লিখেছেন গোলাপ
পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩ > পর্ব ১৪ > পর্ব ১৫ > পর্ব ১৬ > পর্ব ১৭ > পর্ব ১৮ > পর্ব ১৯ > পর্ব ২০ > পর্ব ২১ > পর্ব ২২ > পর্ব ২৩ > পর্ব ২৪ > পর্ব ২৫ > পর্ব ২৬ > পর্ব ২৭ > পর্ব ২৮ > পর্ব ২৯ > পর্ব ৩০ > পর্ব ৩১ > পর্ব ৩২ > পর্ব ৩৩ > পর্ব ৩৪ > পর্ব ৩৫ > পর্ব ৩৬ > পর্ব ৩৭ > পর্ব ৩৮ > পর্ব ৩৯> পর্ব ৪০ > পর্ব ৪১ > পর্ব ৪২ > পর্ব ৪৩ > পর্ব ৪৪ > পর্ব ৪৫ > পর্ব ৪৬ > পর্ব ৪৭ > পর্ব ৪৮ > পর্ব ৪৯ > পর্ব ৫০ > পর্ব ৫১ > পর্ব ৫২ > পর্ব ৫৩ > পর্ব ৫৪ > পর্ব ৫৫ > পর্ব ৫৬ > পর্ব ৫৭
স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও তাঁর অনুসারীরা ইসলামের ইতিহাসের প্রথম রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে (বদর যুদ্ধে) তাঁদেরই একান্ত পরিবার-পরিজন, নিকট-আত্মীয়, পাড়া-প্রতিবেশী ও বন্ধু-বান্ধবদের প্রচণ্ড নৃশংসতায় করেন খুন ও অনেককে করেন বন্দী! বন্দী করার পর তাঁদের পরিবার পরিজনদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের পর তাঁদেরকে করেন মুক্তিদান।
তারই ধারাবাহিকতায় মক্কাবাসী কুরাইশরা তাঁদের প্রিয়জনদের খুন, বন্দীত্ব, অপমান ও লাঞ্ছনার প্রতিশোধ নিতেই ইসলামের ইতিহাসের দ্বিতীয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে (ওহুদ যুদ্ধ) জড়িত হন।
অর্থাৎ, ওহুদ যুদ্ধের আদি কারণ হলো বদর যুদ্ধ (পর্ব: ৩০-৪৩) ও মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরাই হলেন প্রথম আক্রমণকারী!
আদি ও বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকদের বর্ণনায় আমরা জানতে পারি যে, ওহুদ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রথমাবস্থায় মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা মাত্র ৭০০ জন সৈন্য নিয়ে তাদের চেয়ে চার গুণেরও অধিক কুরাইশ সৈন্যদের (প্রায় ৩০০০ জন) পরাস্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা তাঁদের সেই বিজয় গৌরব বেশি সময় ধরে রাখতে পারেননি!
কারণ? কারণ হলো গণিমতের লালসা!
ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ সাল) ও আল-তাবারীর (৮৩৯-৯২৩ সাল) বর্ণনা:
মুহাম্মদ ইবনে সা'দ <তার পিতা হইতে < তার চাচা হইতে <তার পিতা হইতে <তার পিতা হইতে <ইবনে আব্বাস হইতে বর্ণিত:
আবু সুফিয়া শওয়াল মাসের ৩ তারিখে (মার্চ ১৯, ৬২৫ সাল) ওহুদ প্রান্তে শিবির স্থাপন করেন। আল্লাহর নবী তাঁর অনুসারীদের যুদ্ধের জন্য আহ্বান করেন, তারা তাঁর চারিপাশে জড় হয় ও তিনি তাদের নিয়ে যুদ্ধে যোগদান করেন।
তিনি আল-যুবায়েরকে, সেইদিন যার সাথে ছিল আল-মিখদাদ বিন আল-আসওয়াদ আল-কিন্দি, আদেশ করেন, সে যেন অশ্বারোহী সেনাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। তারপর তিনি মুসাব বিন উমায়ের নামক এক কুরাইশকে যুদ্ধের ঝাণ্ডা প্রদান করেন।
তারপর হামজা বিন আবদুল মুত্তালিব যাদের বর্ম-আবরণ (Armour) ছিল না, তাদের প্রধান রূপে যুদ্ধে অগ্রসর হন, তিনি তৎক্ষণাৎ হামজাকে তাঁর সামনে পাঠান।
যখন খালিদ বিন ওয়ালিদ ও ইকরিমা বিন আবু-জেহেল মুশরিকদের (polytheist) অশ্বারোহী সেনাদের নিয়ে অগ্রসর হন, আল্লাহর নবী আল-যুবায়েরকে এই আদেশ সহকারে প্রেরণ করেন, "খালিদ বিন ওয়ালিদের সম্মুখীন হও ও আমার পরবর্তী আদেশের পূর্ব পর্যন্ত তার সাথে যুদ্ধে রত থাকো।"
তারপর তিনি মাঠের অন্যদিকের অন্যান্য অশ্বারোহীদের (শত্রুদের) ব্যাপারে আদেশ জারি করেন, বলেন, "আমার পরবর্তী আদেশের পূর্ব পর্যন্ত তোমরা তোমাদের অবস্থান ছেড়ে নড়বে না।"
আল্লাহর নবী কিছু লোককে তাঁর সৈন্যবাহিনীর পশ্চাতে প্রেরণ করেন এবং তাদেরকে বলেন (পর্ব-৫৭), "এখানে অবস্থান কর এবং আমাদের কেউ পৃষ্ঠপ্রদর্শন করলে তাদেরকে আবার যুদ্ধে ফেরত পাঠাবে ও আমাদের পশ্চাদ্দিক পাহারা দেবে।"
যখন আল্লাহর নবী ও তাঁর অনুসারীরা শত্রুদের পলায়নে বাধ্য করেন, যাদেরকে সৈন্যবাহিনীর পশ্চাতে স্থাপন করা হয়েছিল, তারা শত্রুপক্ষের মহিলাদের হামাগুড়ি দিয়ে পাহাড়ে আরোহণ ও পলায়ন এবং লুণ্ঠন-সামগ্রী দেখতে পেয়ে একে অপরকে বলে,
"চলো, আমরা আল্লাহর নবীর কাছে যাই ও অন্যরা আমাদেরকে ঠকানোর আগেই এই লুণ্ঠন-সামগ্রী সংগ্রহ করি।"
অন্য গ্রুপ বলে, "না, আমাদের উচিত আল্লাহর নবীর আদেশ পালন করা ও এই স্থানেই অবস্থান করা।"
এই প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেছে, "তাতে তোমাদের কারো কাম্য ছিল দুনিয়া-- (৩:১৫২)" অর্থাৎ যারা লুণ্ঠন সামগ্রীর লালসা করেছিল; "যে লোক ---আখেরাতে বিনিময় কামনা করবে (৩:১৪৫)", অর্থাৎ, যারা বলেছে, "আমাদের উচিত আল্লাহর নবীর আদেশ পালন করা ও এই স্থানেই অবস্থান করা।" [1]
ইবনে মাসুদ প্রায়ই বলতেন,
"সেই দিনের আগে আমি কখনোই ধারণা করিনি যে, আল্লাহর নবীর অনুসারীরা দুনিয়া ও তার সামগ্রী কামনা করতে পারে।"
মুহাম্মদ বিন আল-হুসেইন <আহমদ বিন আল-মুফাদদাল হইতে < আসবাত হইতে <আল-সুদদি হইতে বর্ণিত:
'---আল-যুবায়ের বিন আল-আওয়াম ও আল-মিখদাদ বিন আল-আসওয়াদ মুশরিকদের আক্রমণ করেন ও তাদের পলায়নে বাধ্য করেন, আর আল্লাহর নবী ও তাঁর অনুসারীদের আক্রমণ আবু সুফিয়ানকে পলায়নে বাধ্য করে।
যখন মুশরিক অশ্বারোহী বাহিনীর সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদ তা দেখতে পান, তিনি পাল্টা আক্রমণ করেন। কিন্তু তীরন্দাজদের প্রচণ্ড তীর নিক্ষেপের কারণে তার অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়।
তবে, যখন তীরন্দাজরা আল্লাহর নবী ও তাঁর অনুসারীদের মুশরিকদের শিবিরে দেখতে পান এবং দেখতে পান যে, তারা লুণ্ঠনকর্মে ব্যস্ত, তারা দ্রুতগতিতে লুণ্ঠন সামগ্রীর দিকে এগিয়ে আসে। তাদের কিছু লোক বলে, "আল্লাহর নবীর আদেশ অমান্য করো না"; কিন্তু তাদের অধিকাংশই ঐ শিবিরে গমন করে।
যখন খালিদ দেখতে পান যে, অল্প কিছু তীরন্দাজ সেখানে অবস্থান করছে, তিনি তাঁর সৈন্যদের চিৎকার করে আক্রমণের হুকুম দেন ও তীরন্দাজদের হত্যা করেন। তারপর তিনি আল্লাহর নবীর অন্যান্য অনুসারীদের আক্রমণের আদেশ জারী করেন।
যখন মুশরিক পদাতিক বাহিনীর লোকজনেরা দেখতে পায় যে, তাদের অশ্বারোহী বাহিনী আক্রমণে ব্যস্ত, তারা একে অপরকে আহ্বান করে এবং মুসলমানদের পুনরায় আক্রমণ করে, পরাজিত করে এবং কিছু লোককে করে হত্যা। [2]
ইবনে হুমায়েদ হইতে <সালামাহ হইতে <মুহাম্মদ বিন ইশাক হইতে <ইয়াহিয়া বিন আববাদ বিন আবদুল্লাহ বিন আল-যুবায়ের হইতে < তার পিতা আবদুল্লাহ বিন আল-যুবায়ের হইতে < তার পিতামহ আল-যুবায়ের হইতে বর্ণিত:
'আল্লাহর কসম, আমি নিজে হিন্দ বিনতে ওতবা ও তার সাথীদের নূপুরের দিকে তাকিয়েছিলাম, যখন তারা তাদের ঘাগরা গুটিয়ে পালাচ্ছিল।
তাদের কেউই ছিল না যে আমাদের প্রতিহত করে, কিন্তু আমরা শত্রুদের বিতাড়িত করার পর তীরন্দাজরা লুঠতরাজের জন্য (শত্রুর) শিবিরে আগমন করে। যার ফলে আমাদের পশ্চাদ্দিক অশ্বারোহী সেনাদের কাছে উন্মুক্ত হয়। তারা আমাদেরকে পেছন থেকে আক্রমণ করে ও কেউ একজন চিৎকার করে বলে,
"মুহাম্মদ নিহত হয়েছে!"
আমরা ঘুরে দাঁড়াই এবং তারপর শত্রুরাও আমাদের কে আক্রমণের জন্য ঘুরে দাঁড়ায়। কিন্তু তার আগেই আমরা শত্রুর ঝাণ্ডা রক্ষাকারী লোকটিকে হত্যা করি যখন শত্রুদের কোনো লোকই তার কাছে ছিল না।
ইবনে হুমায়েদ হইতে <সালামাহ হইতে <মুহাম্মদ বিন ইশাক হইতে <নির্দিষ্ট স্কলার হইতে বর্ণিত:
'আমরা বিনতে আলকামাহ আল-হারিথিয়াহ যুদ্ধ-ঝাণ্ডাটি তুলে নিয়ে উপরে তুলে ধরার আগ পর্যন্ত তা মাটিতেই পড়ে ছিল। সে কুরাইশদের উদ্দেশে তা উঁচু করে ধরে রাখে, যাতে কুরাইশরা তার চারপাশে একত্রিত হতে পারে।
এই ঝাণ্ডাটি ছিল সুয়াব নামের বানু আবু তালহা গোত্রের এক আদি আবিসিনিয়াবাসী ক্রীতদাসের কাছে। সেই ছিল সর্বশেষ ব্যক্তি, যার হাতে ছিল এই ঝাণ্ডা। তার হাত দুটো কেটে ফেলার পূর্ব পর্যন্ত সে যুদ্ধ চালিয়ে যায়, তারপর সে এর উপর নতজানু হয়ে বসে পরে ও ঝাণ্ডাটি তার বুক ও গলার মাঝখানে ঐ সময় পর্যন্ত ধরে রাখে যতক্ষণ না তাকে তার উপরই হত্যা করা হয়, যখন সে বলছিল, "হে খোদা, আমি কি আমার কর্তব্য পালন করেছি (আমি কি মাফ পেয়েছি)?"' [3][4]
ওহুদ যুদ্ধে কুরাইশরা ৭০ জন মুহাম্মদ অনুসারীকে হত্যা করেন।
(চলবে)
তথ্যসূত্র ও পাদটীকা:
[1] ৩:১৫২ - আর আল্লাহ সে ওয়াদাকে সত্যে পরিণত করেছেন, যখন তোমরা তাঁরই নির্দেশে ওদের খতম করছিলে। এমনকি যখন তোমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছে ও কর্তব্য স্থির করার ব্যাপারে বিবাদে লিপ্ত হয়েছে। আর যা তোমরা চাইতে তা দেখার পর কৃতঘ্নতা প্রদর্শন করেছ, তাতে তোমাদের কারো কাম্য ছিল দুনিয়া আর কারো বা কাম্য ছিল আখিরাত। অতঃপর তোমাদিগকে সরিয়ে দিলেন ওদের উপর থেকে যাতে তোমাদিগকে পরীক্ষা করেন। -----
৩:১৪৫- আর আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ মরতে পারে না-সেজন্য একটা সময় নির্ধারিত রয়েছে। বস্তুতঃ যে লোক দুনিয়ায় বিনিময় কামনা করবে, আমি তাকে তা দুনিয়াতেই দান করব। পক্ষান্তরে-যে লোক আখেরাতে বিনিময় কামনা করবে, তা থেকে আমি তাকে তাই দেবো। আর যারা কৃতজ্ঞ তাদেরকে আমি প্রতিদান দেবো।
[2] “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৭,ইংরেজী অনুবাদ: W. Montogomery Watt and M.V. McDonald, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭ – পৃষ্ঠা (Leiden) ১৩৯৫
[3] Ibid আল-তাবারী, পৃষ্ঠা (Leiden) – ১৪০১
[4] “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ৩৭৯
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন