রবিবার, ১০ আগস্ট, ২০১৪

নাস্তিকদের হত্যা বা বিরোধিতা করা ইসলাম সম্মত নয়

লিখেছেন Elijah Neo

মুহাম্মদ (সাঃ) বা তার পূর্বতন নবীদের কেউ কখনো কোনো নাস্তিকের সাথে দ্বন্দ বা যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন, এমন কোনো তথ্যসূত্র কোথাও পাওয়া যায় না। সে সময় আরবে নাস্তিক্যবাদের ধারণাই ছিল না। সবাই কোনো না কোনোভাবে আস্তিক ছিলেন - সবাই কোনো না কোনো ধর্মের অনুসারী ছিলেন। কেউ পৌত্তলিক ধর্মের অনুসারী হয়ে মূর্তিপুজা করতেন – এরা একেশ্বরবাদী ছিলেন না, বহু-ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতেন; কেউবা আবার সাবিয়ান, ইহুদি বা খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসারী হয়ে একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী ছিলেন – এরা এক স্রষ্টা বা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতেন।

এছাড়াও তৎকালীন আরবে জরোএষ্ট্রিয়ান ধর্মের বেশ প্রভাব ছিল। ইসলামে বেহেশত, দোজখের ধারণা এই জরোএষ্ট্রিয়ান ধর্ম থেকেই ধার নিয়েছে। কারণ এই বেহেশত-দোজখের বৃত্তান্ত আল্লাহ-প্রদত্ত বলে কথিত তাওরাত, যাবুর বা ইঞ্জিলে নেই। এ থেকেই বোঝা যায়, কুরানে বর্ণিত বেহেশত-দোজখের ধারণা তৎকালীন আরবে প্রচলিত সামজিক সংস্কৃতি থেকেই ধার নেয়া হয়েছে।

যাহোক, কুরানে “অবিশ্বাসী” বলতে স্পষ্টতই তাদের বোঝানো হতো, যারা অন্য ধর্মে বিশ্বাসী বিধায় কুরানের বাণীকে অবিশ্বাস করেছিল। কুরানে এদের “আহলাল কিতাব (People of the Book)” বা “ধর্মগ্রন্থের অধিকারী” বলে নির্দেশিত করা হয়েছে। এইথিজম বা নাস্তিকতার আরবি প্রতিশব্দ হচ্ছে “ইলহাদ”; কিন্তু কোরানে অবিশ্বাসী বোঝাতে “কাফির” শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। কাফির শব্দের অর্থ অবিশ্বাসী হলেও তা নাস্তিকদের নির্দেশিত করে না।

তাহলে দেখা যাচ্ছে, ইসলামের গোড়াপত্তন থেকে শুরু করে খেলাফতের শেষ সময় পর্যন্ত নাস্তিকতার বিরোধিতা করা হয়নি ইসলামে। কুরানে বা হাদিসে ইলহাদ বা নাস্তিকদের ব্যাপারে কোনো বিধান নেই! আজকাল বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা নাস্তিকদের কতল করা বা তাদের সাথে যে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়ে আছেন, তা বর্তমান সময়ের ধর্মব্যবসায়ীদের মনগড়া ফতোয়া বিশেষ – মূল ইসলামের সাথে তা কোনোক্রমেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

তাই এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, নাস্তিকদের হত্যা বা বিরোধিতা করা ইসলাম সম্মত নয়। আসুন আমার মুসলিম ভাইয়েরা, আমরা নাস্তিকদের সাথে সমাজে সাম্য, সৌহার্দ্য নিয়ে সহাবস্হান করি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন