বুধবার, ১ অক্টোবর, ২০১৪

সহজ সরল কথা

লিখেছেন দাঁড়িপাল্লা ধমাধম

কিছু সহজ সরল কথা... সংক্ষেপে।তাই একটু সরলীকরণ মনে হতে পারে...

ভারতের আর্য-অনার্য বিষয়ে, আশা করি, আপনাদের ধারণা আছে। ভারতের উত্তরভাগ আর্যপ্রধান, আর দক্ষিণভাগ অনার্যপ্রধান অঞ্চল। উত্তরের মানুষ, দেব-দেবীরা ফর্সা, তো দক্ষিণের কালচে। এর মাঝামাঝি একটা বাদামী বর্ণেরও সৃষ্টি হয়েছে। উত্তরের মানুষের কাছে রাম বেশি পূজিত। রামের তুলনায় দক্ষিণে গণেশের প্রভাব বেশি।

কিছুদিন আগে একটা ছবি পোস্ট দিয়েছিলাম - পর্ণশবরী দেবীর পায়ের তলায় যুদ্ধে পরাজিত গণদেবতা গণেশের মূর্তি, এবং এই গণেশের দেহে কোনো অলংকার ছিল না। বেদ-পুরাণ এবং আরো অনেক সূত্রের সাহায্য নিয়ে দেখানো যায় গণেশ অনার্যদের দেবতা ছিল, সাধারণ জনগণের দেবতা ছিল - সেই থেকে এর নাম গণদেবতা। তারপর গণেশ একসময় আর্যদের কাছে পরাজিত হল, বাধ্য হয়ে বা লোভে পড়ে, ঘুষ খেয়ে বা যেভাবেই হোক আর্যদের পক্ষ হয়ে কাজ শুরু করল, কিংবা গণেশ তখনকার সময়ের যে অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া অনার্য জনগোষ্ঠীর নেতৃত্বে ছিল, তারাও ধীরে ধীরে আর্যদের সাথে মিলে গেল, গণেশের দেহ ঢেকে গেলো দামী অলংকারে... এভাবেই সাধারণ জনগণের দেবতা গণেশের জীবন পালটে গেলো আজকের ইনু-মেননদের মত - নাটকীয় উত্থান, বিপুল অর্থবৈভব, ধর্মের নিশ্চিন্ত 'সায়াতল'...

আদি জনগোষ্ঠীদের মধ্যে যেসব অনার্য যুদ্ধে হেরে গিয়েও আর্যদের কাছে মাথা নত করতে চায়নি, যুদ্ধজয়ী আর্যরা তাদের লিখিত ধর্মগ্রন্থে সেইসব অনার্যদের আখ্যায়িত করেছে অসুর-রাক্ষস-দৈত্য-দানব হিসেবে এবং এমনভাবে এদেরকে উপস্থাপনা করা হয়েছে, যা পড়ে আজকাল একজন খাঁটি অনার্যদের কাছেও মনে হবে, এদেরকে হত্যা করাই জায়েজ ছিল! রাবণ থেকে মহিষাসুর - সবাই এই অনার্যদের পূর্বপ্রজন্ম। ব্রেইনওয়াশটা এমনভাবে হয়েছে যে, আজ এই অনার্যদের কাছে আর্যরাই বেশি পূজিত... দুর্গার ত্রিশূল মহিষাসুরের বক্ষ বিদীর্ণ করে দিয়েছে, সেটা দেখে এরা পুলকিত হয়, দুর্গার নামে জয়ধ্বনি দেয়।

একই কথা প্রযোজ্য বাংলার মুসলমানদের বেলাতেও। বহিরাগতদের হাতে এদের বেশিরভাগের পূর্বপ্রজন্ম নিগৃহীত হয়েছিল। অথচ আজ সেই বহিরাগতদেরকেই এরা প্রাধান্য দেয় বেশি।

এসব দেখে প্রায়ই ভাবি, আমাদের সমস্যাটা আসলে কী!


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন