লিখেছেন গোলাপ
পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩ > পর্ব ১৪ > পর্ব ১৫ > পর্ব ১৬ > পর্ব ১৭ > পর্ব ১৮ > পর্ব ১৯ > পর্ব ২০ > পর্ব ২১ > পর্ব ২২ > পর্ব ২৩ > পর্ব ২৪ > পর্ব ২৫ > পর্ব ২৬ > পর্ব ২৭ > পর্ব ২৮ > পর্ব ২৯ > পর্ব ৩০ > পর্ব ৩১ > পর্ব ৩২ > পর্ব ৩৩ > পর্ব ৩৪ > পর্ব ৩৫ > পর্ব ৩৬ > পর্ব ৩৭ > পর্ব ৩৮ > পর্ব ৩৯> পর্ব ৪০ > পর্ব ৪১ > পর্ব ৪২ > পর্ব ৪৩ > পর্ব ৪৪ > পর্ব ৪৫ > পর্ব ৪৬ > পর্ব ৪৭ > পর্ব ৪৮ > পর্ব ৪৯ > পর্ব ৫০ > পর্ব ৫১ > পর্ব ৫২ > পর্ব ৫৩ > পর্ব ৫৪ > পর্ব ৫৫ > পর্ব ৫৬ > পর্ব ৫৭ > পর্ব ৫৮ > পর্ব ৫৯ > পর্ব ৬০ > পর্ব ৬১ > পর্ব ৬২ > পর্ব ৬৩ > পর্ব ৬৪ > পর্ব ৬৫ > পর্ব ৬৬ > পর্ব ৬৭ > পর্ব ৬৮ > পর্ব ৬৯
ওহুদ যুদ্ধে স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর গৌরব কীভাবে ধূলিসাৎ হয়েছিল এবং তাঁর অধিকাংশ অনুসারীরা তাঁকে যুদ্ধ ময়দানে পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে ইতস্তত ও দিকভ্রান্ত অবস্থায় ঊর্ধ্বশ্বাসে কীভাবে পলায়ন করেছিলেন, তার আলোচনা আগের পর্বে করা হয়েছে।
"হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর চরিত্রে কী কী দোষ ছিল এবং তিনি কী কী অন্যায় সাধন করেছেন?"
পৃথিবীর সকল মুহাম্মদ-অনুসারীদেরকে যদি কেউ এই অতি সাধারণ প্রশ্নটি করেন, তবে সেই প্রশ্নকারী নিঃসন্দেহে মুহাম্মদ-অনুসারীদের রোষানলের (পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়) শিকার হবেন। কিন্তু জগতের যে কোনো মুহাম্মদ-অনুসারীকে যদি প্রশ্ন করা হয়,
"হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর চরিত্রে গুণাবলী কী কী এবং তিনি কী কী মহৎ কর্ম সাধন করেছেন?"
আমি নিশ্চিত যে, একজন অক্ষরজ্ঞানহীন সাধারণ মুহাম্মদ-অনুসারীও এই প্রশ্নের জবাবে সত্য-মিথ্যায় সমৃদ্ধ মুহাম্মদের অনেক "মহিমাকীর্তন"করতে পারবেন; একজন প্রাথমিক স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীও এ বিষয়ে পাঁচ-দশ পৃষ্ঠার রচনা লিখতে পারবেন; আর উচ্চশিক্ষিত ইসলামের অপণ্ডিত ও পণ্ডিতরা পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা রচনা করতে ও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বক্তৃতা ও বয়ান করতে পারবেন।
কিন্তু তাঁদেরকে যদি "মাত্র দু’টি শব্দে (Word)” মুহাম্মদের চরিত্রের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করতে বলা হয়, তাহলে তাঁদের অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে বিভিন্ন রকমের মহিমাময় শব্দ উদ্ধৃত করবেন। আর আমাকে যদি এই প্রশ্নটি করা হয়, তাহলে আমার নিঃসন্দেহ জবাব হবে,
"একনিষ্ঠতা ও একাগ্রতা (Devotion and Concentration)"।
মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য সাধনের নিমিত্তে সর্বদাই ছিলেন একনিষ্ঠ ও একাগ্র। তাঁর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল নিজেকে নবী হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা। এটিই ছিল তাঁর অনুক্ষণের চিন্তা (Obsession) ও প্রচেষ্টা। নবী-জীবনের বিভিন্ন ঘটনাবহুল পরিস্থিতিতে মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহর চরিত্রের এই বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ অত্যন্ত স্পষ্ট।
ওহুদ যুদ্ধের পর্যালোচনায় আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি যে, মুসলমানদের চরম বিপর্যয়ের সময় আল্লাহর নামে মুহাম্মদের প্রতিশ্রুত ফেরেশতাকুলের আগমন ও আল্লাহর সাহায্যের দাবি মিথ্যা প্রতিপন্ন হওয়ার পর মুহাম্মদ তাঁর “ভূলুণ্ঠিত নবী-গৌরব” পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টায় ব্রতী হন।
নিজে আহত ও পর্যুদস্ত হওয়া সত্ত্বেও ওহুদ যুদ্ধের পরের দিন প্রত্যুষে তিনি তাঁর হৃতগৌরব পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় ঘোষক মারফত ওহুদ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অনুসারীদের কীভাবে আবু-সুফিয়ান ও তাঁর সৈন্যদলের পশ্চাদ্ধাবন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন, তার বিস্তারিত আলোচনা "হামরা আল-আসাদ অভিযান পর্বে" করা হয়েছে (পর্ব-৬৮)।
ঠিক কতজন অনুসারী তাঁর সেই আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলেন, তার কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ সাল) ও আবু জাফর আল-তাবারী (৮৩৯-৯২৩ সাল) তাঁদের বর্ণনার কোথাও উল্লেখ করেননি। কিন্তু ইমাম বুখারীর (৮১০-৮৭০ সাল) বর্ণনায় আমরা জানতে পারি যে, তিনি তাঁর অনুসারীদের মধ্য থেকে এই উদ্দেশ্যে ৭০ জনকে বাছাই করেন(৫:৫৯:৪০৪)। [1]
পৃথিবীর অধিকাংশ মুহাম্মদ-অনুসারীই ইমাম বুখারীর বর্ণনাকে কুরানের পরেই ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য দলিল বলে আখ্যায়িত করেন। তারই ভিত্তিতে আমরা ধারণা করতে পারি যে, সেইদিন মুহাম্মদ তাঁর ৭০ জন অনুসারীকে সঙ্গে নিয়ে ২৯৭৮ জন কুরাইশ সৈন্যকে অনুসরণ করেছিলেন।
যে-সমস্ত ঐতিহাসিক মনে করেন যে মুহাম্মদের এই অভিযানটি শত্রুপক্ষকে শক্তি প্রদর্শনের এক মুহাম্মাদী কৌশল, তাঁরা, বোধ করি, ভুলে যান যে, আবু-সুফিয়ান ও তাঁর সৈন্যদল মুসলমানদের চরম বিপর্যস্ত ও পর্যুদস্ত অবস্থা প্রত্যক্ষ করেই ওহুদ প্রান্তর ত্যাগ করেছিলেন (পর্ব-৬৯)।
আর সেই ঘটনার পরদিন ৭০ জন বিপর্যস্ত ও পরাজিত অনুসারীদের সঙ্গে নিয়ে বিজিত ২৯৭৮ জন কুরাইশ সৈন্যকে মুহাম্মদের শক্তিমত্তার পরিচয় প্রদান করতে যাওয়া যে "আবু-সুফিয়ান কে দেখানোর জন্য নয়",তা প্রায় নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। মুহাম্মদের হামরা আল-আসাদ যাত্রার মুখ্য উদ্দেশ্য - মুসলমানদের মনোবল চাঙা ও তাঁর নেতৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা।
মুহাম্মদ ছিলেন এক পিতৃ-মাতৃহীন অনাথ। পিতৃ-মাতৃহীন অনাথ বালকের অবস্থান থেকে সমাজের 'সর্বময় কর্তা' হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস কখনোই মসৃণ নয়। মুহাম্মদের জীবনেও তা ছিল না। তিনি তাঁর কর্মময় নবী-জীবনে বহু বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। আর সেই বাধাকে অতিক্রান্ত করার প্রচেষ্টায় তিনি বিভিন্ন কলা-কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন।
উদ্দেশ্য সাধনের বাহন হিসাবে তিনি সৃষ্টি করেছেন "তাঁর আল্লাহকে।" সেই আল্লাহর নামে তিনি (ও তাঁর অনুসারীদের সহায়তায়) রচনা করেছেন শ্লোক; শুনিয়েছেন সেই শ্লোকের বাণী তাঁর চারপাশের মানুষদের। (পর্ব ১৭-১৯)।
তাঁর আগ্রাসী প্রচারণার বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষের কটাক্ষ ও সমালোচনার জবাব প্রদানের বাহন হিসাবে তিনি তাঁর সৃষ্ট "আল্লাহর নামে" রচনা করেছেন শ্লোক। নিজের প্রাধান্য বিস্তার ও অনুসারীদের উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে তিনি আল্লাহর নামে অলৌকিক কাহিনীর অবতারণা করেছেন; প্রতিপক্ষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, ভীতি-প্রদর্শন, শাপ-অভিশাপ করেছেন যথেচ্ছ; এমনকি তাঁর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যা সমাধানেও আল্লাহর নামে রচনা করেছেন শ্লোক। (পর্ব-১৬)।
তাঁর নীতি ছিল, "The end justifies the means"।
তারই ফলশ্রুতিতে আমরা দেখতে পাই যে, লক্ষ্য অর্জনের অভিপ্রায়ে তিনি সর্বজনবিদিত গর্হিত অপরাধকেও (খুন, লুণ্ঠন, মুক্ত মানুষকে দাস-দাসীতে রূপান্তর, দাসী-ভোগ, ইত্যাদি) মহৎ কর্ম আখ্যা দিয়ে "জেহাদ” নামে তাঁর মতবাদে স্থান দিয়েছেন।
আল্লাহর নামে রচিত মুহাম্মদের এ সব শ্লোক স্বাভাবিকভাবেই রচিত হয়েছে সর্বজনবিদিত কোনো বিষয়, তাঁর জানা কোনো বিষয় ও অনুমানের ভিত্তিতে। (পর্ব ১-৯)।
অথবা সেসব রচিত হয়েছে তাঁরই জীবনের কোনো ঘটনা কিংবা তাঁর সমসাময়িক চারপাশের কোনো বিশেষ ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর।
অর্থাৎ কোনো নির্দিষ্ট ঘটনা প্রত্যক্ষ ও পর্যবেক্ষণ করে তার ফলাফল জানার পর মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ তাঁর আল্লাহর নামে "ওহী বার্তা" জনগণদের অবহিত করান।
ওহী নাজিলের এই প্রক্রিয়াতেইবদর যুদ্ধ শেষ ও তার ফলাফল নির্ধারিত হওয়ার পরে মুসলমানদের সফলতার কারণ হিসাবে মুহাম্মদ তাঁর কল্পিত আল্লাহর পরম করুণা ও অলৌকিকত্বের ঘোষণা দিয়ে দাবি করেছিলেন যে, তাঁর এই অলৌকিক সফলতাই হলো তাঁর সত্যবাদিতা আর কুরাইশদের মিথ্যাচারের প্রমাণ।
আর ওহুদ যুদ্ধ শেষ ও তার ফলাফল নির্ধারিত হওয়ার পরে মুসলমানদের চরম বিফলতার কারণ হিসাবে মুহাম্মদ তাঁর কল্পিত আল্লাহর নামে,
“একটি মাত্র ব্যতিক্রম ছাড়া (৩:১৬৫) মুহাম্মদ তাঁর এই পরাজয়ের সম্পূর্ণ দায়ভার তাঁর অনুসারীদের ওপর আরোপ করেন।"
তিনি দাবি করেন যে,
"---এভাবে আল্লাহ জানতে চান কারা ঈমানদার আর তিনি তোমাদের কিছু লোককে শহীদ হিসাবে গ্রহণ করতে চান।-- (৩:১৪০)।"
এই দাবি প্রমাণের জন্য মুহাম্মদ তাঁর আল্লাহর রেফারেন্সে কমপক্ষে ৬০ টি বাণী অবতারণা করেন।
মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের (৭০৪-৭৬৮) বর্ণনা:
“মুহাম্মদ বিন ইশাক আল-মুত্তালিবি হইতে > যিয়াদ বিন আবদুল্লাহ আল বাক্কাই হইতে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আবু মুহাম্মদ আবদুল মালিক বিন হিশাম আমাদের জানিয়েছেন:
ওহুদ যুদ্ধের দিন যা ঘটেছিল, তারই বর্ণনা ও তীব্র তিরস্কারযোগ্য ব্যক্তিদের প্রসঙ্গে আল্লাহপাক সুরা ইমরানে ৬০ টি আয়াত নাজিল করে।” [2] [3]
>>> আর, সেই বাণীগুলোর মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন কলা-কৌশলে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে,
“তাঁর অনুসারীদের ইমানের দুর্বলতার কারণেই এই চরম বিপর্যয় ও পরাজয় ঘটেছে!”
তারপর তিনি তাঁর অনুসারীদের আহ্বান করেন যে, তারা যেন তাদের সেই ইমানের দুর্বলতা স্বীকার করে নিয়ে আল্লাহ "এবং” তাঁর বশ্যতা স্বীকার করে।
আল্লাহর নামে তিনি তাঁর অনুসারীদের বিভিন্ন সান্ত্বনার বাণী শোনান; হুমকি-শাসানী-ভীতি প্রদর্শন করেন; করেন অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে বিষোদগার ও তাঁর শক্তিমত্তার আস্ফালন; তাদেরকে বেহেশতের প্রলোভন দেন ও দাবি করেন যে, ওহুদ যুদ্ধে যারা নিহত, তারা মৃত নয়, বরং তারা জীবিত এবং আল্লাহর দরবারে তারা এখন অনন্ত সুখে অবস্থান করছেন এবং সর্বোপরি,
“আল্লাহর নামে নিজেই নিজের যথেচ্ছ প্রশংসা ও গুণকীর্তন করে নিজেই নিজের কর্তৃত্বের অনুমোদন দেন।”
মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহর ভাষায় সেই বাণীগুলো হলো:
“তিনি” পরিজনদের কাছ থেকে বের হলেন:
৩:১২১ - আর আপনি যখন পরিজনদের কাছ থেকে সকাল বেলা বেরিয়ে গিয়ে মুমিনগণকে যুদ্ধের অবস্থানে বিন্যস্ত করলেন, আর আল্লাহ সব বিষয়েই শোনেন এবং জানেন।
ফেরেশতার সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দান ও তা মিথ্যা প্রমাণিত:
৩:১২২-১২৪ - যখন তোমাদের দুটি দল সাহস হারাবার উপক্রম হলো, অথচ আল্লাহ তাদের সাহায্যকারী ছিলেন, আর আল্লাহর উপরই ভরসা করা মুমিনদের উচিত। (১২৩)- বস্তুতঃ আল্লাহ বদরের যুদ্ধে তোমাদের সাহায্য করেছেন, অথচ তোমরা ছিলে দুর্বল। কাজেই আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হতে পারো। (১২৪)-আপনি যখন বলতে লাগলেন মুমিনগণকে-তোমাদের জন্য কি যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের সাহায্যার্থে তোমাদের পালনকর্তা আসমান থেকে অবতীর্ণ তিন হাজার ফেরেশতা পাঠাবেন।
৩:১২৫ - অবশ্য তোমরা যদি সবর কর এবং বিরত থাক আর তারা যদি তখনই তোমাদের উপর চড়াও হয়, তাহলে তোমাদের পালনকর্তা চিহ্নিত ঘোড়ার উপর পাঁচ হাজার ফেরেশতা তোমাদের সাহায্যে পাঠাতে পারেন।
>>> মুহাম্মদ এই বাণীগুলো কোন যুদ্ধ প্রসঙ্গে উদ্ধৃত করেছেন, সে ব্যাপারে ইসলামের পণ্ডিতরা একমত নন। এক পক্ষ মনে করেন যে, মুহাম্মদের এই বাণী বদর যুদ্ধ সংক্রান্ত।
অপর পক্ষ মনে করেন যে, এই বাণীগুলো বদর যুদ্ধের উদাহরণ টেনে ওহুদ যুদ্ধে দেয়া মুহাম্মদের প্রতিশ্রুতি (৩:১২৪)।
কিন্তু ওহুদ যুদ্ধে যখন মুহাম্মদের সেই দাবি মিথ্যা প্রমাণিত হয় ও মুসলমানদের চরম পরাজয় ঘটে, তখন তিনি দাবী করেন যে, এই সাহায্যের প্রতিশ্রুতি ছিল শর্তসাপেক্ষ (৩:১২৫); যেহেতু তাঁর অনুসারীরা ধৈর্যধারণ না করে পলায়ন করেছিলেন, তাই কোনো সাহায্য আসেনি। [4][5]
যার সরল অর্থ হলো - মুহাম্মদ তাঁর দেয়া প্রতিশ্রুতি ব্যর্থ হওয়ার দায়ভার চাপাচ্ছেন তাঁর অনুসারীদের উপর।
তারপর, তাঁর অনুসারীদের সান্ত্বনা ও প্রতিপক্ষকে অভিশাপ বর্ষণ:
৩:১২৬-১২৭ - বস্তুতঃ এটা তো আল্লাহ তোমাদের সুসংবাদ দান করলেন, যাতে তোমাদের মনে এতে সান্ত্বনা আসতে পারে। আর সাহায্য শুধুমাত্র পরাক্রান্ত, মহাজ্ঞানী আল্লাহরই পক্ষ থেকে, যাতে ধবংস করে দেন কোন কোন কাফেরকে অথবা লাঞ্ছিত করে দেন-যেন ওরা বঞ্চিত হয়ে ফিরে যায়।
তারপর, আল্লাহর নামে তাঁর আস্ফালন:
৩:১২৮-১২৯ - হয় আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন কিংবা তাদেরকে আযাব দেবেন। এ ব্যাপারে আপনার কোন করণীয় নাই। কারণ তারা রয়েছে অন্যায়ের উপর। (১২৯)- আর যা কিছু আসমান ও যমীনে রয়েছে, সেসবই আল্লাহর। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন, যাকে ইচ্ছা আযাব দান করবেন। আর আল্লাহ হচ্ছেন ক্ষমাকারী, করুণাময়।
মাঝে মাঝে ভাল উপদেশ:
৩:১৩০ - হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণ অর্জন করতে পারো।
তারপর, ভীতি প্রদর্শন:
৩:১৩১ - এবং তোমরা সে আগুন থেকে বেঁচে থাক, যা কাফেরদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
তারপর, তাঁর বশ্যতা স্বীকার করার আহ্বান ও প্রলোভন দান:
৩:১৩২-১৩৩ - আর তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহ এবং রসূলের, যাতে তোমাদের উপর রহমত করা হয়। (১৩৩)-তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও যমীন, যা তৈরী করা হয়েছে পরহেযগারদের জন্য।
মাঝে মাঝে আবারও ভাল উপদেশ:
৩:১৩৪-১৩৫ - যারা স্বচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে, যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে, বস্তুতঃ আল্লাহ সৎকর্মশীলদিগকেই ভালবাসেন। (১৩৫) - তারা কখনও কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা কোন মন্দ কাজে জড়িত হয়ে নিজের উপর জুলুম করে ফেললে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবেন? তারা নিজের কৃতকর্মের জন্য হঠকারিতা প্রদর্শন করে না এবং জেনে-শুনে তাই করতে থাকে না।
আবারও প্রলোভন প্রদর্শন:
৩:১৩৬ - তাদেরই জন্য প্রতিদান হলো তাদের পালনকর্তার ক্ষমা ও জান্নাত, যার তলদেশে প্রবাহিত হচ্ছে প্রস্রবণ যেখানে তারা থাকবে অনন্তকাল। যারা কাজ করে তাদের জন্য কতইনা চমৎকার প্রতিদান।
আবারও ভীতি প্রদর্শন:
৩:১৩৭-১৩৮ - তোমাদের আগে অতীত হয়েছে অনেক ধরনের জীবনাচরণ। তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে তাদের পরিণতি কি হয়েছে। (১৩৮) -এই হলো মানুষের জন্য বর্ণনা। আর যারা ভয় করে তাদের জন্য উপদেশবাণী।
আবারও সান্ত্বনা দান:
৩:১৩৯ - আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও তবে, তোমরাই জয়ী হবে।
তারপর, পরাজয়ের "অজুহাত" প্রদর্শন:
৩:১৪০ - তোমরা যদি আহত হয়ে থাক, তবে তারাও তো তেমনি আহত হয়েছে। আর এ দিনগুলোকে আমি মানুষের মধ্যে পালাক্রমে আবর্তন ঘটিয়ে থাকি। এভাবে আল্লাহ জানতে চান কারা ঈমানদার আর তিনি তোমাদের কিছু লোককে শহীদ হিসাবে গ্রহণ করতে চান।
আর আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে ভালবাসেন না।
>>> "এভাবে আল্লাহ জানতে চান"! মানেটা কী? আল্লাহ কি আগে জানতেন না কারা ইমানদার? এই অনন্ত মহাবিশ্বের স্রষ্টাকে (যদি থাকে) নিয়ে মুহাম্মদের কী অদ্ভুত ও শোচনীয় তামাশা!
অজুহাতের পর অজুহাত:
৩:১৪১ - আর এ কারণে আল্লাহ ঈমানদারদেরকে পাক-সাফ করতে চানএবং কাফেরদেরকে ধবংস করে দিতে চান।
তারপর অনুসারীদের উপর আবারও তাঁর ব্যর্থতার দায়ভার চাপানোর চেষ্টা:
৩:১৪২-১৪৪ - তোমাদের কি ধারণা, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ এখনও দেখেননি তোমাদের মধ্যে কারা জেহাদ করেছে এবং কারা ধৈর্য্যশীল।(১৪৩)- আর তোমরা তো মৃত্যু আসার আগেই মরণ কামনা করতে, কাজেই এখন তো তোমরা তা চোখের সামনে উপস্থিত দেখতে পাচ্ছ। (১৪৪)- আর মুহাম্মদ একজন রসূল বৈ তো নয়! তাঁর পূর্বেও বহু রসূল অতিবাহিত হয়ে গেছেন। তাহলে কি তিনি যদি মৃত্যুবরণ করেন অথবা নিহত হন, তবে তোমরা পশ্চাদপসরণ করবে? বস্তুতঃ কেউ যদি পশ্চাদপসরণ করে, তবে তাতে আল্লাহর কিছুই ক্ষতি-বৃদ্ধি হবে না। আর যারা কৃতজ্ঞ, আল্লাহ তাদের সওয়াব দান করবেন।
আল্লাহর নামে তাঁর আস্ফালন:
৩:১৪৫- আর আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ মরতে পারে না-সেজন্য একটা সময় নির্ধারিত রয়েছে। বস্তুতঃ যে লোক দুনিয়ায় বিনিময় কামনা করবে, আমি তাকে তা দুনিয়াতেই দান করব। পক্ষান্তরে-যে লোক আখেরাতে বিনিময় কামনা করবে, তা থেকে আমি তাকে তাই দেবো। আর যারা কৃতজ্ঞ তাদেরকে আমি প্রতিদান দেবো
তারপর, খুন ও যুদ্ধের (জেহাদ) উৎসাহ প্রদান ও প্রলোভন প্রদর্শন:
৩:১৪৬-১৫০ - আর বহু নবী ছিলেন, যাঁদের সঙ্গী-সাথীরা তাঁদের অনুবর্তী হয়ে জেহাদ করেছে; আল্লাহর পথে-তাদের কিছু কষ্ট হয়েছে বটে, কিন্তু আল্লাহর রাহে তারা হেরেও যায়নি, ক্লান্তও হয়নি এবং দমেও যায়নি। আর যারা সবর করে, আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন। (১৪৭)-তারা আর কিছুই বলেনি-শুধু বলেছে, হে আমাদের পালনকর্তা! মোচন করে দাও আমাদের পাপ এবং যা কিছু বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে আমাদের কাজে। আর আমাদিগকে দৃঢ় রাখ এবং কাফেরদের উপর আমাদিগকে সাহায্য কর। (১৪৮)- অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়ার সওয়াব দান করেছেন এবং যথার্থ আখেরাতের সওয়াব। আর যারা সৎকর্মশীল আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন। (১৪৯)- হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি কাফেরদের কথা শোন, তাহলে ওরা তোমাদেরকে পেছনে ফিরিয়ে দেবে, তাতে তোমরা ক্ষতির সম্মুখীণ হয়ে পড়বে। (১৫০) -বরং আল্লাহ তোমাদের সাহায্যকারী, আর তাঁর সাহায্যই হচ্ছে উত্তম সাহায্য।
তারপর, প্রতিপক্ষকে মুহাম্মদের হুমকি-শাসানী ও ভীতি প্রদর্শন:
৩:১৫১: - খুব শীঘ্রই আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করবো।কারণ, ওরা আল্লাহর সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করে যে সম্পর্কে কোন সনদ অবতীর্ণ করা হয়নি। আর ওদের ঠিকানা হলো দোযখের আগুন। বস্তুতঃ জালেমদের ঠিকানা অত্যন্ত নিকৃষ্ট।
তারপর, খুনের উৎসাহ প্রদান ও ব্যর্থতার দায়ভার অনুসারীদের উপর চাপানোর চেষ্টা:
৩:১৫২ - আর আল্লাহ সে ওয়াদাকে সত্যে পরিণত করেছেন, যখন তোমরা তাঁরই নির্দেশে ওদের খতম করছিলে। এমনকি যখন তোমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছে ও কর্তব্য স্থির করার ব্যাপারে বিবাদে লিপ্ত হয়েছে। আর যা তোমরা চাইতে তা দেখার পর কৃতঘ্নতা প্রদর্শন করেছ,তাতে তোমাদের কারো কাম্য ছিল দুনিয়া আর কারো বা কাম্য ছিল আখেরাত। অতঃপর তোমাদিগকে সরিয়ে দিলেন ওদের উপর থেকে যাতে তোমাদিগকে পরীক্ষা করেন। বস্তুতঃ তিনি তোমাদিগকে ক্ষমা করেছেন। আর আল্লাহর মুমিনদের প্রতি অনুগ্রহশীল।
অনুসারীরা তাঁকে পরিত্যক্ত অবস্থায় কী ভাবে ফেলে গিয়েছিলেন তার বর্ণনা (পর্ব-৬৯):
৩:১৫৩- আর তোমরা উপরে উঠে যাচ্ছিলে এবং পেছন দিকে ফিরে তাকাচ্ছিলে না কারো প্রতি, অথচ রসূল ডাকছিলেন তোমাদিগকে তোমাদের পেছন দিক থেকে। অতঃপর তোমাদের উপর এলো শোকের ওপরে শোক, যাতে তোমরা হাত থেকে বেরিয়ে যাওয়া বস্তুর জন্য দুঃখ না কর এবং যার সম্মুখীণ হচ্ছ সেজন্য বিমর্ষ না হও। আর আল্লাহ তোমাদের কাজের ব্যাপারে অবহিত রয়েছেন।
৩:১৫৪:
অলৌকিক কিচ্ছার অবতারণা (পর্ব: ২৩-২৫):
“অতঃপর তোমাদের উপর শোকের পর শান্তি অবতীর্ণ করলেন, যা ছিল তন্দ্রার মত। সে তন্দ্রায় তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ ঝিমোচ্ছিল আর কেউ কেউ প্রাণের ভয়ে ভাবছিল”।
তারপর, অনুসারীদের উপর আবারও তাঁর ব্যর্থতার দায়ভার চাপানোর চেষ্টা:
“আল্লাহ সম্পর্কে তাদের মিথ্যা ধারণা হচ্ছিল মুর্খদের মত। তারা বলছিল আমাদের হাতে কি কিছুই করার নেই? তুমি বল, সবকিছুই আল্লাহর হাতে। তারা যা কিছু মনে লুকিয়ে রাখে-তোমার নিকট প্রকাশ করে না সে সবও। তারা বলে আমাদের হাতে যদি কিছু করার থাকতো, তাহলে আমরা এখানে নিহত হতাম না।
তারপর, নো সেন্স ও ননসেন্স কথাবার্তা (পর্ব-২২)!
“তুমি বল, তোমরা যদি নিজেদের ঘরেও থাকতে তবুও তারা অবশ্যই বেরিয়ে আসত নিজেদের অবস্থান থেকে যাদের মৃত্যু লিখে দেয়া হয়েছে। তোমাদের বুকে যা রয়েছে তার পরীক্ষা করা ছিল আল্লাহর ইচ্ছা আর তোমাদের অন্তরে যা কিছু রয়েছে তা পরিষ্কার করা ছিল তাঁর কাম্য। আল্লাহ মনের গোপন বিষয় জানেন।
তারপর, আবারও তাঁর ব্যর্থতার দায়ভার অনুসারীদের উপর চাপানোর চেষ্টা:
৩:১৫৫ - তোমাদের যে দুটি দল লড়াইয়ের দিনে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল শয়তান তাদেরকে বিভ্রান্ত করেছিল, তাদেরই পাপের দরুন।
তারপর, আবারও খুন ও যুদ্ধের (জেহাদ) উৎসাহ প্রদান ও প্রলোভন প্রদর্শন:
৩:১৫৬-১৫৮ - হে ঈমাণদারগণ! তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা কাফের হয়েছে এবং নিজেদের ভাই বন্ধুরা যখন কোন অভিযানে বের হয় কিংবা জেহাদে যায়, তখন তাদের সম্পর্কে বলে, তারা যদি আমাদের সাথে থাকতো, তাহলে মরতোও না আহতও হতো না। যাতে তারা এ ধারণা সৃষ্টির মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের মনে অনুতাপ সৃষ্টি করতে পারে। অথচ আল্লাহই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু দেন। তোমাদের সমস্ত কাজই, তোমরা যা কিছুই কর না কেন, আল্লাহ সবকিছুই দেখেন। (১৫৭) আর তোমরা যদি আল্লাহর পথে নিহত হও কিংবা মৃত্যুবরণ কর, তোমরা যা কিছু সংগ্রহ করে থাক আল্লাহ তা’আলার ক্ষমা ও করুণা সে সবকিছুর চেয়ে উত্তম। (১৫৮) -আর তোমরা মৃত্যুই বরণ কর অথবা নিহতই হও, অবশ্য আল্লাহ তা’আলার সামনেই সমবেত হবে।
মুহাম্মদ নিজেই নিজের গুণকীর্তন করেন ও তাঁর কর্তৃত্বের অনুমোদন দেন:
৩:১৫৯- আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেনপক্ষান্তরে আপনি যদি রাগ ও কঠিন হৃদয় হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো। কাজেই আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য মাগফেরাত কামনা করুন এবং কাজে কর্মে তাদের পরামর্শ করুন। অতঃপর যখন কোন কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেন, তখন আল্লাহ তা’আলার উপর ভরসা করুন আল্লাহ তাওয়াক্কুল কারীদের ভালবাসেন।
তারপর, আবারও খুন ও যুদ্ধের উৎসাহ প্রদান:
৩:১৬০-১৬৩: যদি আল্লাহ তোমাদের সহায়তা করেন, তাহলে কেউ তোমাদের উপর পরাক্রান্ত হতে পারবে না। আর যদি তিনি তোমাদের সাহায্য না করেন, তবে এমন কে আছে, যে তোমাদের সাহায্য করতে পারে? আর আল্লাহর ওপরই মুসলমানগনের ভরসা করা উচিত।(১৬১)- আর কোন বিষয় গোপন করে রাখা নবীর কাজ নয়। আর যে লোক গোপন করবে সে কিয়ামতের দিন সেই গোপন বস্তু নিয়ে আসবে। অতঃপর পরিপূর্ণভাবে পাবে প্রত্যেকে, যা সে অর্জন করেছে। আর তাদের প্রতি কোন অন্যায় করা হবে না। (১৬২)- যে লোক আল্লাহর ইচ্ছার অনুগত, সে কি ঐ লোকের সমান হতে পারে, যে আল্লাহর রোষ অর্জন করেছে? বস্তুতঃ তার ঠিকানা হল দোযখ। আর তা কতইনা নিকৃষ্ট অবস্থান! (১৬৩)- আল্লাহর নিকট মানুষের মর্যাদা বিভিন্ন স্তরের আর আল্লাহ দেখেন যা কিছু তারা করে।
আবারও মুহাম্মদের নিজেই নিজের গুণকীর্তন:
৩:১৬৪- আল্লাহ ঈমানদারদের উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে নবী পাঠিয়েছেন। তিনি তাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন। তাদেরকে পরিশোধন করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও কাজের কথা শিক্ষা দেন। বস্তুতঃ তারা ছিল পূর্ব থেকেই পথভ্রষ্ট।
পরাজয়ের কারণ, "মুহাম্মদের ভুল” - বদর যুদ্ধে বন্দীদের খুন না করে মুক্তিপণ গ্রহণ:
৩:১৬৫- যখন তোমাদের উপর একটি মুসীবত এসে পৌছাল, অথচ তোমরা তার পূর্বেই দ্বিগুণ কষ্টে পৌছে গিয়েছ, তখন কি তোমরা বলবে, এটা কোথা থেকে এল? তাহলে বলে দাও, এ কষ্ট তোমাদের উপর পৌছেছে তোমারই পক্ষ থেকে।নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ের উপর ক্ষমতাশীল।
>>> 'ইবনে আবি হাতিম নথিভুক্ত করেছেন যে, ওমর ইবনে খাত্তাব বলেছেন, "বদর যুদ্ধের এক বছর পর যখন ওহুদ যুদ্ধ সংঘটিত হয়, তখন মুসলমানেরা শাস্তি ভোগ করে এই কারণে যে, তারা বন্দীদের মুক্তির জন্য অবিশ্বাসীদের কাছ থেকে মুক্তিপণ গ্রহণ করেছিল”। (পর্ব-৩৬)।
উপরন্তু, মুহাম্মদ বিন ইশাক, ইবনে জুরায়েজ, আর-রাবি বিন আনাস এবং আস-সুদদি বলেন যে, এই আয়াতটির (বলো, "এটি তোমারই নিজের পক্ষ থেকে") মানে হলো, কারণ তোমরা তীরন্দাজরা আল্লাহর নবীর হুকুম অমান্য করে সেই স্থান পরিত্যাগ করে।’ [6][7]
তারপর, আবারও তাঁর ব্যর্থতার দায়ভার অনুসারীদের ওপর চাপানোর চেষ্টা:
৩:১৬৬-১৬৭- আর যেদিন দু’দল সৈন্যের মোকাবিলা হয়েছে; সেদিন তোমাদের উপর যা আপতিত হয়েছে তা আল্লাহর হুকুমেই হয়েছে এবং তা এজন্য যে, তাতে ঈমানদারদিগকে জানা যায়। (১৬৭)- এবং তাদেরকে যাতে সনাক্ত করা যায় যারা মুনাফিক ছিল।আর তাদেরকে বলা হল এসো, আল্লাহর রাহে লড়াই কর কিংবা শত্রুদিগকে প্রতিহত কর। তারা বলেছিল, আমরা যদি জানতাম যে, লড়াই হবে, তাহলে অবশ্যই তোমাদের সাথে থাকতাম। সে দিন তারা ঈমানের তুলনায় কুফরীর কাছাকাছি ছিল। যা তাদের অন্তরে নেই তারা নিজের মুখে সে কথাই বলে বস্তুতঃআল্লাহ ভালভাবে জানেন তারা যা কিছু গোপন করে থাকে।
>>> এখানে মুহাম্মদ তাঁর পরাজয়ের দায়ভার 'আবদুল্লাহ বিন উবাই ও তাঁর অনুসারীদের' ওপর চাপানোর চেষ্টা করছেন। আবদুল্লাহ বিন উবাই মদিনা ছেড়ে আগ বাড়িয়ে ওহুদ প্রান্তে গিয়ে কুরাইশদের সাথে যুদ্ধে জড়াতে রাজী ছিলেন না (পর্ব-৫৫)।[8]
কিন্তু, মুহাম্মদের এই অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয় এই কারণে যে, বদর যুদ্ধেও কিছু মুহাম্মদ-অনুসারী যুদ্ধে জড়াতে চাননি (পর্ব-৩০); তা সত্ত্বেও মুসলমানেরা যুদ্ধে জয়লাভ করেছিলেন, মুহাম্মদের দাবিকৃত "ফেরেশতাকুলের সাহায্যে।"
মুহাম্মদের ভাষায়:
৮:৫-৭ - যেমন করে তোমাকে তোমার পরওয়ারদেগার ঘর থেকে বের করেছেন ন্যায় ও সৎকাজের জন্য, অথচ ঈমানদারদের একটি দল (তাতে) সম্মত ছিল না। (৬)- তারা তোমার সাথে বিবাদ করছিল সত্য ও ন্যায় বিষয়ে, তা প্রকাশিত হবার পর; তারা যেন মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে দেখতে দেখতে। (৭) -আর যখন আল্লাহ দু’টি দলের একটির ব্যাপারে তোমাদের সাথে ওয়াদা করেছিলেন যে, সেটি তোমাদের হস্তগত হবে, আর তোমরা কামনা করছিলে যাতে কোন রকম কন্টক নেই, তাই তোমাদের ভাগে আসুক; অথচ আল্লাহ চাইতেন সত্যকে স্বীয় কালামের মাধ্যমে সত্যে পরিণত করতে এবং কাফেরদের মূল কর্তন করে দিতে। [9][10]
আবারও নো সেন্স ও ননসেন্স কথাবার্তা!
৩:১৬৮-১৬৯ - ওরা হলো যে সব লোক, যারা বসে থেকে নিজেদের ভাইদের সম্বদ্ধে বলে, যদি তারা আমাদের কথা শুনত, তবে নিহত হত না। তাদেরকে বলে দিন, এবার তোমাদের নিজেদের উপর থেকে মৃত্যুকে সরিয়ে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক।
আবারও প্রলোভন প্রদর্শন:
৩:১৬৯-১৭১ - আর যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয়, তাদেরকে তুমি কখনো মৃত মনে করো না। বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত।(১৭০)- আল্লাহ নিজের অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন তার প্রেক্ষিতে তারা আনন্দ উদযাপন করছে। আর যারা এখনও তাদের কাছে এসে পৌঁছেনি তাদের পেছনে তাদের জন্যে আনন্দ প্রকাশ করে। কারণ, তাদের কোন ভয় ভীতিও নেই এবং কোন চিন্তা ভাবনাও নেই। (১৭১) -আল্লাহর নেয়ামত ও অনুগ্রহের জন্যে তারা আনন্দ প্রকাশ করে এবং তা এভাবে যে, আল্লাহ, ঈমানদারদের শ্রমফল বিনষ্ট করেন না।
তারপর, হামরা আল-আসাদ অভিযান প্রসঙ্গে মুহাম্মদের বক্তব্য:
৩:১৭২-১৭৫ - যারা আহত হয়ে পড়ার পরেও আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের নির্দেশ মান্য করেছে, তাদের মধ্যে যারা সৎ ও পরহেযগার, তাদের জন্য রয়েছে মহান সওয়াব। (১৭৩)-যাদেরকে লোকেরা বলেছে যে, তোমাদের সাথে মোকাবেলা করার জন্য লোকেরা সমাবেশ করেছে বহু সাজ-সরঞ্জাম; তাদের ভয় কর। তখন তাদের বিশ্বাস আরও দৃঢ়তর হয়ে যায় এবং তারা বলে, আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট; কতই না চমৎকার কামিয়াবীদানকারী। (১৭৪)-অতঃপর ফিরে এল মুসলমানরা আল্লাহর অনুগ্রহ নিয়ে, তাদের কিছুই অনিষ্ট হলো না।তারপর তারা আল্লাহর ইচ্ছার অনুগত হল। বস্তুতঃ আল্লাহর অনুগ্রহ অতি বিরাট। (১৭৫)- এরা যে রয়েছে, এরাই হলে শয়তান, এরা নিজেদের বন্ধুদের ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করে। সুতরাং তোমরা তাদের ভয় করো না। আর তোমরা যদি ঈমানদার হয়ে থাক, তবে আমাকে ভয় কর।
আবারও ভীতি প্রদর্শন:
৩:১৭৬ -১৭৭- আর যারা কুফরের দিকে ধাবিত হচ্ছে তারা যেন তোমাদিগকে চিন্তাম্বিত করে না তোলে। তারা আল্লাহ তা’আলার কোন কিছুই অনিষ্ট সাধন করতে পারবে না। আখেরাতে তাদেরকে কোন কল্যাণ দান না করাই আল্লাহর ইচ্ছা। বস্তুতঃ তাদের জন্যে রয়েছে মহা শাস্তি। (১৭৭)- যারা ঈমানের পরিবর্তে কুফর ক্রয় করে নিয়েছে, তারা আল্লাহ তা’আলার কিছুই ক্ষতিসাধন করতে পারবে না। আর তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি।
আবারও নো সেন্স ও ননসেন্স কথাবার্তা ও ভীতি প্রদর্শন:
৩:১৭৮ - কাফেররা যেন মনে না করে যে আমি যে, অবকাশ দান করি, তা তাদের পক্ষে কল্যাণকর। আমি তো তাদেরকে অবকাশ দেই যাতে করে তারা পাপে উন্নতি লাভ করতে পারে। বস্তুতঃ তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাজনক শাস্তি।
পরিশেষে, মুহাম্মদের নিজেই নিজের কর্তৃত্বের অনুমোদন দান ও প্রলোভন প্রদর্শন:
৩:১৭৯- নাপাককে পাক থেকে পৃথক করে দেয়া পর্যন্ত আল্লাহ এমন নন যে, ঈমানদারগণকে সে অবস্থাতেই রাখবেন যাতে তোমরা রয়েছ, আর আল্লাহ এমন নন যে, তোমাদিগকে গায়বের সংবাদ দেবেন। কিন্তু আল্লাহ স্বীয় রসূল গণের মধ্যে যাকে ইচ্ছা বাছাই করে নিয়েছেন। সুতরাং আল্লাহর ওপর এবং তাঁর রসূলগণের ওপর তোমরা প্রত্যয় স্থাপন কর। বস্তুতঃ তোমরা যদি বিশ্বাস ও পরহেযগারীর ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকে থাক, তবে তোমাদের জন্যে রয়েছে বিরাট প্রতিদান।
(চলবে)
[কুরানের উদ্ধৃতিগুলো সৌদি আরবের বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ (হেরেম শরীফের খাদেম) কর্তৃক বিতরণকৃত বাংলা তরজমা থেকে নেয়া; অনুবাদে ত্রুটি-বিচ্যুতির দায় অনুবাদকারীর। কুরানের ছয়জন বিশিষ্ট অনুবাদকারীর পাশাপাশি অনুবাদ এখানে।]
তথ্যসূত্র ও পাদটীকা:
[1] Sahi Bukhari: Volume 5, Book 59, Number 404:
[2] “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ৩৯১-৪০১ http://www.justislam.co.uk/images/Ibn%20Ishaq%20-%20Sirat%20Rasul%20Allah.pdf
[3]ইবনে কাথিরের (১৩০১-১৩৭৩ সাল) কুরান-তাফসীর
[4] Ibid ইবনে কাথিরের (১৩০১-১৩৭৩ সাল) কুরান-তাফসীর
[5] তাফসীর যালালীন ও অন্যান্য:
[6]Ibid ইবনে কাথিরের (১৩০১-১৩৭৩ সাল) কুরান-তাফসীর
[7] Sahi Bukhari: Volume 5, Book 59, Number 375:
[8] Sahi Bukhari: Volume 5, Book 59, Number 380:
[9] Ibid ইবনে কাথিরের (১৩০১-১৩৭৩ সাল) কুরান-তাফসীর
[10] তাফসীর যালালীন ও অন্যান্য:
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন