লিখেছেন নিলয় নীল
পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩ > পর্ব ১৪ > পর্ব ১৫
পুত্রসন্তান জন্ম দেয়াই নারীর অভীষ্ট লক্ষ্য। কারণ সংসারে স্থায়ী হতে হলে পুত্রসন্তানের মাতা হিসেবেই নারীর গুরুত্ব সর্বাধিক। পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারীও নিজে গর্ববোধ করে, যখন সে পুত্রসন্তানের জন্মদান করে। সমাজে পুত্রের মাতা হিসেবে একটু হলেও মূল্যায়ন পায় নারীরা। বিশেষ করে হিন্দুধর্ম ও বৌদ্ধধর্মে পুত্রসন্তানের মাতা হিসেবে নারীকে একটু বেশী মূল্যায়ন করার অনেক কাহিনী শোনা যায়।
এখন আমরা আলোচনা করবো বৌদ্ধশাস্ত্রের ত্রিপিটকের অন্তর্গত ৫৩১ নম্বর জাতক নিয়ে। কুশ জাতক নামে এই জাতক থেকে বেশ কিছু সত্য উদ্ধার হয়। এই জাতক থেকে জানা যায়, কুশাবতী নগরে ইক্ষবাকু নামে রাজার ষোল হাজার অন্তঃপুরচারিণী (স্ত্রী) ছিল। এদের মধ্যে শীলবতী নামে এক নারী অগ্রমহিষী (প্রধান স্ত্রী) ছিলেন। কিন্তু রাজার এতো স্ত্রী সত্ত্বেও কোনো পুত্র ছিল না, এতে প্রজারা নিজেরাই বিধান দিতে এগিয়ে আসে।
প্রজারা জানায়, রাজভবনের কিছু নারীকে নগরে উন্মুক্ত করে দেয়া হোক, যাতে তারা অবাধে যৌনমিলনের মাধ্যমে গর্ভবতী হয়ে পুত্রসন্তান লাভ করতে পারে। প্রজাদের এই কথামতো রাজভবনের কিছু সংখ্যক রানীকে সাতদিন পর পর বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করে নগরে উন্মুক্ত করা হতো। নারীরা নগরে অবাধে যৌনসংসর্গে লিপ্ত হতো, রাজভবনে ফিরে আসার পর রাজা তাদের পুত্র গর্ভধারণ বিষয়ে প্রশ্ন করতো, কিন্তু তারা কেউই গর্ভবতী হয়নি।
এরপর প্রজারা আবার অভিযোগ করলে রাজা জানান যে, অনেক নারীকে নগরে পুত্রসন্তান লাভের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে, কিন্তু তারা কেউ পুত্রবতী না হলে আমার কী করার আছে? তখন বিজ্ঞ প্রজারা বিধান দিলো, এই স্ত্রীলোকেরা পুণ্যবতী নয়, তাই পুত্র লাভের অযোগ্যা। এখনো পুণ্যবান অগ্রমহিষী (প্রধান স্ত্রী) শীলবতী বাকি রয়েছেন। তাকেও নগরে পুরুষ দ্বারা পুত্রসন্তান গর্ভবতী করার জন্য প্রেরণ করা হোক।
অবশেষে প্রজাদের কথা মেনে নিয়ে রাজা অগ্রমহিষীকে নগরে যৌনসংগমের জন্য পাঠাতে রাজি হয়। এটা জানার পর থেকে অগ্রমহিষী শীলবতী খুব কান্নাকাটি করতে শুরু করে। তখন কেউ যেন শীলবতীর শীলতেজ ভঙ্গ করতে না পারে, সেজন্য বোধিসত্ত্ব (বোধিসত্ত্ব সম্পর্কে একাদশ পর্বে বিস্তারিত আলোচনা করেছি) ব্রাহ্মণ বেশে অগ্রমহিষীকে বাচ্চা উৎপাদনের জন্য গ্রহণ করেন।
ব্রাহ্মণের নিকট পুত্রবর প্রার্থনা করলে শীলবতীকে দুই ধরণের পুত্রের মধ্যে যে কোনো একটি গ্রহণ করতে বললেন বোধিসত্ত্ব, প্রথমত প্রজ্ঞাবান কিন্তু রূপহীন, দ্বিতীয়ত রূপবান কিন্তু প্রজ্ঞাহীন। শীলবতী প্রজ্ঞাবান পুত্রই কামনা করলো। তখন অলৌকিক কৌশলে শীলবতীকে শয্যায় শায়িত করে অঙ্গুলি দ্বারা নাভি স্পর্শ করে গর্ভবতী করালেন। এভাবেই পুত্রসন্তান লাভ করে শীলবতীর মর্যাদা বেড়ে গেলো।
প্রত্যেকটা ধর্মই নিজেকে বিজ্ঞানময় দাবি করলেও ভুয়া অলৌকিকতায় ভরপুর। অপেক্ষাকৃত যুক্তিবাদী ধর্ম হিসেবে পরিচিত বৌদ্ধধর্মেও সেই হাস্যকর অলৌকিকতাই পাই আমরা। একবার চিন্তা করে দেখুন, আঙুল দিয়ে গর্ভবতী করা, তাও আবার নাভিতে! উপরের জাতক কাহিনী থেকে এ বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, যৌনতার ক্ষেত্রেও নারীর নিজস্ব কোনো পছন্দ থাকবে না, প্রয়োজনে পিতৃতন্ত্র যেখানে যৌনসংসর্গের জন্য পাঠাবে, সেখানেই তাকে যেতে হবে।
(চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন