লিখেছেন নিলয় নীল
আমাদের অনেক বন্ধুরা ইসলামে ঋতুকালে নারীরা নামাজ পড়তে পারবে না, এই নিয়ে সমালোচনায় মুখোর। তারা কি জানে সনাতন ধর্ম এই বিষয়ে কি নির্দেশ দিয়েছে? উজ্জয়িনীর কামশাস্ত্রের “শিব-পার্বতীর কথোপকথন” অধ্যায় থেকে ‘ঋতুকালে নারীর কর্তব্য’ আলোচনা করা হলো:
পার্বতীর প্রশ্ন ছিলো ঋতুকালে নারীর কর্তব্য কি? এই বিষয়ে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করেন মহাদেব। তিনি যা বলেন তা হুবহু তুলে দেয়া হলো:
যেদিন প্রথম রজঃদর্শন হবে সেদিন থেকে তিন রাত্রি পর্যন্ত রমণী সবকিছু পরিত্যাগ করে ঘরের মধ্যে সর্বদা আবদ্ধ থাকবে। যাতে অন্য কেউ তাকে না দেখতে পায়। স্নান করবে না, অলংকার পরবে না। এক বস্ত্র পরিধান করবে। দীনাভাবে মুখ নিচু করে বসে থাকবে। কারো সাথে কোন কথা বলবে না। নিজের হাত, পা ও চোখ থাকবে স্থির। দিনের শেষে মাটির হাড়িতে তৈরি করা ভাত সে খাবে এবং ভূমিতে সাধারণভাবে শয্যা করে নিদ্রা যাবে। এইভাবে তিনদিন কেটে যাওয়ার পর চতুর্থ দিনে সূর্য উদিত হওয়ার পর স্নান সেরে কাঁচা কাপড় পড়ে সে শুদ্ধা হবে।
শাস্ত্রে লেখা আছে, যে নারী রজঃস্বলা হবে, সে নারী প্রথম তিন দিন মধু, মাংস ভোজন, গন্ধমাল্যদি ধারণ, দিবাভাগে শয়ন, তামাক সেবন, মুখ শোধন, গন্ধদ্রব্য ব্যবহার, বেশভূষা ধারণ, রোদন, আরোহণ, অগ্নিস্পর্শন – এসব কাজ মোটেও করবে না। কোন কোন শাস্ত্রকার বলেছেন, নারী ঋতুমতী হলে প্রথম তিনদিন চোখে কাজল পরবে না। স্নান, স্থানান্তরে গমন, দন্তধাবন ও গ্রহনক্ষত্রাদির দর্শন করবে না।
মহাদেব বলেন, হে প্রিয়, বর্তমানে শাস্ত্রে যেসব বিধিনিষেধের কথা বলা হয়েছে তা সংক্ষেপে তোমাকে বর্ণনা করছি। ঋতুকাল থেকে ষোড়শ দিনের মধ্যে যুগ্ম দিনে নারী গমন করা শ্রেয়। কিন্তু দ্বিতীয় ও চতুর্থ দিনে এটি নিষিদ্ধ।
ঋতুমতী নারী জাতি ৩ দিন অপবিত্র বলে গণ্য হয়। এই সময় তারা কি কি বিধিনিষেধ মেনে চলবে তা তোমাকে আগেই শুনিয়েছি। ঋতুকালে শুধু নিজের নারীতেই উপগত হওয়া সমীচীন। পরনারীতে উপগত হলে যেমন সকলে নিন্দা করে তেমনি আয়ু কমে যায় এবং পরকালে নরকে গমন করে।
জ্যেষ্ঠা, মূলা, মঘা, অশ্লেষ, রেবতী, কৃত্তিকা, অশ্বিনী, উত্তর ভাদ্রপদ, উত্তরাষাড়া ও উত্তরফাল্গুনী এই কটি নক্ষত্র এবং পূর্ব দিবসে নারী গমন করা নিষিদ্ধ। ঋতুমতী নারীকে কাছে পেয়েও যে পুরুষ তাকে ভোগ করে না সে নরকে গিয়ে ব্রহ্মঘাতিনী বলে বিবেচিত হয়।
ঋতুকালে নারী গমন করলে স্নানান্তে সেই পুরুষ শুদ্ধ হয় এবং ঋতুতে স্ত্রী গমনের পর পুরুষাদি শৌচের মতো তাকে শৌচকরন করতে হয়। পুরুষ নারী পরস্পর মিলনের ফলে তারা অশুচি হয় এবং পরদিন সকালে পোশাক ছেড়ে ফেলে শুদ্ধ হতে হয়।
রাত্রির প্রথম ও শেষ প্রহরে নারী গমন করা সমীচীন নয়। ঐ দুই প্রহরে শাস্ত্রচর্চা করে কাটানো উচিৎ। এছাড়া বাকি দুটি প্রহরে স্ত্রী সঙ্গ লাভ করলে মোক্ষপ্রাপ্তি ঘটে। এই নিয়মের অন্যথা করলে নরক প্রাপ্তি ঘটে। সেই ব্যাক্তি পশুযোনি লাভ করে। পিতামাতার সহবাসের দোষে তাদের সন্তানাদি দুঃখ কষ্ট লাভ করে।
ঋতুর প্রথম দিন সহবাসের ফলে সন্তান জন্মালে সেই সন্তান দীর্ঘায়ু হয় না। দ্বিতীয় দিনে সহবাসের ফলে সন্তানের জন্ম হলে সেই সন্তান প্রসবাগারেই মারা যায়। তৃতীয় দিনের সহবাসের ফলে বিকলাঙ্গ বা স্বল্পায়ু সন্তান জন্মগ্রহণ করতে পারে। শরীরতত্ত্ব বিষয়ে মহামতি সুশ্রুতের এইসব উপদেশ অত্যান্ত মূল্যবান। মহর্ষি চরক প্রভৃতি আয়ুর্বেদাচার্যগণও এই ধরণের উপদেশ দিয়েছেন।
ঋতুমতী নারীর তিনদিন গায়ে তেল মাখা, নখ কাঁটা, কান্নাকাটি করা, চোখে কাজল দেয়া, দিবা নিদ্রা, স্নান, সুগন্ধি দ্রব্য গায়ে লেপন, অট্টহাসি, অতিরিক্ত কথাবার্তা, কেশবিন্যাস, বিকট আওয়াজ শোনা, অধিক বায়ু সেবন এবং অতিরিক্ত কাজ করা নিষিদ্ধ। কেননা ঐ সব কর্মের ফলে তার রক্ত দুষিত হয়ে নানারকম ব্যাধির সঞ্চার হতে পারে।
এগুলোই হলো সনাতনী বিজ্ঞান, সনাতনী নারীদের এসব অক্ষরে অক্ষরে পালন করার তাগিদ দিয়েছেন মহাদেব।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন