হুমায়ুন আজাদের 'আমার অবিশ্বাস' নামের বইটা পড়তে শুরু করেছিলাম বেশ আগে। ধর্মকারী তখন স্থগিতাবস্থায়। কিন্তু কিছুদূর পড়ার পরে লক্ষ্য করলাম, বইটিতে উদ্ধৃতিযোগ্য ছত্রের ছড়াছড়ি। পড়া তখনই থামিয়ে দিয়ে স্থির করলাম, ধর্মকারী আবার সচল হলে ধর্মকারীর পাঠকদের (অনেকেরই বইটা পড়া আছে, জানি, তবুও...) সঙ্গে টাটকা পাঠমুগ্ধতা ভাগাভাগি করবো। তাই পড়তে শুরু করলাম আবার। বিসমিল্যা।
৭৩.
ধার্মিকরা মত বদলাতে খুবই অভ্যস্ত, তাঁরা নতুন নতুন ব্যাখ্যা দিতে লজ্জা পান না; এবং ঈশ্বরের বাণী থেকে সব সময়ই সুবিধামতো তাৎপর্য বের করতে পারেন।
৭৪.
অধিকাংশ মানুষের মনের আদিমতা কাটে নি; তারা লোভ-ভয়-অপবিশ্বাসের মধ্যে বাস ক'রেই স্বস্তি পাচ্ছে।
৭৫.
তারা (রাজনীতিকরা) নিজেরা ধর্মে বিশেষ বিশ্বাস করে না, তাদের জীবন যদিও অধার্মিক, তবু তারা ক্ষমতার জন্যে উত্তেজিত করে তোলে সাধারণ মানুষের লোভ-ভয়-অপবিশ্বাসকে।
৭৬.
অধিকাংশ মানুষ সাধারণত ধর্মকে পাত্তা দেয় না। ধর্ম এতো দিনে লোপ পেয়ে যেতো যদি না চারপাশে সারাক্ষণ সক্রিয় থাকতো ধর্মের রক্ষীবাহিনী। প্রতিটি ধর্ম সৃষ্টি করে তার সুবিধাভোগী রক্ষীবাহিনী; কখনো এবং কোথাও ওই বাহিনী অত্যন্ত হিংস্র, কখননো কোথাও মৃদু। পরিবার, পিতামাতা, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, মসজিদ-মন্দির-গির্জা-সিনেগগ, উৎসব, পুরোহিত-মোল্লা-রাবাই, বিদ্যালয়-পাঠ্যপুস্তক, সমাজ-রাষ্ট্র সবই কাজ করে ধর্মের রক্ষীবাহিনীরূপে।
৭৭.
বিদ্যালয়ে ভর্তি হ'তে, চাকুরির জন্যে আবেদন করতে, এবং তুচ্ছ নানা কাজ করতে গেলে ধর্মের ঘর পূরণ করতে হয়; যারা ধর্মে বিশ্বাস করে না, তারাও রক্ষীবাহিনীর গোপন ফাঁদের বাইরে যেতে পারে না। ধর্ম টিকে আছে এ রক্ষী বাহিনীর সক্রিয়তায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন