালোচনা করতে পারেন মুহাম্মদের মৃত্যু (৬৩২ সাল) পরবর্তী চার খুলাফায়ে রাশেদীন হযরত আবু বকর-উমর-উসমান-আলী (রাঃ) থেকে শুরু করে আজ অবধি সকল ইসলাম-বিশ্বাসী মুসলিম শাসক ও শাসন আমলের; তিনি সমালোচনা করতে পারেন ইবনে ইশাক সহ ইসলামের ঊষা লগ্ন হতে আজ অবধি সকল নিবেদিতপ্রাণ ইসলাম বিশ্বাসী ‘সিরাত-হাদিস লেখক ও বর্ণনাকারীদের’; তিনি সমালোচনা করতে পারেন আদি মুসলিম শাসকদের শাসন আমলে নিয়োজিত ইসলামী আইনশাস্ত্রের (ফিকাহ্) প্রবক্তা ইমাম মালিকি-হানাফি-শাফিয়ী-হানবালি গং-দের; তিনি সমালোচনা করতে পারেন আদিকাল হতে আজ অবধি ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার ব্রতে ব্রতী সকল নিবেদিত প্রাণ জিহাদি সৈনিকদের।

শুধু সমালোচনায় বা বলি কেন, তিনি ইচ্ছা হলে এদের সবাইকে পৃথক পৃথকভাবে বা সমষ্টিগতভাবে গালিগালাজও করতে পারেন অন্য কোনো ইসলাম অনুসারীর হাতে কোনোরূপ মৃত্যুঝুঁকির সম্ভাবনা ব্যতিরেকেই!

এমনকী 

তিনি প্রচণ্ড হতাশায় ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে ইসলামের প্রবক্তা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) দাবীকৃত "আল্লাহ নামক স্রষ্টার” লীলাখেলার বিরুদ্ধে ও উচ্চবাচ্য ফরিয়াদ করতে পারেন, সমালোচনা করতে পারেন এবং ইচ্ছা হলে তাকে গালিগালাজও করতে পারেন, অন্য কোনো ইসলাম অনুসারীর হাতে তাঁর মৃত্যুঝুঁকির সম্ভাবনা ব্যতিরেকেই!

কিন্তু

ইসলামের অত্যাবশ্যকীয় একান্ত প্রাথমিক শর্ত অনুযায়ী - একজন ইসলাম অনুসারী কোনো অবস্থাতেই "মুহাম্মদ ও তাঁর ইসলাম"-এর সামান্যতম সমালোচনা করারও অধিকার রাখেন না। যদি তিনি তা করেন, তাহলে ইসলামের আদর্শ ও শিক্ষায় শিক্ষিত অন্যান্য নিবেদিতপ্রাণ মুহাম্মদ-অনুসারীর হাতে তাঁর খুন হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় সুনিশ্চিত। কারণ সেই ঘাতক অনুসারী একান্ত সহি ভাবে জানেন যে, "এটিই" তাঁর প্রাণ প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর নির্দেশ, যা তিনি কায়েম করেছিলেন তাঁর প্রত্যক্ষ অনুসারীদের মাধ্যমে।

“এমত পরিস্থিতিতে একজন তথাকথিত মডারেট ইসলাম-অনুসারীর হতাশা প্রকাশের যে একটিমাত্র পথ খোলা আছে, তাহা হইলো "ইহা নবীর সহি-আদর্শ নহে, ইহা সহি-ইসলাম নহে" জাতীয় ১৪০০ বছরের গৎবাঁধা ডায়লগ প্রদান করিয়া মুহাম্মদ ও তাঁর ইসলাম ছাড়া জগতের যে কোনো ব্যক্তি/গোষ্ঠী অথবা বিষয়ের বিরুদ্ধে সমালোচনা এবং ইচ্ছা হইলে গালিগালাজ করিয়া বিভিন্ন কুটকৌশলের মাধ্যমে মুহাম্মদ ও তাঁর ইসলামের শুদ্ধতা প্রমাণ করিবার চেষ্টা করা।"

এই অসহায়ত্ব থেকেই যা কিছু নবী ও তাঁর অনুসারীদের সপক্ষে, তার সবই 'সহি ও খাঁটি', অন্যথায় তা 'দুর্বল ও জাল' সাব্যস্ত করে প্রচার ও প্রসারের অদমনীয় প্রবণতার সৃষ্টি ও বিভিন্ন কসরতের মাধ্যমে তা গোপন অথবা বৈধতা দানের চেষ্টা! তাঁদের সামনে দ্বিতীয় কোনো পথই খোলা নেই।

সাধারণ সরলপ্রাণ মানুষের অজ্ঞতার সুযোগে তথাকথিত মডারেট ইসলাম-বিশ্বাসী পণ্ডিত ও অপণ্ডিতরা এই কর্মটি বিভিন্ন কসরতের মাধ্যমে গত ১৪০০ বছর ধরে অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করে আসছেন।

কিন্তু এই আত্ম-প্রতারণার বঞ্চনা থেকে রেহায় পাওয়ার জন্য ইসলাম বিশ্বাসীদের কোনো এক সময়ে থামতেই হবে। যত শীঘ্র তাঁরা এই সত্যটি অনুধাবন করতে পারবেন, তত দ্রুতই তাঁদের মুক্তি মিলবে!

(চলবে)

তথ্যসূত্র ও পাদটীকা

[1] “জনসাধারণের পরিগণিত ধারণা এই যে আউস ও খাজরাজ গোত্রের লোকেরা ছিলেন মাতা 'কেইলার' বংশধর”।

[2] “অর্থাৎ, তোমরা মহান সম্রাট 'তুব্বা' কে প্রতিহত করেছ; সুতরাং কেন তোমরা মুহাম্মদের দাবী কে বিশ্বাস করো?”

[3] “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ:  A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ৬৭৫-৬৭৬

[4] “তুব্বা ছিলেন ইয়ামিন এর এক শাসক যিনি ঐ ভূখণ্ড, যে টি এখনকার সৌদি আরব, আক্রমণ করেছিলেন। কেইলার জনগণ তাঁর আক্রমণ প্রতিহত করেছিলেন”।

 [5] কিতাব আল-তাবাকাত আল-কাবির – লেখক: মুহাম্মদ ইবনে সা'দ (৭৮৪-৮৪৫ খৃষ্টাব্দ)', অনুবাদ এস মইনুল হক, প্রকাশক কিতাব ভবন, নয়া দিল্লি, সাল ২০০৯ (3rd Reprint), ISBN 81-7151-127-9(set), ভলুউম ২, পার্ট - ১, পৃষ্ঠা - ৩০-৩১। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন