লিখেছেন গোলাপ
পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩ > পর্ব ১৪ > পর্ব ১৫ > পর্ব ১৬ > পর্ব ১৭ > পর্ব ১৮ > পর্ব ১৯ > পর্ব ২০ > পর্ব ২১ > পর্ব ২২ > পর্ব ২৩ > পর্ব ২৪ > পর্ব ২৫ > পর্ব ২৬ > পর্ব ২৭ > পর্ব ২৮ > পর্ব ২৯ > পর্ব ৩০ > পর্ব ৩১ > পর্ব ৩২ > পর্ব ৩৩ > পর্ব ৩৪ > পর্ব ৩৫ > পর্ব ৩৬ > পর্ব ৩৭ > পর্ব ৩৮ > পর্ব ৩৯> পর্ব ৪০ > পর্ব ৪১ > পর্ব ৪২ > পর্ব ৪৩ > পর্ব ৪৪ > পর্ব ৪৫ > পর্ব ৪৬ > পর্ব ৪৭ > পর্ব ৪৮ > পর্ব ৪৯ > পর্ব ৫০ > পর্ব ৫১ > পর্ব ৫২ > পর্ব ৫৩ > পর্ব ৫৪ > পর্ব ৫৫ > পর্ব ৫৬ > পর্ব ৫৭ > পর্ব ৫৮
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর সুদীর্ঘ ১২-১৩ বছরের মক্কায় অবস্থানকালীন নবী-জীবনে (৬১০- ৬২২ খৃষ্টাব্দ) তাঁর ও তাঁর নব-দীক্ষিত অনুসারীদের অক্লান্ত চেষ্টা সত্ত্বেও সর্বাধিক (At the most) ১৩০ জনের বেশী লোককে তাঁর মতবাদে সামিল করতে পারেননি। যে কোনো বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ অতি সহজেই বুঝতে পারেন যে, এমতাবস্থায় মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা ধনে-মানে-জনে কুরাইশদের তুলনায় ছিলেন অত্যন্ত দুর্বল।
তাঁর সেই দুর্বল অবস্থায় তাঁর তুলনায় বহুগুণ শক্তিশালী মক্কাবাসী কোনো অবিশ্বাসী কুরাইশ মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীকে শারীরিক আক্রমণ করেছেন কিংবা খুন করেছেন, এমন একটি উদাহরণও ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য দলিল, মুহাম্মদের স্ব-রচিত কিতাব, “কুরানের”কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না।
কুরান বই আকারে সংকলিত হয় মুহাম্মদের মৃত্যুর ১৯ বছর পর, তৃতীয় খুলাফায়ে রাশেদিন হযরত ওসমান (রাঃ) এর শাসন আমলে। কুরান সংকলিত হওয়ার পর প্রায় একশত বছর অতিবাহিত হওয়ার পর ইসলামে নিবেদিতপ্রাণ, বিশিষ্ট মুসলিম স্কলার মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ সাল) রচনা করেন ‘মুহাম্মদের সর্ব-প্রথম পূর্ণাঙ্গ জীবনীগ্রন্থ (সিরাত)’। তাঁর এই রচনার পর আরও একশত বছর অতিবাহিত হওয়ার পর ইসলামে নিবেদিতপ্রাণ আর এক বিশিষ্ট মুসলিম স্কলার আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল, যিনি ইমাম বুখারী (৮১০-৮৭০ সাল) নামে পরিচিত, রচনা করেন সর্বপ্রথম হাদিস-গ্রন্থ(সহি বুখারী)।
মুহাম্মদের মৃত্যুর বহু বছর পর লিখিতএই সিরাত ও হাদিস-গ্রন্থে মক্কার কুরাইশদের দ্বারা মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের ওপর কিছু শারীরিক আক্রমণ ও “একজন”মুহাম্মদ অনুসারীকে খুনের উল্লেখ পাওয়া যায় (বিস্তারিত আলোচনা করবো "আইয়্যামে জাহিলিয়াত" পর্বে)।
অন্যদিকে,
মদিনায় মুহাম্মদের স্বেচ্ছা-নির্বাসনের (পর্ব: ৪১-৪২) পর মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা মক্কাবাসী কুরাইশ ও মদিনাবাসী ইহুদি সম্প্রদায়ের ওপর কীরূপ অমানুষিক নৃশংসতা শুরু করেছিলেন ও মুহাম্মদের শক্তিবৃদ্ধির পর সেই নৃশংসতা কীরূপে বিস্তার লাভ করেছিল,তার আলোচনা "ত্রাস, হত্যা ও হামলার আদেশ" এর পূর্ববর্তী পর্বগুলোতে করা হয়েছে। পরবর্তী পর্বগুলোতেও তা ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হবে।
আদি ও বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকদের বর্ণনায় আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি যে, লক্ষ্য অর্জনের জন্য মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ তাঁর অনুসারীদের প্রয়োজন মাফিক বিরুদ্ধবাদীদের সাথে প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতার অনুমোদন দিতে কোনোরূপ দ্বিধা করেননি (পর্ব-৪৮); আমরা আরও জেনেছি, প্রতারণার আশ্রয়ে লক্ষ্য অর্জনে সফলকাম অনুসারীদের তিনি নিরুৎসাহিতও করেননি (পর্ব-৫০)।
অর্থাৎ,
ইসলাম প্রচার ও প্রসারের প্রয়োজনে অবিশ্বাসীদের সাথে প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা সম্পূর্ণরূপে ইসলামের মূল শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত।
ইসলামের পরিভাষায় এই শিক্ষার নাম হলো "তাকিয়া ও তাওরিয়া (Taqiyya and Tawriya)"! বাংলায় যাকে বলা যেতে পারে, "পবিত্র প্রতারণা", পবিত্র বিশ্বাসঘাতকতা" অথবা "পবিত্র বেইমানি"! আর ইংরেজিতে যাকে বলা যেতে পারে, "Holy deception", Holy betrayal" or "Holy Treachery"!
তথাকথিত মডারেট ইসলামী পণ্ডিত ও অ-পণ্ডিত অনুসারীরা এই অনৈতিক শিক্ষাকে বৈধতা দিতে যে অজুহাত হাজির করেন, তা হলো,
“এই অনুশীলনটি শুধুমাত্র প্রযোজ্য:
১) যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে, অথবা
২) সেই পরিস্থিতিতে যখন কোনো মুসলমান তার ধর্ম-পরিচয়ের কারণে কোনো অবিশ্বাসী শাসক, জনগণ বা ব্যক্তি কর্তৃক নিপীড়ন, নির্যাতন অথবা প্রাণনাশের আশংকা করে।”
কিন্তু, আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি:
প্রতারণার আশ্রয়ে ইহুদি কবি কাব বিন আল-আশরাফ ও আবু-রাফিকে নৃশংসভাবে খুন কোনো যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে সম্পন্ন হয় নাই এবং ধর্ম-পরিচয়ের কারণে মদিনার অবিশ্বাসী জনগণ ও ইহুদি জনগোষ্ঠীর দ্বারা কোনো মুহাম্মদ অনুসারীর প্রাণনাশ তো অনেক দূরের বিষয়, তাঁরা কোনো মুহাম্মদ অনুসারীকে কখনো কোনো নির্যাতন, নিপীড়ন কিংবা শারীরিক আঘাত করেছেন, এমন একটি উদাহরণও আদি মুসলিম ঐতিহাসিকদের বর্ণনার কোথাও নেই!
সুতরাং,তথাকথিত মোডারেট Gullible ইসলামী পণ্ডিত ও ইসলাম অনুসারীরা এই অনৈতিক শিক্ষার বৈধতা প্রদানের যে অজুহাত সরলপ্রাণ ইসলামে অজ্ঞ সাধারণ মুসলমান ও অবিশ্বাসীদের উদ্দেশ্যে পেশ করেন, সেই অজুহাতটিই হলো “তাকিয়ার” এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ! [1]
প্রশ্ন হলো, ওহুদ যুদ্ধে মুহাম্মদ অনুসারীরা কি কোনো বিশ্বাসঘাতকতার প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন?
মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের (৭০৪-৭৬৮ সাল) বর্ণনা:
‘আসিম বিন উমর বিন কাতাদা আমাকে [মুহাম্মদ ইবনে ইশাক] বলেছেন যে বানু দুবাইয়া গোত্রের আবু আমির আবদু আমর বিন সেইফি বিন মালিক বিন আল-নুমান নামক এক ব্যক্তি [কুরাইশ] আল্লাহর নবীর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মক্কায় গমন করেন, যার সাথে ছিল আল-আউস গোত্রের ৫০ জন যুবক (তাবারী: যাদের একজন হলেন উসমান বিন হুনায়েফ); যদিও কিছু কিছু মানুষ বলেন যে, তাদের সংখ্যা ছিল ১৫ জন। তারা কুরাইশের কাছে প্রতিজ্ঞা করে যে, যদি তারা তার সম্মুখীন হয়, তবে তাদের লোকজন তাকে আক্রমণ করবে না।
যখন যুদ্ধ শুরু হয়, তখন প্রথম যে ব্যক্তিটি তাদের সম্মুখীন হন, সে হলো আবু আমির, যার সাথে ছিল কালো সৈন্য ও মক্কাবাসীর ক্রীতদাসরা।
তিনি চিৎকার করে বলেন, "হে আউস গোত্রের লোকেরা, আমি আবু আমির।"
তারা জবাবে বলে, "তুই অবিশ্বাসী বদমাশ (দুর্বৃত্ত), আল্লাহ তোর দৃষ্টিশক্তি ধ্বংস করুক।"
পৌত্তলিক আমলে লোকেরা তাকে "সন্ন্যাসী (Monk)"নামে অভিহিত করতেন; আল্লাহর নবী তাকে অভিহিত করতেন "পাপিষ্ঠ (Impious)" নামে ।
তাদের জবাব শুনে তিনি বলেন, "আমি চলে যাওয়ার পর আমার লোকেরা অসাধুতায় (Evil) পতিত হয়েছে।"
তারপর তিনি তার সর্বশক্তি দিয়ে যুদ্ধ করেন, তাদের উপর প্রস্তর নিক্ষেপ করেন।’ [2] [3]
[ইসলামী ইতিহাসের ঊষালগ্ন থেকে আজ অবধি প্রায় প্রতিটি ইসলাম বিশ্বাসী প্রকৃত ইতিহাস জেনে বা না জেনে ইতিহাসের এ সকল অমানবিক অধ্যায়গুলো যাবতীয় চতুরতার মাধ্যমে বৈধতা দিয়ে এসেছেন। বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিধায় বাংলা অনুবাদের সাথে মূল ইংরেজি অনুবাদের অংশটিও সংযুক্ত করছি। - অনুবাদ, টাইটেল ও [**] যোগ - লেখক।
The narrative of Muhammad Ibne Ishaq (704-768 AD):
[Al-Tabari: ‘According to Ibn Humayd <Salamah <Muhammad bin Isahq <Asim bin Umar bin Qatada’:]
'Asim b. 'Umar b. Qatada told me that Abu 'Amir 'Abdu 'Amr b. Sayfib. Malik b. al-Nu'man, one of the B. Dubay'a who had separated from the apostle and gone off to Mecca along with fifty young men of al-Aus (Tabari. among whom was 'Uthman b. Hunayf) though some people say there were only fifteen of them, was promising Quraysh that if he met his people no two men of them would exchange blows with him; and when the battle was joined the first one to meet them was Abu 'Amir with the black troops and the slaves of the Meccans, and he cried out,
“O men of Aus, I am Abu 'Amir.”
They replied, “Then God destroy your sight, you impious rascal (Evildoer).”
In the pagan period he was called 'the monk'; the apostle called him 'the impious'.
When he heard their reply he said, “Evil has befallen my people since I left them.”
Then he fought with all his might, pelting them with stones.’ [2][3]
>>> একজন মুক্তচিন্তার মানুষ স্বাভাবিক ও যৌক্তিকভাবে দাবি করতে পারেন যে, ওপরে উল্লেখিত বর্ণনা কিছু মুহাম্মদ অনুসারীর বিশ্বাসঘাতকতার উপাখ্যান, যে ঘটনার সাথে মুহাম্মদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কিন্তু আমরা আগেই জেনেছি যে, বিরুদ্ধবাদীদের শায়েস্তার উদ্দেশ্যে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের এমনতর আচরণ কোনো নতুন বিষয় নয়। এই উদাহরণ অনেক উদাহরণের একটি। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।
খন্দক যুদ্ধের সময় (৬২৭ সাল) মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ তাঁর এক নব-দীক্ষিত অনুসারীকে কীরূপে কুরাইশ ও তাঁর মিত্রদের (Al-Ahzab) "ধোঁকা দেয়ার উদ্দেশ্যে" প্রেরণ করেছিলেন,তা "খন্দক যুদ্ধ পর্বে" আলোচনা করা হবে। কুরাইশ ও তাঁদের মিত্ররা জানতেন না যে, সেই ব্যক্তিটি তাদের পক্ষ পরিবর্তন করে গোপনে মুহাম্মদের দলে যোগ দিয়েছে।
মুহাম্মদ কুরাইশদের সেই অসচেতনতা ও অজ্ঞতার সুযোগ নিয়েছিলেন পুরাদমে! তিনি সেই বিশ্বাসঘাতক ব্যক্তিটিকে কুরাইশ ও তাঁর মিত্রদের প্রতারিত করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছিলেন। সেই বিশ্বাসঘাতক ব্যক্তিটির নাম নাইম ইবনে মাসুদ (Na‘im ibn Mas‘ud)।
সংক্ষেপে, ইসলামী মতবাদে অবিশ্বাসীদের সাথে যে কোনো ধরনের প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা সম্পূর্ণরূপে আইনসম্মত, যদি তা পালিত হয় ইসলাম প্রচার ও প্রসারের প্রয়োজনে! [4]
একইভাবে, ইসলামী মতবাদে অবিশ্বাসীদের সাথে আবদ্ধ যে কোনো ধরনের চুক্তি ইসলাম বিশ্বাসীরা অবলীলায় ভঙ্গ করতে পারে, প্রয়োজন"শুধুমাত্র সন্দেহ পোষণ" (বিস্তারিত: পর্ব-৫১)।
(চলবে)
তথ্যসূত্র ও পাদটীকা:
[1] Related Article: ‘Taqiyaa about Taqiyya’
[2] “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা -৩৭৪
[3] “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৭,ইংরেজী অনুবাদ: W. Montogomery Watt and M.V. McDonald, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭, পৃষ্ঠা (Leiden)-১৩৯৯
[4] ইসলামে প্রতারণা:
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন