লিখেছেন শান্তনু আদিব
অন্য যে কোনো ধর্মের মতোই ইসলামে আছে নানা রং-বেরং-এর বিয়ে। যদিও সাধারণভাবে আমরা মনে করি, শুধু পারিবারিক অ্যারেঞ্জড ম্যারেজই ইসলামে জায়েজ। উহা ভুল কথা। আসুন, আমরা জেনে নেই, ইসলামে কয় ধরনের বিবাহ আছে...
মুতা বিবাহ
অনেক নাস্তেকে মুতা বিবাহকে গোল্ডেন শাওয়ার-এর সাথে তুলনা করলেও ইহা আসলে গোল্ডেন শাওয়ার নহে। পিশাব করার সাথে এই বিবাহের কোনো সম্পর্ক নাই। যৌনকামনা নিবৃত্তের উদ্দেশ্যে স্বল্প সময়ের জন্য এই বিবাহ করা হয়। নবী করিম (সঃ)-এর সময়ে প্রথমদিকে এই বিবাহের প্রচলন ছিল, যখন গনিমতের মালের সাপ্লাই কম ছিল। হাদিসে পাওয়া যায়, খাইবারের যুদ্ধের পরে এই বিবাহ হারাম করা হয়। যদিও অন্য হাদিসে পাওয়া যায়, নবী করিম (সঃ)-এর মৃত্যুর পরে আবু বকর এর সময়েও নাকি মুতা বিবাহ চালু ছিল, পরে উমর এসে তা নাকি আইন করে বন্ধ করেন। যাই হউক, সহীহ মুসলিমের হাদিসকে জাল বলিয়া শিয়া মুসলিমেরা এখনো "ইয়া আলী" বলিয়া চান্স পাইলেই মুতা বিবাহ করেন।
ইজমা কিয়াসের আলোকে আমি বলতে পারি, এই বিবাহ সকল মুসলিমের জন্য জায়েজ, তবে অবশ্যই যখন গনিমতের মালের টানাটানি পরিবে। গনিমতের মালের সাপ্লাই ঠিক থাকিলে এই বিবাহ হারাম।
এই বিবাহের নিয়ম খুবই সহজ। সময় এবং দরাদরি করিয়া আল্লারফাকের নামে মোহর মিটাইয়া দিলেই এই বিবাহ সম্পন্ন হইবে। সময় শেষ হইলে অথবা মাল আউট হইলে আপনাআপনি তালাক হইয়া যাইবে।
মিস্আর বিবাহ বা মুসাফিরের বিবাহ
সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে মুসাফিরদের জন্য ভিন্ন নিয়ম থাকিলে বিবাহের ক্ষেত্রে কেন থাকিবে না! যেখানে হুজুর পাক (সঃ) নিজে এরশাদ করিয়াছেন, "যে ব্যক্তি আমার সুন্নত হিসাবে বিবাহ করে, সে দ্বীনের পথে অর্ধেক আগাইয়া গেল।"
ভ্রমণের বা কর্মের উদ্দেশ্যে আমাদের অনেককেই দেশের বাইরে লম্বা সময় থাকিতে হয়। সে সময় আল্লাফাক চান না আমরা আমাদের যৌবনজ্বালা নিয়ে কষ্টে থাকি। সে জন্যই উনি এই বিবাহের প্রচলন করিয়াছিলেন।
এই বিবাহের নিয়ম মুতা বিবাহের থেকে কিছুটা জটিল। এই বিবাহে আপনার যা লাগবে, তা হল - দুই পক্ষের চুক্তি, দুইজন সাক্ষী, মোহরের পরিমাণ এবং বিবাহের সময় বা কতদিন পরে এই বিবাহ বাতিল হইবে সেটা। মডারেট সুন্নি স্কলারেরা এই বিবাহের ব্যাপারে আপত্তি জানাইলেও যেহেতু এই বিবাহ সাধারণ বিবাহের সকল নিয়ম পূর্ণ করে, তাই এই বিবাহ জায়েজ। তবে আপনি যদি একজন মুসাফির হন এবং এই বিবাহ করেন, তাহলে দেশে এই বিবাহের ব্যাপারে না জানানোই ভালো। পরবর্তী দাম্পত্য কলহ থেকে বেঁচে যাবেন।
হালালা বিবাহ
ইসলামি শরিয়ত মতে, আপনি যদি আপনার বউকে তালাক দেন, তাহলে তাকে আবার বিবাহ করতে পারবেন না, যদি না তার আরেকটা বিবাহ হইয়া তালাক না হইয়া থাকে। রাগের মাথায় বা অন্য কোনো কারণে যদি আপনি আপনার স্ত্রীকে তালাক দিয়েই ফেলেন এবং আবার বিবাহ করতে চান তাহলে আপনার স্ত্রীর জন্য এই বিবাহ ফরয।
উরফি বা গোপন বিবাহ
আমাদের দেশে হয় না মেয়েসেলেরা ভেগে গিয়ে প্রেমিকের সাথে বা প্রাইভেট টিউটরের সাথে বিবাহ করে ফেলে, এই উরফি বিবাহ হইল সেই একই জিনিস। ইহা হইল গোপন বিবাহ। এই বিবাহে নিজস্ব সাক্ষী থাকে না, অভিভাবক থাকে না, কিচ্ছু থাকে না। একজন মোল্লা এই বিবাহ পড়ান এবং মোল্লার নিজস্ব দুইজন লোক সাক্ষী হিসাবে থাকেন এই বিবাহে। এই বিবাহের কোন রেজিস্ট্রি হয় না।
উঠতি বয়েসের ছেলে মেয়েদের জন্য এই বিবাহ উত্তম।
বি.দ্র. বেটাছেলে-বেটাছেলে, মেয়েসেলে-মেসেয়েলে এবং কুকুর বা কলাগাছ ইত্যাদির সাথে বিবাহ ইসলামে হারাম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন