লিখেছেন রেওয়াজ
নাস্তিকদের গরুপ্রীতির আগে কুরবানির ইতিহাস জানা প্রয়োজন। খুব সংক্ষেপে কুরবানির ইতিহাস বর্ণনা করতে হলে বলতে হয়, ইব্রাহিম নামের এক ব্যক্তি একটি স্বপ্ন দেখে, সেই স্বপ্নে তার মনে হয়, কোনো কল্পিত শক্তি তাকে তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু কুরবানি করতে নির্দেশ দিচ্ছে। পরপর দু'বার সে বিফল হয়, এবং শেষবার সে তার পুত্রসন্তানকে কুরবানি করতে উদ্যত হয়। কিছু কিছু বইয়ের মতে - তার কল্পিত সেই শক্তি তাকে শেষ পর্যন্ত এই আত্মত্যাগ করা থেকে বাঁচিয়ে দেয়। আর এরই নিদর্শন স্বরূপ আজও একটি ধর্মের মানুষেরা এই আত্মত্যাগের প্রথা অব্যাহত রেখেছে। তবে এদের কাছে পৃথিবীর সকল গরু-ছাগলই পুত্রসম। আমি ঠিক বুঝে পাই না, নিজ সন্তানকে জবাই করার মধ্যে কী ধরনের শান্তি রয়েছে। কিংবা আজকের দিনে কোনো ব্যক্তি যদি সকালে ঘুম থেকে উঠে এরকম স্বপ্নের কথা ব'লে তার সন্তানকে জবাই করতে চায়, তাহলে তার পরিণতি কী হবে?
আরেকটু ইতিহাস এবং স্বপ্ন চর্চা করা যাক, সেই স্বপ্নে ইব্রাহিমকে তার সব থেকে প্রিয় বস্তু/মানুষ/সম্পদ কুরবানি করতে বলা হয়। যদি সেই স্বপ্নকে কোনো মহান শক্তির বহিঃপ্রকাশ ধরে নিয়ে এ আদেশ পালন করা হয়; তাহলে বোকা মনে প্রশ্ন জাগে: ইব্রাহিমের কাছে তার পুত্রের থেকেও অন্যকিছু অধিক প্রিয় ছিল না? আমার জানা মতে, এই ধর্মের অনুসারীদের কাছে সব থেকে প্রিয় বস্তু (অবশ্য এতে বস্তু বা পদার্থের গুণাবলী উপস্থিত নেই) অন্যকিছু। তাহলে ইব্রাহিম তাকেই কুরবানি দিয়ে দিলো না কেন?
এবার মূল প্রসঙ্গে আসা যাক, গরুপ্রীতি। সত্যি বলতে নাস্তিকদের মধ্যে বিন্দুমাত্র গরুপ্রীতি-জীবপ্রীতি নেই। পুরোনো দিনের কথা জানি না, কিন্তু আজকাল নাস্তিকতার সঙ্গে নিরামিষভোজের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং কিছু ধর্মের অনুসারীদের মধ্যেই নিরামিষভোজীদের দেখা যায়, এছাড়া ধার্মিকদের মধ্যে আরেকটা জিনিস লক্ষ্যণীয় - কোনো ধর্মের মানুষ শূকর খায় না, কেউ গরু খায় না (মজার ব্যাপার হচ্ছে ছাগল খাওয়া কোনো ধর্মেই নিষিদ্ধ নয়!)।
তারপরেও নাস্তিকদের মধ্যে এ গরুপ্রীতির কারণটি এভাবে বলা যেতে পারে - মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যগ্রহণের অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে। এবং এ কারণে পশুহত্যা করা স্বাভাবিক। ব্যাপারটি বর্বর, কিন্তু প্রাকৃতিক খাদ্যচক্রের অনিবার্যতায় বেঁচে থাকার জন্য পশুহত্যা এড়ানোর উপায় নেই।
কিন্তু যখন পশু হত্যা করে তা নিয়ে উৎসব করা হয়, তখন মনে কেবল প্রাচীন-অসভ্য-গুহাবাসী-বর্বর মানুষের কথাই মনে পড়ে। খুব পরিষ্কার ভাবে সামনে ভেসে ওঠে নাম না জানা আদিম-চিত্রশিল্পীর আঁকা ছবিগুলো যেখানে নগ্ন-মানুষদের শিকার পরবর্তী বর্বরতার প্রকাশ পেয়েছে। নাস্তিকরা যেহেতু নিজেদের সভ্য বলে দাবি করে, এই অসভ্যতার প্রতিবাদ করা তাদের দায়িত্বই বৈকি! আর এই বীভৎসতা অনেক সময়ই আমার কাছে হাস্যকর মনে হয়, যখন মনে পড়ে তারা শুধু কল্পিত একটি শক্তিকে খুশি করার জন্য এই প্রাণীগুলোকে কুরবানি করছে। আর হাসতে-হাসতে তখনই বিষম খাই যখন মনে পড়ে, তারা ভাবে এই মৃত প্রাণীটিই তাদের চুলের থেকেও সূক্ষ্ম এবং তরবারির থেকেও ধারালো কল্পিত রাস্তা দিয়ে শান্তিময় এক স্থানে নিয়ে যাবে।
বানিয়েছেন অবর্ণন রাইমস
শিরোনামের দ্বিতীয় শব্দ 'মৌসুমী'।
অনেকে ধর্মবিশ্বাসী এই অভিযোগটি করে থাকেন। 'গরুপ্রীতি' মৌসুমী হওয়ার কারণ খুবই যৌক্তিক। বাংলাদেশে এমন বর্বরতা বছরে একবারই দেখা যায়। তাই স্বাভাবিকভাবেই সেই একটি সময়ই প্রতিবাদ হয় তথা গরুপ্রীতি দেখা দেয়।
প্রশ্ন থাকতে পারে, শুধু একটি নির্দিষ্ট ধর্মের বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ করা হয় কেন? এর উত্তরে আমি বলতে চাই, অন্য যে ধর্মটিতে বলি (যা নিঃসন্দেহে কুরবানির থেকে অনেক বেশি পাশবিক) নামক প্রথা রয়েছে, তার ধর্মাবলম্বীরা এদেশের জবেহকারীদের দ্বারা প্রায় নিয়মিত জবেহ হয়, তাই তাদের নিয়ে না লিখলেও চলে; আর এদেশে তারা এখন ৮%-এরও কম। অন্য আরেকটি ধর্ম, যারা বিশেষ দিনে টার্কি নিধন করে উৎসব করে থাকে। তাদের নিয়ে আমি কিছুই বলতে চাই না, এমনকি বিন্দুমাত্র প্রতিবাদও করতে চাই না, এই মুহূর্তে। কেননা আমি লিখছি বাংলায়, তারা বাংলা পড়ে বলে আমার জানা নেই; পড়লেও তারা অন্তত আমার লেখা পড়বে না।
বেঁচে থাকার জন্য অর্থাৎ খাদ্যের প্রয়োজনে পশুহত্যার বিকল্প এখনও নেই বলেই তা চলতেই থাকবে, তবে উৎসবের নামে উল্লাস করে পশুহত্যা কেন?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন