বৃহস্পতিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৫

ধাতুল-রিকা (Dhatul-Riqa) হামলা!: কুরানে বিগ্যান (পর্ব- ৭৬): ত্রাস, হত্যা ও হামলার আদেশ – পঞ্চাশ

লিখেছেন গোলাপ

পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩ > পর্ব ১৪ > পর্ব ১৫ > পর্ব ১৬ > পর্ব ১৭ > পর্ব ১৮ > পর্ব ১৯ > পর্ব ২০ > পর্ব ২১ > পর্ব ২২ > পর্ব ২৩ > পর্ব ২৪ > পর্ব ২৫ > পর্ব ২৬ > পর্ব ২৭ > পর্ব ২৮ > পর্ব ২৯ > পর্ব ৩০ > পর্ব ৩১ > পর্ব ৩২ > পর্ব ৩৩ > পর্ব ৩৪ > পর্ব ৩৫ > পর্ব ৩৬ > পর্ব ৩৭ > পর্ব ৩৮ > পর্ব ৩৯পর্ব ৪০ > পর্ব ৪১ > পর্ব ৪২ > পর্ব ৪৩ > পর্ব ৪৪ > পর্ব ৪৫ > পর্ব ৪৬ > পর্ব ৪৭ > পর্ব ৪৮ > পর্ব ৪৯ > পর্ব ৫০ > পর্ব ৫১ > পর্ব ৫২ > পর্ব ৫৩ > পর্ব ৫৪ > পর্ব ৫৫ > পর্ব ৫৬ > পর্ব ৫৭ > পর্ব ৫৮ > পর্ব ৫৯ > পর্ব ৬০ > পর্ব ৬১ > পর্ব ৬২ > পর্ব ৬৩ > পর্ব ৬৪ > পর্ব ৬৫ > পর্ব ৬৬ > পর্ব ৬৭ > পর্ব ৬৮ > পর্ব ৬৯ > পর্ব ৭০ > পর্ব ৭১ > পর্ব ৭২ > পর্ব ৭৩ > পর্ব ৭৪ > পর্ব ৭৫ 

ওহুদ যুদ্ধ, 'আল-রাজী’ ও বীর মাউনা-র চরম ব্যর্থতার পর স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) মদিনায় অবস্থানরত বনি নাদির নামক এক ইহুদি গোত্রের সমস্ত মানুষকে তাঁদের শত শত বছরের আবাসস্থল ও ভিটে মাটি থেকে প্রায় এক বস্ত্রে কী ভাবে বিতাড়িত করে তাঁদের স্থাবর ও অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তি করায়ত্ত করেছিলেন তার আলোচনা আগের পর্বে করা হয়েছে।

উপার্জিত সেই অর্থে মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ তাঁর পরিবার-পরিজনদের ভরন-পোষণের ব্যবস্থা করেন, কিছু সম্পদ মুহাজিরদের মধ্যে বিতরণ করেন এবং তারপর যা অবশিষ্ট থাকে তা দিয়ে জিহাদের জন্য ঘোড়া ও যুদ্ধ-অস্ত্র খরিদ করেন। 

নৃশংস ও অমানবিক কায়দায় উপার্জিত এই লুটের মালের সবটুকুই মুহাম্মদ তাঁর আল্লাহর উদ্ধৃতি দিয়ে বাণী বর্ষণের মাধ্যমে "বিশেষ করে তাঁর ও তাঁর পরিবারের বাৎসরিক ভরণ-পোষণের জন্য বৈধ” করেছিলেন (পর্ব ৫২)। 

বনি নাদির গোত্র উচ্ছেদের পর খন্দক যুদ্ধ (ফেব্রুয়ারি, ৬২৭ সাল) পর্যন্ত সময়ে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা ধাতুল-রিকা, দ্বিতীয় (শেষ) বদর, দুমাতুল-জানদাল (Dumatul-Jandal) নামের বেশ কয়েকটি হামলা সম্পন্ন করেন। 

তবে বনি নাদির গোত্র উচ্ছেদের ঠিক পরেই কোন হামলাটি সংগঠিত হয়েছিল, সে ব্যাপারে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ আছে। মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের মতে তা ছিল ধাতুল-রিকা হামলা। এই হামলায় তারা ‘ঘাতাফান (Ghatafan)’ গোত্রের ওপর আক্রমণের চেষ্টা করে।

'ঘাতাফান' হলো মক্কা ও মদিনার পূর্ব দিকে উত্তর আরবের এক গোত্র-সমষ্টি; হিজাজ (লোহিত সাগর, জর্ডান, নাজাদ ও আসির পরিবৃত স্থান - বর্তমান সৌদি আরবের পশ্চিম অঞ্চল) ও সামমার পর্বতমালার মধ্যবর্তী স্থানে তাদের অবস্থান। তাদের অঙ্গ দলগুলোর কয়েকটি হলো:

১) আবস (Abs),

২) আশজা (Ashja), ও

৩) ধুবায়ান (Dhubyan): এই গোত্রের অন্তর্ভুক্ত দলগুলো হলো, 

(ক) ফাযারাহ (Fazarah) - ইউয়েনা বিন হিসনের (Uyaynah b. Hisn) গোত্র, 

(খ) মুররাহ (Murrah), 

(গ) থালাবাহ (Thalabah); ও অন্যান্য।

মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ সাল) ও আল তাবারীর বর্ণনা: 

[প্রাসঙ্গিক বিষয়, অলৌকিক কিচ্ছা (পর্ব-৩৮) পরিহার।]

"বনি নাদির গোত্র উচ্ছেদ অভিযানের পর আল্লাহর নবী রাবির দুই মাস [রবি-উল আওয়াল ও রবি-উস সানি] এবং জুমাদি-উল আওয়াল মাসের কিয়দংশ (অগাস্ট ১১ হইতে অক্টোবরের শেষ, ৬২৫ সাল) মদিনাতেই অবস্থান করেন। 

তারপর তিনি নাজাদের [মধ্য সৌদি আরব] ঘাতাফান গোত্রের অন্তর্ভুক্ত বানু মুহারিব (Muharib) ও বানু থালাবা (Thalaba) গোত্রের বিরুদ্ধে অভিযানে বের হন; তিনি নাখাল (Nakhl) পর্যন্ত পৌঁছেন। এটিই হলো ধাতুল রিকা হামলা। 

সেখানে তারা ঘাতাফান গোত্রের এক বড় দলের সম্মুখীন হন। দুই দল একে অপরের মুখোমুখি হয়, কিন্তু কোনো সংঘর্ষ সংঘটিত হয় না। কারণ তারা একে অপরের ভয়ে ছিল ভীত।

আল্লাহর নবী ভয়-নামাজ (৪:১০২) সম্পাদন করেন ও তারপর তিনি তাঁর লোকজন নিয়ে ফিরে আসেন। ----

[৪:১০২ - যখন আপনি তাদের মধ্যে থাকেন, অতঃপর নামাযে দাঁড়ান, তখন যেন একদল দাঁড়ায় আপনার সাথে এবং তারা যেন স্বীয় অস্ত্র সাথে নেয়। অতঃপর যখন তারা সেজদা সম্পন্ন করে, তখন আপনার কাছ থেকে যেন সরে যায় এবং অন্য দল যেন আসে, যারা নামায পড়েনি। অতঃপর তারা যেন আপনার সাথে নামায পড়ে এবং আত্মরক্ষার হাতিয়ার সাথে নেয়। কাফেররা চায় যে, তোমরা কোন রূপে অসতর্ক থাক, যাতে তারা একযোগে তোমাদেরকে আক্রমণ করে বসে। যদি বৃষ্টির কারণে তোমাদের কষ্ট হয় অথবা তোমরা অসুস্থ হও তবে স্বীয় অস্ত্র পরিত্যাগ করায় তোমাদের কোন গোনাহ নেই এবং সাথে নিয়ে নাও তোমাদের আত্নরক্ষার অস্ত্র। নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদের জন্যে অপমানকর শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন।] 

সাদাকা বিন ইয়াসার হইতে < আকিল বিন জাবির হইতে < জাবির বিন আবদুল্লাহ আল আনসারি হইতে বর্নিত:

আমরা আল্লাহর নবীর সাথে ধাতুল-রিকা অভিযানে নাখাল পর্যন্ত গমন করি। এক পর্যায়ে মুসলমানদের একজন এক মুশরিক মহিলাকে খুন করে। সেই সময় তার স্বামী ছিল বাহিরে। যখন আল্লাহর নবী মদিনায় প্রত্যাবর্তনের পথে, মহিলার স্বামী ফিরে এসে ঘটনাটি জানার পর প্রতিজ্ঞা করে যে মুহাম্মদ-অনুসারীদের উপর এর প্রতিশোধ না নিয়ে সে ক্ষান্ত হবে না।-------’। [1][2][3]

- (অনুবাদ, টাইটেল, ও [**] যোগ - লেখক।)

‘After the attack on B. al-Nadir the apostle stayed in Medina during Rabi'ul-Akhir and part of Jumada. Then he raided Najd making for B. Muharib and B. Tha'laba of Ghatafan, until he stopped at Nakhl. This was the raid of Dhatu'l-Riqa'. 

There a large force of Ghatafan was encountered. The two forces approached one another, but no fighting occurred, for each feared the other. The apostle led the prayer of fear; then he went off with the men.

(T. Muhammad b. Ja'far b. al-Zubayr and Muhammad b. 'Abdu'l-Rahman from 'Urwa b. al-Zubayr from ABu Hurayra: We went with the apostle to Najd until at Dhatu'l-Riqa' he met a number of Ghatafan.There was no fighting because the men were afraid of them. The prayer of fear came down (Sura 4:102) and he divided his companions into two sections, one facing the enemy and the other behind the apostle. ---)

Sadaqa b. Yasar from Aqil b. Jabir from Jabir b. 'Abdullah al-Ansari said:

We went with the apostle on the raid of Dhatu'l-Riqa' of Nakhl and a man killed the wife of one of the polytheists. When the apostle was on his way back her husband, who had been away, returned and heard the news of her death. He swore that he would not rest until he had taken vengeance on Muhammad's companions. ----’. 

>>> মুহাম্মদ ইবনে ইশাক, আল তাবারীর বর্ণনায় যে বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট, তা হলো:

১) মক্কাবাসী কুরাইশ বাণিজ্য বহরের ওপর হামলা (পর্ব-২৯), বনি কেউনুকা গোত্রের ওপর হামলা (পর্ব-৫১) ও বনি নাদির গোত্রের ওপর হামলার মতই, মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা ঘাতাফান গোত্রের ওপর হামলা করতে গিয়েছিলেন! 

এখানে আক্রমণকারী গোষ্ঠী নিঃসন্দেহে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা। আর আক্রান্ত জনগোষ্ঠী হলেন ঘাতাফান গোত্রের অন্তর্ভুক্ত বানু মুহারিব ও বানু থালাবা গোত্রের লোকেরা।

২) এই ঘটনার পূর্বে ঘাতাফান গোত্রের কোনো লোক মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের উপর কোনোরূপ আক্রমণের চেষ্টা করেছিলেন, এমন আভাস কোথাও নাই।

৩) মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের এই আক্রমণাত্মক হামলা প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে ঘাতাফান গোত্রের লোকেরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। নিঃসন্দেহে তাঁদের এই প্রচেষ্টা ছিল "মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার চেষ্টা"

৪) ঘাতাফানদের এই আত্মরক্ষা বাহিনী সংখ্যা ও শক্তিতে আক্রমণকারী মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারী বাহিনীর সমকক্ষ ছিলেন। 

৫) মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা ঘাতাফানদের আত্ম-রক্ষা বাহিনীর বিরুদ্ধে সংঘর্ষে জড়িয়ে কোনো সুবিধা করতে পারবে না উপলব্ধি করে কোনো সংঘর্ষ ছাড়াই মদিনায় ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। 

৬) মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের অমানুষিক বর্বরতায় বনি কেউনুকা ও বনি নাদির গোত্রের সমস্ত লোক যে শোচনীয় পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন, ঘাতাফান গোত্রের লোকেরা তাঁদের শক্তি বলে বনি কেউনুকা ও বনি নাদির গোত্রের অনুরূপ সম্ভাব্য বিপর্যয় এড়াতে সক্ষম হয়েছিলেন। 

৭) এমত পরিস্থিতিতেও মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা ঘাতাফানদের ‘এক নিরপরাধ মহিলাকে তাঁর স্বামীর অনুপস্থিতিতে খুন করেছিলেন!"

প্রশ্ন হলো,

“আক্রান্ত, ক্ষতিগ্রস্ত ও সংক্ষুব্ধ এই লোকেরা যদি এহেন আগ্রাসনের পুনরাবৃত্তি রোধ ও তাঁদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার কর্মকৌশল হিসাবে একক বা সম্মিলিতভাবে আক্রমণকারী মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের প্রতি-আক্রমণ (Counter attack) ও পরাস্ত করার চেষ্টা করেন, তবে কি তাকে অত্যন্ত গর্হিত কর্ম রূপে আখ্যায়িত করা যায়? 

মদিনায় আগমন পরবর্তী সময়ে একের পর এক মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের এ সকল আগ্রাসী আক্রমণে আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত মক্কাবাসী কুরাইশ সম্প্রদায়, বিতাড়িত বনি কেউনুকা ও বনি নাদির গোত্র এবং আক্রান্ত ঘাতাফান গোত্রের লোকদের প্রতিরোধ ও আত্মরক্ষার প্রচেষ্টা কি অন্যায়?”

মুহাম্মদের সাথে সুর মিলিয়ে তাঁর অনুসারীরা শতাব্দীর পর শতাব্দী যাবত এই মানুষগুলো ও তাঁদের কর্মকাণ্ডকে আইয়্যামে জাহিলিয়াত (অন্ধকারের যুগ/বাসিন্দা) রূপে আখ্যায়িত করে আসছেন। 

কিন্তু ইসলামের ইতিহাসের আদি উৎসে ইসলাম-অনুসারীদেরই বর্ণনায় তাদের এই দাবির সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র অত্যন্ত স্পষ্ট।

(চলবে)

তথ্যসূত্র ও পাদটীকা:

[1] “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ:  A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ৪৪৫-৪৪৭

[2] “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৭,ইংরেজী অনুবাদ: M.V. McDonald, Annotated by W. Montogomery Watt, নিউ ইয়র্ক স্টেট ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭, ISBN 0-88706-345-4 (pbk.), পৃষ্ঠা (Leiden) ১৪৫৪-১৪৫৭

[3]“কিতাব আল-মাগাজি”- লেখক:  আল-ওয়াকিদি (৭৪৮-৮২২), ed. Marsden Jones, লন্ডন ১৯৬৬, পৃষ্ঠা ৩৮৪-৩৯১

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন