লিখেছেন সেক্যুলার ফ্রাইডে
আর সব ধর্মের মতই হিন্দুধর্মও পুরুষপ্রধান ও পুরুষতান্ত্রিক।
হিন্দুধর্ম মূলত স্মৃতি- ও শ্রুতিনির্ভর, এবং স্মৃতি ও শ্রুতি মুলত দুই ধরনের: বৈদিক ও তান্ত্রিক।
হিন্দুদের মুল ধর্মগ্রন্থ বেদে প্রচলিত হোম ও যাগ যজ্ঞের আচার হল বৈদিক, আর এর বাইরে যে দেব ও দেবী, পূজাপদ্ধতি, জপ, পূজা প্রকরণ, সেটিই তন্ত্র।
লিঙ্গপূজা এ অঞ্চলে প্রচলিত ছিল মহেঞ্জোদারো এবং হরপ্পার সময় থেকেই; মানে বেদেরও আগে থেকে। মূলত এটি রাক্ষস প্রথা এবং বেদে একে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। কিন্তু যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আর্য আর অনার্য সংস্কৃতি ধীরে ধীরে সনাতন ধর্মে মিশেছে এবং এর সাথে মিল রেখেই পূজা পদ্ধতিরও বিবর্তন ঘটেছে। বৈদিক ও তান্ত্রিক পদ্ধতির পাশাপাশি উদ্ভব হয়েছে মিশ্র পদ্ধতির।
তাই বেদের উদাহরণ টেনে অনেকে একে লিঙ্গপূজা না বলার চেষ্টা করলেও এটি সুস্পষ্টভাবেই লিঙ্গপূজা।
আরেকটু যোগ করি:
শিব কিন্তু অনার্য দ্রাবিড় দেবতা; বেদে অনার্য শিব-এর কোনোই উল্লেখ নেই।
বেদে রুদ্র নামে দেবতা ছিলেন পশু সংহারের দেবতা আর অনার্য শিব ছিলেন পশু পালনের দেবতা। আর্য ও দ্রাবিড়দের মিশ্র সংস্কৃতির প্রভাবে রুদ্র ও শিব মিশে যায় এবং শিব প্রধান দেবতাদের একজন হয়ে ওঠেন।
সত্যম শিবলিঙ্গম সুন্দরম
শিবলিঙ্গের গল্পের পেছনে তিনটি ভার্শন পাচ্ছি...
১. হিন্দু অ্যাপোলোজিস্টদের সংস্করণ:
অথর্ববেদে একটি স্তম্ভের স্তব করা হয়েছে, যার শুরু বা শেষ নেই। আদি-অন্তহীন এই স্তম্ভ চিরন্তন ব্রহ্মের প্রতীক। এটিই, সম্ভবত, লিঙ্গপূজার উৎস। যদিও বৈদিক সাহিত্যে লিঙ্গপূজার কোনো নিদর্শন নেই; বিবেকানন্দসহ অনেকের মতে যূপস্তম্ভ বা হাঁড়িকাঠের সঙ্গে শিবলিঙ্গের যোগ রয়েছে। শিবলিঙ্গর সঙ্গে পুরুষাঙ্গের যোগ বৌদ্ধধর্মের পতনের পর কিছু অশাস্ত্রজ্ঞ ব্যক্তির মস্তিস্কপ্রসূত গল্প থেকে এসেছে বলে হিন্দুধর্মীয় এই ভার্শনটি দাবি করে।
২. খ্রিষ্টীয় ভার্শন:
গুস্তাভ ওপার্ট শালগ্রাম শিলা ও শিবলিঙ্গের উৎস সন্ধান করতে গিয়ে তাঁর গবেষণাপত্রে এগুলিকে পুরুষাঙ্গের অনুষঙ্গে সৃষ্ট প্রতীক বলে উল্লেখ করেছেন, যেগুলো অনার্য রীতি থেকে এসেছে। আবার, উইলিয়াম ওয়ার্ড বলেছেন লিঙ্গ "পুরুষাঙ্গের অনুষঙ্গে নির্মিত" এবং লিঙ্গপূজা "মানুষের চারিত্রিক অবনতির সর্বনিম্ন পর্যায়"; শিবলিঙ্গের প্রতীক "অত্যন্ত অশালীন এবং সাধারণের রুচির সঙ্গে মেলানোর জন্য এর পরিমার্জনা করা হয়েছে।"
৩. এনসাইক্লোপিডিয়া ভার্শন:
ব্রিটানিকা এনসাইক্লোপিডিয়ায় শিবলিঙ্গকে যৌন প্রতীক বলা হচ্ছে না। বলা হচ্ছে, এই "দিব্য আলোকস্তম্ভের প্রতীক, যার শুরু বা শেষ নেই" - এই ব্যাখ্যা, সম্ভবত, ভারতীয় প্রভাবে ব্রিটানিকায় স্থান পেয়েছে।
সচেতন নারীবাদী ব্যাখ্যা অবশ্য যথার্থভাবেই একে নারীর ওপর পুরুষের অধিকার, যোনির উপর শিশ্নের অধিকার হিসেবেই দেখেছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন