লিখেছেন সেক্যুলার ফ্রাইডে
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের যে-কোরআন আমরা ব্যবহার করতে দেখি, সেটি কিন্তু কোরআনের প্রাচীনতম সংকলনগুলির মধ্যে অন্তর্ভূক্ত নয়।
নবী মুহাম্মদের সময় থেকে শুরু করে ইসলামের ইতিহাসে কোরআনের পাঠ্যাংশগুলো চার-চার বার সংকলিত করার চেষ্টার পরও, সেই প্রাচীন সংকলনগুলির কোনোটিই সংরক্ষিত করা হয়নি।
এমনকি খলিফা উসমানের প্রমিতকরণ সত্ত্বেও ইসলামী বিশ্বজুড়ে কুরআনের বেশ কয়েকটি সংকলন ছড়িয়ে পড়ে। আর এ কারণেই, ১৯২৩ সালে মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় কোরআনের একটি সর্বশেষ প্রমিত সংস্করণ জারি করে কোরআনের একটি অভিন্ন রুপ দেয়ার চেষ্টা করে, যা আজ অধিকাংশ মুসলমান ব্যবহার করছে।
কোরআন নিয়ে এই ধাঁধা ও সকল প্রমাদের মুলে রয়েছে আরবের সাতটি ভিন্ন ভিন্ন গোত্রের জন্য সাতটি উচ্চারণ বা উপভাষায় কোরআন নাজেল হওয়ার ইতিহাস এবং তার সমর্থনসূচক সহিহ হাদিসগুলো, এবং পরবর্তীতে তৃতীয় খলিফা উসমানের দ্বারা শুধুমাত্র কোরাইশদের ভাষায় কোরআন সংরক্ষণ করে বাকি সব সংস্করণকে পুড়িয়ে ফেলার সন্দেহজনক ইতিহাস; যে-কাজটি এমনকি নবী নিজে বা তার সাহাবা প্রথম দুই খলিফাও করেননি।
এই সাত ভাষার উচ্চারণ (বা সাত কিরাত) এবং সাতটি আরুফ (উপভাষা) নিয়ে আলোচনা এ কারণেই জরুরি যে, "লোগাদ্দরিজা" আরবি ভাষার অনন্য এক বৈশিষ্ট্য এবং আঞ্চলিক উচ্চারণভেদে আরবে শব্দের অর্থের পরিবর্তন হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একই বাংলা ভাষা হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশেই ঢাকা, কুমিল্লা, নোয়াখালী, সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহীর অঞ্চলে উচ্চারিত শব্দের অর্থ ভিন্ন হতে পারে এবং প্রমিত বাংলা হতে পারে এর সব ক'টি থেকে ভিন্ন।
মুসলমানদের দাবি অনুযায়ী এবং ইসলামী সূত্র মতে, পৃথিবীতে কোরআনই হল একমাত্র ঐশী গ্রন্থ, যা তার নাজেল হওয়ার দিন থেকে অপরিবর্তিত আছে এবং অপরিবর্তিত থাকবে। এই দাবির সত্যতা হিসেবে তাঁরা কোরআনে উল্লেখিত কিছু আয়াতের প্রতি দিক নির্দেশ করেন, যেমন:
সূরা আল-বুরূজ, আয়াত ২১
বরং এটা মহান কোরআন,আয়াত ২২. লওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ।
সূরা হিজর, আয়াত ৯
আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতারণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।
এছাড়া আল্লাহ বারবার এটাও বলেছেন,
সুরা কামার, আয়াত ১৭, ২২, ৩২, ৪০
আমি কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি বোঝার জন্যে। অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি?
মানুষের সন্দেহভঞ্জনের জন্যে আল্লাহ এটাও বলেছেন যে,
সূরা আল-বাক্বারাহ, আয়াত ২৩
এতদসম্পর্কে যদি তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে যা আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, তাহলে এর মত একটি সূরা রচনা করে নিয়ে এস। তোমাদের সেসব সাহায্যকারীদেরকেও সঙ্গে নাও-এক আল্লাহ্কে ছাড়া, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো।
সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত ৮৮
বলুন: যদি মানব ও জ্বিন এই কোরআনের অনুরূপ রচনা করে আনয়নের জন্যে জড়ো হয়, এবং তারা পরস্পরের সাহায্যকারী হয়; তবুও তারা কখনও এর অনুরূপ রচনা করে আনতে পারবে না।
তাছাড়া কোরআনে এ নিশ্চয়তাও প্রদান করা হয়েছে যে,
সূরা নাহল, আয়াত ১০৩
আমি তো ভালভাবেই জানি যে, তারা বলে: তাকে জনৈক ব্যক্তি শিক্ষা দেয়। যার দিকে তারা ইঙ্গিত করে, তার ভাষা তো আরবি নয় এবং এ কোরআন পরিষ্কার আরবি ভাষায়।
সুরা আল মুহম্মদ, আয়াত ২
আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে মুহাম্মদের প্রতি অবতীর্ণ সত্যে বিশ্বাস করে, আল্লাহ্ তাদের মন্দ কর্মসমূহ মার্জনা করেন এবং তাদের অবস্থা ভাল করে দেন।
এত প্রচেষ্টার পরও কোরআনের ভিন্ন ভিন্ন সংস্করণের বিষয়টিকে এড়ানো সম্ভব হয়নি, এবং আজও ইরাক ও আসিরিয়ায় Hafs সংস্করণ, উত্তর আফ্রিকায় Warsh সংস্করণ, সুদান অঞ্চলে Al-Dori সংস্করণ এবং লিবিয়ায় Qaloon সংস্করণের নিদর্শন পাওয়া যায়। এর মধ্যে Hafs এবং Warsh ভার্শনে উচ্চারন এবং স্বরবর্ণ/ব্যঞ্জনবর্ণের ব্যবহারের তফাত তো আছেই, সেই সাথে আছে বিসমিল্লাহ্'র সাথে আরোপিত একটি সংখ্যার পার্থক্য এবং তিনটি আয়াতে শব্দের তফাত। সংস্করণগুলোতে বিন্যাসের কারনে আয়াত সংখ্যাতেও তফাত পাওয়া যায় (Hafs ভার্শনে ৬২৩৬ টি, Warsh ভার্শনে ৬২১৪টি)।
এই বিভিন্ন 'সংস্করণ' থাকাটা বিব্রতকর হলেও কুরআনের এই দুটি প্রামাণ্য সংস্করণ থাকাকে অস্বীকার করা সম্ভব হয়নি বিধায় সৌদি আরব সরকার আজও কিং ফাহাদ কুরআন কমপ্লেক্স থেকে দুটোই প্রকাশ করে। খোদ আল্লাহ নিজে বারংবার কোরআন সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিলেও মুসলমানদের দাবিকৃত শ্রেষ্ঠ মু'জেজা কোরআনকে সংরক্ষণের জন্য কোনো অবিতর্কিত, সর্বজনগ্রাহ্য, পরীক্ষণযোগ্য পদ্ধতি বা নিঃসঙ্কোচে মেনে নেওয়ার মত কোনো অলৌকিক পদ্ধতির ব্যবহার আমরা দেখি না; বরং প্রথাগত লৌকিক তিনটি মাধ্যম, স্মৃতি, শ্রুতি ও অনুশীলনের ওপরই নির্ভরশীলতা দেখি, যা মানবীয় বুদ্ধিমত্তার বিচারে কোনোভাবেই অনুপম কোনো প্রচেষ্টা বা সর্বোত্তম সংরক্ষণ পদ্ধতি নয়। পক্ষান্তরে মে'রাজে গমন এবং চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত করার মত বিতর্কিত কিন্তু অলৌকিক নিদর্শনের উল্লেখ আমরা কোরআনেই দেখি। দেখা যাচ্ছে, আল্লাহ নবীর নবুয়ত ও রিসালত প্রমাণে যতটা সচেষ্ট, সর্বকালের সকল মানুষের জন্য প্রেরিত বাণী সংরক্ষণে সমান সচেষ্ট নন; এ বিষয়টি বেশ অবাক করে, কারণ নবীর মাধ্যমেই দাবি করা হয়েছে যে, পূর্বপ্রেরিত সকল গ্রন্থগুলো মানুষ দ্বারা পরিবর্তিত হয়েছে।
স্পষ্টতই আল্লাহ তার ভুল থেকে শেখেন না।
যদিও মুসলমানেরা দাবি করে যে, সাহাবীরা অনন্যসাধারণ স্মৃতিশক্তির অধিকারী ছিলেন, তারপরও নবীকে সে দাবির প্রতি খুব আস্থাশীল বলে মনে হয় না। কারন তিনি জানতেন যে, ক্ষয়িষ্ণু স্মৃতিশক্তি সাধারণ মানবীয় গুণাবলীর অধীন। যে কারনে সাহাবীরা স্বতঃপ্রণোদিতভাবে কোরআনের সুরা ও আয়াতগুলো মুখস্ত করা সত্ত্বেও নবী স্বয়ং কোরানের আয়াতগুলো লিপিবদ্ধ করার প্রচেষ্টা নেন। মোহাম্মদের জীবদ্দশাতেই সাহাবীরা চামড়ায়, খেজুর পাতায়, পশুর হাড়ে ইত্যাদিতে আয়াত লিখে রাখতেন। যদিও কেউ কেউ শুধু মুখস্থই রাখতেন, লিখতেন না; কারণ সে যুগের অধিকাংশ আরব লিখতে-পড়তে জানত না। ইসলামের ইতিহাস অনুযায়ী বলা যায়, কুরআন ন্যুনতম চারবার সংকলন করা হয়।
প্রথম প্রচেষ্টা - নবী'র জীবদ্দশায়: নবী মোহাম্মদের সময়ে সম্পূর্ণ কোরানের সংকলনের উদ্যোগ নেয়ার কোনো প্রমাণ পাওয়া না গেলেও বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্নজনের কাছে ছাল, পার্চমেন্ট, খেজুর পাতা, হাড় ইত্যাদিতে আয়াত লেখা হত। কথিত আছে, এর সংরক্ষক ছিলেন প্রায় ৪২ জন সাহাবি, যাদের কাতেবে ওহী বলা হত। এদের মধ্যে কিছু সাহাবীর কাছে সম্পূর্ণ কোরান ছিল – যাঁদের মধ্যে ইবনে মাসঊদ -এর নাম উল্লেখযোগ্য। তা ছাড়া হযরত আলীও দাবি করেছিলেন যে, তাঁর কাছেও এক সম্পূর্ণ কোরান ছিল, যা কালক্রমিকভাবে সংকলিত ছিল।নবী নিজে বলতেন যে, তোমরা চার ব্যক্তি থেকে কুরআন শিক্ষা কর - আবদুল্লাহ্ ইবন মাসঊদ, সালিম, মুআয এবং উবায় ইবন কা’ব। (সহিহ বুখারী, খন্ড ৬, অধ্যায় ৬১, হাদিস ৫২১) খুব অবাক করা বিষয় হল, এই শিক্ষকদের মধ্যে পরবর্তী খলীফাদের নাম বা পরবর্তী সংকলকদের নাম, এমনকি যেমন নবীর জামাতা উসমানের নাম অন্তর্ভুক্ত নয়।
দ্বিতীয় প্রচেষ্টা - খলিফা আলী'র সংকলন: নবীর মৃত্যুর পর পরই, ছয় মাসের মাথায়, তার চাচাত ভাই ও পরবর্তীতে খলিফা আলী দাবি করেছিলেন যে, তাঁর কাছে একটি সম্পূর্ণ কোরান কালক্রমিকভাবে (যে আয়াত যখন নাজেল হয়েছে বলে কথিত সেভাবে) সংকলিত আছে, কিন্তু খিলাফতের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে রহস্যজনকভাবে সেটিকে প্রকাশ করতে দেয়া হয়নি। যদিও ইরাক অঞ্চলের মুসলমানেরা আজও আলীর সংকলনটিই সঠিক ছিল বলে বিশ্বাস করে।
তৃতীয় প্রচেষ্টা - খলিফা আবুবকর এর সময়কালে: আবু বকরের সময় ইয়ামামার যুদ্ধে প্রায় ৭০ জন হাফেজে কুরআন শহীদ হন। ফলে কোরানে হাফেজরা মারা যেতে থাকলে কোরানের একটা বিরাট অংশই হারিয়ে যেতে পারে, সেই ভয় থেকে ওমরের পরামর্শে আবু বকর বহু বিবেচনার পর যায়েদ বিন সাবিতকে কুরআন সংকলনের জন্য নিযুক্ত করেন। মুসলমান ঐতিহাসিকেরা এই সঙ্কলনকে “মাসহাফে সিদ্দিকী” বলে অভিহিত করেন, যা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তা আবু বকর নিজের কাছেই রেখেছিলেন, পরবর্তীতে ওমর তা নিজের কাছে রেখেছিলেন এবং এবং অবশেষে তা ওমরের কন্যা ও নবীপত্নী হাফসা সংরক্ষণ করেন। মুসলমান ঐতিহাসিকদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এই মাসহাফে সিদ্দিকীই পরবর্তী সময়ে পবিত্র কোরআন গ্রন্থাকারে সংকলনে মূল ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, কিন্তু সে দাবী প্রামাণ্য নয়।
চতুর্থ প্রচেষ্টা - উসমান এর সময়কালে: সহী বুখারী, বই-৬১, হাদিস-৫১৩ থেকে আমরা পাই: আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস বর্ণিত - আল্লাহর নবী বলেছিলেন, জিব্রাইল আমার কাছে কোরানকে এক রীতিতে উচ্চারণ করত। অতঃপর আমি তাকে বলতাম তা অন্য রীতিতে উচ্চারণ করতে এবং সে বিভিন্ন রীতিতে তা উচ্চারণ করত এবং এভাবে সে সাতটি রীতিতে উচ্চারণ করে আমাকে শিখাত।
কাজেই দেখা যাচ্ছে সাতটি ভিন্ন উচ্চারণে কুরান নাজিল হয়েছিল। সেক্ষেত্রে কুরানকে যদি গ্রন্থাকারে সংকলিত করতেই হয়, তাহলে সেই সাতটি উচ্চারণেই কুরআন সংকলন করা হলে সেটি হতো বিশুদ্ধতম সংকলন। ভিন্ন ভিন্ন শব্দের জন্য একটি আঞ্চলিক ভাষার শব্দকোষ প্রণয়ন করেই সে সমস্যার সমাধান করা যেত, কিন্তু উসমান এবং তাঁর পরামর্শদাতারা অত্যন্ত স্বৈরাচারসুলভ মানসিকতায় এই দাবী করেন যে, মূল কুরআন আরবের কুরাইশদের ভাষায় নাযিল করা হয়েছিল, এবং আরবের বিভিন্ন অঞ্চলে আঞ্চলিক ভাষায় কুরআন পাঠ অব্যাহত থাকলে তার মূল অর্থ বিকৃত হতে পারে। কার্যত দেখা যায় যে, যায়েদের সঙ্কলন, অন্যান্য সাহাবাদের সঙ্কলন এবং বিভিন্ন সাহাবাদের মুখস্থ করা সুরা ও আয়াতের অসামঞ্জস্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। উসমান যায়েদের প্রথম সংকলনটিকে মূল কপি হিসেবে ধরে নিয়ে নিজের একটি সংকলন তৈরি করেন, এবং তার বিভিন্ন কপি খেলাফতের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠিয়ে দেন। একই সঙ্গে উসমান বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আঞ্চলিক ভাষায় লিখিত কুরআনের বিভিন্ন সংস্করণগুলো সংগ্রহ করে জ্বালিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু উসমানের এই প্রমিত কোরআন সর্বজন স্বীকৃত হয়নি,কারণ এই কোরান সংকলিত হয়েছে খুবই এলোমেলো ও স্বেচ্ছাচারিভাবে। ধারনা করা হয় উসমান এই কোরআন নিজের সুবিধামত সংকলিত করেছিলেন, যে-কারণে পরবর্তীতে ধর্মান্ধ জিহাদিরা তাকে নিতান্ত নির্দয়ভাবে খুন করে। রাজমের আয়াত, রাগবাতের আয়াত, জিহাদের আয়াত, আয়াতে ফারাশ ইত্যাদি আয়াতগুলি নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে রয়েছে প্রবল বিভ্রান্তি; নবীর মৃত্যুর পরপরই ছাগল আয়াত খেয়ে নেয়ার কারণেও আয়াত বাদ পড়ে যায়। এ প্রসঙ্গে সহিহ হাদিসও আছে।
আয়শা বর্ণিত - পাথর মারা ও প্রাপ্ত বয়স্কদেরকে স্তন্য পান করানোর বিষয়ে যে আয়াত নাযিল হয়েছিল, তা একটা পাতায় লিখে আমার বিছানার নিচে রাখা হয়েছিল। যখন নবী মারা গেলেন আর আমরা তার দাফন নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, তখন একটা ছাগল ঘরে ঢুকে আয়াত লেখা পাতা খেয়ে ফেলে। [ইবনে মাজা, হাদিস-১৯৩৪]
খলিফা হওয়ার পর আলী ওসমানের সংকলনে অসঙ্গতির কথাগুলো জোরালোভাবে তুলে ধরেন, একটি নতুন সংকলনের চেষ্টাও করেন, কিন্তু বিভিন্ন সাহাবা, নবীপত্নী আয়েশা ও অন্যান্যদের প্রবল বিরোধিতার কারনে শেষাবধি উসমানের সংকলনটিই টিকে থাকে।
উসমানের এই সংকলনটিও সঠিকভাবে সংরক্ষিত হয়নি। তিনটি প্রাচীন সংস্করণ আমরা দেখি: কুফি হরফে লেখা, উজবেকিস্তানের তাসখন্দে সংরক্ষিত কোরআনটিতে উসমানের রক্তের ছাপ আছে বলে কথিত হলেও সেটি প্রামাণ্য নয়। তাছাড়া এই কোরআনটিতে বানান ভুল পরিলক্ষিত হয় এবং এর অনেক আয়াত হারিয়ে গেছে। তুরস্কের ইস্তাম্বুলের টপকাপিতে সংরক্ষিত কোরআনটিরও কোন প্রামাণ্যতা নেই, কারণ এর বয়স নির্ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা আজও করতে দেয়া হয়নি। কাজেই এগুলোর কোনোটাই যে উসমানের সমসাময়িক কালের, তা নির্দিষ্টভাবে ভাবে প্রমাণ করা যায় না। ১৯৭৬ সালে ইয়েমেনের সানা'র মসজিদে পাওয়া কোরআনটি সবচাইতে প্রাচীন বলে কথিত এবং এর সাথে বর্তমানে প্রচলিত কোরআনের বেশ কিছু অসঙ্গতি পাওয়া গেছে বলেই বোদ্ধা মহলে কথিত। কিন্তু এই কোরআনটি নিয়েও কোনো গবেষণা বা বিতর্কের পথটি মুসলমান সমাজ কর্তৃক নিষিদ্ধ।
পরবর্তীকালে সংরক্ষণ: উমাইয়া খেলাফতে কালে অনারবদের নিকট কুরআনকে সহজসাধ্য করে তুলতে আবুল আসওয়াদ আদ দোয়াইলী ফারাহ প্রমুখ ব্যাকরণবিদদের সহায়তায় হাজ্জাজ বিন ইউসুফ আল কুরআনে নুকতা এবং হরকত সংযোজন করেন, তবে এটিও বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন