লিখেছেন নিলয় নীল
উম্মে কুলসুমকে লইয়া সহিভাবে পার্কে বসিয়া মহব্বত করিতেছি। উম্মে কুলসুম বোরকা পরিয়া আমার সহিত দেখা করিতে আসিয়াছে। আমি কুলসুমের হাতমোজা খুলিয়া তাহার হস্তটা আমার হস্তে তুলিয়া লইলাম। কুলসুম আবার বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, কীভাবে ইসলামসম্মত ফ্রেম করিতে হইবে, সে সম্পর্কে আমাকে বয়ান দিতেছিলেন।
উম্মে কুলসুম বলিতেছিলেন, "ইসলামে ফ্রেম হারাম নয়, বরং ফ্রেম ফবিত্র। আদম হাওয়ার ফ্রেমের ফলেই তো আমাদের আগমন। মা-বাবার ফ্রেমের মাধ্যমেই তো আমাদের জন্ম। ফর্দা করিয়া ফ্রেম খারাপ খিছু নহে।"
আমার তাহার বয়ানের দিকে এক্কেবারেই মনঃসংযোগ নাই, আমি তখন উম্মে কুলসুমের কালো বোরকার মধ্যে ফর্শা নরম তুলতুলে হস্ত ধরিয়া গবেষণায় নিমগ্ন। উম্মে কুলসুম বলিলো, "এখানে কিচ্ছুই হইবে না চলেন আমার বাসায় চলেন, বাসায় আজ কেউ নাই, ওখানে নিরিবিলিতে আপনাকে ওয়াজ শুনাইবো।" আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হইয়া গেলাম।
অগত্যা উম্মে কুলসুমের সহিত তাহার বাটিতে উপস্থিত হইলাম। উম্মে কুলসুম আমার জন্য কফি প্রস্তুত করিতে উদ্যত হইলে আমি তাহাকে নিবারিত করিলাম। উম্মে কুলসুম আমার ফাশে বসিলো, কাসে আসিলো, আরও কাসে আরও...
আমি উম্মে কুলসুমের মাঝে ডুবিলাম, উম্মে কুলসুম আমার মাঝে ডুবিলো। কিছুক্ষন ঠোঁটে ঠোঁট রাখিয়া এইভাবে ডুবিয়া থাকিয়া অতঃপর সজ্ঞান হইলো। "ছিঃ ছিঃ ছিঃ! আমি ইহা কী করিতেছি? বিবাহ না করিয়া ইহা কি অনাচার নহে? আমি আল্লাহার নিকট কী জবাব দিবো?"
সত্যি কথা বলিতে, আমার ইচ্ছা যেমন নিবৃত করিতে পারিতেছিলাম না অধিকন্তু আমার ধর্মও আমাকে নিষেধ করিতেছিলো। আমি দোটানায় পড়িয়া ইসলাম বিশেষজ্ঞ উম্মে কুলসুমের কাছে জিজ্ঞাস করিলাম, "আমি এখন কি করিবো?"
উম্মে কুলসুম বলিলো, "সখা, আফনি কি জানেন, আল্লাহ্ কোরআনের সূরা হিজরের (১৫ নম্বর সূরা যা মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে) ৪ নম্বর রুকূর ৪৬ নম্বর আয়াতে কি নির্দেশ দিয়েছেন?"
মনে মনে বলি, আমার তো জাকির নায়েকের ন্যায় কোরআন মুখস্ত নাই, থাকলে এখনই সমাধান হইয়া যাইতো। তারপরও আমি ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষ, আল্লাহ্ নিশ্চয়ই এগুলো করিতে নিষেধ করিয়াছেন।
তাই আমি মুখে কিছু না বলিয়া তড়িঘড়ি করিয়া উম্মে কুলসুমের বাটি হইতে প্রস্থান করিলাম, মনকে বুঝাইলাম বিবাহ না করিয়া এসব ঠিক নয়, ইহা অনাচার, ইহা নাস্তিকদের কর্ম। আমার এই রকম প্রস্থান দেখিয়া ইসলাম বিশেষজ্ঞ উম্মে কুলসুম মারাত্মক গোসসা করিলেও মুখে কিছু বলিলেন না, অগত্যা আমি চলে চলিলাম আর তিনি চাহিয়া চাহিয়া দেখিলেন।
মনের মধ্যে খুঁতখুঁতি রহিয়াই গেলো, কী করিলাম আমি! আল্লাহ্ কী বলিয়াছেন ১৫ নং সূরার ৪৬ নম্বর আয়াতে? ফাক-ফবিত্র হইয়া অজু করিয়া বাংলা কোরআন নিয়া আদবের সহিত উন্মুক্ত করিলাম। ইহার পর ১৫ নং সূরা হিজরের চতুর্দশ পারার ৪ নম্বর রুকূর ৪৬ নম্বর আয়াত বাহির করিয়া দেখি সেখানে আল্লাহ্ নির্দেশ দিয়াছেন:
"তোমরা শান্তি ও নিরাপত্তার সহিত উহাতে প্রবেশ করো।"
আমি নিজের আস্তানায় বসিয়া এখন নিজ মস্তকের কেশ নিজেই টানিতেছি এবং প্রেমিকাকে ফোন দিয়াই যাইতেছি। প্রেমিকা একবার ফোন উঠাইয়া বলিলো, "আফনার মতো হাঁদারাম বুদ্ধুর সাথে আর জীবনেও কথা নেই, আফনি ইসলাম বুঝেন না।"
হে আল্লাহ্, তুমি বলিয়া দাও, আমি এখন কী করিবো?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন