লিখেছেন সেক্যুলার ফ্রাইডে
পবিত্রতা শব্দটি পূত, পূণ্য, অপাপবিদ্ধ, বিশুদ্ধ, কলুষমুক্ত ইত্যাদি অভিধার সাথে সম্পর্কযুক্ত একটি অবাস্তব অনুভূতি; কোনো বাস্তবিকতা থেকে এটি অনুভূত নয়। এর সাথে জড়িত পরিচ্ছন্নতা বা শুচিকরণের আচারটি পবিত্রতার একটি অনুষঙ্গ মাত্র।
মরু ঝড়ে উটপাখির মত মাথা গোঁজা নির্লিপ্ততায় মুমিন মুসলমানেরা নির্দ্বিধায় ঘোষণা করে, রমজান হচ্ছে পবিত্র একটি মাস, আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাস, এবং রাতদিন নিয়ত রহমত বর্ষণের মাস। এমনকি তিরমিযি শরীফে ইসলামের নবীকে উদ্ধৃত করে বলা আছে, রমজান মাসের প্রথম রাত উপনীত হলেই আল্লাহ শয়তান ও দুষ্ট জ্বিনগুলোকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখেন। জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেন এবং জান্নাতের দরজা খুলে দেন।
অথচ মুসলিম-প্রধান সমাজে আমরা দেখি এই মাসটিকে সবচাইতে অকার্যকর একটি মাসে পরিণত হতে; সরকারী উদ্যোগে এ মাসে শ্রমঘন্টা কমে আসে, অভুক্ত থাকার কারনে কর্মদক্ষতা কমে আসে, এবং রমজানের অপরিমিত খরচ মেটাতে বাড়ে অনৈতিকতা, ঘুষ ও দুর্নীতি।
না খেয়ে থাকার অস্বাভাবিক এই জীবনাচারের সমর্থনে বুখারী শরীফে এমনটাও বলা আছে, রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর নিকট মেশকে আম্বরের সুগন্ধের চেয়েও অনেক উৎকৃষ্ট। দাঁত না মাজার এই অসভ্যতাটি কেন পরিচ্ছন্নতা বা শুচিকরণের আচার বলে বিবেচিত, সেটা সুস্থ মস্তিস্কে বোঝাটা অসম্ভব।
রমজানের এই মাসটির অপর এক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর গোঁয়ার্তুমিভাব; আমি না খেয়ে আছি, কাজেই তুমিও খেতে পারবে না। এই মনোভাব কোন অর্থে সংযম সহায়ক, সেটা বোঝা ভার। হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোকে বোরখা পরিয়ে, দরিদ্র শ্রমজীবীদের প্রাত্যহিক ব্যয়ভার বাড়িয়ে, আল্লাহ নামের প্রাণীটির ঠিক কোন উদ্দেশ্য সাধন হয়, সেটা বোঝা এক বেয়াড়া রকমের দুঃসাধ্য কাজ। তবে লক্ষ্যণীয় যে, পাঁচতারা হোটেল, যেখানে ধনাঢ্যদের নিত্য যাতায়াত, সেখানে সুস্বাদু খাবার, পানীয় ও সূরার কোনো কমতি নেই।
রমজানের সাথে জড়িয়ে আছে মরু সংস্কৃতি ও মরু সভ্যতার আরও অনেক আবোলতাবোল পৌরানিক গল্পগাথা। ঐশী গ্রন্থগুলো নাকি এ মাসেই নাজেল হয়েছে, সে গ্রন্থ পাঠে নাকি মানুষ অন্তর্ভুক্ত হবে অতি সম্মানিত ফেরেশতাদের মাঝে; আবার হায়, আবার সে গ্রন্থেই চরম স্ববিরোধীতায় বলা হয়েছে, মানুষই উন্নততর প্রাণী।
রমজানের এই মাসটিতে বাংলাদেশের ফেসবুকারদের কল্যাণে সেটি যেন পরিণত হয়েছে আল জামায়াতে আল ফেসবুকিয়াতে; ভাব, ভাষা, মনন, আচরণ সকল ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত মুসলমান বাঙালী নির্লজ্জভাবে প্রদর্শন করে চলছে তীব্র সাম্প্রদায়িক মনোভাব; সর্বোপরি, সিয়াম পালনের ছদ্মবেশে থেমে নেই ধর্ষণ, থেমে নেই নারীনির্যাতন, সংখ্যালঘু নিগ্রহণ, থেমে নেই অসৎ উপার্জন ও শ্রম শোষণ।
এ কেমন সংযম, যা মানবীয় চিন্তাকে উন্নততর না করে আরও লোভী, আরও অসংযমী, অধিকতর অমানুষে পরিণত করে?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন