লিখেছেন গোলাপ
পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩ > পর্ব ১৪ > পর্ব ১৫ > পর্ব ১৬ > পর্ব ১৭ > পর্ব ১৮ > পর্ব ১৯ > পর্ব ২০ > পর্ব ২১ > পর্ব ২২ > পর্ব ২৩ > পর্ব ২৪ > পর্ব ২৫ > পর্ব ২৬ > পর্ব ২৭ > পর্ব ২৮ > পর্ব ২৯ > পর্ব ৩০ > পর্ব ৩১ > পর্ব ৩২ > পর্ব ৩৩ > পর্ব ৩৪ > পর্ব ৩৫ > পর্ব ৩৬ > পর্ব ৩৭ > পর্ব ৩৮ > পর্ব ৩৯> পর্ব ৪০ > পর্ব ৪১ > পর্ব ৪২ > পর্ব ৪৩ > পর্ব ৪৪ > পর্ব ৪৫ > পর্ব ৪৬ > পর্ব ৪৭ > পর্ব ৪৮ > পর্ব ৪৯ > পর্ব ৫০ > পর্ব ৫১ > পর্ব ৫২ > পর্ব ৫৩ > পর্ব ৫৪ > পর্ব ৫৫ > পর্ব ৫৬ > পর্ব ৫৭ > পর্ব ৫৮ > পর্ব ৫৯ > পর্ব ৬০ > পর্ব ৬১ > পর্ব ৬২ > পর্ব ৬৩ > পর্ব ৬৪
ওয়াহশি নামক এক ক্রীতদাসের বল্লমের আঘাতে স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর চাচা হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিবের নৃশংস হত্যার পর প্রতিশোধস্পৃহায় আবু সুফিয়ান পত্নী হিন্দ বিনতে ওতবা ও তাঁর সঙ্গের মহিলারা হামজা ও অন্যান্য মুহাম্মদ অনুসারীর কিছু মৃতদেহের কান ও নাক কেটে নিয়ে তা দিয়ে কানের দুল, গলার মালা ও পায়ের মল তৈরি করে পরম কৃতজ্ঞতায় সেগুলো তাঁরা কীরূপে ওয়াহশিকে উৎসর্গ করেছিলেন, তার আলোচনা আগের পর্বে করা হয়েছে।
মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা বদর যুদ্ধে কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ান বিন হারবের হানজালা নামের এক জোয়ান পুত্র সন্তানকে হত্যা ও আমর নামের আর এক পুত্র সন্তানকে বন্দী করে মদিনায় ধরে নিয়ে আসে।
তারপর মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা কীরূপে আবু সুফিয়ানের কাছে তাঁর পুত্র আমরের মুক্তির জন্য মুক্তিপণ দাবি করেছিলেন; মুক্তিপণ প্রদানে আবু সুফিয়ান কী কারণে অস্বীকৃতি প্রকাশ করেছিলেন ও কী পরিস্থিতিতে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা আমরকে বিনা মুক্তিপণেই ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন, তার বিস্তারিত আলোচনা পর্ব ৩৭-এ করা হয়েছে।
এই কুরাইশ নেতা তাঁর শ্বশুর, চাচা শ্বশুর ও শ্যালকসহ অন্যান্য আরও বহু কুরাইশের হত্যাকারী হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিবের মৃতদেহ প্রত্যক্ষ করে ক্ষণিকের জন্য আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি তাঁর বল্লমের অগ্রভাগ দিয়ে হামজার মুখের পাশে আঘাত করেন ও বলেন যে, সে রাষ্ট্রদ্রোহী (Rebel) এবং তার উচিত সাজাটিই হয়েছে।
কুরাইশ নেতার এই কর্ম এক কুরাইশের নজরে আসে। সে আশ্চর্য হয়ে বলে, "মৃত জ্ঞাতিভাইয়ের (Cousin) সাথে কুরাইশ নেতার এ কেমন ব্যবহার!"
আবু সুফিয়ান তাঁর এই ব্যবহারে লজ্জিত হয়ে তৎক্ষণাৎ স্বীকার করে নেন যে, তিনি ভুল করেছেন। তিনি তাকে অনুরোধ করেন, সে যেন ঘটনাটি গোপন রাখে।
তারপর তিনি মুহাম্মদ অনুসারীদের জানিয়ে দেন যে, তাদের কিছু সহচরের মৃতদেহের অঙ্গচ্ছেদ (Mutilation) করা হয়েছে। তিনি তাদের আরও জানিয়ে দেন যে, তিনি কোনো কুরাইশকেই এই কর্মটি করার আদেশ করেননি কিংবা কাউকে তা করতে বাধা প্রদানও করেননি।
মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের (৭০৪-৭৬৮ সাল) বর্ণনায় ঘটনাটি ছিল নিম্নরূপ:
'আল-হুলায়েস বিন জাববান নামের বানু আল-হারিথ বিন আবদ মানাত গোত্রের এক ভাই, সেই সময় যিনি ছিলেন কালো সৈন্যদলের দলপতি, আবু সুফিয়ানের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় লক্ষ্য করেন, তিনি তাঁর বল্লমের আগা দিয়ে মৃত হামজার মুখের এক পাশে আঘাত করছেন এবং বলছেন, "এই রাষ্ট্রদ্রোহী, নে তার স্বাদ ভোগ কর।"
হুলায়েস আশ্চর্য হয়ে বলে, "হে বানু কিনানা, তোমরা কি দেখেছো যে, এই সেই কুরাইশ নেতা, যে তাঁর নিজের মৃত জ্ঞাতিভাইয়ের সাথে এমন ব্যবহার করছে?"
তিনি বলেন, "চুপ থাকো। ঘটনাটি গোপন রেখো, কাজটি ভুল ছিল।"
(Al-Hulays b.Zabban, brother of the B. al-Harith b. 'Abdu Manat, who was then chief of the black troops, passed by Abu Sufyan as he was striking the side of Hamza's mouth with the point of his spear saying,
'Taste that, you rebel.'
Hulays exclaimed, 'O B. Kinana, is this the chief of Quraysh acting thus with his dead cousin as you see?'
He said, 'Confound you. Keep the matter quiet, for it was a slip.’)
---- [যুদ্ধের শেষে] যখন আবু সুফিয়ান ফিরে যেতে মনস্থ করেন, তখন তিনি পাহাড়ের শীর্ষে আরোহণ করেন ও উচ্চস্বরে চিৎকার করে বলেন, "তোমরা উত্তম কাজটিই করেছ; যুদ্ধে বিজয় পালা ক্রমে হয়। আজকের দিনটি হলো সেই দিনের (তাবারী: বদরের) বিনিময়ে। হুবাল, তোমার শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শন কর।" অর্থাৎ তোমার ধর্ম প্রতিষ্ঠিত কর।
আল্লাহর নবী ওমরকে উঠে দাঁড়িয়ে আবু সুফিয়ানের উদ্দেশে বলতে বলেন, "আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ ও অতি মহিমান্বিত। আমরা সমান নই। আমাদের মৃতরা এখন বেহেশতে; তোমাদের মৃতরা নরকে।"
এই জবাব শুনে আবু সুফিয়ান ওমরকে বলেন, "ওমর, কাছে এসো।"
আল্লাহর নবী তাকে তার কাছে যেতে বলেন এবং তার কী উদ্দেশ্য, তা পরখ করতে বলেন।
যখন সে নিকটে আসে, আবু সুফিয়ান বলেন, "আল্লাহর ওয়াস্তে তোমার কাছে আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ, ওমর, আমরা কি মুহাম্মদকে হত্যা করেছি।"
জবাবে সে বলে, "না, তা তোমরা করোনি। তুমি যা কিছু বলছো, তা তিনি শুনছেন।"
তিনি বলেন, "আমি তোমাকে ইবনে কামিয়ার চেয়ে বেশী সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত বলে জানি।" ইবনে কামিয়া কর্তৃক মুহাম্মদকে হত্যার দাবীর প্রসঙ্গে তিনি এই কথাটি বলেন। [পর্ব-৬২]
তারপর আবু সুফিয়ান বলেন,
"তোমাদের মৃত সহচরদের কিছু মৃতদেহের অঙ্গচ্ছেদ করা হয়েছে। আল্লাহর কসম, যা আমাকে পরিতৃপ্ত অথবা রাগান্বিত কোনোটিই করেনি। আমি তাদের অঙ্গচ্ছেদ করার জন্য কোনো আদেশ জারি কিংবা বাধা প্রদান কোনোটিই করিনি। " --
(Then Abu Sufyan called out, 'There are some mutailated bodies among your dead. By God, it gives me no satisfaction, and no anger. I neither prohibited nor ordered mutilation.')
আল্লাহর নবী আবু সুফিয়ানের সৈন্যদলকে অনুসরণ করে তারা কী করছে ও তাদের কী উদ্দেশ্য, তা জানার জন্য আলীকে পাঠান।
যদি তারা তাদের উঠের পিঠের ওপর চড়ে বসে ও ঘোড়াদের পরিচালনা করে, তবে, সম্ভবত, তাদের গন্তব্য হলো মক্কা। আর তারা যদি তাদের ঘোড়ার পিঠের ওপর চড়ে বসে ও উটদের পরিচালনা করে, তবে, সম্ভবত, তাদের গন্তব্য হলো মদিনা।
"আল্লাহর কসম", তিনি বলেন, "যদি তাদের গন্তব্য হয় মদিনা, আমি সেখানে যাব এবং তাদের সাথে যুদ্ধ করবো।"
আলী বলেছেন যে, সে তাদের পদচিহ্ন অনুসরণ করে এবং দেখে তারা কী করছে। তারা তাদের ঘোড়াদের পরিচালনা করছিল ও উটের পিঠের ওপর চড়ে বসছিল এবং মক্কার অভিমুখে রওনা হচ্ছিল।’ [1][2]
আল তাবারীর (৮৩৯-৯২৩ সাল) অতিরিক্ত বর্ণনা:
----'আল্লাহর নবী [আলীকে] বলেন, "তারা যা কিছুই করুক না কেন, আমার কাছে ফিরে আসার আগ পর্যন্ত তুমি নীরব থাকবে।"
যখন আমি [আলী] দেখেছি যে, তারা মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা করছে, আমি চিৎকার করতে করতে ফিরে আসি। আমি তাদের মদিনার পরিবর্তে মক্কা প্রত্যাবর্তনের দৃশ্য দেখে আনন্দ-উল্লাসে এতই উৎফুল্ল ছিলাম যে, আল্লাহর নবীর নির্দেশ অনুযায়ী এই তথ্যটি গোপন রাখতে পারিনি। [2]
>>> মানুষ ভুল করে। এটি একটি মানবিক বৈশিষ্ট্য। মানুষ ভুল করে লোভ, লালসা, হিংসা-প্রতিহিংসা, ভীতি, দুঃখ, শোক ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে। একজন সৎ, সংবেদনশীল ও অকপট মানুষ অন্য মানুষের কাছে তাঁর ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ ও প্রয়োজনে ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকেন।
মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের ওপরে বর্ণিত বর্ণনায় আমরা জানতে পারি যে, কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ান তাঁর ভুল স্বীকার করেছিলেন। ইতিমধ্যেই আমরা আরও জেনেছি যে, কুরাইশ নেতা আবু জেহেলও অনুরূপ কাজটি করেছিলেন এবং হামজার ধনুকের আঘাতে তাঁর মস্তক চূর্ণ হওয়ার পরও (‘-which split his head open in an ugly way’) তিনি সহিংসতায় বাধা প্রদান করেছিলেন (পর্ব-৬৩)।
এখানে একটি অতি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন:
"মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ তাঁর ৬২ বছরের কর্ম জীবনে কখনো কি কোনো ভুল করেছিলেন? তাঁর নিজের সেই ভুল কর্মের জন্য কখনো কি তিনি কোনো অবিশ্বাসী কাফেরদের কাছে কোনোরূপ লজ্জা বা দুঃখ প্রকাশ অথবা ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন?"
নিজের ভুলের কারণে তিনি কখনো কোনো অবিশ্বাসী কাফেরদের কাছে কোনোরূপ লজ্জা বা দুঃখ প্রকাশ অথবা ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন, এমন তথ্য আমার জানা নাই।
তবে ইতিমধ্যেই আমরা জেনেছি যে, তিনিও ভুল করেছিলেন! আর সেই ভুলটি হলো:
"আল্লাহর ইচ্ছার বাস্তবায়ন ঘটিয়ে বদর যুদ্ধে ধৃত ৭০ জন কুরাইশ বন্দীর সবাইকে একে একে নৃশংসভাবে গলা কেটে খুন না করে মুক্তিপণের বিনিময়ে তাদের আত্মীয়-স্বজনের কাছে ফেরত পাঠিয়েছিলেন। তাঁর এই ভুলের সাক্ষ্য কুরান (৮:৬৭-৬৮) সিরাত ও হাদিস গ্রন্থে অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় বর্ণিত আছে। এই চরম ভুলের অনুশোচনায় অনুতপ্ত ও মর্মাহত মুহাম্মদ কীরূপ ক্রন্দন করেছিলেন, তার বিস্তারিত আলোচনা পর্ব ছত্রিশে করা হয়েছে।"
জগতের প্রায় সকল ইসলাম-বিশ্বাসী দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, আবু লাহাব, আবু জেহেল, আবু সুফিয়ান ইত্যাদি কুরাইশ নেতারা ছিলেন জঘন্য প্রকৃতির মানুষ। ইসলামের অত্যাবশ্যকীয় প্রাথমিক সংজ্ঞায় হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর বানী ও কর্মকাণ্ডের সামান্যতম সমালোচনা তো অনেক দূরের বিষয়, কোনোরূপ সন্দেহ পোষণ করাও "ইমান ও আকীদার (ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার একান্ত আবশ্যক সর্বপ্রথম শর্ত)" সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
এই একান্ত আবশ্যকীয় প্রাথমিক শর্ত অনুযায়ী - আবু লাহাব, আবু জেহেল, আবু সুফিয়ানসহ সকল কুরাইশ, অ-কুরাইশ এবং পৃথিবীর সকল মানুষ যারা মুহাম্মদের বাণীকে অস্বীকার, সমালোচনা ও বিরোধিতা করেছেন, করছেন ও ভবিষ্যতে করবেন, তাঁরা সকলেই বিপথগামী, লাঞ্ছিত, পথভ্রষ্ট এবং অনন্ত শাস্তির যোগ্য (পর্ব-২৭)।
ইসলামের এই একান্ত আবশ্যকীয় শর্তে দীক্ষিত হওয়ার পর "ইমান ও আকীদা পালনের অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্বে"জগতের সকল ইসলাম বিশ্বাসীকেই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেই হবে যে, আবু লাহাব, আবু জেহেল, আবু সুফিয়ান, উমাইয়া ইবনে খালফ সহ সকল কুরাইশ নেতৃবর্গ ও সাধারণ কুরাইশ ও অ-কুরাইশ অবিশ্বাসী কাফের, যারাই মুহাম্মদের বাণী ও কর্মকাণ্ডের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ বিরোধিতা করেছেন, তাঁরা ছিলেন অত্যন্ত জঘন্য প্রকৃতির মানুষ। ইসলামী পরিভাষায় তাঁদের খেতাব হলো আইয়্যামে জাহিলিয়াত (অন্ধকারের যুগ/বাসিন্দা)।
মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ তাঁর স্বরচিত ব্যক্তিমানস জীবনীগ্রন্থ (Psycho-Biography) কুরানের অসংখ্য বাণীতে তাঁদেরকে করেছেন অসম্মান, দোষারোপ, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, শাপ-অভিশাপ, হুমকি-শাসানী ও ভীতি প্রদর্শন; যার আলোচনা পর্ব ২৬ ও ২৭-এ করা হয়েছে।
ইসলামী প্রোপাগান্ডা এতই শক্তিশালী যে, শুধু ইসলাম বিশ্বাসীরাই নয়, জগতের বহু ইসলাম অবিশ্বাসী সাধারণ মানুষ ও তথাকথিত বুদ্ধিজীবী, লেখক, সাংবাদিক ও কলাম লেখক অনুরূপ ধারণাই পোষণ করেন। ইসলাম বিশ্বাসীদের সাথে সুর মিলিয়ে তা তাঁরা তাঁদের বক্তৃতা ও বিবৃতিতে, বেতার-টেলিভিশন টক শো-তে, গল্প-কবিতা-প্রবন্ধে, খবরের কাগজের নিবন্ধে ও তাঁদের রচিত গ্রন্থে প্রচার করেন।
ইসলাম অবিশ্বাসীদের এই প্রচারকে উদাহরণ হিসাবে ব্যবহার করে ইসলাম-বিশ্বাসীরা তাঁদের বিশ্বাসের সত্যতার ব্যাপারে নিশ্চিত হন ও অপরকেও নিশ্চিত হওয়ার উপদেশ দান করেন।
কিন্তু
মুহাম্মদের স্বরচিত কুরান ও আদি উৎসে বর্ণিত আদি মুসলিম ঐতিহাসিকদেরই লিখিত মুহাম্মদের জীবনীগ্রন্থ ও হাদিস-গ্রন্থের পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনায় আমরা তাঁদের এই বিশ্বাস ও দাবির সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র দেখতে পাই।
তাঁদেরই রচিত গ্রন্থের খণ্ড খণ্ড চিত্রের আলোকে আমরা যে-সত্যের সন্ধান পাই, তা হলো - পৃথিবীর অন্যান্য সকল মানুষের সর্বজনসম্মত ভাল-মন্দ, উচিত-অনুচিত ও মানবতার মাপকাঠি বিচারে এই সকল মানুষদের কোনোভাবেই অন্ধকারের বাসিন্দা বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার কোনোই অবকাশ নেই!
শুধু তাইই নয়, তুলনামূলক বিচারে তাঁদের আচরণ ও কর্মকাণ্ড ছিল মুহম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের আচরণ ও কর্মকাণ্ডের চেয়ে অনেক বেশি শালীন, মার্জিত ও মানবিক।
আদি মুসলিম ঐতিহাসিকদের বর্ণনায় আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি, কীরূপে এই কুরাইশ দলপতি আবু-সুফিয়ান বিন হারব বদরের রক্তাক্ত সংঘর্ষ (বদর যুদ্ধ) এড়াতে চেয়েছিলেন। এই অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও ধৈর্যশীল কুরাইশ নেতা তাঁর বাণিজ্য-কাফেলার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে বদর প্রান্তে সমবেত কুরাইশদের কাছে যে বার্তা পাঠিয়েছিলেন তা হলো,
"তোমরা এসেছ শুধুমাত্র তোমাদের বাণিজ্য-কাফেলা রক্ষা করতে, তোমাদের লোকজনদের নিরাপত্তা রক্ষা এবং সম্পদ রক্ষা করতে। আল্লাহ তার হেফাজত করেছেন। এখন তোমরা ফিরে যাও।" (পর্ব-৩১)।
শুধু বদর যুদ্ধই নয়, ইতিমধ্যেই আমরা জেনেছি, কীরূপে এই কুরাইশ নেতা ওহুদের রক্তাক্ত সংঘর্ষও এড়াতে চেয়েছিলেন। ওহুদ যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি তাঁদের যাবতীয় দুরবস্থার জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী যে ব্যক্তি, শুধু সেই মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ ছাড়া মুহাম্মদের মদিনাবাসী অনুসারীদের সাথে রক্তাক্ত সংঘর্ষে জড়িত হতে চাননি।
আর অন্যদিকে, এই যুদ্ধে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের সিংহনাদ ছিল:
"হত্যা কর, হত্যা কর"!’ (পর্ব-৫৭)
ইতিমধ্যেই আমরা আরও জেনেছি যে, বদর যুদ্ধে একই দিনে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা এই কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ান ইবনে হারবের নিজ পুত্র-সন্তান, শ্বশুর, চাচা শ্বশুর ও শ্যালককে প্রচণ্ড নিষ্ঠুরতায় হত্যা ও আর এক সন্তানকে বন্দী করা সত্ত্বেও এই নেতা মক্কায় অবস্থিত মুহাম্মদের কন্যা জয়নাবকে সংক্ষুব্ধ স্বজন-হারা বিক্ষুব্ধ কুরাইশদের রোষানল এড়িয়ে মক্কা থেকে মদিনায় তাঁর পিতার কাছে আসতে সাহায্য করেছিলেন (পর্ব ৩৯)।
স্বঘোষিত নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর অতীব মহানুভবতার উদাহরণহিসাবে জগতের প্রায় সকল ইসলাম বিশ্বাসী ও বহু অবিশ্বাসী যে উদাহরণটি জগতের সামনে অতি গর্বের সাথে উদ্ধৃত করেন, তা হলো - মক্কা বিজয়ের প্রাক্কালে মহানবী মুহাম্মদ কোনোরূপ রক্তপাতের আশ্রয় নেন নাই।
কিন্তু যে ইতিহাসটি জগতের প্রায় সকল বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীদের অজানা, তা হলো - মুহাম্মদের এই "রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের" নেপথ্যের মহান কারিগর ছিলেন মুহাম্মদের চাচা আল আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব ও এই কুরাইশ দলনেতা আবু সুফিয়ান ইবনে হারব।
এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো "মুহাম্মদের মক্কা বিজয়" পর্বে।
সংক্ষেপে,
৬৩০ সালের পহেলা জানুয়ারি (১০ই রমজান, হিজরি ৮ সাল) মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ তাঁর অনুসারী এক বিশাল বাহিনী নিয়ে মদিনা থেকে রওনা হন। তিনি তাঁর আক্রমণের লক্ষ্যস্থল তাঁর অনুসারীদের কাছেও গোপন রাখেন এবং ঘোষণা দেন যে, তাঁদের অনুসারীদের কেউই যেন মক্কার কুরাইশদের সাথে কোনোরূপ যোগাযোগ না করে।
তাঁর চাচা আল-আব্বাস পরিবার সমেত "আল-যুহফা" নামক স্থানে স্থানান্তরিত হওয়ার (Migration) সময় পথিমধ্যে মুহাম্মদের সাথে মিলিত হন। এর আগে তিনি মক্কাতেই বসবাস করতেন। [3]
অন্যান্য প্রায় সমস্ত অভিযানের মতই অতর্কিত আক্রমণে শত্রুদের পরাস্ত করার নিমিত্তে অতীব গোপনীয়তায় মুহাম্মদ ও তাঁর ১০,০০০ অনুসারীদের সঙ্গে নিয়ে রাতের অন্ধকারে মক্কার অদূরবর্তী "মার আল-জাহরান" নামক স্থানে শিবির স্থাপন করেন। মুহাম্মদ অনুসারীরা বুঝতে পারেন, আল্লাহর নবীর লক্ষ্য হলো মক্কা অভিযান; অতর্কিত আক্রমণে মক্কাবাসীদের পরাস্ত করে "মক্কা বিজয়"।
মক্কাবাসীরা মুহাম্মদের এই পরিকল্পনা ও আক্রমণের বিষয়ে কিছুই জানতেন না। ৬২৮ সালের মার্চ মাসে (জিল-হজ, হিজরি ৬ সাল) হুদাইবিয়া নামক স্থানে মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ও তাঁর অনুসারীদের সাথে মক্কার কুরাইশদের দশ বছরের শান্তি চুক্তি ("হুদাইবিয়ার সন্ধি") স্বাক্ষরিত হয়।
মক্কাবাসী কুরাইশরা ধারনাও করতে পারেননি যে, মুহাম্মদ এই দশ বছরের শান্তি চুক্তি অবলীলায় লঙ্ঘন করে (এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা "হুদাইবিয়ার সন্ধি" পর্বে করা হবে) মাত্র দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে মক্কা আক্রমণ করতে পারেন। (মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহর কর্মকাণ্ড ও শিক্ষার আলোকে অবিশ্বাসী কাফেরদের সঙ্গে যে কোনো ধরনের চুক্তি স্বাক্ষরের পর তা অবলীলায় ভঙ্গ করার জন্য "কী কারণ প্রয়োজন" তার আলোচনা পর্ব-৫১ তে করা হয়েছে)।
তা সত্ত্বেও, বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর ওপর মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের উপর্যুপরি অন্যায়, অমানবিক, নৃশংস আক্রমণ ও জয়লাভ এবং এই ঘটনার অল্প কিছুদিন আগে বানু খুজা গোত্র (মুহাম্মদের মিত্রপক্ষ) ও বানু বকর গোত্রের (কুরাইশদের মিত্রপক্ষ) সংঘর্ষেরকারণে মক্কাবাসী কুরাইশরা অতিরিক্ত সন্ধানী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
মক্কাবাসীর নিরাপত্তার লক্ষ্যে কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ান ইবনে হারব রাত্রিবেলাহাকিম বিন হিজাম ও বুদায়েল বিন ওয়ারকা নামের দুইজন কুরাইশকে সঙ্গে নিয়ে সেইসময় পাহারায় থাকতেন।
যে রাত্রিতে মুহাম্মদ "মার আল-জাহরান" নামক স্থানে শিবির স্থাপন করেন, মুহাম্মদের চাচা আল আব্বাস মক্কার কুরাইশদের নিরাপত্তার কথা ভেবে অতিশয় উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েন। তিনি বুঝতে পারেন যে, মুহাম্মদের এই বিশাল বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে প্রচুর রক্তপাতের কারণ ঘটবে ও কুরাইশদের পরিণতি হবে ভয়াবহ।
তিনি যে কোনো মূল্যে মুহাম্মদের এই অতর্কিত মক্কা আক্রমণের খবরটি কুরাইশদের কাছে পৌঁছে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
সেই রাত্রিতেই তিনি মুহাম্মদের সাদা খচ্চরের (White mule) পিঠে চড়েশিবির থেকে বের হয়ে আসেন। শিবিরের নিরাপত্তা বাহিনীর লোকেরা মুহাম্মদের এই সাদা খচ্চরটি চিনতেন, আল-আব্বাসকেও চিনতেন অনেকে। সে কারণে শিবির থেকে বাইরে যাওয়া ও পুনরায় শিবিরে ফিরে আসার ব্যাপারে তাঁর কোনো অসুবিধা হয়নি।
তাঁর উদ্দেশ্য ছিল: যে কোনোভাবে মক্কার সন্নিকটে "আল-আরাক"নামক এক বৃক্ষ উপত্যকায় (A tree Valley) পৌঁছানো। তাঁর লক্ষ্য ছিল এই যে, তিনি সেখানে গিয়ে মক্কা গমনকারী যে কোনো পথচারীর মাধ্যমে মক্কাবাসীদের কাছে মুহাম্মদের এই আক্রমণের খবরটি পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করবেন।
পথিমধ্যে তিনি আবু সুফিয়ানের গলার শব্দ শুনতে পান। রাতের অন্ধকারে অসংখ্য মশালের আলোয় আলোকিত দূরের সেই স্থানটিতে কারা আছে, তা নিয়ে তাঁরা আলোচনা করছিলেন।সঙ্গীদের একজন বলেন যে, ঐ স্থানটিতে বানু খুজার লোকজনেরা গোলযোগ করছে। আবু সুফিয়ান জবাবে বলেন যে, তা হতে পারে না; বানু খোজার লোকেরা গরীব, তাদের কাছে এত অধিক মশালের আলো জ্বালানো সম্ভব নয়।
আবু সুফিয়ানের গলার আওয়াজ শুনেআল আব্বাস জিজ্ঞেস করেন, "আবু হানজালা নাকি?" আবু সুফিয়ান জবাবে বলেন, "আবু আল-ফদল নাকি? [4]
আল-আব্বাস মুহাম্মদের পরিকল্পনার খবর আবু সুফিয়ানকে খুলে বলেন। তিনি তাঁকে বলেন যে মুহাম্মদের এই বিশাল বাহিনীর আক্রমণ তাদের সবাইকেই (কুরাইশ) ধ্বংস করে দেবে। তিনি আরও বলেন যে, যদি তিনি তাঁর ও কুরাইশদের জীবন রক্ষা করতে চান, তবে এই মুহূর্তেই তিনি যেন তাঁর সাথে এই খচ্চরের পিঠের ওপর চড়ে বসেন।
কুরাইশদের নিরাপত্তার কথা ভেবে নিজের জীবন বাজি রেখে আবু সুফিয়ান আল আব্বাসের পেছনে মুহাম্মদের সেই সাদা খচ্চরের ওপর চড়ে বসেন। আল আব্বাস তাঁকে নিয়ে মুহাম্মদের শিবিরে ফিরে আসেন।
শিবিরের ভেতর প্রবেশ করার পর, মুহাম্মদের কক্ষে প্রবেশ করার আগের মুহূর্তে ওমর ইবনে খাত্তাব আবু সুফিয়ানকে চিনে ফেলেন। তিনি তখনই আবু সুফিয়ানের কল্লা কাটার জন্য প্রস্তুত। আল আব্বাস প্রবলভাবে উমরকে বাধা প্রদান করেন ও তাঁকে জানিয়ে দেন যে, আবু সুফিয়ানকে তিনি নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি দ্রুত গতিতে আবু সুফিয়ানকে নিয়ে মুহাম্মদের কক্ষে প্রবেশ করেন।
ওমর সেখানেও আবু সুফিয়ানের কল্লা কাটার জন্য প্রস্তুত। আল আব্বাস প্রবলভাবে আবারও বাধা প্রদান করেন এবং মুহাম্মদকে জানিয়ে দেন যে, আবু সুফিয়ানকে তিনি নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ওমরের সাথে আল আব্বাসের বচসা চলতে থাকে। এক পর্যায়ে তা বংশমর্যাদা পর্যন্ত পৌঁছায়। আব্বাস বলেন যে, ওমরের এই ব্যবহারে তিনি মর্মাহত এবং প্রশ্ন রাখেন যে আবু সুফিয়ান যদি আবদ-মানাফ বংশের (মুহাম্মদ/আল-আব্বাসের বংশ) না হয়ে আবদ আ'দি বংশের (ওমরের বংশ) হতো, তবে ওমর কখনোই আবু সুফিয়ানের সাথে এমন ব্যবহার করতে পারতো না।
মুহাম্মদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। তিনি আল আব্বাসকে আদেশ করেন যে, তিনি যেন আবু সুফিয়ানকে সেই রাত্রির জন্য ধরে রাখেন এবং পরদিন সকালে তাঁর কাছে নিয়ে আসেন। আল-আব্বাস তাঁর নিজের তাঁবুতেই সেই রাত্রে আবু সুফিয়ানকে নিয়ে রাখেন ও পরদিন প্রত্যুষে তাঁকে মুহাম্মদের কাছে হাজির করেন।
মুহাম্মদ আবু সুফিয়ানের প্রশ্ন রাখেন যে, এখনও কি আবু সুফিয়ানের সন্দেহ আছে যে, তিনিই আল্লাহর নবী? তিনি তাঁকে নবী হিসাবে মেনে নিয়ে ইসলাম গ্রহণ করার আহ্বান জানান।
আবু সুফিয়ান কুরাইশদের নিরাপত্তার ব্যাপারে মুহাম্মদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করেন। মুহাম্মদ তার কোনো জবাব না দিয়ে আবারও আবু সুফিয়ানকে একই প্রশ্ন করেন ও তাকে ইসলাম গ্রহণের আহ্বান জানান।
আবু সুফিয়ানের নিরাপত্তার কথা ভেবে আল আব্বাস উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেন। তিনি আবু সুফিয়ানকে পরামর্শ দেন যে, তিনি যদি জীবন বাঁচাতে চান, তবে এই মুহূর্তেই যেন তিনি মুহাম্মদকে নবী হিসাবে মেনে নিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। আবু সুফিয়ান তরবারির মুখে ইসলাম গ্রহণ করেন।
আবু সুফিয়ানের ইসলাম গ্রহণের পর আল আব্বাস মুহাম্মদকে এই বলে অনুরোধ করেন যে, আবু সুফিয়ান একজন সম্ভ্রান্ত ও সম্মানিত কুরাইশ নেতা। মুহাম্মদ যেন তাঁকে এমন কিছু দান করেন, যা আবু সুফিয়ান মক্কার কুরাইশদের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন, তিনি যেন তাঁকে বিফল না করেন।
জবাবে মুহাম্মদ বলেন, আবু সুফিয়ান যেন মক্কার কুরাইশদের কাছে গিয়ে খবর দেন যে, ঐ ব্যক্তিরা নিরাপদ যারা:
১) আবু সুফিয়ানের বাড়ীতে আশ্রয় নেবে
২) যারা আশ্রয় নেবে কাবা ঘরে, আর
৩) যারা তাদের নিজেদের ঘরের দরজা বন্ধ রেখে তার ভেতরে অবস্থান করবে।
মুহাম্মদ আল আব্বাসকে হুকুম দেন, তাঁর সৈন্যরা এই শিবির থেকে চলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সে যেন আবু সুফিয়ানকে ধরে রাখেন। আল আব্বাস মুহাম্মদের সেই নির্দেশ পালন করেন এবং সৈন্যরা প্রস্থান করার পর আবু সুফিয়ানকে ছেড়ে দেন।
আবু সুফিয়ান দ্রুত গতিতে মক্কায় ফিরে আসেন এবং মক্কার কুরাইশদের সমস্ত ঘটনা খুলে বলেন। ভীত সন্ত্রস্ত কুরাইশরা তাঁদের নিরাপত্তার জন্য ঐ শর্তগুলো অনুসরণ করেন। [5][6]
এক কথায়,
কুরাইশদের প্রতি আল আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব ও আবু সুফিয়ান বিন হারবেরগভীর মমত্ব ও দায়িত্ববোধ, প্রত্যুৎপন্নমতিত্বা এবং অসীম সাহসিকতায় রক্তপাতহীন মক্কা বিজয় সম্ভব হয়েছিল।
(চলবে)
তথ্যসূত্র ও পাদটীকা
[1] “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ৩৮৫-৩৮৭
[2] “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৭, ইংরেজী অনুবাদ: W. Montogomery Watt and M.V. McDonald, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭, পৃষ্ঠা (Leiden) ১৪১৮-১৪১৯ http://books.google.com/books?id=efOFhaeNhAwC&printsec=frontcover&source=gbs_ge_summary_r&cad=0#v=onepage&q&f=false
[3] Ibid মুহাম্মদ ইবনে ইশাক, ইবনে হিশামের নোট (নম্বর ৭৯৭)- পৃষ্ঠা ৭৭৩
[4] এই নামগুলোকে আরবে ‘কুনাহ (Kunah)’ নামে অভিহিত করা হয়। সাধারণত: পিতার এ ধরণের নামকরণ তাঁর বড় পুত্রের নামের সাথে মিলিয়ে সম্বোধন করা হয়। আবু সুফিয়ানকে "আবু হানজালা" নামে ও আল আব্বাস কে "আবু আল-ফদল" নামে সম্বোধন করা হতো। হানজালা বদর যুদ্ধে নিহত হয়। মুহাম্মদের কুনাহ ছিল "আবুল কাসেম"।
[5] Ibid মুহাম্মদ ইবনে ইশাক, পৃষ্ঠা ৫৪৫-৫৪৮
[6] “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৮,
পৃষ্ঠা (Leiden) ১৬২৮-১৬৩৪
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন