লিখেছেন সাংকৃত্যায়ন
ভূমিকম্প বিষয়টি সৃষ্টির শুরু থেকেই ছিল। বিবর্তনের ধারায় মানুষ যখন অলীক কিছুর ব্যাখ্যা দিতে পারতো না, তখন জন্ম হয়েছিল ধর্মের। প্রায় প্রতিটি ধর্মেই ভূমিকম্পের নানা ধরনের ধর্মীয় ব্যাখ্যা আছে। অধিকাংশ ধর্মের মতে, ভূমিকম্প ঈশ্বরের আদেশেই হয়ে থাকে, নয়তো ভয় দেখানোর জন্য। এই লেখার প্রথম দিকে আমরা জানবো পৃথিবীর বিভিন্ন পুরানো ধর্ম এবং মিথলজিতে ভূমিকম্পের বর্ণনা, লেখার মধ্যখানে আমরা আলোচনায় আনবো ভারতীয় উপমহাদেশের ধর্ম হিন্দু-বৌদ্ধ-জৈন ও আব্রাহামিক ধর্ম ইসলাম-খ্রিষ্টান-ইহুদিবাদে ভূমিকম্পের দৃষ্টিভঙ্গি এবং শেষে আমরা জানবো বিজ্ঞান ভূমিকম্প সম্পর্কে কী বলেছে। সেই সাথে লেখার শেষ অংশে থাকবে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যেমন- মন্দির, মসজিদ, গির্জার ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র।
ভূমিকম্পের ধর্মীয় ইতিহাস আলোচনা করবো, আর সেক্ষেত্রে গ্রীক পুরাণ আলোচনায় আসবে না, তা কখনোই হতে পারে না। গ্রীকরা বিশ্বাস করতো - ভূমিকম্পের কারণ পোসাইডোন নামের এক বৃদ্ধ দেবতা। যার মুখভর্তি দাঁড়ি, হাতে ত্রিশূল, হিংসুটে রাগান্বিত চেহেরা। পোসাইডোন থাকতো পানির নিচে।
গ্রীকরা ভয়ে তাকে পূজা করতো। নিয়মিত অর্চনা এবং উপহার দিতো। যদি কোন কারনে তিনি সন্তুষ্ট না হতেন, তবে সুনামি ভূমিকম্পের মত মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখাতেন। আর তাই পোসাইডেনকে “পৃথিবীর কম্পনকারক” নামেও ডাকা হয়।
ভুমিকম্প নিয়ে সব থেকে মজার ঘটনা পেয়েছি পশ্চিম আফ্রেকিরা মিথলজিতে। অন্যান্য সব ধর্মের মতে তারাও বিশ্বাস করে, পৃথিবী সমতল, যার একপাশে আছে বিশাল বিশাল সব পর্বত, অন্যপাশে আছে একজন বিশাল দৈত্য। সেই দৈত্যের স্ত্রী আকাশ ধরে ঝুলে থাকতো।
দৈত্যের যখন স্ত্রীর সাথে আলিঙ্গন করার ইচ্ছে হতো, তখন সে লাফ দিলে পৃথিবী কেঁপে উঠত।
অন্যদিকে পূর্ব আফ্রিকার মানুষরা বিশ্বাস করতো, এক মৎস্য-দৈত্য পিঠে একটি পাথর নিয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে। ওই পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে আছে একটি গাভী। যার শিং-এর ওপর দাঁড়িয়ে আছে পৃথিবী। মাঝে মাঝে গাভীটির ঘাড়ে ব্যথা হলে এক শিং থেকে অন্য শিং-এ পৃথিবীকে স্থানন্তরের সময় পৃথিবী কেঁপে উঠে।
আফ্রিকার অন্য কিছু মানুষ মনে করত পৃথিবীটা হল একটা দৈত্যের মাথা। গাছপালা সেই দৈত্যের চুল। মানুষ হল উকুনের মত পরজীবী।
মাঝে মধ্যে দৈত্যটি চলাচলের সময় মাথা এদিক ওদিক ঘোরালেই ভূমিকম্প দেখা দেয়।
মানুষের উৎপত্তি থেকে পৃথিবীর সব দেশেই মিথলজি ছিল। যার কিছুমাত্র পাওয়া গেলেও অধিকাংশই অনাবিষ্কৃত বলে ধরে নিতে পারি। জাপানের মিথলজিতে ভূমিকপম্পের কারণ - এক মৎস্য-দৈত্য কিংবা এক বিশাল মাগুর মাছ, যার নাম নামাজু। কাদার তলদেশে বাস করতেন দৈত্য নামাজু। কোনো কারণে নামাজু পৃথিবীতে আক্রমণ করতে চাইলে ঈশ্বর কাশিমা তাকে পাথর মেরে দূরে তাড়িয়ে দিতেন।
মাঝে মাঝে ঈশ্বর ক্লান্ত হয়ে পড়লে, কিংবা অন্য কোনো কাজে মনযোগ দিলে দৈত্য নামাজু এসে পৃথিবীকে ঝাঁকুনি দিলে ভূমিকম্প হয়। এটি জাপানের খুবই জনপ্রিয় কাহিনী। তাই মিথলজির দৈত্য নামাজুকে এখনও মনে রাখার জন্য জাপানের আবহাওয়া সংস্থার ভূমিকম্পের সতর্ক-বার্তার যন্ত্রে একটি মাছের ছবি ব্যবহার করা হয়।
বেলজিয়ামের মিথলজিতে পাওয়া যায়, মানুষ যখন খুব পাপী হয়ে ওঠে, ঈশ্বর তখন একজন রাগী দেবতাকে পৃথিবীতে পাঠায়। সেই সময় চারপাশে বাদ্যযন্ত্রের শব্দ শোনা যায়, এই শব্দের কারণেই কেঁপে ওঠে পৃথিবী। আবার নিউজিল্যান্ডের মানুষ বিশ্বাস করতো, পৃথিবী হচ্ছে একজন মা। তার গর্ভে আছেন নবাগত ঈশ্বর। যার নাম রু। মায়ের (পৃথিবীর) গর্ভে শিশু ঈশ্বর নড়াচড়া করলে পৃথিবী কেঁপে ওঠে।
অদ্ভুত সব কল্পকথার মাঝে এক সময়কার মোজাম্বিকের মানুষদের বিশ্বাস আরও অদ্ভুত। তারা মনে করত, পৃথিবী একটি জীবন্ত প্রাণী। তাই মানুষের মত পৃথিবীরও নানা সমস্যা আছে।
মাঝে মাঝে পৃথিবীর জর হলে সেই অসুস্থতার খবর মানুষকে জানানোর জন্য পৃথিবী শরীরের কাঁপুনি দিতো। যাতে ঈশ্বরের কাছে মানুষ পৃথিবীর সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করতে পারে।
অন্যদিকে মঙ্গোলিয়ার মানুষদের বিশ্বাস পৃথিবীটা একটি বিশাল ব্যাঙের পিঠের উপর বসে আছে।
ব্যাঙটি চলতে চলতে মাঝে মাঝে ঝাঁকুনি দেয়। ব্যাঙের ঝাঁকুনিতেই পৃথিবীতে ভূমিকম্প হয়।
পেরুর মিথলজিতে লেখা আছে, ঈশ্বর পৃথিবীতে আসেন মানুষের সংখ্যা ও কতজন তাকে অনুসরণ করছে, তা গুনে দেখার জন্য।
মূলত ঈশ্বর যখন হাঁটেন তার পায়ের কম্পনের কারণে ভূমিকম্প হয়। এই সময় পৃথিবীর মানুষরা "আমি এখানে আছি, আমি এখানে আছি" চিৎকার করলে ঈশ্বর তাড়াতাড়ি মানুষ গুনে দ্রুত পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে পারে।
নর্স পুরাণের বর্ণনাতে আছে, সৌন্দর্যের দেবতা বলডারকে হত্যা করায় দেবতা লকিকে একটি বিষধর সাপ মাথার ওপর দিয়ে শিকল দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। সেই সাপ তার মাথায় ক্রমাগত বিষ ঢেলে চলেছে। তার স্ত্রী সেজিন তাকে বাঁচানোর জন্য একটি পাত্রে বিষ ভরে রাখছে।
পাত্রটি পুর্ণ হয়ে গেলে সে যখন তা খালি করতে যায় তখন ক্রমাগত পড়তে থাকা বিষ থেকে নিজেকে বাচানোর জন্য লকি নাড়াচাড়া করে, ফলে ভূমিকম্প হয়।
রোমানিয়ায় বিশ্বাস করা হয়, পৃথিবীর ভিত্তি (পিলার) হল কতগুলো বিশ্বাসের স্তম্ভ। বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে আছে পৃথিবী। যখন মানুষের বিশ্বাস দুর্বল যায় পৃথিবী কেঁপে উঠে।
মধ্য আমেরিকায় মানুষরা বিশ্বাস করতো, পৃথিবী সমতল এবং তার চারপাশে চারজন দেবতা আছেন।
যখন তারা দেখতে পায় পৃথিবী জনসংখ্যা অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে, তখন তারা পৃথিবীকে একটু ঝাঁকিয়ে দেয় জনসংখ্যা কমানোর জন্য।
চীনের মিথলজিতে আছে পৃথিবীর ভিতরটা গুহার মত। যার ভিরতে একটি বিশাল ড্রাগন আছে।
ড্রাগনটি রাগান্বিত হলে পৃথিবীকে কাঁপিয়ে দেয়।
লাটভিয়ার মিথলজিতে আছে, ড্রেবখুলাস নামের একজন দেবতা হাতের মাঝে পৃথিবীকে ধরে রেখেছেন। তার এক হাত থেকে অন্য হাতে পৃথিবীকে নেওয়ার সময় পৃথিবী একটু নড়চড়ে উঠে।
আমরা এতক্ষণ দেখলাম পৃথিবীর নানা অঞ্চলের ভুমিকম্প বিষয়ে নানা মতবাদ। এবার আমরা দেখবো, ভারত উপমহাদেশে ভূমিকম্প নিয়ে প্রচলিত ধারণা, বিশ্বাস এবং মিথোলজির কথা। তবে এতক্ষণ পর্যন্ত যা বলেছি, তা বিশ্বাস না করলেও চলবে। কারণ এসব কথা সব বানানো গল্প এবং মানুষকে বোকা বানানোর ইতিহাস। কিন্তু নিচে বর্তমানে সময়ের প্রধান ধর্মগুলিতে বর্ণনা তুলে ধরা হল। যা আপনি বিশ্বাস করতে না চাইলেও বিশ্বাস করতে হবে।
হিন্দু ধর্মে অনেক ধরনের লোককথা প্রচলিত আছে। ভারতের আসাম প্রদেশে এবং চীনের পাশের অঞ্চলে কিছু মানুষ বিশ্বাস করে, পৃথিবীর ভেতরে একটি জাতি আছে, মাঝে মাঝে তারা পৃথিবীর ওপরের অংশে আঘাত হানে পৃথিবীর ওপরের পৃষ্ঠে কেউ থাকে কিনা দেখার জন্য। তাই যখন ভুমিকম্প হয়, আসামের মানুষরা চিৎকার করে আমরা আছি, আমরা আছি বলে। তখন ওপর থেকে মানুষের চিৎকার শুনে ভিতরের মানুষরা ঝাঁকুনি বন্ধ করে দেয়।
তবে হিন্দুধর্মে ভূমিকম্পের গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা হল - পৃথিবীটি দাঁড়িয়ে আছে আটটি হাতির উপর, হাতিগুলি দাঁড়িয়ে আছে কচ্ছপের ওপর। কচ্ছপটি দাঁড়িয়ে আছে একটি গোখরো সাপের উপর।
যখন এর কোন একটি প্রাণী নড়াচড়া করে পৃথিবী কেঁপে উঠে।
ভূমিকম্প নিয়ে ভারতে আরও একটি লোককথা আছে। সাতটি সাপ পৃথিবী ও স্বর্গকে দেখাশোনার দায়িত্ব আছে। যখন একটি সাপের দায়িত্ব শেষে অন্য সাপ দায়িত্ব গ্রহণ করে, তখন তাদের নড়াচড়ার সময় পৃথিবীতে ভূমিকম্প হয়।
হিন্দুধর্মের আরেক ব্যাখাতে পাওয়া যায়, অবতার বরাহ হল হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর রূপ। এই অবতারে বিষ্ণুকে বন্য শুকুরের মত দেখায়। পুরাণে আছে, হিরণ্যাক্ষ নামক রাক্ষসের হাত বরাহ যুদ্ধ করে পৃথিবীকে উদ্ধার করেন। রাক্ষস হিরণ্যাক্ষ পৃথিবীকে চুরি করে সমুদ্রের তলায় লুকিয়ে রেখেছিল।
তখন পৃথিবীর কান্না দেখে বিষ্ণু বরাহ রূপ ধারণ করে হিরণ্যাক্ষের সঙ্গে যুদ্ধ করে পৃথিবীকে উদ্ধার করেন এবং পৃথিবী বিয়ে করেন।
ভূমিকম্প নিয়ে বৌদ্ধধর্মে বেশ কয়েকটি ঘটনা আছে। মহাপরিনির্বাণ সূত্রে ভূমিকম্প নিয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করা হয়েছে। মহাপরিনির্বাণ সূত্র বুদ্ধের শেষ উপদেশমালার ভিত্তি। শয়তান মার যখন বুদ্ধকে নিমন্ত্রণ করতে আসে, তখন বড় ধরণের বজ্রপাত এবং ভূমিকম্পন দেখা দেয়। বুদ্ধের সেবক আনন্দ তখন বুদ্ধের নিকট ভূমিকম্পের কারণ জিজ্ঞেস করলে বুদ্ধ ভূমিকম্পের আটটি কারণ উল্লেখ করেন:
১. এই পৃথিবী কিছু তরলের উপর দাঁড়িয়ে আছে। বায়ুমণ্ডলীয় নানা সমস্যার কারনেই তরল উত্তেজিত হয়, ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং ভূমিকম্পের হয়।
২. যখন কোনো তপস্বী, দৈব শক্তি কিংবা বুদ্ধত্ব পায় অথবা একজন তপস্বী যখন মনোযগের সর্বোচ্চ মাত্রায় যায়, তখন ভূমিকম্প হয়।
৩. যখন একজন বোধিসত্ত্ব তুসিত স্বর্গ থেকে মায়ের গর্ভে জন্ম নেয়।
৪. যখন একজন বোধিসত্ত্ব মায়ের গর্ভ থেকে পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয়।
৫. যখন তথাগত বুদ্ধ অতুলনীয় জ্ঞানের সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছায়।
৬. যখন ধর্মচক্র ঘূর্ণায়মান হয়।
৭. যখন একজন তথাগত পৃথিবী ছাড়ার ঘোষণা দেন।
৮. যখন একজন বুদ্ধ নির্বাণের খুব কাছে চলে আসে, তখন ভূমিকম্প হয়।
ইব্রাহীমকে যেসব ধর্মে নবী মানা হয়, সেসব ধর্মকে আব্রাহামিক ধর্মের শাখা বলা হয়। এর শাখা হল ইসলাম, ইহুদী, বাহাই এবং খ্রিষ্টান ধর্ম। খ্রিষ্টান ধর্মে (লুক ১৩:১-৫) আছে, যদি মন থেকে পাপ দূর করা না যায়, তবে ভূমিকম্প হবে। যীশু খ্রিষ্ট বেঁচে থাকার সময় নানা কারণে ভূমিকম্প হয়েছে, সে কথা বাইবেলে অসংখ্য বার পাওয়া যায়। বাইবেলে (লুক ২১:১১) বলা আছে, এক জাতি অন্য জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলে ভূমিকম্প হবে। তাই ঈশ্বর সবাইকে সাবধান হতে বলেছেন। এছাড়া আছে ঈশ্বরের কথা শুনতে হবে, নাহলে তিনি স্বর্গসহ কাঁপিয়ে দেবেন। ইহুদি ধর্মেও বলা আছে, ভূমিকম্প ঈশ্বরের নির্দেশে হয়। আবার আব্রাহামিক ধর্মের আরেকটি শাখা ইসলামেও ভূমিকম্প নিয়ে অসংখ্য মন্তব্য করা হয়েছে। যেখানে বারবার বলা হয়েছে, একটি কথা: ভূমিকম্প হল আল্লাহর আদেশে, মানুষকে ভয় দেখানো এবং সঠিক পথে আনার সতর্কবার্তা। কোরানের ১৬:৫, ১৬:৪৫, ১৭:৫৯, ৬:৬৫, ২৯:৩৭-৪০, ৭:৯৭-৯৯ সহ আরও আরও আয়াতে ভূমিকম্প বিষয়ে ভয় দেখানো বা আল্লাহর নির্দেশের ইঙ্গিত আছে। কোরানে সূরা যিলযাল নামে (সূরা নং - ৯৯, আয়াত সংখ্যা - ৮) একটি সূরা আছে, যা সম্পূর্ণ ভূমিকম্প নিয়ে এবং যিলযাল অর্থ হল ভূমিকম্প। আল-আল্লামা ইবনে আল-কাইউম বলেছেন, মহান আল্লাহ মাঝে মাঝে পৃথিবীকে জীবন্ত হয়ে ওঠার অনুমতি দেন। যার ফলে তখন বড় ধরনের ভূমিকম্প অনুষ্ঠিত হয়। এটা মানুষগুলোকে ভীত করে, তারা মহান আল্লাহর নিকট তওবা করে, পাপকর্ম করা ছেড়ে দেয়, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে এবং তাদের কৃত পাপকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়।"
এতক্ষণ আমরা দেখলাম ভূমিকম্পের ধর্মীয় ব্যাখা এবার আমরা দেখবো ভূমিকম্প বলতে বিজ্ঞান কী বোঝে। আধুনিক বিজ্ঞানের মতে, ভূমিকম্প হল ভূপৃষ্ঠের নিচে শিলাস্তরের ভাঙন এবং সংঘর্ষ। আমরা জানি পৃথিবীর নিচে (ভেতরে) অনেকগুলি শিলাস্তর আছে। এই শিলাস্তরগুলি শক্তি সঞ্চয় করে, যখন সেই শক্তির আকস্মিক মুক্তি ঘটে, ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগ কিছুক্ষণের জন্য কেঁপে ওঠে। পাথরের শিলাস্তরগুলি একে অন্যকে ঘর্ষণ করে, তখন মৃদু কম্পন হয়। যখন শিলাস্তরগুলি একে অন্যকে ঠেলতে থাকে, প্রসারিত হয়ে জায়গা দখল করতে চায়। এমন পারস্পরিক সংঘর্ষের শিলাস্তর ভেঙে যায় এবং পৃথিবীতে ভূমিকম্প দেখা দেয়।
ব্যাখ্যাটা আরেকটু সহজ করে নিচ্ছি। আমাদের এক হাতের আঙ্গুল দিয়ে অন্য হাতের আঙুলগুলিকে ধরে রাখলাম। যদি হালকা ভাবে ধরে রাখি, তবে টান দিলেই দু'হাত ছুটে যাবে। কিন্তু যদি শক্ত করে ধরে রাখি, তবে ছোটাতে একটু শক্তি খরচ করতে হবে এবং টানতে টানতে এক সময় দু হাতের বন্ধন ছুটে যাবে। সাথে সাথে ছোট একটি শব্দ সৃষ্টি হবে ও হাতের মাঝে একটু করে কম্পন হবে। ভূমিকম্পের সময় পৃথিবীর নিচেও এমনটি হয়। যখন দুটি শিলাস্তরের মাঝে শক্তি দিয়ে ঘর্ষণ কিংবা পৃথক হয়ে যাওয়ার ফলেই ভূমিকম্প হয়।
এতক্ষণ জানলাম ভূমিকম্প নিয়ে পুরানো দিনের বানানো গল্প এবং অপদার্থ বিজ্ঞানের কিছু ভ্রান্ত ব্যাখ্যা, সেই সাথে বর্তমানের ধর্মগুলির নির্ভরযোগ্য সত্য বাণী। এবার আমরা দেখবো ভূমিকম্প নিয়ে বর্তমান সময়ের কিছু মিথলজি। অনেকের ধারণা, ভূমিকম্প যেহেতু ঈশ্বর, ভগবান, আল্লহর তরফ থেকে হয়, তাই ভূমিকম্পে মসজিদ, মন্দির, গির্জা এসবের কোনো ক্ষতি হয় না। মানুষ অনেক কিছুই দাবি করতে পারে। আমি তার বিরোধিতা করছি না, তবে লেখার শেষটা হল কিছু মিথলজির বাস্তব চিত্র দিয়ে।