লিখেছেন গোলাপ
পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩ > পর্ব ১৪ > পর্ব ১৫ > পর্ব ১৬ > পর্ব ১৭ > পর্ব ১৮ > পর্ব ১৯ > পর্ব ২০ > পর্ব ২১ > পর্ব ২২ > পর্ব ২৩ > পর্ব ২৪ > পর্ব ২৫ > পর্ব ২৬ > পর্ব ২৭ > পর্ব ২৮ > পর্ব ২৯ > পর্ব ৩০ > পর্ব ৩১ > পর্ব ৩২ > পর্ব ৩৩ > পর্ব ৩৪ > পর্ব ৩৫ > পর্ব ৩৬ > পর্ব ৩৭ > পর্ব ৩৮ > পর্ব ৩৯> পর্ব ৪০ > পর্ব ৪১ > পর্ব ৪২ > পর্ব ৪৩ > পর্ব ৪৪ > পর্ব ৪৫ > পর্ব ৪৬ > পর্ব ৪৭ > পর্ব ৪৮ > পর্ব ৪৯ > পর্ব ৫০ > পর্ব ৫১ > পর্ব ৫২ > পর্ব ৫৩ > পর্ব ৫৪ > পর্ব ৫৫ > পর্ব ৫৬ > পর্ব ৫৭ > পর্ব ৫৮ > পর্ব ৫৯ > পর্ব ৬০ > পর্ব ৬১ > পর্ব ৬২
স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর সুদীর্ঘ ১২-১৩ বছরের (৬১০-৬২২ সাল) মক্কার নবী-জীবনে বহু চেষ্টার পর তাঁর নিজ পরিবার হাশেমী বংশের যে একমাত্র "প্রাপ্তবয়স্ক" ব্যক্তিকে তাঁর মতবাদে দীক্ষিত করতে পেরেছিলেন, তিনি ছিলেন তাঁরই সমবয়সী চাচা হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিব (আবদ আল-মুত্তালিব); ইসলাম গ্রহণকালে তাঁর চাচাতো ভাই আলী ইবনে আবু তালিব ছিলেন নয় কিংবা দশ বছর বয়েসী এবং মুহাম্মদ-খাদিজা পরিবারের ওপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল এক "অপ্রাপ্তবয়স্ক"বালক (বিস্তারিত: পর্ব-৩৮)।
হাশেমী বংশের এই একমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিবের ইসলাম গ্রহণ ছিল আবেগপ্রবণ জেদের বশে, মুহাম্মদের মতবাদে আকৃষ্ট হয়ে নয় (বিস্তারিত আলোচনা করবো আইয়্যামে জাহিলিয়াত তত্ত্বে)।
সংক্ষেপে,
ঐশী বাণীর অজুহাতে "আল্লাহর নামে" কুরাইশ কাফেরদের ধর্ম, দেব-দেবী ও পূর্বপুরুষদের ওপর মুহাম্মদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, অপমান, হুমকি-শাসানী-ভীতি প্রদর্শনের (পর্ব-২৬) জবাবে একদা আবু-জেহেল মুহাম্মদকে অত্যন্ত কঠোর ভাষায় মৌখিক উপহাস ও সমালোচনা করেন।
সমবয়সী চাচা হামজা এই খবরটি জানার পর আবু-জেহেলের ওপর শারীরিক আক্রমণ চালান, তাঁর ধনুকের আঘাতে আবু-জেহেলের মাথা ফাটিয়ে দেনও আবু জেহেলের উদ্দেশে ঘোষণা দেন যে, তিনি মুহাম্মদের আদর্শে দীক্ষিত হলেন। হামজা বিন আবদ আল-মুত্তালিবের "ইসলামের পথযাত্রা' শুরু হয় রক্তাক্ত হাতে।
আহত কুরাইশ গোত্র প্রধান আবু-জেহেলের সাহায্যের জন্য তাঁর নিজ গোত্রের (বানু মাখজুম গোত্র) লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। হামজা সেখানে একা। হামজাকে তাঁরা উচিত শিক্ষা দেবেন। কিন্তু আবু জেহেল তা হতে দেননি!
কুরাইশ নেতা আবু জেহেল শারীরিক আঘাত প্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও সহিংসতা পরিহার করেন ও তাঁর লোকজনদের সহিংসতায় অংশগ্রহণ বাধা প্রদান করেন। [1] [2]
(“---Hamza was carried away by a fury –ready to attack Abu Jahl when he saw him – he raised his bow and gave him a blow with it which split his head open in an ugly way ----”.
The men of Banu Makhzum (the clan of Abu Jahl), rose up to come to Abu Jahl’s assistance against Hamza, but Abu Jahl said, “Leave Abu Umara (Hamza), for, by God, I insulted his nephew gravely.”)
মুহাম্মদের আদেশে হামজা মদিনায় হিজরত করেন (স্বেচ্ছা-নির্বাসন: তাকে কেউ তাড়িয়ে দেয়নি)। মদিনা আগমনের (হিজরত) মাস সাতেক পরে মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ রাতের অন্ধকারে বাণিজ্য-ফেরত কুরাইশ কাফেলার উপর অতর্কিত হামলায় তাঁদের মালামাল লুণ্ঠন, আরোহীদের বন্দী ও খুনের অভিযাত্রা সূচনা করেন (পর্ব ২৮)! সেই সহিংস অভিযাত্রার ("সিফ-আল বদর") সর্বপ্রথম নেতৃত্বে দানকারী ব্যক্তিটি ছিলেন এই হামজা বিন আবদুল মুত্তালিব।
ইসলামের ইতিহাসের এই রক্তাক্ত পথযাত্রায় এই সেই হামজা বিন আবদুল মুত্তালিব, যিনি বহু কুরাইশকে নৃশংসভাবে হত্যা করেন। তারই ধারাবাহিকতায় যুবায়ের বিন মুতিম নামক এক কুরাইশ ওয়াহাশি নামক তাঁর এক অত্যন্ত দক্ষ বর্শা নিক্ষেপকারী আদি আবিসিনিয়া-বাসী দাসকে ওহুদ যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য তলব করেছিলেন এবং ঘোষণা দিয়েছিলেন,
"সেনাদের সঙ্গে যাও। যদি তুমি আমার চাচা তুয়েইমা বিন আদির খুনের প্রতিশোধে মুহাম্মদের চাচা হামজাকে হত্যা করতে পারো, তবে তুমি হবে দাসত্ব মুক্ত (পর্ব-৫৪)।”
অমানুষিক নৃশংসতায় বহু কুরাইশকে হত্যাকারী এই হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিবকে ওয়াহাশি তাঁর বর্শার আঘাতে কীরূপে হত্যা করে, তাঁর মালিক যুবায়ের বিন মুতিম ও অন্যান্য কুরাইশদের প্রতিশোধ স্পৃহা নিবৃত্ত করেছিলেন, তা আদি মুসলিম ঐতিহাসিকরা অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় লিপিবদ্ধ করেছেন।
মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের (৭০৪-৭৬৮ সাল) বর্ণনা:
'আরতা বিন আবদু শুরাহবি বিন হাশিম বিন আবদু মানাফ বিন আবদুল দার কে হত্যার পূর্ব পর্যন্ত হামজা যুদ্ধ চালিয়ে যায়, সে [আরতা] ছিল যুদ্ধের ঝাণ্ডা বহনকারী ব্যক্তিদের একজন।
তারপর সিবা বিন আবদুল-উজ্জা আল ঘুবাশানি, লোকে যাকে আবু নায়ার নামে জানতো, তার পাশ দিয়ে গমন করে। হামজা তাকে বলে, "এই যে মহিলা লিঙ্গাগ্রচর্মছেদনকারীর (female circumciser) বাচ্চা, এদিকে আয়।"
সিবার মায়ের নাম ছিল উম্মে আনমার, সে ছিল মক্কার এক মহিলা লিঙ্গাগ্রচর্মছেদনকারী ও শারিক বিন আমর বিন ওহাব আল-থাকাফির মুক্ত মহিলা (Freedwoman)। যখন তারা নিকটবর্তী হয়, হামজা তাকে আঘাত করে ও হত্যা করে।
যুবায়ের বিন মুতিমের দাস ওয়াহাশি বলেছে, "আল্লাহর কসম, আমি হামজার দিকে তাকিয়েছিলাম যখন সে তার তরোয়ালের আঘাতে লোকদের হত্যা করছিল, কাউকেই রেহাই দিচ্ছিল না।
আমার আসার আগেই সিবা তার কাছে আসে ও হামজা তাকে বলে, 'এই যে মহিলা লিঙ্গাগ্রচর্মছেদনকারীর বাচ্চা, এদিকে আয়', সে তাকে এত দ্রুতগতিতে আঘাত করে যে, আমার মনে হয়েছিল আঘাতটি তার গর্দান ফসকে গেছে।
আমি আমার বল্লমটি তাক করে ধরে রাখি এবং যখন আমি নিশ্চিত হই যে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হবে না তখন আমি তা নিক্ষেপ করি। সেটি তার শরীরের নিম্নাংশে বিদ্ধ হয় ও দুই পায়ের মাঝখান দিয়ে বেরিয়ে আসে। সে আমার দিকে এগিয়ে আসার চেষ্টা করে, কিন্তু অবসন্ন অবস্থায় ঢলে পড়ে (collapsed and fell); আমি তাকে সেই অবস্থাতেই রেখে দিই যতক্ষণে না তার মৃত্যু হয়। তারপর আমি তার কাছে আসি ও আমার বল্লমটি উদ্ধার করি।
তারপর আমি আমার ক্যাম্পে ফিরে আসি, কারণ সে ছাড়া আর কারও সাথেই আমার কোন কারবার নেই।" [3][4]
(চলবে)
তথ্যসূত্র ও পাদটীকা:
[1] “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ১৮৪-১৮৬
[2] “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৬, ইংরেজী অনুবাদ: W. Montogomery Watt and M.V. McDonald, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, Albany, ১৯৮৮; ISBN 0-88706-707-7; পৃষ্ঠা (Leiden) ১১৮৭-১১৮৮
[3] Ibid মুহাম্মদ ইবনে ইশাক, পৃষ্ঠা ৩৭৫
[4] “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৭, ইংরেজী অনুবাদ: W. Montogomery Watt and M.V. McDonald, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭, পৃষ্ঠা (Leiden) ১৪০৪-১৪০৫ http://books.google.com/books?id=efOFhaeNhAwC&printsec=frontcover&source=gbs_ge_summary_r&cad=0#v=onepage&q&f=false
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন