লিখেছেন গোলাপ
পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩ > পর্ব ১৪ > পর্ব ১৫ > পর্ব ১৬ > পর্ব ১৭ > পর্ব ১৮ > পর্ব ১৯ > পর্ব ২০ > পর্ব ২১ > পর্ব ২২ > পর্ব ২৩ > পর্ব ২৪ > পর্ব ২৫ > পর্ব ২৬ > পর্ব ২৭ > পর্ব ২৮ > পর্ব ২৯ > পর্ব ৩০ > পর্ব ৩১ > পর্ব ৩২ > পর্ব ৩৩ > পর্ব ৩৪ > পর্ব ৩৫ > পর্ব ৩৬ > পর্ব ৩৭ > পর্ব ৩৮ > পর্ব ৩৯> পর্ব ৪০ > পর্ব ৪১ > পর্ব ৪২ > পর্ব ৪৩ > পর্ব ৪৪ > পর্ব ৪৫ > পর্ব ৪৬ > পর্ব ৪৭ > পর্ব ৪৮ > পর্ব ৪৯ > পর্ব ৫০ > পর্ব ৫১ > পর্ব ৫২ > পর্ব ৫৩ > পর্ব ৫৪ > পর্ব ৫৫ > পর্ব ৫৬ > পর্ব ৫৭ > পর্ব ৫৮ > পর্ব ৫৯ > পর্ব ৬০
স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ওহুদ যুদ্ধে কী রূপে গুরুতর আহত হয়েছিলেন তার আলোচনা আগের পর্বে করা হয়েছে। ওহুদ যুদ্ধের আগে কোনো মক্কাবাসী কুরাইশ মুহাম্মদকে কখনো কোনো গুরুতর শারীরিক আঘাত করেছেন এমন ইতিহাস আদি মুসলিম ঐতিহাসিকদের বর্ণনায় কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না (পর্ব-৬০)।
আক্রান্ত মুহাম্মদ তাঁর অনুসারীদের কাছে তাঁর জীবন রক্ষার আবেদন করেন। বেহেশতের প্রলোভন দিয়ে তিনি তাদের এই বলে আহ্বান করেন, কেউ তার "জীবন বিক্রি"করতে রাজী আছে কি না!
মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের (৭০৪-৭৬৮ সাল) বর্ণনা:
‘পণ্ডিত মুহাম্মদ বিন আমর হইতে প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে আল-হুসাইন বিন আবদুল রহমান বিন আমর বিন সা'দ বিন মুয়াদ আমাকে [মুহাম্মদ ইবনে ইশাক] জানিয়েছেন:
যখন শত্রুরা তাঁকে পরিবেষ্টিত করে, আল্লাহর নবী বলেন,
"আমাদের জন্য কে তার জীবন বিক্রি করবে?
যিয়াদ বিন আল-সাকান ও তার সাথে আরও পাঁচ জন আনসার (আদি মদিনা-বাসী মুহাম্মদ অনুসারী) উঠে দাঁড়ান। (অন্যান্যরা বলে যে, তিনি ছিলেন উমারা বিন ইয়াজিদ বিন আল-সাকান।)
আল্লাহর নবীকে রক্ষার জন্য তারা একের পর এক যুদ্ধ করতে থাকেন, যতক্ষণ না একমাত্র যিয়াদ (অথবা উমারা) ছাড়া সকলেই নিহত হন এবং তিনি হন বিকলাঙ্গ।
সেই মুহূর্তে কিছু সংখ্যক মুসলমান পুনরাগমন করেন এবং তাঁর কাছ থেকে শত্রুদের দূরে তাড়িয়ে দেন। আল্লাহর নবী তাকে [যিয়াদ অথবা উমারা] তাঁর কাছে নিয়ে আসার হুকুম জারি করেন ও তার মাথাটি তাঁর পায়ের ওপর হেলনা দিয়ে ধরে রাখেন। আল্লাহর নবীর পায়ের ওপরেই তার মৃত্যু ঘটে।
আল্লাহর নবীকে রক্ষার জন্য আবু দুযানা তার শরীর ঢাল স্বরূপ ব্যবহার করেন। তিনি আল্লাহর নবীর শরীরের ওপর ঝুঁকে থাকেন ও অনেকগুলো তীর তার পিঠে বিদ্ধ হয়।
আল্লাহর নবীকে রক্ষার জন্য সা'দ বিন আবু ওয়াকাস তার তীর নিক্ষেপ করতে থাকেন।
তিনি বলেছেন, "আমি দেখেছিলাম যে তিনি [মুহাম্মদ] আমার হাতে তীরগুলো এগিয়ে দিচ্ছেন এবং বলছেন, 'নিক্ষেপ করো, আশা করি আমার বাবা ও আমার মা যেন হয় তোমার বন্দিত্বমোচনের বাহন (Shoot, may my father and my mother be your ransom); এমনকি তিনি আমাকে 'এটা নিক্ষেপ করো' বলে এমন একটি তীর হাতে দেন যার কোন মাথা ছিল না।"
আসিম বিন উমর বিন কাতাদা বলেন যে, আল্লাহর নবী তাঁর ধনুকের তলা ভেঙ্গে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তীর নিক্ষেপ করতে থাকেন।
কাতাদা বিন আল-নুমান তা নিয়ে রেখে দেন। ঐ দিন তার (কাতাদা) চোখ এতই জখম হয়েছিল যে, তা বের হয়ে এসেছিল তার গালের উপর। আসিম আমাকে বলেছেন যে আল্লাহর নবী তাঁর হাত দিয়ে সেই চোখ আবার যথাস্থানে পুনঃস্থাপন করেন এবং তারপর থেকে সেটি হয় সবচেয়ে ক্ষমতাসম্পন্ন চোখ। [1] [2]
আল্লাহর নবীকে রক্ষার জন্য মুসাব বিন উমায়ের যুদ্ধ চালিয়ে যান যতক্ষণে তাকে হত্যা করা হয়। যে ব্যক্তিটি তাকে হত্যা করে তার নাম ইবনে কামিয়া আল-লেইথি, যে মনে করেছিল যে সেই [মুসাব] ছিল আল্লাহর নবী। তাই সে কুরাইশদের কাছে ফিরে আসে ও বলে, "আমি মুহাম্মদকে হত্যা করেছি।"
মুসাব খুন হওয়ার পর, আল্লাহর নবী যুদ্ধের ঝণ্ডাটি আলীর হাতে দেন। আলী ও অন্যান্য মুসলমানেরা যুদ্ধ চালিয়ে যায়। [3]
>>> মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের এই বর্ণনায় আমরা জানতে পারছি যে বিপন্ন মুহাম্মদ তাঁর নিজের জীবন রক্ষার প্রয়োজনে তাঁর অনুসারীদের "বেহেশতের প্রলোভনে"উজ্জীবিত করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন। আর তাঁর অনুসারীরা তাদের নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে নবীকে করেছিলেন রক্ষা।
মুহাম্মদের ব্যক্তিমানস জীবন-ইতিহাসের (Psychobiography) এই পর্যায়ে একটি প্রাসঙ্গিক বিষয়ের সংক্ষিপ্ত আলোচনার (বিস্তারিত 'হিজরত' পর্বে) বিশেষ প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। আর তা হলো:
“মক্কা থেকে পালিয়ে আসার সময় (স্বেচ্ছানির্বাসন - পর্ব: ৪১-৪২) মুহাম্মদ তাঁর নিজের জীবন রক্ষার প্রয়োজনে তাঁর চাচাত ভাই আলী ইবনে আবু তালিবকে কী রূপে মৃত্যুর মুখে স্থাপন করে চুপি চুপি রাতের অন্ধকারে পালিয়ে এসেছিলেন!”
মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ সাল), আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ সাল) ও মুহাম্মদ ইবনে সা'দের ((৭৮৪-৮৪৫ সাল) বর্ণনার সংক্ষিপ্তসার:
“জিবরাইল এসে মুহাম্মদকে সতর্ক করে দিয়েছিল” এই বলে যে, তিনি যেন রাতে তাঁর বিছানায় শয়ন না করেন।
কারণ?
কুরাইশরা তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করেছে। তাঁকে জানানো হয়েছিল যে, প্রতিটা কুরাইশ গোত্রের মধ্য থেকে ‘হৃষ্ট-পুষ্ট’-সবল-সুঠাম বলিষ্ঠ জোয়ানরা মুহাম্মদের বাড়ির দরজার সামনে ‘মুহাম্মদের’ ঘুমের অপেক্ষায় আছে! মুহাম্মদ ঘুমালে তারা ঘরে ঢুকে একযোগে তাঁকে আক্রমণ ও হত্যা করবে!
মুহাম্মদ এই সংবাদ জানার পর লক্ষ্য করেন যে, সেই রাতে কুরাইশরা তাঁর বাড়ীর চারিপাশে ঘুরাঘুরি করছে।
এমত পরিস্থিতিতে,
মুহাম্মদ তাঁর নিজের জীবন রক্ষার প্রয়োজনে কুরাইশদের ধোঁকা দেয়ার জন্য তাঁর চাচাতো ভাই আলীকে নির্দেশ দেন, যেন সে তাঁর (মুহাম্মদের) ব্যবহৃত কম্বলটি দিয়ে চোখ-মুখ ঢেকে বিছানায় শুয়ে থাকে;যাতে কুরাইশরা বিভ্রান্ত হন এই ভেবে যে মুহাম্মদ বিছানায় শুয়ে আছে। আর সেই সুযোগে মুহম্মদ নিরাপদে পলায়ন করতে পারেন। [4] [5][6]
(Then the Gabriel came to the Messenger of God and said, “Do not spend this night in the bed in which you usually sleep”.
When the first third of the night had gone past, the young men gathered at his door and waited for him to go to sleep so that they could fall upon him.
When the Messenger of God saw them there he said to Ali b Abu Talib, ‘Sleep on my bed and wrap yourself up in my green Hadrami cloak; nothing unpleasant will be fall you from them”.
The messenger of god used to sleep in that cloak when he went to bed. --- Then the messenger of God went off ---) [4] [5][6]
আলীকে এমনই বিপদজনক অবস্থায় মৃত্যুর মুখে ফেলে রেখে মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ সেই রাতে তাঁর পলায়নপর্ব সম্পন্ন করেন!
মুহাম্মদের চাদর মুড়ি দিয়ে চোখ-মুখ ঢেকে মুহাম্মদের বিছানায় আলীর শুয়ে থাকায় কথিত ঘাতকদের বিভ্রান্ত করে মুহাম্মদের পলায়ন পর্ব নির্বিঘ্ন হয় সত্যি; কিন্তু সেই একই বিভ্রান্তিতে ঘাতকের হাতে মুহাম্মদের পরিবর্তে আলীর খুন হওয়ার সম্ভাবনা নিশ্চিত হয় নিঃসন্দেহে।
নিজের জীবন রক্ষার প্রয়োজনে বিভিন্ন কলা-কৌশলে অন্য একজন মানুষকে সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া কোন ব্যক্তিকে কি "অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী (৬৮:৪)", কিংবা "বিশ্ববাসীর রহমত (২১:১০৭)", কিংবা, "মানব জাতির ত্রাণকর্তা (৩৪:২৮)" ইত্যাদি বিশেষ বিশেষণে ভূষিত করা যায়?
সেই ব্যক্তিটি কী হতে পারেন পৃথিবীর সকল মানুষের একমাত্র অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব?
(চলবে)
তথ্যসূত্র ও পাদটীকা:
[1] “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ৩৮০
[2]“তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৭,ইংরেজী অনুবাদ: W. Montogomery Watt and M.V. McDonald, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭, পৃষ্ঠা (Leiden) ১৪০৩-১৪০৪
[3]Ibid মুহাম্মদ ইবনে ইশাক, পৃষ্ঠা- ৩৭৭
[4] Ibid মুহাম্মদ ইবনে ইশাক, পৃষ্ঠা- ২২২
[5] “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৬, ইংরেজী অনুবাদ: W. Montogomery Watt and M.V. McDonald, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, Albany, ১৯৮৮; ISBN 0-88706-707-7; পৃষ্ঠা (Leiden) ১২২০-১২৩৩ http://books.google.com/books?id=taeamiOj2nYC&printsec=frontcover&source=gbs_ge_summary_r&cad=0#v=onepage&q&f=false
[6] মুহাম্মদ ইবনে সা'দ (৭৮৪-৮৪৫ খৃষ্টাব্দ) - লেখক: “কিতাব আল-তাবাকাত আল-কাবির”, অনুবাদ - এস মইনুল হক, প্রকাশক- কিতাব ভবন, নয়া দিল্লি, সাল ২০০৯ (3rd Reprint). ISBN 81-7151-127-9 (set). ভলুউম ১, পৃষ্ঠা ২৬৩-২৬৪
http://kitaabun.com/shopping3/product_info.php?products_id=4170
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন