হুমায়ুন আজাদের 'আমার অবিশ্বাস' নামের বইটা পড়তে শুরু করেছিলাম বেশ আগে। ধর্মকারী তখন স্থগিতাবস্থায়। কিন্তু কিছুদূর পড়ার পরে লক্ষ্য করলাম, বইটিতে উদ্ধৃতিযোগ্য ছত্রের ছড়াছড়ি। পড়া তখনই থামিয়ে দিয়ে স্থির করলাম, ধর্মকারী আবার সচল হলে ধর্মকারীর পাঠকদের (অনেকেরই বইটা পড়া আছে, জানি, তবুও...) সঙ্গে টাটকা পাঠমুগ্ধতা ভাগাভাগি করবো। তাই পড়তে শুরু করলাম আবার। বিসমিল্যা।
৯৮.
বিধাতাকল্পনায় হিংস্রতার পর বড়ো ক'রে তোলা হয়েছে তাঁর স্তুতিপ্রিয়তা। সব ধর্মেই বিধাতার প্রিয় স্তাবকতা, স্তুতি; তিনি পছন্দ করেন নিরর্থক বন্দনা; প্রহরে প্রহরে তাঁর বন্দনা করতে হয়, নইলে তিনি সুখী হন না। তাঁকে স্তুতি করার জন্যে রচিত হয়েছে মানবভাষার বিপুল বাক্যসম্ভার। ওই স্তবকতা বা বন্দনার শ্লোকগুলো খুব উৎকৃষ্ট নয়।... মহাজগতের মতো অনন্ত অসীমের স্রষ্টা যিনি, তিনি কী ক'রে উপভোগ করতে পারেন তুচ্ছ মানুষের তুচ্ছ স্তাবকতা, তুচ্ছ স্তুতি; কী ক'রে তিনি সুখী হ'তে পারেন এই সব তুচ্ছ কানাকড়িতে?
৯৯.
জগতে সুষমা আর মহৎ লক্ষ্য বা মহাপরিকল্পনা দেখা বিশ্বাসীদের একটি দুরারোগ্য ব্যাধি।... সমাজ ও রাষ্ট্রের দিকে তাকালেই চোখে পড়ে এমন সব অশ্লীল ঘটনা, যা কোনো মহাপরিকল্পনার ফল নয়।
১০০.
শুধু আদিম নয়, আধুনিক সব ধর্মেই রয়েছে অলৌকিক শক্তিগুলোকে তৃপ্ত করার নানান রীতি। কিন্তু যদি বিশ্বাস করি যে রয়েছে অলৌকিক শক্তি, যারা নিয়ন্ত্রণ করে জগত, আর আমরা যদি তাদের কাছে চাই সুযোগসুবিধা, তার অর্থ দাঁড়ায় প্রাকৃতিক নিয়ম শিথিল করা সম্ভব; প্রার্থনা করে বা পশুবলি দিয়ে ওই শক্তিদের সাহায্যে বদলে দিতে পারি প্রাকৃতিক নিয়ম।
১০১.
প্রার্থনায় অবশ্য কখনোই কাজ হয় না, নির্বোধেরা শুধু একটু সাময়িক শান্তি পায়।
১০২.
প্রার্থনা - আত্মসম্মানবোধহীন দুর্বলের লোলুপবাণীবিন্যাস।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন