শনিবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০১৫

দারুল ইসলাম - আলো-বাতাসহীন কারাগার

লিখেছেন পুতুল হক

পৃথিবীতে যোগ্যরা টিকে থাকে, জয়ী হয়। এমন সময় ছিল, যখন যোগ্যতা নির্ধারিত হতো বাহুবল বা অস্ত্রবল দিয়ে। এক দেশের রাজার শক্তি বেশি থাকলে সে আরেক দেশের রাজাকে খুন করতে পারতো, সেই রাজার দেশকে দখল করতে পারতো। কিন্তু সে অনেককাল আগের কথা। যোগ্যতার সে সংজ্ঞার পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখন সে-ই যোগ্য, যার আছে অধিক মেধা, যে জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত, যে কৌশলে উন্নত, যে বুঝতে পারে সময়ের প্রয়োজন, যে বুঝতে পারে মানুষের মন আর চাহিদা।

যোগ্যতার বিচারে মুসলমান খুব কম যোগ্য জাতি। পৃথিবীতে আবিষ্কার-উদ্ভাবনে, শিল্পে-সাহিত্যে মুসলমানদের অবস্থান খুব নগণ্য। কিছু মুসলমান আছে, যারা তাদের মেধাকে সৃষ্টিশীল কাজে বা মানবকল্যাণে না লাগিয়ে ধংসাত্বক কাজে লাগায় আর বাকি মুসলমান তাঁদের সমর্থন করে। আর তাই আইএস, তালেবান, বোকোহারাম বা জেএমবি বা জামাতে ইসলামকে অধিকাংশ মুসলমান সমর্থন করে।

১৪০০ বছর আগে মহানবীর দেখিয়ে যাওয়া পথে এরা জয়ী হতে চায়। মুসলমানরা  খুন, ধর্ষণ আর লুট দিয়ে পৃথিবীকে দারুল ইসলাম বানাতে চায়। এদের নেই মেধার চর্চা, জ্ঞানের চর্চা। সর্বোপরি এরা সময়কে বোঝে না, মানুষকে বোঝে না। পৃথিবীর মানুষ দারুল ইসলাম নাকি দারুল হারব চায়? 

দারুল ইসলাম মানে সার্বক্ষণিক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, ধ্বংস, খুন করে পার পাওয়া, ধর্ষককে রেহাই দেয়া আর ধর্ষিতাকে ফাঁসি দেয়া, যৌনতা আর সন্তান জন্ম দেয়া ছাড়া অন্য কোনো কাজে নারীর অবদান নিষিদ্ধ করা, নারীকে বস্তাবন্দী করে রাখা, পরকালমুখী হয়ে পৃথিবীর উন্নতি অগ্রগতিকে থামিয়ে দেয়া, সব রকম সুকুমার বৃত্তির চর্চাকে নিষিদ্ধ করা, মানবতাকে ভূলুণ্ঠিত করা। 

আর দারুল হারব অর্থ মানবতার জয়, বিজ্ঞানের জয়, বিবেকের স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা, নারীস্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা, নাচ-গান-সাহিত্য-চিত্রকর্মের আনন্দ, সব মানুষকে বন্ধু করার আনন্দ, মানুষে মানুষে ভালোবাসার আনন্দ। সেখানে যে ধর্মের নামে নৃশংসতা নেই, তা নয়, কিন্তু এই নৃশংসতাকে ঘৃণা জানায় মানুষ, আড়াল করে না।

মুসলমানদের আকর্ষণও দারুল হারবের প্রতি। তাই প্রতিদিন হাজার হাজার মুসলমান বিধর্মী কাফেরদের দেশগুলোতে যাবার জন্য মরিয়া চেষ্টা করে। তবে অন্ধ বিশ্বাসের কারণে এরা দারুল ইসলামের স্বপ্নকে মন থেকে মুছে ফেলতে পারে না। তাই মনে মনে টান থাকার পরও এরা দারুল হারবকে নিজের বলে ভাবতে পারে না। এই না পারার ক্ষোভ থেকে তৈরি হয় ঘৃণা। 

মুসলমান আনন্দ করতে পারে না, তাই আনন্দ ধংস করে। আল্লাহ আর নবী ছাড়া কাউকে ভালবাসতে পারে না, তাই মানুষের ভালবাসায় এরা আস্থা পায় না। এরা গাইতে পারে না, নাচতে পারে না, ছবি আঁকতে পারে না, তাই সব শিল্পীদের প্রতি এদের ঘৃণা। নিজেদের আড়াল করে প্রাচীন কারায় বন্দী করে রাখে। ১৪০০ বছর আগের আলো-বাতাসহীন একটা কারাগারের নাম দারুল ইসলাম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন