লিখেছেন ক্যাটম্যান
কিছুদিন আগে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বর্বরতার প্রতিবাদে বাংলাদেশের অতি ঈমানদার মুমিনগণ আমেরিকা ও ইসরাইল সহ পশ্চিমা বিশ্বের সকল পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়েছিল। এমনকি মুমিনেরা ওই সকল পণ্যের তালিকাও উপস্থাপন করেছিল; যে-তালিকায় বাংলাদেশী পণ্যের নামও ছিলো। মজার বিষয় হলো, বাংলাদেশে কোনো ইসরাইলি পণ্য বাজারজাত হয় না। কারণ বাংলাদেশের সাথে ইসরাইলের কোনো প্রকার বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক চুক্তি নেই। নেই কোনো দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক সম্পর্ক। তারপরও বাংলাদেশী মুমিনগণ বাংলাদেশের বাজারে অজস্র পণ্যের ভীড়ে ইসরাইলি পণ্য খুজে পেয়েছিল।
পৃথিবীতে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক অসহযোগিতা আরোপের সংস্কৃতি নতুন কিছু নয়। সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ চরিতার্থ করার নিমিত্তে বাণিজ্যিক অসহযোগিতা আরোপের নীতি মধ্যযুগের আরব সমাজেও লক্ষ্য করা যায়। মুহম্মদের নবুয়ত প্রাপ্তির সপ্তম সনে মক্কার কুরায়শ নেতৃবৃন্দ পরামর্শ করে একটি চুক্তিপত্র প্রণয়ন করেছিল। চুক্তি অনুযায়ী কুরায়শ ও কুরায়শের মিত্ররা মুহম্মদ ও তার পক্ষাবলম্বনকারীদের প্রতি অর্থনৈতিক ও সামাজিক অসহযোগিতা আরোপের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে । এই ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়ে সকল মক্কাবাসীদের নিকট হতে তখন শপথ নেওয়া হয়; বিষয় তিনটি ছিল নিম্নরূপ:
১. কোনো মুসলমানের সাথে কেউ বৈবাহিক সম্পর্ক করবে না।
২. তাদের নিকট কেউ কোনো কিছু বিক্রয় করবে না।
৩. তাদের নিকট হতে কেউ কোনো কিছু ক্রয় করবে না।
উক্ত পূর্ণাঙ্গ চুক্তিপত্রটি লিখে কাবা মন্দিরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। মজার বিষয় হলো, মক্কার মুশরিক পৌত্তলিকগণ যে পন্থা অবলম্বন করে মুহম্মদ ও তার সম্প্রদায়ের জীবন-জীবিকাকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভাবে দুর্বিষহ করে তুলতে চেয়েছিল; সেই একই পন্থা অবলম্বন করে বাংলাদেশের অতি মুমিন-মুসলমানগণ এখন পশ্চিমা বিশ্বকে বেকায়দায় ফেলতে চেয়েছে । ওই সকল মুমিন কথায় কথায় নবী মুহম্মদের সুন্নতি তরিকা পালনের জিগির তুললেও এক্ষেত্রে তারা সুন্নত বর্জন করে নবীর শত্রু মুশরিক কুরায়শদের আদর্শ অনুসরণ করেছে।
তবে পণ্য বর্জনের ক্ষেত্রে যে-সব বিষয়ের প্রতি মুমিনগণের সচেতন দৃষ্টি কাম্য ছিল, দুঃখজনক হলেও সত্য এই যে, অতি মুমিনগণ সেই সব বিষয়েই সচেতন ভাবে অচেতন থাকার কৌশল গ্রহণ করেছিল। যেমন আরবের মুনাফিক বাদশাহ, যে কিনা সহিহ ইসলাম সমর্থিত খেলাফতের আদর্শকে বাম পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে; তার মত মুনাফিক বাদশাহ ও মুনাফিকির রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে মুসলিম জাহানের কোনো মুসলমানকে প্রতিবাদ করতে দেখা যায় না। কারণ পৃথিবীতে এখন আর কোন মুসলিম জাহান নেই। সমস্ত মুসলিম জাহান মুনাফিক জাহানে পরিণত হয়েছে। মুনাফিক জাহান জুড়ে শুধু মুসলিম বেশধারি মুনাফিক আর মুনাফিক। তাই তারা ভুলেও তাদের মুনাফিক ভগবান সৌদি বাদশাহর বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ করে না।
জর্ডান, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের অর্থ সহায়তা নিয়ে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় বর্বরতা চালাচ্ছে। অথচ এ ব্যাপারে নবীপ্রেমিক মুনাফিক মুসলমানগণ নির্বাক। তারা আজ নিজেদের মুনাফিকির লজ্জা ঢাকতে পশ্চিমা বিশ্বের স্নো-পাউডার, শ্যাম্পু, কনডমের মতো পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। অথচ সত্যিকার অর্থেই যদি কোনো মুসলিম জাহান থেকে থাকে, এই মুহূর্তে তাদের কর্তব্য হওয়া উচিত ছিল মুনাফিক সৌদি বাদশাহ ও তার মুনাফিকির রাজতন্ত্র কবলিত আরবের হজ্জ্বব্রত বর্জন করা। যেমন করে নবী মুহম্মদ মুশরিক-পৌত্তলিক কবলিত মক্কার হজ্জ্বব্রত বর্জন করে মদিনায় ফিরে গিয়েছিলেন।
আর নিঃসন্দেহে হজ্জ্ব সৌদি আরবের একটি লাভজনক পণ্য; যা প্রাক-ইসলামি কাল থেকে আরবের পৌত্তলিক সমাজ সফল ব্যবসা হিসেবে চর্চা করে আসছিল। বাংলাদেশে বর্তমানে মহাসমারোহে হজ্জ্ব পণ্যের মেলা বসে; যা প্রমাণ করে হজ্জ্বসেবা একটি আধ্যাত্মিক পণ্য, যা অর্থের বিনিময়ে অর্জন করা যায়। মুমিনগণ পণ্য বর্জনের মাধ্যমে যদি অসহায় ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়াতেই চায়, তাহলে পূর্বাহ্নেই তাদের কর্তব্য হওয়া উচিত আরবের খেজুর বর্জন করা। অথচ মুনাফিক আরবদের উত্পাদিত পচা খেজুর না হলে মুনাফিক মুমিনদের পবিত্র ইফতার সম্পন্ন হয় না। মুনাফিকতন্ত্রে পরিচালিত আরব দেশসমূহের এয়ারলাইন্স বা বিমান সেবা বর্জন করা। তাদের উট, দুম্বার মাংস বর্জন করা। এমনকি তাদের খনিজ তেল বর্জন করা। কিন্তু সত্যিকার অর্থে একজন মুমিনও কি রয়েছে পৃথিবীতে, যে ঈমানের দাবি প্রতিষ্ঠায় মুনাফিকতন্ত্রী আরব জাহানের পণ্য বর্জন করে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবে?
সারা বিশ্বের কথা না-হয় বাদ দিলাম; বাংলাদেশে কত ইসলামি রাজনৈতিক সংগঠন, সংঘ, মসজিদ-মাদ্রাসা রয়েছে ; তারা কি কখনও ওই সকল মুনাফিকতন্ত্রী আরব বিশ্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সামান্যতম যোগ্যতা রাখে?
নিঃসন্দেহে একমাত্র উত্তর হবে ' না '; কারণ তারা সকলেই মুনাফিকতন্ত্রী আরব জাহানের উচ্ছিষ্টভোজী কুকুর।
মুনাফিক আরব জাহানের শিশ্নলেহন তাদের অন্যতম ঈমানি কর্তব্য। মুনাফিক আরব জাহানের দান খয়রাতের বদৌলতেই তাদের ইসলামি সংগঠন, সংঘ, মসজিদ-মাদ্রাসা চলে। তারা সাচ্চা মুনাফিক। তাদের মসজিদ-মাদ্রাসায় পয়দা হয় সাচ্চা মুনাফিক। তাই দিকে দিকে আজ শুধু মুসলিম বেশধারী মুনাফিকদের চিত্কার ও শিত্কার ধ্বনি শোনা যায়। আর মুনাফিক কখনও মুনাফিক প্রভু আরব বিশ্বের পণ্য বর্জনের হিম্মত রাখে না। তারা নিজেদের মুনাফিকীর লজ্জা ঢাকতে শুধু পশ্চিমা বিশ্বের অন্তর্বাস নিয়ে কামড়া-কামড়ি করতে ব্যাপক উৎসাহ বোধ করে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন