আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

দেলু চোরার চন্দ্রবিলাস (হিমু অবলম্বনে, হুমায়ূন আহমেদের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা পুর্বক)

লিখেছেন হযরত মাওলানা আল্লামা দেলাওয়ার হোসেন ছাঈদী (ফোঃ সেঃ) চন্দ্রপুরী

(প্রথম অংশ প্রথমে ফাসির আদেশ হবার পর লেখা ও ইষ্টিশন ব্লগে প্রকাশিত। পরিশিষ্ট অংশ আদালতে আজকের রম্য নাটিকার পরিপ্রেক্ষিতে যোগ করা হয়েছে।)

শেষ পর্যন্ত ধরা খেয়ে গেলাম। দাড়িতে লাল রঙ মাখিয়ে জজ সাহেবকে বিভ্রান্ত করা গেল না। আমার ফাঁসির হুকুম হয়ে গেল। 

কাচারিঘরের সমবেত জনতা আমার দিকে প্রবল ঘৃণা নিয়ে তাকিয়ে আছে। আমি পাত্তা দিলাম না। মহাপুরুষদের এইসব পাত্তা দিলে চলে না। আমি শিস দিয়ে একটা গানের সুর তোলার চেষ্টা করলাম, “ও হাসিনা দিছস কিনা ঝুলায় আমারে......” 

পাকা খবর আছে, আমাকে হুট করে একদিন ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। আমার প্রবল ইনটিউশন বলছে, তার আগেই আমার শিষ্যরা একটা হুলুস্থুল বাধিয়ে দেবে। মানুষ-টানুষ মেরে একেবারে ছ্যাড়াব্যাড়া করে ফেলবে। আমি আমার মাতুল বংশ থেকে তেইশটা ভয়াবহ ক্রোমোজোম নিয়ে এসেছি বলে খুন, ধর্ষণ এসব আমার কাছে কোনো বিষয় না। মহাপুরুষদের এইসব জাগতিক ব্যাপারে মাথা ঘামানো নিষিদ্ধ। 

আমি উদাস মুখে আমার লাল দাড়িতে হাত বোলাতে লাগলাম। জেলখানায় তেমন করার কিছু নেই। এখন আমার দিন কাটছে মেশিন পরিচর্যা করে। 

ফাঁসি কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত আমাকে টেলিফোনের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। আমি খালেদার নাম্বার ডায়াল করলাম। ফোন ধরলেন ফালু সাহেব। ফালু সাহেব হেড়ে গলায় বললেন, “কাকে চাই?”

আমি সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললাম, “এটা কি লইট্টা ফিশের আড়ত?” 

ফালু সাহেব জড়ানো গলায় গালিগালাজ শুরু করলেন। গালিগালাজে উর্দু শব্দের প্রাধান্য আছে। মনে হয়, আজ তার মদ্যপান দিবস। তরল অবস্থায় তিনি উর্দুভাষায় গালিগালাজ করেন। এমনিতে তার লিমিট হচ্ছে পাঁচ। আজ মনে হয় লিমিট অতিক্রম করে ফেলেছেন। আমার বাবা তার বিখ্যাত উপদেশমালায় বলেছেন, “উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।” ভাষাগত কারণে আমি ফালু সাহেবের প্রতি গভীর সংহতি বোধ করলাম এবং নিজের অজান্তেই গলা ফাটিয়ে ম্যাৎকার দিলাম, “পাকিস্তান জিন্দাবাদ!” ম্যাৎকারে ফালু সাহেবের কোনো ভাবান্তর হল না।

তিনি মহা উৎসাহে গালিগালাজ করে যাচ্ছেন, “শুয়ার কি আওলাদ! উল্লু কা পাঁঠা, লইট্যা ফিশের আড়ত তোর গুহ্যদ্বার দিয়ে ঢুকিয়ে দেব, হারামজাদা!” বেশিক্ষণ গালি শুনতে হল না, খালেদা এসে ফোন নিয়ে নিল। 

"কে? দেলু?"

আমি মধুর গলায় বললাম, “কেমন আছ রূপা”

- রূপাটা কে? তোমার নতুন কলিজু?

আমি হাসলাম। আমার সেই বিখ্যাত বিভ্রান্তিকর হাসি। যার মানে হ্যাঁ বা না দুইই হতে পারে। হাসি দিয়ে খালেদাকে বিভ্রান্ত করা গেল না।

খালেদা বিরক্ত গলায় বলল, “দেলু একসময় তোমার সাড়ে সাত বাই দেড় ব্যাপারটা ভালো লাগত, এখন আর লাগে না। তার পরও তোমাকে দেখার জন্য কেন যে সিঙ্গাপুর থেকে চলে এলাম, জানি না।”

আমি আনন্দে খাবি খাচ্ছি এমন একটা ভাব করে বললাম, “মেনি থ্যাংকস, রূপা।” 

খালেদা যন্ত্রের মত বলল, “সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে তোমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছি। তবে তাতে কাজ হবে কি না, কে জানে।” 

রূপার সাথে কথা বলতে বলতে আমি মেশিন চালাচ্ছিলাম। ক্লান্ত গলায় বললাম, “রূপা, তুমি কি তোমার গোলাপী শাড়ীটা পরে একটু বারান্দায় আসবে?” 

খালেদা ধরা গলায় বলল, “কেন?” 

আমি উদাস গলায় বললাম, “আজ চাঁদের মধ্যে আমাকে দেখা যাচ্ছে। তুমি আমাকে দেখার জন্য সিঙ্গাপুর থেকে এসেছ। প্রকৃতি তোমার ইচ্ছা পূরণের ব্যবস্থা করেছে।” 

খালেদা খটাস করে ফোন রেখে দিল। খালেদাকে বোঝানোর সুযোগ হল না, আমাকে আসলেই সেদিন চাঁদের মধ্যে দেখা যাচ্ছিল। বারান্দায় এলেই রূপার সাথে আমার দেখা হতো। অর্ধচন্দ্রের অপার্থিব আলোয় আমরা দৃষ্টি বিনিময় করতাম। প্রকৃতি মানুষের কোনো ইচ্ছাই অপূর্ণ রাখে না। আমার এই ইচ্ছা কীভাবে পূরণ হবে কিংবা আদৌ পুরণ হবে কি না, কে জানে! 

পরিশিষ্ট: 

শেষ পর্যন্ত আমাকে ঝুলিয়ে দেওয়া গেল না। হাকিম নড়ে তো হুকুম নড়ে না বলে একটা কথা আছে। মাথামোটা বাঙালিদের ক্ষেত্রে হাকিম-হুকুম সবই নড়ে। রসিক মহামান্য আদালত আমার ফাঁসি বাতিল করে আজীবন কারাদণ্ড উপহার দিল। 

আমি সমগ্র বাঙালি জাতির উদ্দেশে মধ্যমাঙ্গুলি প্রদর্শন করলাম। মেশিন দেখিয়ে দিতে পারলে ভালো লাগত। এই কাজ থেকে বিরত থাকলাম। প্রদর্শন একটি বিপদজনক প্রক্রিয়া। আমার খালাতো ভাই বাদল (ভালো নাম কাদের মোল্লা) ভি প্রদর্শন করে শেষ পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলেছে। বাদলের জন্য আমার মধ্যে এক ধরনের হাহাকার তৈরি হল। সবাই যার যার মত পার পেয়ে গেল, ধরা খেয়ে গেল শুধু বাদল। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। 

সবই প্রকৃতির বিরাট কোনো পরিকল্পনা। সেই পরিকল্পনায় বাদল দুর্ভাগা, আমি ভাগ্যবান। মানবজাতির ভাগ্যের হিসাব সব সময়ই রহস্যময়। এই রহস্যের কারণে আমাকে একদিন চাঁদের বুকে দেখা গিয়েছিল। তার চেয়েও বড় রহস্যের কারণে আরো দীর্ঘদিন আমাকে পৃথিবীর বুকে দেখা যাবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন