শনিবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৪

হোক সে পুরুষ অথবা নারী, তার জীবন নিয়ে ধর্ম কথা বলার কে?

লিখেছেন শিপার আহমেদ

ধর্মের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ হয়তো আমরা করতাম না, কিন্তু করতে হয় ধর্মে বিদ্যমান বর্বর কানুনগুলোর কারণে। ধর্মের এমন বর্বরতায় ভরপুর অনেক সুশাসন নামক কুশাসন নিয়ে শত প্রশ্ন করা যায়, আমি ধর্ম নিয়ে, বিশেষ করে ইসলাম ধর্ম নিয়ে, এমন অনেক প্রশ্ন করতে পারি, যেগুলোর উত্তর ধার্মিকদের পক্ষে দেওয়া অসম্ভব। কিন্তু সেটা করার সাহস হয় না এ জন্য যে, এই বাংলাদেশে চিন্তাশীল মানুষের চেয়ে ধর্মান্ধের সংখ্যা অস্বাভাবিক বেশি। আর এই ধর্মান্ধের দল কী করতে পারে, সেটা নিশ্চয়ই সবাই জানে। এতো কিছুর পরেও ব্লগ লিখি এই কারণেই যে, অনেক সাধারণ মানুষ ব্লগের লেখাগুলো পড়েন। এটাও এক প্রকার লড়াই, এটাও এক প্রকার সত্য প্রকাশ।

আমি কখনো ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য ব্লগ লিখি না, বরং সর্বপ্রকার সাধারণ মানুষকে বোঝাতে, জানাতে, বাস্তবতা মুখোমুখি দাঁড় করাতে চেষ্টা করি। এই প্ল্যাটফর্ম সর্বস্তরের মানুষের জন্য উন্মুক্ত, সবাই এই প্ল্যাটফর্মের লেখা পড়তে পারে। আর আমার লেখার বিষয়বস্তু কাউকে হেয় করার জন্য নয়, বরং তাকেই অন্যায় থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা। আমার কার্যক্রমে অনেকেই রাগান্বিত হন এবং মনে করেন আমার উদ্দেশ্য - স্রেফ ধর্মকে হেয় প্রতিপন্ন করা। তাদের ক্ষেত্রে বলা যায়, এরা ধর্মের মোহে পড়ে অন্ধ হয়ে গেছে, এরা আমার লেখার বিষয়বস্তু বিস্তারিত কোনো কিছুই বোঝার চেষ্টা করে না অথবা বুঝেও না বোঝার ভান করে। কারণ তারা তাদের ধর্মের আইন ও আনুগত্যে অন্ধবিশ্বাসী, এবং সব সময় তাদের ধর্মকেই সত্য এবং শান্তির পথ বলে আখ্যায়িত করে।

পুরুষ অথবা নারী - সবাই মানুষ। তার ওপরে কোনো পরিচয় গ্রহণযোগ্য নয়। প্রথম পরিচয় - মানুষ, তার পরে সবাই বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে গেছে, কেউ হিন্দু, কেউ মুসলিম, কেউ ইহুদি, কেউ খ্রিষ্টান, কেউ বৌদ্ধ। আর এভাবেই মানবজাতির একতাবোধ চলে গেছে। বিভজনটা এমনই যে, খ্রিষ্টানরা নিজেরাই হয়েছে হাজার ভাগে বিভক্ত, হিন্দুরাও একই, আর মুসলিমদের কথা কি বলবো! সেটা তো মোটামুটি সবাই জানেন।

তারা বিভিন্নভাবে ভাগ হয়েছে, এ নিয়ে কোনও মাথাব্যথা আমাদের নেই। কিন্তু অসুবিধাটা হয় তখন, যখন কারুর জীবনযাত্রা নিয়ে ধর্মের নাক-গলানো শুরু হয়। সে পুরুষ হোক বা নারী, জীবনটা তার, জীবনযাত্রাটাও তার; এখানে ধর্মের কী? নারী ও পুরুষ পারস্পরিক সম্মতিতে যৌনমিলন করছে, এখানে ধর্মের কী? ধর্ম এখানে তাকে পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড দেবার কে? গরমের তাপে হোক আর ইচ্ছে করে নারী বোরকা পরেনি, তাতে ধর্মের কী? ধর্ম তাকে ১০০ বার বেত্রাঘাত করার কে? এরকম অনেক প্রশ্ন আমি তৈরি করে ধার্মিকদের সামনে উপস্থাপন করতে পারি, কিন্তু করি না। কারণ এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবার ক্ষমতা এদের নেই, বরং তারা আমাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেবার পরিকল্পনা করতে পারে।

যেখানে এই জীবন আমার, সেখানে আমার ওপর আল্লাহর আইন জোর করে চাপানো হবে কেন? কেন আমি তার কথামতো চলবো? মানুষের এতো শ্রদ্ধা পেতে চায় সে কেন? সে এতো লোভী কেনো? সম্পদলোভী ডাকাত আর শ্রদ্ধালোভী আল্লাহর মধ্যে পার্থক্য কী? এখন হয়তো অনেকেই বলবেন, সম্পদলোভী ডাকাতরা স্বার্থ আদায় করতে না পারলে মানুষকে মেরে ফেলে। কিন্তু এটা, মনে হয়, আপনার জেনে রাখা উচিত যে, এই সম্পদলোভী ডাকাতের  থেকে আপনার আল্লাহ আরো বড় রাক্ষস। তার প্রশংসা না করলে শুধু মৃত্যুই নয়, দোজখে হাজার বার জ্বালিয়ে মারবে, আবার জীবিত করবে, আবার মারবে। সেক্ষেত্রে আমি ঈশ্বরের বদলে ঐ লোভী ডাকাত পাষাণটাকে কম খারাপ বলে মনে করি।

সর্বশেষ বলি, হোক সে পুরুষ অথবা নারী, এখানে ধর্মের নাক গলানোর কী?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন