লিখেছেন পুতুল হক
আইএস-এর লক্ষ্য যদি হয় আল্লাহর আইন চালু করা, শরিয়া প্রতিষ্ঠিত করা, তবে তার জন্য গোপনে কর্মী সংগ্রহের দরকার নেই। এমনিতেই দলে দলে ছেলেমেয়ে যোগ দেবে, শান্তি প্রচার করবে, সেটাই স্বাভাবিক কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, গোপনে তারা কর্মী সংগ্রহের কাজ চালাচ্ছে। আজব কাণ্ড! শান্তির বাণী তো আর গোপনে প্রচার করার বিষয় নয়!
ধর্মপ্রচারকরা ধার্মিকদের ধর্মের ছায়াতলে বেঁধে রাখে দুটো উপাদানের সাহায্যে; প্রথমত, লোভ আর দ্বিতীয়ত, ভয়। ভয় যদি প্রধান ভুমিকা রাখতে পারতো, তাহলে চুরি, ডাকাতি, খুন ইত্যাদি নানা অপরাধের কোনোটা সংঘঠিত হতো না। সব অপরাধের জন্য আইনের মাধ্যমে শাস্তির বিধান আছে, তবুও অপরাধমুক্ত পৃথিবী সম্ভব হয়নি। আর পরকালের যে শাস্তির কথা ধর্মগ্রন্থগুলোতে বিবৃত থাকে, সেটার প্রভাব আরো কম। আল্লাহ সব কিছু দেখছেন, ফেরেস্তারা পাপের ফিরিস্তি সব টুকে রাখছে, এসব জানা থাকলেও মানা হয় না খুব একটা। আর সব পাপের পর যেহেতু শুধুমাত্র বিশ্বাসের বলেই বেহেস্ত নিশ্চিত, তবে দুনিয়াতে একটু আইন ভাঙলে সমস্যা নেই।
তাহলে দুনিয়া জুড়ে দলে দলে তরুণ-তরুণীকে একতরফা, নোংরা যুদ্ধে (জিহাদ) যাবার জন্য প্রলুদ্ধ করেছে যে-উপাদানটি, সেটি হচ্ছে লোভ। পরকালে হুর আর মদের লোভ নয়, বিকৃত মানসিকতা চরিতার্থ করার ইহকালীন লোভ। জিহাদ বা ধর্মযুদ্ধে কোনো সভ্যাসভ্য নিয়ম-কানুনের বালাই নেই। নেই কারো কাছে জবাবদিহিতার দায়। ইচ্ছেমত লুট, খুন আর ধর্ষণ করা যায়, শুধু এসব করার আগে আল্লাহর নাম নিতে হয়। মনের মধ্যে অবদমিত থাকে যে-বিকৃতি, তাকে পূর্ণ রূপ দেয়া যায় জিহাদে। জিহাদ হচ্ছে উচ্ছৃঙ্খলতা আর লাম্পট্যের ফ্রি লাইসেন্স। সব রকমের পাপাচার জিহাদে বৈধ। কবে মরবে, কবে হবে পুনরুত্থান আর কবে পাবে বেহেস্ত, সেই ভরসায় জিহাদি পাওয়া যায় না। ১৪০০ বছর আগেও পাওয়া যায়নি, এখনো যায় না। ‘ফেলো তক্তা, মারো পেরেক’ অর্থাৎ 'হবো জিহাদি দাও ফ্রি লাইসেন্স' হচ্ছে জিহাদের মূল শক্তি।
জিহাদিরা নিজেদের অস্তিত্ব জনসাধারণের সামনে তুলে ধরে ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে। পৃথিবী বা মানুষের জন্য কোনো গঠনমূলক, উন্নয়নমূলক কাজের নজির জিহাদিরা আজ পর্যন্ত কোথাও রাখতে পারেনি। একের পর এক শহর তারা ধ্বংস করছে, কোনো শহর গড়েনি। একের পর এক মানুষ খুন করছে, কোনো মানুষের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। ধ্বংস করছে ইতিহাস, সভ্যতা। তারা চায় বর্বর সমাজ, অসভ্য সমাজ। আজ পর্যন্ত আমি যত জিহাদির ছবি দেখেছি, তাঁদের সবার এক হাতে থাকে অস্ত্র আর আরেক হাতে থাকে কোরআন। অথবা কলেমার সাথে কাটছে মানুষের কল্লা। আল্লাহর বাণী প্রচার করতে হলে চাই অস্ত্র! শান্তি বটে!
নবী মোহাম্মদ যেভাবে জীবদ্দশায় তাঁর দলের জন্য কর্মী সংগ্রহ করেছে, একালে তাঁর উম্মতরা ঠিক একই পদ্ধতি অনুসরন করছে। মোহাম্মদের ডাকাত বাহিনীর রুজি-রোজগারের একমাত্র উপায় ছিল লুট। এবং এ জন্য ছিল না কোনো শাস্তির ভয়। বরং আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করার জন্য যেহেতু তারা ডাকাতি করছে, সেহেতু তাঁদের জন্য পরকালে আল্লাহ উত্তম খাদ্য এবং বিকৃত যৌনাচারের ব্যবস্থা করে রেখেছে। বিধর্মী গোত্রের ওপর একের পর এক চালিয়েছে গণহত্যা, লুটে নিয়েছে তাঁদের সারা জীবনের কষ্টার্জিত সম্পদ, নারী আর শিশুদের ক্রীতদাস করেছে, যৌনদাসী করেছে; এটাই হচ্ছে ইসলামী জিহাদের প্রকৃতরূপ। এসবের লোভ একবার যদি কারো মনে ঢুকিয়ে দেয়া যায়, তবে সে বাকি জীবনে আর কখনো স্বাভাবিক জীবনে অভ্যস্ত হতে পারবে কিনা সন্দেহ।
মোহাম্মদের জীবিত ফসিল আজকের আইএস, তালেবান, বোকো হারাম, আল-শাবাব, জামাতে ইসলাম। জিহাদ - ইসলামের জীবন সঞ্জীবনী সুধা। মানবিকতা বিসর্জনের নাম জিহাদ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন