লিখেছেন পুতুল হক
০৪.
আজকাল কর্পোরেট অফিসগুলোতেও দাড়ি-টুপি আর হিজাবের ছড়াছড়ি। প্রয়োজনীয় কাজ কিংবা দরকারি মিটিং-এর সময় দেখা যায় ল্যাপটপ লক করে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতে। মেয়েরাও বেশ জামাত করে নামাজ আদায় করছে। যদিও কাজ বাদ না দিয়েও তারা ক্বাযা নামাজ আদায় করতে পারে, কিন্তু তা না করে জামাতকে প্রাধান্য দিতে কাজ ফেলেই দে দৌড়। মেয়েদের মত ছেলেদের পোশাকেও বেশ পরিবর্তন লক্ষণীয়। গোড়ালির উপর প্যান্ট তুলে পরা বা জোব্বা পড়ে আসা কলিগ দেখে এখন আর অবাক হতে হয় না কাউকে। নামাজের পর বেশ সময় নিয়ে আঙুল গুণে, দোয়া-দুরুদ পড়ে, দীর্ঘ মোনাজাত করে তবেই তারা কাজে ফেরে।
এই দেশের জনগণের জীবনধারণের মান উন্নত না হলেও ধর্মকর্ম পালন করে উচ্চ আসমানের বেহেস্ত যে ছোঁবে, তাতে আর সন্দেহ রইছে না। ট্রেইনিং সেশনেও ট্রেইনিরা জামাতের কথা বলে আযান হলেই দল ধরে বের হয়ে যেতে পারে। বাকহারা হয়ে পড়ি, যখন একটি টেকনিকাল ডিপার্টমেন্টের প্রধান হালাল উপায়ে রোজগার বৃদ্ধির জন্য কী কী দোয়া পড়তে হয়, তাঁর বিশদ ব্যাখ্যা দিলো! এদের চোখের চাউনিতে মনে মনে কুঁকড়ে উঠি! কী শীতল আর খুনি দৃষ্টি! সেই চাউনি বলে দেয় ইসলামের প্রতি এরা নিজেকে সম্পূর্ণভাবে সঁপে দিয়েছে। নিজস্ব স্বাধীন চিন্তা-বুদ্ধিকে গলা টিপে হত্যা করে নিজেরাই এক একটি রোবটে পরিণত হয়েছে, যাদের কাজ শুধুমাত্র ইসলামী আদেশের বাস্তবায়ন করে যাওয়া।
এই রোবটদের সৃষ্টি ইসলাম কায়েমের জন্য। জীবন, মৃত্যু, উন্নতি, অবনতি, সব কিছু নির্ধারণ করেন মহান আল্লাহতায়ালা। তাই এসব নিয়ে তারা ভাবিত নয়। এতো কিছু ভাবাভাবি থেকে আল্লাহ তাঁদের নিষ্কৃতি দিয়েছে। পরিকল্পনার কাজ করে সেনাপতি। মুসলমানের সেনাপতি ১৪০০ বছর আগে মহাপরিকল্পনা করে গেছে। এখন সৈনিকেরা শুধু সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে।
০৫.
বেহেস্তে গিয়ে মুমিন বিয়ে না করেই হুরদের সাথে মিলিত হবে। আনলিমিটেড মদের সরবরাহ পাবে। পৃথিবীতে যা নিষিদ্ধ করেছে মোহাম্মদ, তাকেই বেহেস্তে সবার জন্য হালাল করেছে। ইসলামী দেশগুলোতে মদ আর ফ্রি সেক্স নিয়ে বাড়াবাড়ি একেবারেই হাস্যকর। শরাবন তহুরা খেয়ে দিনরাত পড়ে থাকা আর হুরের লোভে যারা বেহেস্ত যেতে চায়, তাঁদের মুখে মানায় না পৃথিবীতে এসবের বিরুদ্ধে কথা বলা। ভেড়ার পাল চড়ানো কারো পক্ষে সম্ভব ভেড়ার জীবন বিধান রচনা করা। মানুষের ভালোমন্দ বোঝার ক্ষমতা মেষপালকের থাকার কথা নয়।
০৬.
আমার একজন আত্মীয় যাবেন উমরাহ্ করতে সপরিবারে। তিনজন মিলে কয়েক লক্ষ টাকা পেয়ারের সৌদি আরবে ঢেলে আসবেন। বললাম, টাকাগুলো দিয়ে মুসলমানদের ভেঙে দেয়া কোনো মন্দির সংস্কার করে দিন। ইসলামের ভালোবাসা দেখে হিন্দুরা মুসলমান হয়ে যেতে পারে।
শুনে এমনই প্রতিক্রিয়া, পারলে আমার গায়ে পেট্রোলবোমা ছোঁড়ে! মহানবীকে অনুসরণ করা মুসলমানদের জন্য সুন্নত। মন্দির গড়ে দেয়ার সংস্কৃতি মহানবী গড়ে গেলে আজকের মুসলমানরা ঠিক তা-ই করতো। কিন্তু তিনি ৩৬০টি মূর্তি ভেঙে কা'বাঘরকে প্রতিমাশূন্য করে শুধু মুসলমানদের অধিকারে নিয়ে এসেছিলেন। মুসলমানদের মনেও তাই প্রতিমা ভাঙার কথা আসবে, প্রতিমা গড়ার কথা নয়।
তোরাহ বা বাইবেলে উল্লেখ না থাকা সত্ত্বেও মোহাম্মদ কেন কা'বাকে আল্লাহ্র ঘর বলে দাবি করলেন? পৃথিবীতে যদি আল্লাহ্র বাসস্থানের একান্তই অভাব, তাহলে তিনি কা'বাঘরের মত বিরাট করে নতুন কোনো ঘর আল্লাহ্র জন্য কেন নির্মাণ করলেন না? মক্কা তখন মূর্তিপূজারীশূন্য। কা'বাঘর এমনিতেই পড়ে থাকতো, হয়তো কালে কালে এতদিনে ধংস হয়ে যেত। তিনি কা'বাকে কেন রেহাই দিলেন না? ভয় পেয়েছিলেন, যদি কা'বা থেকে যেত, তাহলে পুনরায় মক্কার মানুষের মধ্যে তাঁদের পূর্বপুরুষের পালন করা ধর্মের প্রতি মোহ জাগতে পারতো। শান্তির ধর্ম ইসলাম ছেড়ে আবার আরবের মানুষ প্রতিমার প্রেমে পড়তে পারে। মোহাম্মদ কোন ঝুঁকি নেননি। তাঁর উম্মতদের নিষেধ করে গেছেন ঝুঁকি নিতে।
ইসলাম ছাড়া আর কোনো মতবাদের শক্ত উপস্থিতি পৃথিবীতে থাকতে না দেয়ার নাম জিহাদ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন