বুধবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৪

বৌদ্ধশাস্ত্রে পিতৃতন্ত্র: নারীরা হল উন্মুক্ত মলের মতো দুর্গন্ধযুক্ত - ১৫


স্বামী যে তার স্ত্রীকে অবহেলা করবে এটাই স্বাভাবিক, স্ত্রীর সবচেয়ে বড় সাধনা হচ্ছে স্বামীর মন রক্ষা করা। অবশ্যই স্বামীর অধিকার আছে তার স্ত্রীকে সন্দেহ করার, কিন্তু স্বামীর সেবা করাই স্ত্রীর একান্ত কর্তব্য, পতিদেবতাকে সন্দেহ করার কোনো অধিকার স্ত্রীর নেই। 

না, এগুলো আমার কথা নয়, ধর্মের কথা। কমবেশি এই ধরণের নীতিকথা আমাদের প্রতিটা ধর্মই শেখায়। বৌদ্ধধর্মও তার ব্যতিক্রম নয়। 

বৌদ্ধশাস্ত্র ত্রিপিটকের জাতকে এই ধরণের নির্দেশনা রয়েছে প্রচুর। এখন আমরা আলোচনা করবো ৫১৯ নম্বর জাতক, সম্বুলা জাতক নিয়ে। 

এই জাতকের অতীতবস্তুতে বলা হয়েছে, বারাণসীরাজ স্বস্তিসেনের সম্বুলা নামে এক স্ত্রী ছিলেন যিনি অতীব সৌন্দর্যবতী রূপে-গুণে অদ্বিতীয়া ছিলেন। স্বস্তিসেন কুষ্ঠরোগাক্রান্ত হলে এবং চিকিৎসায় প্রতিকার না পেলে গোপনে বনবাসে যাত্রা করেন। এই যাত্রায় সম্বুলা তার সেবাশুশ্রূষার জন্য সহযাত্রী হন। একদিন একা একা বনের মধ্যে দিয়ে সম্বুলার চলন দেখে এক দানব আকৃষ্ট হয়। দানব তার সতীত্ব নষ্ট করতে চাইলে তখন দৈববাণী হয়: 
সুপণ্ডিতা, জিতেন্দ্রিয়া, ইনি অতি যশস্বিনী
অগ্নিসমা, উগ্রতেজা, রমণীর শিরোমণি।
এমন সতীকে করিস যদি ভক্ষণ
করিব আমি তোর শির বিদারণ।
এ পতিব্রতার দেহ স্পর্শে তোর কলুষিত
করিস না, ছাড় শীঘ্র, চাস যদি নিজ হিত। 
এরপর দানব সম্বুলাকে ছেড়ে দিলো, সেখান থেকে কোন রকমে বেঁচে গৃহে ফিরে স্বামীকে না দেখতে পেয়ে সম্বুলা কাঁদতে শুরু করেন। পরে স্বামী স্বস্তিসেন এলে নিজের বিলম্বের প্রকৃত কারণ এড়িয়ে অন্য কারণ বলেন সম্বুলা। কিন্তু এই বিলম্বের কারণ স্বামীকে সন্তুষ্ট করতে পারে না। স্বামী স্বস্তিসেন বলেন:
রমণীজাতির বুদ্ধি নানা দিকে খেলে
চৌরী তারা, সত্য সদা দুই পায়ে ঠেলে।
উদকে মৎস্যের গতি বুঝা নাহি যায়
সেইরুপ স্ত্রী চরিত্র বুঝা বড় দায়। 
স্বস্তিসেনের এ প্রকার অবিশ্বাসের পরেও সম্বুলা স্বামীসঙ্গ পরিত্যাগ করে না। সে আপন সত্যবলে স্বামীসেবা করে যাবার প্রতিজ্ঞা করে। স্বস্তিসেন আবার বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে সে নিজের সতীত্ব প্রমাণের জন্য স্বস্তিসেনের শরীরে পানি ঢেলে দিলে স্বস্তিসেন সুস্থ হয়ে উঠে। কিন্তু এতো কিছুর পরও স্বস্তিসেন তার স্ত্রীকে অবহেলাই করে গেছেন। স্বামীর অবহেলাই যেন নারীর নিয়তি!

(চলবে) 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন