লিখেছেন নিলয় নীল
অনেক দিনের পরিশ্রমে একদল বিজ্ঞানী খুব উন্নত ও সমৃদ্ধ রোবট তৈরি করলো। এই রোবট কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এক অত্যাশ্চর্য আবিষ্কার, যে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই নিজের বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে কর্ম সম্পাদন করতে পারে। দিন দিন এই রোবটের কপোট্রনিক চিন্তাভাবনা মানুষের থেকে উচ্চতর হয়ে যেতে থাকলো এবং সে মানুষের থেকেও অনেক বেশি ক্ষমতাবান হয়ে গিয়ে রোবটাসুর হয়ে গেলো। রোবটাসুর নিজে নিজে তার সার্কিটগুলো পুনর্বিন্যাস করে এবং প্রোগ্রামের সমস্ত কিছু পরিবর্তন করে নিজের হাতে রাখলো, যার মাধ্যমে যে বিজ্ঞানীরা তাকে সৃষ্টি করেছিলেন তাদের আর ক্ষমতা থাকলো না রোবটাসুরকে ধ্বংস করার। রোবটাসুর নিজেকে অজেয় ও অমর ঘোষণা করে নির্বিচারে মানুষের ওপর অত্যাচার শুরু করলো। মানুষদের পৃথিবী থেকে বিতাড়িত করে রোবটিক দুনিয়া বানানোর পরিকল্পনা শুরু করলো।
এরকম অবস্থায় বিজ্ঞানীরা পড়লো মহা সমস্যায়, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ রোবট ইঞ্জিনিয়াররা মিটিং-এ বসলেন রোবটাসুরকে কিভাবে দমন করা যায় সেই ব্যাপারে। যেহেতু কোনো মানুষ বা কোনো অস্ত্রশস্ত্রের মাধ্যমে এই মহাপরাক্রমশালী রোবটাসুরের মৃত্যু ঘটবে না, তাই অবশেষে সিদ্ধান্ত হলো - একটি উন্নততর রোবট বানানোর, যার কাজই হবে এই মহাপ্রতাপশালী রোবটাসুরকে ধ্বংস করা। যেই কথা সেই কাজ, বিজ্ঞানীরা আরও সূক্ষ্মভাবে আরও উন্নত রোবট গুর্খা বানানোর কাজে মনোনিবেশ করলেন। আগের বারের রোবটাসুর তৈরির ভুলভ্রান্তি আরও ভালভাবে যাচাই করা হলো যাতে গুর্খা মানুষের নির্দেশের বাইরে যেয়ে গোলমাল না পাকিয়ে ফেলে।
রোবট তৈরি শেষে গুর্খাকে পাঠানো হল রোবটাসুরকে ধ্বংস করার জন্য। গুর্খাকে দেখে রোবটাসুর অট্টহাসি দিতে লাগলো। হু হা হা হা হা করে হাসতে হাসতে সে বললো, “একটা সামান্য ছোট রোবট যে কিনা মানুষের নির্দেশ মতো চলে, যার নিজেরই কোনো স্বাধীনতা নেই, সে এসেছে কিনা আমাকে ধ্বংস করতে!” এরপর গুর্খা ও রোবটাসুরে তুমুল রোবটিক ফাইট হলো এবং অবশেষে রোবটাসুর পরাজিত হলো।
ওপরের রোবটের গল্পটি পুরোপুরিই আমার মস্তিস্কনির্গত ছোট্ট একটা সাইন্স ফিকশন। এটি পড়ে আপনাকে যদি এই ২ রোবটের মধ্যে কাউকে ভক্তিশ্রদ্ধা করতে বলা হয় তাহলে আপনি কাকে ভক্তি করবেন? আমি হলে কিন্তু রোবটাসুরকেই ভক্তি করতাম। রোবটাসুরের সাহস, বীর্য, বুদ্ধি, ও জ্ঞান আমাকে মোহিত করেছে। আরেকটি ব্যপার হচ্ছে রোবটাসুরের স্বাধীন হবার আকাঙ্ক্ষা ও প্রচেষ্টা। অন্যদিকে গুর্খার স্বকীয় কোনো কৃতিত্ব নেই, সে শুধু মানুষের দিকনির্দেশনা পালন করে গেছে। তার সমস্ত যুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্র ও প্রোগ্রাম মানুষই যুগিয়েছে। গুর্খাকে মানুষ তার প্রয়োজনে সৃষ্টি করেছে, মানুষ তার প্রয়োজনে প্রশংসাও করেছে।
এই সাইন্স ফিকশনটা আমি নিয়েছি এক পৌরাণিক কাহিনী থেকে যে পৌরাণিক কাহিনী অনুসরণ করে আজও কিছু মানুষ তাদের আরাধ্য দেবীকে ভক্তিশ্রদ্ধা করে। আর কিছু সনাতনী প্রগতিশীলরা দেখান, তাদের ধর্মে দেবীর আরাধনা করে নারীকে কতো উচ্চ স্থানে জায়গা দিয়েছে!
আরে মশাই, দেবীর সৃষ্টিই তো হয়েছে পুরুষ দেবতাদের প্রয়োজনে। মহিষাসুরের যখন দেব, দানব, নরের হাতে মৃত্যু হবে না, তখন একজন অবলা নারীর প্রয়োজন হয়েছে, যা মহিষাসুর নিজেও কখনো ভাবে নি। ঐ নারীর জায়গায় কুত্তা, শূকরও সৃষ্টি করে তার হাতে অস্ত্র দিয়ে পাঠাতে পারতো দেবতারা, এটা দেবতাদের অসীম দয়া যে, তারা কুত্তা শুকোর রেখে নারীকে নির্বাচন করেছে।
ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরসহ অন্যান্য পুরুষ দেবতার তেজদীপ্ত জ্যোতিতে সৃষ্টি হয়েছিলো দুর্গা। এরপর দুর্গার হাতে একেক দেবতা তাদের একেক অস্ত্র তুলে দিয়ে দুর্গাকে শক্তির দেবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। সবশেষে দেবী দুর্গা যুদ্ধক্ষেত্রে এসে দেবতার প্রদত্ত শক্তি প্রয়োগ করেন। এতে দেবী দুর্গার কৃতিত্ব কী, আমি আজ পর্যন্ত বুঝতে পারলাম না।
পিতৃতন্ত্র তার প্রয়োজনে নারীকে দেবী বানিয়ে আরাধনা করতে পারে, আবার ছিনাল বানিয়ে ভর্ৎসনাও করতে পারে। যদিও দেবী আর ছিনালের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই, দুটিই পিতৃতন্ত্রের কাল্পনিক সৃষ্টি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন